মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Thursday, July 23, 2020

অনুপ্রেরণামূলক ঘটনা - আবু জেহেলের হতাশা ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)


অনুপ্রেরণামূলক ঘটনা - আবু জেহেলের হতাশা ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)
অনুপ্রেরণামূলক ঘটনা - আবু জেহেলের হতাশা ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)
বেলা পড়ে এসেছে। সূর্যটা এখন দেখাচ্ছে একটা লাল গোল থালার মতো দ্রুত নেমে যাচ্ছে নীচের দিকে। একটু পরেই পাহাড়টার কিনারায় মাথা ঠেকবে। তারপর আস্তে আস্তে আলো সরে যাবে। আঁধারে ডুবে যাবে সমস্ত মক্কা শহর, পাহাড়, উপত্যকা আর বালুর প্রান্তর।
আর নয়। আজই শেষ করতে হবে। মনে মনে বিড়বিড় করতে করতে হাতের ছড়িটি ঘোরাতে লাগলো বন্ বন্ করে। ছাগলগুলোকে হাঁকিয়ে নিয়ে চললো সে উকবা বিন আবী মুঈতের খোয়াড়ের দিকে। সে ভাবছে। কিন্তু ভাবনার কোনো কুল কিনারা পাচ্ছে না।
খোঁয়াড়ে পৌছে ছাগলগুলোকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে খেজুর পাতার দরজাটা ভালো করে বেঁধে দিল। চারদিকে চেয়ে মালিককে খুঁজতে লাগলো হ্যাঁ, ওইতো উকবা দাঁড়িয়ে আছে ঘরের বারান্দায়। ছেলে ওলীদ লোকজন নিয়ে সলা-পরামর্শ করছে মনে হয়। সে তাদের থেকে কিছু দূরে গিয়ে দাড়ালো
কি, তুমি কিছু বলবে?
হা, আবুল ওলীদ, কাল থেকে নতুন কোনো লোক বা গোলাম দেখো আমি আর তোমার ছাগল চরাতে পারবো না
কি ব্যাপার? তুমি হঠাৎ আমাদের ওপর এমন নারাজ হয়ে গেলে কেন? আমরা কেউ কি তোমাকে কোনো কষ্ট দিয়েছি? আমাদের ছাগলগুলো কি তোমার কোনো ক্ষতি করেছে?
কেউ আমাকে কোনো কষ্ট দেয়নি। কেউ আমার কোনো ক্ষতি করেনি। আমি এমনি চাকরিতে ইস্তফা দিচ্ছি। ছাগল চরানোর কাজ আমি আর করবো না।
একথা বলেই সে পেছনে ফিরলো ছড়িটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিল। ফিরে চললো আবার পাহাড়ের দিকে। উকবার কোনো জবাব শুনতেও সে প্রস্তুত ছিল না। তার পেছনে তার সম্পর্কে কে কি বলাবলি করছে সে দিকেও তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। নিজের চিন্তার অথৈ সাগরে যেন সে হারিয়ে গেছে। চিন্তা করতে করতে কখন যে সে পাহাড়ের কোলে। আবার সেই জায়গায় ফিরে এসেছে যেখানে সে দিনের বেলা ছাগলগুলো চরাচ্ছিল, তা তার খেয়াল নেই। সেখানে পৌছেই তার মনে পড়লো সেই দুজন লোকের কথা যারা আজ দুপুরে অদ্ভুত সব কাজ করেছিলেন এখানে। অবাক লাগছে তার কাছে এখনো কেমন করেই বা এটা সম্ভব হলো? তারা ছিলেন দুজন, মরুভূমির মধ্য দিয়ে হেঁটে আসছিলেন। মনে হয় অনেক দূর থেকে আসছিলেন। তাঁরা দুধ চাইলেন আমার কাছে। আমি অস্বীকার করলাম। কোথায় পাবো আমি দুধ। আমার কোনো ছাগল তো বাচ্চা দেয়নি। পেটে বাচ্চা আছে, দুচার দিনের মধ্যে বাচ্চা দেবে এমন একটি ছাগলও তো আমার নেই। কিন্তু কী আশ্চর্য! তাঁদের একজন। তাঁর চেহারাটি অতিশয় মহিমাময়। অনেক বেশী ভদ্র এবং শান্ত তিনি। কি যেন পড়লেন দোয়া। কি মধুর সে বাণী। এখনো যেন কানে তার প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। তারপর তিনি কি করলেন ভাবতে এখনো অবাক লাগে। না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করতে চাইবে না। সব চেয়ে রোগা ছাগলটির স্তনে হাত বুলালেন। আর অমনি ঝর ঝর করে দুধ পড়তে লাগলো স্তন থেকে। সে দুধ তারা দু জনে তো খেলেন পেট ভরে। আমিও খেলাম। কী আশ্চর্য, তবুও দুধ শেষ হয় না। আর তার স্বাদই আলাদা। এমন সুস্বাদু দুধ জীবনে কোন দিন খাইনি। দোয়ার বাক্যগুলো যেন এখনো কানে ভেসে আসছে। কিন্তু সবটুকু মনে পড়ছে না। সে সুমধুর বাণী যেন তার মনে নেশা ধরিয়ে দিয়েছে। সে চেষ্টা করে। কিন্তু সেই মধুর কথাগুলো আর স্মরণ করতে পারে না। সে পাগল হয়ে যাবে নাকি? সে ওই রাতে আর ঘরে ফিরতে পারলো না। মানসিক অস্থিরতা খুবই বেড়ে গেলো মক্কার আশে পাশে পাগলের মতো ঘোরাফেরা করতে থাকলো সারারাত ধরে। এক সময় রাত শেষ হলো পুব দিকে আলোর রেখা দেখা দিল। রাখালরা ছাগল আর ভেড়ার পাল নিয়ে শহর থেকে বের হয়ে পড়েছে। এমন সময় সে শহরে প্রবেশ করলো কিন্তু তার অশান্ত মন শান্ত হলো না। সেই প্রশান্ত উজ্জ্বল চেহারার লোকটি তাঁর সাথীকে খুঁজে বের না করা পর্যন্ত সে শান্ত হতে পারল না। তাঁদের গোপন আচ্ছাটির সন্ধানও সে জেনে নিল। তার খুশি আর দেখে কে। সে যেন সাত রাজার ধন পেয়ে গেছে। সে তাকে দেখলো জানলো তিনি নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সে তার মজলিসে বসলো তাঁর কাছে গেলো আরো কাছে। অনেক কাছে। তার একেবারে মুখোমুখি হলো উদ্বেগ আকুল স্বরে বলতে থাকলো, আমাকে আর একবার শুনান সেই কথাগুলো যেগুলো গতকাল বলেছিলেন। সেগুলো আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি প্রশান্ত হাসি হাসলেন। সস্নেহে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। গাঢ় স্বরে বললেনঃ আমি জানি তুমি লেখাপড়া জানো তোমার তো বেশ বুদ্ধি জ্ঞান হয়েছে। মক্কার এই কিশোরটির মনে ঝড় উঠলো কি জানি তার যেন কেবল মনে হতে থাকলোঃ তার জন্ম বৃথা নয়। সে নিজের জন্য জন্মেনি। সে নিজের পরিবারের লোকদের জন্য জন্মেনি। উকবা বিন আবী মুঈতের ছাগলের পাল চরাবার জন্য তার জন্ম হয়নি। তার জন্মের একটিই মাত্র উদ্দেশ্য। তার জন্ম হয়েছে আজীবন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে থাকার জন্য। তাঁর কাছে বসার, তাঁর বাণী শুনার, সেগুলো মুখস্ত করার এবং তার কথা মানুষের কাছে প্রচার করার জন্য। এই হালকা পাতলা গড়নের কিশোরটি যেমন ছিল রোগা তেমনি দুর্বল কিন্তু বুদ্ধি ছিল এমন তীক্ষ্ণ যেন ধারাল ছুরির ফলা। গতি ছিল তার এত দ্রুত যেমন গনগনে আগুনের শিখা। কিছু দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোহবতে থেকে সে অনেক কথা শিখে ফেললো ইসলামের অনেক কিছু জেনে নিল। এখন তাকে দেখা যায় মক্কার সবখানে। কখনো বাজারে, কখনো রাস্তায়, কখনো পথের চৌমাথায়, কখনো মাঠের এক কিনারে রাখালদের মধ্যে, কখনো কাবাঘরের চত্বরে। যেখানেই তার সন্ধান পাওয়া যায়, দেখা যায় সে কিছু বলছে এবং তার চারদিকে উৎসুক জনতা। সব জায়গায় সে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা প্রচার করে বেড়ায়। আল্লাহর বাণী মানুষকে শোনায়। তার প্রচারের তীব্রতা কুরাইশদের কাছে একটা নতুন বিপদ মনে হলো তারা তার প্রচার কাজে বাধা দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো কিন্তু তার নাগাল পাওয়া ভার। শুনলো সে উকায বাজারে বক্তৃতা দিচ্ছে। লোকেরা তার কথা গোগ্রাসে গিলছে। অনেক লোক তার দিকে ঢলে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। একথা শুনে কুরাইশদের একটি দল ছুটলো উকাযের দিকে। কিন্তু গিয়ে দেখল সে আর নেই। সেখানে জানা গেলো বাতহা উপত্যকায় চলে গেছে সে। বাতহার লোকেরা তার কথায় মুগ্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু বাতহায় গিয়েও তারা তাকে পেল না। শুনলো এই মাত্র সে চলে গেছে আমের গোত্রের মধ্যে। এভাবে কিছু দিনের মধ্যে কুরাইশদেরকে নাকাল করে দিল সে। এই এখানে তো এই সেখানে। এখন আছে এখন নেই। যেন মুহূর্তে কপূরের মত উবে গেলো একদিন আল্লাহর দুশমন আবু জেহেল বিরক্তি ক্ষোভের চরমে পৌছে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললঃ মুহাম্মদের (সাঃ) কোনো সাথী আমাকে এতো কষ্ট দেয়নি যেমন নওজোয়ানটি দিচ্ছে। সব জায়গায় সে মুহাম্মদের দাওয়াত ছড়াচ্ছে, লোকদের আকীদা-বিশ্বাস-ধর্ম নষ্ট করে বেড়াচ্ছে। এতে করেও তাকে ধরতে পারছি না। কিন্তু একবার বাগে পেলে হয় বাছাধনটি, মায়ের দুধ এর কথা মনে করিয়ে দেবো
একদিন আবু জেহেল দেখলো দূর থেকে কাবা ঘরের পাশে কে একজন দাঁড়িয়ে কিছু বলছে। চারদিকে লোকের ভীড়। হালকা পাতলা যুবকটি কিন্তু কণ্ঠ বেশ জোরালো তবুও সে কি বলছে জানার জন্যে দেয়ালের আড়ালে আড়ালে গুটি শুটি মেরে এগিয়ে চললো আবু জেহেল। কাছে গিয়ে বাড়ির আড়ালে দাঁড়িয়ে সে শুনতে পেলো যুবকটির কথা। কী মধুর স্বরে সে বলে চলেছেঃ
আর আল্লাহর বান্দা তো তারাই
যারা হেঁটে চলে জমিনের ওপর দিয়ে ধীরে সুস্থে,
আর মুর্খরা যখন তাদের সাথে কথা বলে
তখন সালাম বলে দেয় তাদেরকে।
আর তারা যারা তাদের প্রতিপালকের সামনে
সিজদায় নত হয়ে দীনতা তার সাথে দাঁড়িয়ে রাত কাটিয়ে দেয়।
আর যারা দোয়া করে,
হে আমাদের প্রতিপালক- প্রভু!
দোজখের আযাব থেকে আমাদের দূরে রাখো,
সন্দেহ নেই দোজখের আযাব বড়ই কষ্টকর।
আল্লাহর কালাম শুনে আবু জেহেলের বুক দূরু দূরু করতে লাগলো কেঁপে উঠলো তার সমস্ত শরীর। তার মনকে সে যদি স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিতো তাহলে তার মুখ থেকেও কথাগুলোই বের হতো আল্লাহর কালাম সত্য, একথা সে গলা ফাটিয়ে চীৎকার করে বলতো সে নিজেই বলতো- আমি এই আল্লাহর বান্দাদের দলে শামিল হতে চাই। কিন্তু আবু জেহেল তা করতে পারলো না। তার মনকে স্বাধীন হতে দিল না। গর্ব আর অহংকার তাকে সত্যের পথে দাঁড়াতে বাধা দিল। সে লোকগুলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো যেমন বাজপাখি তার শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আজ তোর একদিন কি আমার একদিন। দাড়া তোকে আজ দেখাচ্ছি মজা। আবু জেহেলের আকস্মিক আক্রমণে লোকেরা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। তার হুংকারে সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যে যার মতো দৌড়ে পালিয়ে গেলো কিন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ অসম সাহসী বীরের মতো বুক ফুলিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো একা।
আবু জেহেল রাগে ফেটে পড়লোঃ তোকে বহুদিন থেকে খুঁজে ফিরছি। আজ হাতের নাগালে পেয়ে গেছি। তুই আমাদের গোলাম আর বন্ধু গোত্রের লোকদের আমাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছিস। আমি বহুদিন থেকে দেখে আসছি তুই এদের আমাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলছিস। আজ আমার হাতে তোর মৃত্যু হবে।
ইবনে মাসউদ তার একথার জবাব দিতে চাইলো কিন্তু আবু জেহেল তা শুনতে চাইলো না। ধনুকের বাঁটটি দিয়ে কষে মারলো ইবনে মাসউদের মাথায়। মাথা ফেটে গেলো রক্তে ভেসে গেলো ইবনে মাসউদের কপাল, মুখ, জামা, কাপড়। কিন্তু তার কোনো পরওয়া করলো না সে। ঝাঁপিয়ে পড়লো আবু জেহেলের ওপর।।
আচ্ছা, এই কথা? তাহলে জেনে রাখো, আমিও হোযাইল বংশের ছেলে।
এই বলে আবু জেহেলের বুকে মারলো এক ঘুষি, একই সঙ্গে মুখে জোরসে এক চড় কষে মারলো আবু জেহেল ছিটকে পড়ে গেলো পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলেও তার চেয়ে অনেক বেশী অবাক হলো সে। সে হলো কুরাইশ দলপতি আর তাকে কিনা অপমান করলো আজ হোযাইল গোত্রের একরত্তি একটি ছেলে। এর প্রতিশোধ নিতে হবে। রাগে, অপমানে, ক্ষোভে ফুলতে ফুলতে সে তার গোত্রের লোকদের কাছে এসে বললোঃ হে বনী মাখযুম! তোমাদের মধ্যে যদি একটুও লজ্জা থাকে, নিজের গোত্রের প্রতি যদি একটুও ভালোবাসা থাকে, তাহলে হোযাইল গোত্রের আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের থেকে আমার প্রতিশোধ নাও। সে আমাকে এমনভাবে অপমান করেছে যে একমাত্র তার রক্ত দিয়েই কলংক কালিমা ধোয়া যেতে পারে। সঙ্গে সঙ্গেই কয়ক ডজন লোক তীর, তলোয়ার, বর্শা নিয়ে ইবনে মাসউদের তালাশে বেরিয়ে পড়লো কিন্তু বদরের যুদ্ধের আগে আবু জেহেল আর তার মুখোমুখি হতে পারলো না।

No comments:

Post a Comment

Popular Posts