মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Sunday, August 9, 2020

জরিমানা - ছোট গল্প - হাসির গল্প - রম্য গল্প - মজার গল্প

জরিমানা - ছোট গল্প - হাসির গল্প - রম্য গল্প - মজার গল্প

জরিমানা - ছোট গল্প - হাসির গল্প - রম্য গল্প - মজার গল্প

তখন ইংরেজ আমল। ঢাকা এক ছোট মফস্বল শহর। কাজ-কর্ম-চাকরি বাকরি সব কিছুই কলকাতায়। বিয়ের বাজার, রোগীর চিকিৎসা, ছেলের মুসলমানীর দাওয়াতিদের খাওয়ানোর বাজার-সদাইয়ের জন্য এমনকি ধনী লোকের মেয়ের নাক-ফোড়ানির উৎসব বা পুতুলের বিয়ের লওয়াজিমা ফর্দ নিয়েও ছুটতে হতো কলকাতায়। তো, এক কৃপণ গেরস্ত মেয়ের বিয়ের বাজার করতে কলকাতায় যাচ্ছে। তখন কলকাতায় যেতে হতো নারায়ণগঞ্জ বা কার্তিকপুর থেকে গোয়ালন্দ হয়ে স্টিমারে স্টিমারে গোয়ালন্দ পৌঁছে সেখান থেকে ট্রেনে কলকাতা। গোয়ালন্দ স্টিমার ঘাট ছিল তখন বেশ জমজমাট। দোকান-পাট, ফেরিঅলা-হোটেল, নৌকায় ভাসমান হোটেল, কুলি-মিস্তির ছোটাছুটি হৈচৈ-এর এক এলাহিকাণ্ড। কৃপণ গেরস্ত ভাবছিল, রাস্তাঘাটে খেয়ে আর পয়সা নষ্ট করবে না। কলকাতায় পৌঁছেই একবারে যা হোক কিছু খেয়ে নেবে। কিন্তু সে খেয়াল করেনি যে নদীপথে যাত্রাকালে বাতাস নদীর আবহাওয়ায় দ্রুত ক্ষিধা লাগে এবং ক্ষিধাটা চবড় করে বাড়তে থাকে। অতএব কিছু খেয়ে নেবার ইচ্ছায় সে ঘাটের এক হোটেলে ঢুকে পড়ে।
হোটেলে তখন মেলা লোক খাচ্ছে। গ্রাহকরা খেয়েদেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পয়সা দিচ্ছে। ম্যানেজার একজন পয়সা দিতে তার সামনে আসলেই ক্রিং ক্রিং বেল বাজায়।
ওদিকে বয়রা চিৎকার দিয়ে ওঠে:
সামনে চার আনা, তার পেছনে তিন
তার পেছনে সাড়ে আনা-গুনে বুঝে নিন।
তো, আমাদের কৃপণ লোকাটও গেছে, সেই হোটেলে খেতে। তার ভয়, হৈটাল আলারা গলাকাটা দাম নেয়। তাই, এক টেবিল বয়কে কাছে ডেকে সে জিজ্ঞাসা করে : সস্তায় কি খাওন যায় কতো! ভাত খামু। 
বয় : ভাত, নুন পানিসব চাইতে সস্তা, তিন পয়সা। আর লগে একখান পোড়া সিটি শুকনা মরিচ লইলে এক আধলা বেশি। 
কৃপণ লোক : নারে, অত শুকনা ভাত গলা দিয়া যাইব না।
বয় : পানি দুই গেলাস খাইবেন, তাইলেই যাইব।
কৃপণ : আর একটু দামী খাওনের কথা কও বাজান।
বয় : তাইলে ভাত লন, আর ইলশা মাছের সুরা লন, সঙ্গে মাছ লইলে পড়ব ছয় আনাশুধু সুরা আর ডাইল লইলে পড়ব তিন আনা। আর এক কাম করবার পারেনসে ব্যবস্থাও এই হৈটালে আছে।
কৃপণ লোক : কী ব্যবস্থারে বাজান!
বয় : আপনে ভাত আর ইলশা মাছের সুরুয়া লইবেন। আর আপনের সামনে একটা বাটিতে থাকব ফৈর-আলা তেলে-ঝোলের একখান দবজ (পুরুষ্ট) পেটি; ভাত খাইবেন ইলশার সুরা দিয়া, তয় পেটি দেইখ্যা দেইখ্যা আর পেটিই খাইতেছেন মনে কইরা খাইতে পারেন। তাতে আর এক আনা বেশি পড়ব এক আনা চোখ লাগানি জন্য। যে মানুষটা পরে পেটি দাম দিয়া কিনা খাইব তার পেট সাথে সাথে গটরমটর করলে আমরা ফ্রি বড়ি সাপ্লাই দেই। হেই বড়ি কিনতে আধ আনা, আর আপনের দেখন সুখ খাওনের চার্জ আধ আনা।
আমাদের কৃপণের এই ব্যবস্থা পছন্দ হয়। সে দেখন সুখ খাওয়ার অর্ডার দেয়। আর চার আনা পয়সাও খুতির ভিতর থেকে বের করে রাখে। খাওয়া শেষে বয় ম্যানেজারের ক্রিং গুনে বলে : তিন নম্বরে দেখন সুখ অলার ড্যামাইজ (ডেমারেজ) চার্জসহ সাড়ে চাইর আনা।
কৃপণ : কেন, কেন, আধ আনা বেশি কেন? বয় : ইলশার পেটিতে যে চাটন দিছ, তা দেখি নাইতার জন্য জরিমানা মাত্রই আধ আনা। 

1 comment:

Popular Posts