মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Wednesday, August 26, 2020

দি অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্যা ড্যান্সিং ম্যান – স্যার আর্থার কোনান ডয়েল – শার্লক হোমস সিরিজ - বাংলা অনুবাদ - The Adventure of the Dancing Men - Bengali Translation - Sir Arthur Ignatius Conan Doyle - Sherlock Holmes Series - part – 3

দি অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্যা ড্যান্সিং ম্যান – স্যার আর্থার কোনান ডয়েল – শার্লক হোমস সিরিজ - বাংলা অনুবাদ -  The Adventure of the Dancing Men - Bengali Translation - Sir Arthur Ignatius Conan Doyle - Sherlock Holmes Series 

আগের পর্ব (পর্ব ২)
দি অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্যা ড্যান্সিং ম্যান – স্যার আর্থার কোনান ডয়েল – শার্লক হোমস সিরিজ - বাংলা অনুবাদ -  The Adventure of the Dancing Men - Bengali Translation - Sir Arthur Ignatius Conan Doyle - Sherlock Holmes Series - part – 3
আমাদের অবাক চোখের সামনে দিয়ে চিঠি আর টেলিগ্রাম নিয়ে চলে গেল ছেলেটি। পরিচারকদের কড়া নির্দেশ দিল হোমস, ‘কোনও অচেনা লোক মিসেস কিউবিটের সাথে দেখা করতে এলে যেন তাঁর এই অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানানো না হয়। সোজা ড্রইংরুমে নিয়ে বসাবে। যা বললাম অবশ্যই সেই মত করবে। এমন করে বোঝালেন যেন এই কাজের ওপরই নির্ভর করছে সব কিছু। পরিচারকদের তালিম দেয়ার পালা শেষ করে তিনি আমাদের নিয়ে বসার ঘরে এলেন। ডাক্তার রোগী দেখার অজুহাতে বিদায় নিলেন। রইলাম শুধু আমি, হোমস আর ইনসপেক্টর।
ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করতে হবে আমাদের,বললেন হোমস।তবে অপেক্ষাটা আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি আমি,বলে তিনি সাইড টেবিল টেনে নিয়ে ওটার ওপর একে একে বিছাতে লাগলেন সেই বিদঘুটে ছবিঅলা কাগজগুলোঅসীম ধৈর্য ধরে কৌতূহল দমনের জন্যে প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার বন্ধু ওয়াটসনকে,বক্তৃতার ঢঙে বলতে শুরু করলেন হোমস। ইন্সপেক্টর মার্টিন, নিশ্চয়ই আমার কার্যকলাপ দেখে ভারি অবাক হয়ে যাচ্ছেন। ভয় নেই, এখনই ফাস করে দেব সব রহস্য। তবে সম্পর্কে কিছু বলতে হলে, মি. কিউবিট যেদিন বেকার স্ট্রীটে প্রথম আমার সাথে দেখা করতে আসেন, সেদিনের থেকেই শুরু করতে হবে।
সংক্ষেপে তিনি প্রায় সব ঘটনাই বললেন, ছবিগুলো দেখে যে কেউই ফালতু বলে উড়িয়ে দিত। এই ভয়ঙ্কর ঘটনা না ঘটলে আজও আমি কাউকে বোঝাতে পারতাম না। নানান ধরনের সাঙ্কেতিক লিপির সঙ্গে মোটামুটি পরিচয় আছে আমার। সম্পর্কে একটা গবেষণা গ্রন্থও প্রকাশ করেছি। তবে এটা আমার কাছে একেবারে নতুন মনে হয়েছে। এই সঙ্কেত যারা আবিষ্কার করেছে, তাদের উদ্দেশ্য হলো প্রকৃত সংবাদ গোপন করা। সোজা অর্থে, সবাইকে ধোঁকা দেয়া। যাতে দেখলেই লোকে বুঝতে পারে, বাচ্চাদের খেয়াল খুশিতে আঁকা ফালতু ছবি এটি। যখনই বুঝতে পারলাম, মূর্তিগুলো এক একটা অক্ষরের প্রতীক তখনই পানির মত সহজ হয়ে গেল সব। প্রথম যে লেখাটা পেলাম তা এত সংক্ষিপ্ত যে কিছুই বের করতে পারলাম না তা থেকে। এটুকু শুধু ধরতে পারলাম, এটার অর্থ E জানেন নিশ্চয়ই ইংরেজি বর্ণমালায় E-এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ছোটখাটো বাক্যের মধ্যেও কয়েকটা E থাকে। প্রথম খবরটাতে চারটা প্রতীক ছিল হুবহু এক। তাই এই প্রতীককে ধরে নিলাম E মাঝে মাঝে প্রতীক চিহ্নগুলোর হাতে নিশান আছে। কিন্তু ওগুলো দেখলাম কেমন ছড়ানো ছিটানো সহজেই ধরে নিলাম নিশান মূর্তিগুলো সব এক একটা বাক্যের ফুলস্টপ। এটুকু বের করার পর আসল ঝামেলা শুরু হলো কারণ E এর পর কোন শব্দের প্রভাব বেশি তা আমি কেন, অন্য গবেষকরাও বের করতে পারেননি। একটা বইয়ের পাতা নিয়ে গবেষণা করতে বসলাম, কিন্তু ব্যর্থই হলাম। তবু গবেষণা করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক দিয়ে অক্ষরগুলো T.A.O.I.A.S.H.R.D.Lএভাবে সাজালাম। তবে বাক্যে T.A. এবং I-এর ব্যবহারিক অনুপাত এক, তাই পরবর্তী ছবিগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। দ্বিতীয় বার দেখা করতে গিয়ে মি. কিউবিট আমাকে দুটো ছোট বাক্য আর একটা সংবাদ দিলেন।
XXRXY
এই শব্দটির মধ্যে কোনও নিশান না থাকায় বুঝতে পারলাম ওটা একটা গোটা শব্দ। এর মধ্যে E-এসেছে দুবার-দ্বিতীয় চতুর্থ স্থানে। শব্দটা NEVER, SEEকিংবা LEVER হতে পারে। এই শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছেঅনুনয়-বিনয়”-এর প্রত্যুত্তরে। এবং বিচার-বিবেচনা করে বুঝতে পারলাম, এটা লিখেছেন মিসেস কিউবিট নিজে।
এই অনুমান সত্যি ধরলে এই তিনটি যথাক্রমে N, V, R
অন্যান্য অক্ষরগুলো সম্পর্কে তখনও যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। তবে অন্য ছবিগুলোর সাথে মিলিয়ে নিশ্চিত হয়ে গেলাম ছবি আঁকিয়ে মিসেস কিউবিটের পূর্ব পরিচিত।
পতাকা হাতের পরের এই পাঁচটিতে E-আছে দুইবার, শুরুতে আর শেষে। এটি ধরে নিলাম ELSIE, কারণ এই প্রতীকটি তিন তিনবার ব্যবহার করা হয়েছে খবরের শেষে। এখানেই পেয়ে গেলাম L.S. এবং I-কে। এলসির আগের তিনটি প্রতীক দিয়ে যে COME-হবে, তা নিশ্চিত ধরে নিলাম। C.0.M ধরেই E-টা শেষে বসিয়ে নিলাম। এই সামান্য পুঁজি নিয়েই প্রথম খবরটা পড়ার চেষ্টা করলাম। ছোট ছোট শব্দে ভাগ করে যে প্রতীকগুলো বুঝতে পারলাম না সে জায়গায় ফুলস্টপ বসিয়ে দিলাম। ফলাফল দাঁড়াল 47-M. ERE.SLNE !
এখন প্রথম বর্ণটা A না হয়ে পারে না, কেননা সংক্ষিপ্ত খবরটার মধ্যে একই প্রতীক ব্যবহার করা হয়েছে তিনবার। এবং এগুলো রীতিমত অর্থবহন করছে। দ্বিতীয় শব্দের প্রথম বর্ণটাকে ধরে নিলাম H তা হলে বাক্যটা দাঁড়াচ্ছে-AM HERE AE SLANE.C
AE একটা নাম ধরলে, এর মাঝে B বর্ণটা বসাই স্বাভাবিক। তা হলে সম্পূর্ণ বাক্যটা হলো- AMHERE. ABE SLANEY.
এক সঙ্গে অনেকগুলো শব্দ পেয়ে যাওয়াতে বিনা বাধায় দ্বিতীয় খবরটা পড়লাম।
এর পরের ছবিটা থেকে পেলাম A. ELLRI. ES ভেবে দেখলাম T আর G দিয়ে যদি শূন্যস্থান পূরণ করি, তা হলে একটি অর্থ পাই, AT ELLREGES, কোনও সরাইখানা কিংবা বাড়ির নাম, যেখানে লোকটা আস্তানা গেড়েছে।
ইন্সপেক্টর মার্টিন আর আমি এতক্ষণ রুদ্ধশ্বাসে শুনছিলাম হোমসের প্রতীকি ধাধার অর্থ উদ্ধারের তাক লাগানো কাহিনি। হোমস একটু থামতেই অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ইন্সপেক্টর, তারপর? বলুন, থামলেন কেন? ইন্সপেক্টরের যেন তর সইছে না
ABE SLANEY নামটা যে আমেরিকান সে বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ ছিল না। ABE শব্দটা আমেরিকাতেই প্রচলিত। আমেরিকা থেকে মিসেস কিউবিটের নামে চিঠি আসার পর থেকেই তো শুরু হয়েছে এই রহস্যের। বিয়ের আগের জীবন সম্পর্কে স্বামীকে কিছুই না জানানো, এবং চিঠির প্রসঙ্গটাও চেপে যাওয়াতে বুঝলাম, রহস্যটা অপরাধ সংক্রান্ত। উইলসর হারগ্রিয়েভ, নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আমার বন্ধু অ্যাবে স্লানি সম্পর্কে তথ্যের জন্য অনুরোধ জানিয়ে টেলিগ্রাম করলাম তাকে। কয়েক দিন পর জবাব এল- “শিকাগোর সবচেয়ে বিপজ্জনক কুখ্যাত খুনে ডাকাত, বদমাশ
এর পরের ছবিটার অর্থ বের করতে খবরটা দাঁড়াল ELSIE, RE ARE TO MEET THY GOT P আর D দিয়ে মাঝের শব্দ পূরণ করতেই আঁতকে উঠলাম আমি। বুঝলাম, কাকুতি মিনতি ছেড়ে এখন ভয় দেখাতে শুরু করেছে শয়তানটা। আমেরিকান খুনীদের প্রকৃতি সম্পর্কে যতটুকু জানি, তাতে অহেতুক দেরি করলে ভয়ানক ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই ওয়াটসনকে নিয়ে ভোরের ট্রেনেই নরফোকে চলে এলাম। এখানে পা দিয়েই শুনলাম ক্ষতি যা হবার তা আগেই হয়ে গেছে। 
অদ্ভুত!আবেগে গদগদ হয়ে গেল ইন্সপেক্টর মার্টিনের কণ্ঠ।সত্যি আপনার সঙ্গে কাজ করতে পেরে ধন্য হলাম। কিন্তু...একটা কথা, মি. হোমস, মানে, আমাকে তো ওপরঅলার কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে...ইতস্তত করতে লাগলেন ইন্সপেক্টর
হ্যা, বলুন?জিজ্ঞেস করল হোমস।
ওই খুনে অ্যাবে স্লানি সত্যি যদি এলরিজের খামার বাড়িতে লুকিয়ে থাকে, তা হলে আমরা এখানে বসে থাকলে তো পালিয়ে যাবে সে।’   
পালাবে না। 
আপনি জানলেন কী করে?
পালান মানেই নিজের অপরাধ স্বীকার করে নেয়া।’   
চলুন না, আমরাই গিয়ে ওকে গ্রেফতার করি। 
আমি যে-কোনও মুহূর্তে ওকে এখানে আশা করছি।’   
স্বেচ্ছায় এখানে আসবে? অবাক হলেন ইন্সপেক্টর। হ্যা, আমি ওকে আসতে লিখেছি। 
যেদিন এই খবর পেলাম সেদিনই মি. কিউবিটের কাছ থেকে পেলাম আরেকটি নতুন খবর।’   
আপনি লিখেছেন বলেই আসবে? অসম্ভব! বরং আপনার চিঠিতে বিপদের গন্ধ পেয়ে কেটে পড়বে সে। 
ধরনের চিঠির বয়ান কেমন হওয়া উচিত সে জ্ঞান নিশ্চয়ই আছে আমার, মি. মার্টিন। আর ভুল যে আমি করিনি তা এই মুহূর্তে বাইরে তাকালেই বুঝতে পারবেন।
ঝট করে সবাই তাকালাম জানালা দিয়ে। লম্বা, সুদর্শন এক ব্যক্তি এগিয়ে আসছে এই বাড়ির দিকেই। পরনে ধূসর রঙের সুট, মাথায় পানামা টুপি। গালভর্তি সুন্দর করে ছাঁটা কালো দাড়ি। হাতের ছড়িটা এমনভাবে ঘোরাতে ঘোরাতে আসছে, দেখে মনে হচ্ছে এটা যেন ওরই বাড়ি। কলিং বেল বাজতেই দ্রুত উঠে দাঁড়াল হোমস।’   
চলুন, দরজার আড়ালে ওত পেতে থাকি। আর, ইন্সপেক্টর, আপনি হাতকড়াটা রেডি রাখুন।’   
একটি মুহূর্তের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেল ঘরটা। আস্তে করে খুলে গেল দরজার কপাট দুটো। ঘরের ভিতর পা দিল লম্বা লোকটি। চোখের পলকে পিস্তল ঠেকাল হোমস লোকটার মাথার পিছনে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার হাতে হাতকড়া এঁটে দিলেন ইন্সপেক্টর। ব্যাপারটা এত দ্রুত আর নিপুণভাবে ঘটে গেল যে, বুঝে উঠতে খানিকটা সময় লাগল তার। বুঝতে পেরেই সে হিংস্র চোখে তাকাল আমাদের দিকে।
আশ্চর্য তো!তিক্ত কণ্ঠে বলল লোকটি।মিসেস হিলটন কিউবিটের চিঠি পেয়েই এসেছি আমি।’   
তা জানি, মুচকি হেসে বললেন হোমস।’   
তা হলে? তা হলে কী বলতে চান, এই ফাঁদ উনিই পেতেছেন?
মিসেস কিউবিট মারাত্মক আহত। বাঁচার আশা নেই।’   
কী পাগলের মত বলছেন, চেঁচিয়ে উঠল সে। তারপর হাহাকারের ভঙ্গিতে বলল কিন্তু কেমন করে হলো? আঘাত তো ওর লাগেনি, লেগেছে ওর স্বামীর। আমি এলসিকে আঘাত করতে পারি না। ওকে ভয় দেখাতে পারি, কিন্তু ওর একটা চুলও স্পর্শ করার দুঃসাহস আমার নেই। বলুন আপনারা, ওর কোনও ক্ষতি হয়নি, প্লীজ, বলুন...’   বিলাপ করতে করতে ভেঙে পড়ল লোকটা।
গতরাতে ওর মৃত স্বামীর পাশে ওকে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাওয়া যায়,বললেন হোমস। হাতকড়া লাগান অবস্থায়ই দুহাতে মুখ ঢেকে অস্ফুট স্বরে কাঁদতে লাগল লোকটা। খানিকক্ষণ বাদে মুখ তুলল সে। হতাশায় ভেঙে পড়া শান্ত নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলল, কিছুই লুকাব না, এলসির স্বামীকে আমি গুলি করেছি। কারণ ওই লোকই আগে ছুঁড়েছিল। খুনোখুনির কোনও উদ্দেশ্য আমার ছিল না। আপনারা যদি ভেবে থাকেন, এলসিকে আমি আহত করেছি, তা হলে বলব, আমার আর ওর সম্পর্কে কিছুই জানেন না আপনারা আমার পৃথিবীতে আমার চেয়ে ওকে আর কেউ বেশি ভালবাসেনি। অনেক আগে থেকেই আমার বাগদত্তা। আমাদের মধ্যে নাক গলানোর কোনও অধিকারই ছিল না ওই ইংরেজটার। আমি এসেছিলাম সেই অধিকারেরই দাবি জানাতে।’   
আপনার স্বরূপ চিনতে পেরেই ভদ্রমহিলা পালিয়ে এলেন আমেরিকা থেকে,কঠোর স্বরে বললেন হোমস, আপনার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবার জন্যেই বিয়ে করলেন তিনি সম্মানীয় এই ইংরেজ ভদ্রলোককে। কিন্তু ওঁর সে সুখ আপনার সহ্য হলো না। কুকুরের মত গন্ধ শুকে শুকে বার করলেন ওঁকে। দুর্বিসহ করে তুললেন তার জীবন। যে স্বামীকে তিনি এত শ্রদ্ধা করতেন, আপনি চাইলেন, তাকে ছেড়ে তিনি আবার আপনার ঘৃণ্য জীবনে চলে আসুক। যেহেতু ভদ্রমহিলা আপনার প্রস্তাবে রাজি হননি, তাই প্রাণ দিতে হলো তার স্বামীকে আপনার হাতে। প্রাণপ্রিয় স্বামীর মৃত্যুতে তিনিও বাধ্য হলেন আত্মহত্যা করতে। মি. অ্যাবে স্লানি, জঘন্য খুনি আপনি। আদালতে আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে।’   
এলসি বেঁচে না থাকলে কোনও কিছুর পরোয়া করি না আমি, বেপরোয়াভাবে বল সে। কিন্তু একটা জিনিস আমি বুঝতে পারছি না, এলসি যদি ভয়ানক আহতই হয়ে থাকে, তা হলে এই চিঠিটা লিখল কে?’ বলে সে টেবিলের ওপর ছুঁড়ে দিল চিঠিটা।
আমি লিখেছি,জবাব দিল হোমস।
আপনি? অসম্ভব!অবিশ্বাসে ভ্রু কুঁচকে গেল স্লানির।জয়েন্ট ছাড়া পৃথিবীর আর কারও পক্ষেই নাচুনে মূর্তিদের রহস্য জানা সম্ভব নয়। 
কেউ একজন যদি কিছু আবিষ্কার করতে পারে, অন্য একজন তার পুনরাবিষ্কার করতে পারবে না, একথা আপনি কেমন করে ধরে নিলেন, মি. স্লানি? আপনাকে নরউইচে নিয়ে যাবার জন্য গাড়ি এসে গেছে। যাবার আগে আপনাকেএকটা অনুরোধ করছি মি. স্লানি। মারাত্মক আহত হলেও প্রমাণের অভাবে মিসেস কিউবিটকে স্বামী হত্যার অপরাধে অপরাধী করা হবে। জঘন্য এই মিথ্যে অপবাদ যেন তাঁর মাথায় চাপানো না হয়। আপনি তো জানেন ভদ্রমহিলা সম্পূর্ণ নিরপরাধ।'
এলসির জন্য এটুকু করতে পারলে তাও নিজেকে কিছুটা ক্ষমা করতে পারব।'
আগে থেকেই আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি, হঠাৎ বলে উঠলেন ইন্সপেক্টর। আপনার এই স্বীকারোক্তি প্রয়োজনে ব্যবহার করব আমরা। 
উপেক্ষার ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাকাল স্লানি, তাতে আমার কিছুই এসে যাবে না। এলসিকে আমি ছোটবেলা থেকেই চিনতাম শিকাগোতে আমাদের সাতজনের একটা দল ছিল। এলসির বাবা প্যাট্রিক ছিল সেই জয়েন্ট দলের পাণ্ডা। সেই এই নাচিয়ে মূর্তির আবিষ্কারক। আমরা ছাড়া কেউ জানত না এর রহস্য। এলসি জানত। বড় হয়ে সে আমাদের কার্যকলাপকে ঘৃণা করা শুরু করল। একদিন সে সবার চোখে ধুলো দিয়ে জমানো কিছু টাকা নিয়ে পালিয়ে গেল। বহু খোঁজাখুঁজির পর ওর এই ঠিকানা পেলাম। চিঠি লিখলাম, জবাব পেলাম না। এসে দেখি বিয়ে হয়ে গেছে।’   
মাসখানেক হলো এখানে এসেছি। এলরিজের খামার বাড়িতে উঠেছি। রোজ রাতে এলসির জন্যে খবর রেখে আসতে লাগলাম। একদিন আমার লেখার নীচে ওর লেখা দেখে বুঝতে পারলাম, সবই দেখেছে সে। ওর জবাব পেয়ে রেগে গেলাম আমি। তারপরই ভয় দেখাতে শুরু করলাম। একটা চিঠিও পেলাম ওর কাছ থেকে। মিনতি করেছে যেন ওর আশা ত্যাগ করি। ওর স্বামীর নামে কোনও কলঙ্ক রটলে আত্মহত্যা করবে সে, - জানিয়েছে। সবশেষে লিখেছে, রাত তিনটায় সে পড়ার ঘরের জানালার সামনে অপেক্ষা করবে আমার জন্যে। ওর নির্দেশ মতই দেখা করতে এলাম রাতে। টাকা দিয়ে আমাকে সরাতে চাইল সে। ভীষণ রেগে গেলাম আমি। জানালা দিয়েই হ্যাচকা টান দিলাম ওকে। সেই মুহুর্তে ঝড়ের বেগে রিভলভার হাতে ঘরে ঢুকল ওর স্বামী। মেঝেতে ছিটকে পড়ল এলসি। মুখোমুখি হলাম রিভলভারধারী দুজন। রিভলভার তুলে ভয় দেখিয়ে সরে পড়তে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু মুহূর্ত দ্বিধা না করে গুলি ছুঁড়ল সে, আমিও ছুঁড়লাম বাগানের মধ্য দিয়ে পালানোর সময় জানালা বন্ধ হওয়ার শব্দ শুনেছি। কসম করে বলছি, এর এক বর্ণও মিথ্যে না চিঠি পেয়ে এখানে আসার আগে পর্যন্ত কিছুই জানি না আমি।’   
চলুন, ওঠা যাক,বলে অ্যাবে স্লানির হ্যাণ্ডকাফ ধরে উঠে দাঁড়ালেন ইন্সপেক্টর মার্টিন।
যাবার আগে একটি বারের জন্য কি এলসিকে দেখতে পারি?’ অনুনয় ঝড়ে পড়ল স্নানির কণ্ঠে।
না। ওঁর জ্ঞান ফেরেনি এখনও। চলি, মি. হোমস। ভবিষ্যতে ধরনের কেসে আপনাকে পাশে পেলে ভাগ্যবান মনে করব নিজেকে। 
জানালার সামনে দাঁড়িয়ে গাড়িটাকে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে দেখলাম দূরে। ঘুরে দাঁড়াতেই চোখে পড়ল স্লানির টেবিলের ওপর ছুঁড়ে ফেলা দোমড়ানো চিরকুটটা। এটা সেই চিঠি যা দিয়ে হোমস খুনিটাকে ফাঁদে ফেলেছিল। কৌতূহল ভরে তুলে নিলাম হাতে।
দেখ তো, পাঠোদ্ধার করতে পার কিনা?’ মুচকি হেসে বলল হোমস।
ওটা খুলে চোখের সামনে মেলে ধরে নির্বোধের মত দাঁড়িয়ে রইলাম। কোনও অক্ষর নেই। শুধু নাচতে নাচতে এগিয়ে চলেছে একসারি আঁকা ছবি।
এতক্ষণ যে পদ্ধতি বোঝালাম,' হাসতে হাসতে বললেন হোমস। তাই দিয়ে বের করলে অর্থ দাঁড়ায়-“এখুনি এখানে চলে এস আমি নিশ্চিত ছিলাম, আমন্ত্রণ অগ্রাহ্য করার সাধ্য ওর নেই। কারণ, তার ধারণা এই সঙ্কেত লিপি মিসেস কিউবিট ছাড়া আর কেউ যে জানে না। তা হলে ওয়াটসন, অশুভ বার্তা বহনকারী এই বিচিত্র ছবি এবার শুভ কাজে লাগালাম, কী বল? বলেছিলাম, নতুন লেখার উপকরণ দেব। পেয়েছ নিশ্চয়ই? আর হ্যা, তিনটা চল্লিশে আমাদের ট্রেন, রাতের খাওয়ার আগেই বোধহয় বেকার স্ট্রীটে পৌছাতে পারব।  উপসংহারে আমার সামান্য টা কথা বলার আছে। নরউইচ আদালত অ্যাবে স্লনিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। মিসেস হিলটন কিউবিট সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে স্বামীর সম্পত্তি দেখাশোনা এবং দুস্থের সেবায় জীবন উৎসর্গ করেছেন। বিয়ে করেননি, করবেনও না ভবিষ্যতে-এটাই জানিয়েছেন।

মূলঃ স্যার আর্থার কোনান ডয়েল
অনুবাদঃ ফারহানা নাতাশা
সম্পাদনাঃ মারুফ মাহমুদ

No comments:

Post a Comment

Popular Posts