কাউয়া কিৎ - ছোট গল্প – মজার গল্প - হাসির গল্প
ময়মনসিংহের কোনও অঞ্চলের এক গ্রাম। এই গ্রাম নিয়ে কিছু রঙ্গরস করে মানুষ। ওই গ্রামের কোন ছেলে আশপাশের কোন গ্রামে বিয়ে করলে বুড়াদের কেউ হয়ত জিজ্ঞাসা করলঃ জামাইর বাড়ি কোথায়?
উত্তরে বলা হয়
: অমুক গ্রাম।
বুড়া প্রশ্নকর্তা গম্ভীর হয়ে গিয়ে বললেন : ‘এ’!
আর চারদিকে একটু খুকখুক, একটু কৃত্রিম কাশি শুরু হয়। এ হলো বোমা ফাটার পূর্বাভাস। তারপর বোমাটা ফাটে। নিজেকে আড়ালে রেখে গলা বিকৃত করে কেউ উচ্চারণ করেন
: কাওয়া কিৎ।
আগন্তুক বা বাইরের কেউ বুঝবে না এর শানে নুযুল কী? কিন্তু ওই আশপাশের লোকেরা বোমা ফাটার মতো শব্দে হেসে উঠবে।
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
- - - - - - - - - - - -
কাউয়া কিৎ - ছোট গল্প – মজার গল্প - হাসির গল্প |
এক অধ্যাপক ফোন করে বললেন : ‘কাওয়া কিৎ’।
আমি বলিঃ কি বলেন, কে আপনি?
অধ্যাপক : ঝুনঝুনা বুইড়া অইচি, খায়েস মিটে নাই;
চুল ফুলাইয়া-বান্ধা পুতুলের মতন এক মহিলাকে বিয়া করতাম চাই–বউয়ে তাই বাইন্ধা রাহে। কথা তিনি এভাবেই বলেন। আমি হেসে উঠি।
তিনি বলেন : আজাইরা প্যাচাল থাহুক। গপ্পডা কইয়াম।
আমি বলি ; বলেন,
আমার কাজে লাগবে। তিনি তা যে ভাষায় বলেন আমি তা প্রমিত বাংলায় লিখছি। ওই গ্রামে কাক তাড়ানোর জন্য বলে “কাউয়া কিং” অর্থাৎ কাক যা। তো, সেই গ্রামের এক ঘি বিক্রেতা ঘিয়ের ভাণ্ড মাথায় নিয়ে হাটে যাচ্ছিল। বহুকাল আগের কথা। তখন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ওই সকল ঘিওয়ালা জঙ্গলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখে, একটু ভেতরে এক বিরাটু খাঁচা। তার ভেতরে এক ছাগল। ঘিওয়ালা ভাবে ভালই হলো। ঘি বেচার টাকাও হবে, ভাল-মন্দ কেনাও যাবে আর মুফতে (মাগনা) পাওয়া ছাগল নিয়ে বাড়ি ফিরব। বউ মহাখুশি হবে। সে ছাগল আনার জন্য ঘিয়ের ভাণ্ড বাইরে রেখে খাচায় ঢোকে। ঢোকামাত্রই পায়ের চাপে খাঁচার দরজা আটকে যায়। কারণ সেটা ছিল বাঘ ধরার খাচা। ঘিওয়ালা ভেতরে আটকে যাওয়ায় কাক এসে ঘি খেয়ে শেষ করে ফেলে। সে বলে কাউয়া কিং,
কাউয়া কিৎ। কাউয়া মহানন্দে ভোজ সারে। বাঘধরারা এসে আচ্ছা পিটুনি দিয়ে তাকে ছেড়ে দিয়ে বলে ; কাওয়া কিৎ। বড় মজা ঘিৎ। (কাক কিসের ভিতরে, বড় মজা ঘি-তে)
কারণ আমরা ফোকলোর আলোচনায় আধুনিকপন্থীরা যারা বলি ফোকলোরের একটা মিনিং বা অর্থ থাকে,
একটা পটভূমি বা প্রসঙ্গ থাকে এবং তা উদ্ধার করতে হয় অকুস্থলে গিয়ে, সেখানে অবস্থান করে এবং মিনিং গবেষক নিজের মাথা থেকে বের করলে হবে না। ওই স্থানীয় লোকের কাছ থেকেই বের করে আনতে হবে। তো,
আমি যে জনকণ্ঠে গ্রামবাংলার রঙ্গরসের বিষয়ে লিখি তা অনেকে যে পড়েন তার পরিচয় পাই সভাসমিতিতে, বিয়েশাদির অনুষ্ঠানে গেলে। কেউ কেউ এমনও বলেন যে,
শুক্রবার জনকণ্ঠ এলে প্রথমেই পড়ি আপনার রঙ্গরস। এদের মধ্যে বিখ্যাত, অখ্যাত, নব্য পরিচিত সবাই আছে। তো,
আমার এ রঙ্গরসের সংসার হল ধারদেনার সংসার। নিজে যা জানি, তারপর বন্ধু-মুরব্বী বয়স্কজন নানা মানুষের কাছে ধার পাই। আর ধারকর্জের জন্য গ্রামগঞ্জে ছুটি। তবেই মিলে দু'একখানা রঙ্গরস। জাতীয় সংসদের বক্তৃতা, জনসভায় বক্তৃতায় কখনো কখনো, তবে গ্রামের বিচার সালিশে এসব পাওয়া যায় বেশি।
কয়েকদিন আগে হঠাৎ ফোন করলেন অগ্রজপ্রতিম সুরসিক এক অধ্যাপক। বললেন, বাইচ্যা আছুইন? বললাম : ষাট বালাই, মরবাম ক্যা?
উত্তরে কয় : জনকণ্ঠ ফোন নম্বরটিও দিতে পারল না। আর এক নাট্যকারকে ফোন করলাম, হে কয় পটল তুলছে। নাইলে কলার ব্যাপারী হইছে, খালি গেরামে যায়। ফোন করলে বউ বলে
: ‘গ্রামে’। আরে কলা না বেচলে গেরামে এতো কি করে?
অধ্যাপক বলেন : তাইতেই তো কলায়ও অহন ভেজাল। কেমিকেল মিশাইয়া বেচে। পরে তিনি বলেন
: ফোন নম্বরটা দেওহাইন। নাট্যকার আমরারে তো কইছে রঙ্গরসের ব্যাপারীর ফোন নম্বর অষ্টরম্ভা (কিছুই না, কলা!)
বয়স তার বার কি তের,
আর সে নাকি জানে ঠিক চৌদ্দ।
নাট্যকার বলেন : অনেক চেষ্টা কইরা বাইর করছি অষ্টরম্ভ হইল আট,
তারপরে বার, তের এবং শেষে যে চৌদ্দ সেটা তো সেই জানে,
ঠিক। এই ফর্মুলায় ফোন করে পেয়ে গেলাম।
No comments:
Post a Comment