মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Tuesday, August 4, 2020

হজরত ইবরাহীম (আঃ) ও নমরুদের কাহিনী - লা জবাব নমরুদ - আব্দুল মান্নান তালিব

 নমরুদ (উইকিপিডিয়া)
লা-জওয়াব নমরূদ

কি হে তোমাদের কি হয়ে গেলো, খাচ্ছনা কেন? এতো এতো সব খাবার-দাবার, ফল-ফলার, মিষ্টান্ন। নাও আর দেরী করো না। সবাই মেলায় চলে গেছে এবার নিশ্চিন্তে খেতে থাকো
কি ব্যাপার, তোমাদের হলো কি? কেউ কোনো কথা বলছে না কেন? তোমরা না সবার প্রার্থনা পূর্ণ করে থাকো। যে যা চায় তাকে তাই দিয়ে দাও। কিন্তু কই কেউ তো দেখি একটু নড়াচড়াও করতে পারো না। আমি জানি তোমরা মাটি আর পাথরের তৈরী মূর্তি ছাড়া আর কিছুই নও
এই বলে হাতের কুড়ালটা নিয়ে ঝপাঝপ মারতে থাকলেন কোপ মূর্তিগুলোর ঘাড়ে, মাথায়, কোমরে, পিঠে, যার যেখানে হাত চলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মূর্তিগুলো ভেঙ্গে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো এখন রয়ে গেলো শুধু বড় মূর্তিটা। ওটাকে আর না ভেঙ্গে ওটারই গলায় ঝুলিয়ে দিলেন কুড়ালটা এবং তারপর বেরিয়ে পড়লেন মন্দির থেকে। বেলা শেষে মেলা থেকে লোকেরা ফিরে আসতে লাগলো জনসমাগমে শহর আবার গমগম করতে লাগলো কিন্তু মন্দিরের মধ্যে ঢুকে তো লোকদের চোখ ছানাবড়া। ঠাকুর-দেবতাদের একি অবস্থা! ভেঙ্গেচুরে চারদিকে একেবারে ছত্রখান হয়ে আছে! যেন বিরাট যুদ্ধ হয়ে গেছে। এদের অবস্থা করলো কে?
নিশ্চয়ই সেই যুবকটির কাজ, কয়েকজন একসাথে বলে উঠলো, তাকে আমাদের দেবতাদের বিরুদ্ধে যা তা বলতে শুনেছি
হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিকই। সেতো মেলায় যায়নি। বলছিল তার শরীর নাকি খারাপ পাশ থেকে আরো কয়েকজন ফুঁসে উঠলো তার নাম বুঝি ইবরাহিম। কাজেই কিছুক্ষণের মধ্যেই হযরত ইবরাহিমকে পাকড়াও করে আনা হলো মন্দিরের মধ্যে। সব লোকেরা সেখানে জড়ো হয়ে গিয়েছিল। তুমি কাজ করেছো? ইবরাহিম! তুমিই কি দুর্গতি করেছে আমাদের দেবমূর্তিগুলোর?
বাহ! অবাক করলে তোমরা। আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেন? এতদিন ধরে তোমরা এদের পূজা করে এলে। এতো ক্ষমতা এদের। কত বড় বড় জিনিস তোমরা এদের কাছে চেয়েছো এরা সংগে সংগেই তোমাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করে দিয়েছে। এদেরকেই জিজ্ঞেস করো, এরাই বলে দিতে পারবে। আমারতো মনে হয় এই বড়টাই কাজ করেছে। দেখছো না কুড়ালটা এর গলাতেই ঝুলছে
তুমি তো জানো ইবরাহিম, আমাদের দেবতারা কথা বলতে পারে না।
তাহলে ভেবে দেখো, যখন এরা কথাও বলতে পারে না, নিজেরাই নিজেদের সাহায্য করতে পারেনা, তখন তোমাদের সাহায্য করবে কেমন করে? তোমরা কি এমনসব প্রাণহীন অবোধ মূর্তিদের পূজা করবে যারা তোমাদের কোনও কল্যাণ করতে পারে না, কোনও ক্ষতি করতে পারে না? তোমাদের জন্যে দুঃখ হয় এবং তোমাদের ঠাকুর দেবতাদের জন্যেও। তোমরা আল্লাহর দাসত্ব করনা। অথচ তিনি সকল ক্ষমতার আধার। তোমরা এই এদেরকে দাসত্ব করো অথচ এদের কোন ক্ষমতাই নেই। তোমরা একটু বুদ্ধি খাটাও, চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করো  
হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দুঃসাহসের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো উত্তেজিত লোকেরা তার চার পাশে জড়ো হতে লাগলো দেখতে দেখতে জমায়েত অনেক ভারী হয়ে উঠলো সুযোগ বুঝে হযরত ইবরাহিম সবাইকে সম্বোধন করে বলে উঠলেন আমি অবাক হচ্ছি, নিজের হাতে তোমরা যেসব মূর্তি তৈরী করো তাদেরকেই আবার পূজা করো কিন্তু আসলে তোমাদেরকেতো আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা যা কিছু তৈরী করো তা সবই তাঁরই সৃষ্টি। জনসমুদ্রে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের উপদেশের কোন প্রভাব পড়লো না। তারা তো হুজুগে মেতে উঠেছিল। হুজুগের কাছে সত্য যুক্তির কোন দামই ছিল না। উল্টো তারা মারমুখী হয়ে উঠলো দেবতাদের বিরুদ্ধে গোস্তাখী করার জন্যে তার উপর চড়াও হলো একদল বললো, চলো তাকে বাদশাহর কাছে নিয়ে যাই। বাদশাহর আদেশে তাকে চরম শাস্তি দিতে হবে। ইতিমধ্যে বাদশাহর দরবারেও খবর পৌছে গিয়েছিল। সময় ইরাকের বাদশাহর উপাধি ছিল নমরূদ। নমরূদ কেবল প্রজাদের দণ্ডমুণ্ডের কর্তাই ছিল না বরং সে তাদের খোদা উপাস্য হিসেবেও নিজেকে জাহির করেছিল। ফলে প্রজারা বিভিন্ন দেব-দেবীর সাথে সাথে তারও পূজা করতো
হযরত ইবরাহিমের ঘটনা শুনে নমরূদ ক্ষেপে গেলো সে ভাবলো ইবরাহিমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে সে আমার খোদায়ীতো আছেই এমনকি আমার বাদশাহীর জন্যেও চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে। তাই তাঁকে উচিত শাস্তি দেয়ার জন্যে দরবারে হাজির করলো
নমরূদ বললোঃ তোমার এত বড় স্পর্ধা, আমার রাজ্যে বাস করে আমাদের বাপ-দাদার ধর্ম অস্বীকার করো? আমাকে খোদা বলে মানো না?
আমি এক আল্লাহর ইবাদত করি হযরত ইবরাহিম () বললেন, তার সাথে কাউকে শরীক করি না। পৃথিবী, আকাশ সবের মধ্যে যা কিছু আছে সবই তাঁর সৃষ্টি। তিনি সবার মালিক প্রভু। তুমিও আমাদের মতো একজন মানুষ। কাজেই তুমি কেমন করে খোদা বা উপাস্য হতে পারো? এবং এই প্রাণ বাকশক্তিহীন মাটি পাথরের মূর্তিগুলোই বা খোদা হয় কেমন করে?
নমরূদ বললো, আমি ছাড়া যদি তোমার অন্য কোন রব থাকে, তাহলে তার এমন কিছু গুণাবলী বর্ণনা করো, যেগুলো আমার মধ্যে নেই।
হযরত ইবরাহিম () বললেন, আমার রব জীবন মৃত্যুর মালিক তিনিই মৃত্যু দান করেন এবং তিনিই জীবন দান করেন।
নাদান বাদশাহ নমরূদ জীবন মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য না বুঝে বলে দিল, আমিও জীবন মৃত্যু দান করি। এই বলে তখনই একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে ধরে এনে হত্যা করলো এবং একজন ফাঁসির আসামীকে মুক্তি দিয়ে দিল।
তারপর ইবরাহিমের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললো, দেখলেতো আমি কিভাবে জীবন মৃত্যু দান করি, এখন বলো কোথায় থাকলো তোমার খোদার বিশেষ গুণ?
হযরত ইবরাহিম () বুঝতে পারলেন, নমরূদ তার লোকদের ধোকা দেবার চেষ্টা করছে অথবা সে জীবন মৃত্যুর রহস্য বোঝে না। কাউকে ফাঁসির মঞ্চ বা মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো তো তাকে জীবন দান এবং কাউকে হত্যা করা তো তাকে মৃত্যু দান করা হয় না। এর ফলে ব্যক্তি জীবন মৃত্যুর মালিক হয়ে যায় না। জীবন মৃত্যুর সম্পর্ক তো প্রাণের সাথে। কোন ব্যক্তিকে বাঁচাবার পর সে কি তার প্রাণের মালিক হয়ে যায়? সে ব্যক্তির প্রাণ কি তার হাতে এসে যায়? অথবা কোন ব্যক্তিকে মেরে ফেলার পর তার প্রাণ কি তার হাতে এসে যায়? হত্যাকারী কি নিহত ব্যক্তির প্রাণের মালিক হয়ে যায়? তার প্রাণতো তার নির্দিষ্ট জায়গায় চলে যায়, যেখানে হত্যাকারীর কোন ক্ষমতা কর্তৃত্ব নেই। হত্যাকারী কেবল তার মরা দেহটা আগলে থাকতে পারে, যার মধ্যে প্রাণ নেই। তাহলে প্রাণ তার হাত ছাড়া হয়ে যায়। ফলে প্রকৃত পক্ষে হত্যাকারী জীবনদানকারী জীবন মৃত্যুর মালিক হয় না। জীবন মৃত্যুর মালিক হন তার স্রষ্টা আল্লাহ। কিন্তু সাধারণ লোকের ক্ষেত্রে ব্যাপারে ভুল বুঝার অবকাশ ছিল এবং নমরূদ তারই আশ্রয় নিয়েছিল। এতে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের আসল উদ্দেশ্য সফল হচ্ছিল না। তিনি চাচ্ছিলেন আল্লাহর একত্ব শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে। তাই তিনি এবার আরো সহজ সোজা কথায় চলে এলেন।
এবার তিনি বললেন, আমি এমন এক আল্লাহকে মানি যিনি পূর্ব দিক থেকে সূর্য উঠান, তুমি তা পশ্চিম দিক থেকে উঠাও।
কথায় নমরূদ হতভম্ব লা-জওয়াব হয়ে গেলো কারণ পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠাবার ক্ষমতা তার ছিল না। কাজেই সাধারণ মানুষকে ধোকা দেয়ার জন্যে সে এবার আর বলতে পারলো না, ঠিক আছে দেখো আমি পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠাচ্ছি। এভাবে সত্যের কাছে মিথ্যা চিরকাল লা-জওয়াব হয়ে এসেছে। কিন্তু তার গোঁড়ামি যায়নি। এটা তার চিরকালের স্বভাব।

No comments:

Post a Comment

Popular Posts