মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Saturday, August 29, 2020

মেইকস দ্যা হোল ওয়ার্ল্ড কিন – ও. হেনরি – বাংলা অনুবাদ - Makes the Whole world Kin – O. Henry – Bengali Translation

মেইকস দ্যা হোল ওয়ার্ল্ড কিন  ও. হেনরি  বাংলা অনুবাদ - Makes the Whole world Kin – O. Henry – Bengali Translation

মেইকস দ্যা হোল ওয়ার্ল্ড কিন ও. হেনরি বাংলা অনুবাদ - Makes the Whole world Kin – O. Henry – Bengali Translation
চোরটা টপ করে জানলা গলে ঘরে ঢুকে পড়ল, তারপর সেখানে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করতে লাগল। দক্ষ চোরেরা কখনও তাড়াহুড়া করে না। বাড়িটার অবস্থান ভদ্র এলাকায়। পুরো বাড়িটা সুনসান নীরব দেখে চোরটা ভাবল বাড়ির গৃহিণী হয়তো বা এই মুহুর্তে কোনও সমুদ্রের ধারের বাড়ির গাড়িবারান্দায় বসে কোন ভদ্রলোকের সঙ্গে গল্প করছেন। ভদ্রলোকটি অমায়িক, আর তার টেকো মাথায় রয়েছে একটা দামী সৌখিন ক্যাপ। মহিলাটি হয়তো তাঁকে বলছে যে তার নমনীয় নিঃসঙ্গ মনের কথা কেউ কখনও বুঝল না। দোতলার সামনের জানালা গুলোর আলো দেখে আর সময়টা বিবেচনা করে চোর অনুমান করল বাড়ির মালিক হয়তো এতক্ষণে তার শোবার ঘরে এসেছে এবং একটু পরেই আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়বে।
পুলিশের খাতায় চোরদের যেভাবে শ্রেণীবিভাগ করা হয়ে থাকে সেভাবে চোরটির শ্রেণী বিশ্লেষণ করতে গেলে মুশকিলে পড়তে হবে। তার চেহারা বড়লোকের মতও নয়, আবার একেবারে খুব গরীবের মতও নয়। ভদ্র, সাদাসিধে চেহারা। সে মুখোশ পরেনি, তার হাতে কোনও টর্চ নেই। এমনকী তার পায়ে রাবারের জুতোও নেই। কেবল একটা আটত্রিশ ক্যালিবারের রিভলবার রয়েছে পকেটে। একমনে পিপারমেন্ট লজেন্স চিবোতে চিবোতে সে চারদিকে চেয়ে দেখতে লাগল। চোরটা খুব বড় কিছু চুরি করার আশায় আসেনি। খুচরো টাকাকড়ি, একটা রুচিসম্মত ঘড়ি, কিংবা পাথর বসানো একটা স্টিকপিন-এই সব নেবে সে, তারচেয়ে বেশি কিছু চাহিদা আপাতত নেই। অর্থাৎ পছন্দ এবং চাহিদার বাইরে কোনও কিছু নেওয়ার লোভ তার নেই, তা যতই মূল্যবান হোক না কেন।
চোরটা নিঃশব্দে প্রায় অন্ধকার শোবার ঘরটিতে ঢুকল। ভদ্রলোক বিছানায় ঘুমিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর অনেক জিনিসপত্র এলোপাথাড়ি ছড়ানো এক তাড়া নোট, একটা ঘড়ি, চাবির গোছা, এক প্যাকেট চুরুট-এসব। চোরটা ড্রেসিং টেবিলের দিকে কয়েক পা এগিয়েছে, এমন সময় ভদ্রলোক একটা গোঙানির মত শব্দ করে চোখ খুললেন পরিস্থিতি দ্রুত বুঝে নিয়ে তিনি তাঁর ডান হাতটা বালিশের তলায় ঢোকালেন, কিন্তু বের করার সময় পেলেন না
চোরটা তার দিকে পিস্তল তাক করে বলল, নড়বেন না।
বিছানায় শোয়া ভদ্রলোকটি চোরের পিস্তলটির গোল মাথার দিকে তাকিয়ে যেমন ছিলেন তেমনিই স্থির হয়ে রইলেন।
এবার চোরটা হুকুম করল, দুটো হাত মাথার ওপরে তোলেন।
যেসব দাঁতের ডাক্তাররা দাঁত তোলার সময় যন্ত্রণা হবে না বলে বিজ্ঞাপন দেন তাদের এক রকম ছোট কাঁচাপাকা চুঁচলো দাড়ি থাকে। ভদ্রলোকটিরও সেরকম দাড়ি ছিল। তাকে দেখে মনে হয় তিনি সম্ভ্রান্ত এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। একটু যেন বিরক্ত হয়েছেন বলে মনে হলো বিছানায় উঠে বসে ডান হাতটা মাথার উপর তুললেন।
আমি আপনাকে দুটো হাতই মাথার উপর তুলতে বলেছি। আপনি নিশ্চয় দুই পর্যন্ত গুনতে পারেন, চোরটা বলল। এমনও হতে পারে যে আপনি বাঁহাতি লোক। কাজেই আপনাকে দুটো হাতই তুলতে হবে। তাড়াতাড়ি হাত তোলেন।
ভদ্রলোক মুখটা বিকৃত করে বললেন, ও হাতটা তুলতে পারি না।
কেন, ও হাতে কী হয়েছে?' চোর প্রশ্ন করল।
ভদ্রলোক বললেন, কাধে বাতের মত হয়েছে।
ফুলেছে নাকি? চোরটা সহানুভূতি প্রকাশের স্বরে প্রশ্ন করল।
ফুলেছিল, কিন্তু এখন ফোলাটা কমেছে, ভদ্রলোক জবাব দিলেন।
চোর দুএক মুহূর্ত চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। সে একবার ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা জিনিসপত্রের দিকে চেয়ে দেখল, তারপর খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে বিছানার উপর বসা ভদ্রলোকটির দিকে তাকাল। হঠাৎ একটা অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে হাসল।
ভদ্রলোক বিরক্ত হলেন।
বললেন, ওরকম করে আমার দিকে চেয়ে ঠাট্টার হাসি হেসো না। চুরি করতে এসেছ, চুরি করো ওই
তো কতগুলো জিনিস পড়ে রয়েছে।  
চোর বলল, আমাকে ক্ষমা করবেন। আমারও একটু বাতের ব্যথা উঠল এক্ষুনি। আপনার জন্যে ভালই হয়েছে যে আমারও বাতের অসুখ আছে। আমারও আপনার মত বাম হাতে। আমি ছাড়া অন্য কোনও চোর হলে যখন আপনি বাম হাতটা তুলতে পারলেন না, তখনই আপনাকে গুলি করে মেরে ফেলত।  
ভদ্রলোক প্রশ্ন করলেন, কতদিন হলো তোমার?
তা বছর চারেক হবে, চোরটা বলল। আমার তো মনে হয় একবার যদি বাতে ধরে তা হলে সারাজীবন আর ছাড়ে না।
ভদ্রলোক একটু কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা, কখনও ঝুমঝুমির তেল ব্যবহার করেছ?
পিপে পিপে ব্যবহার করেছি, চোরটা বলল। আমি যত সাপের তেল ব্যবহার করেছি, সেগুলো যদি যোগ করা হয় তা হলে এখান থেকে ইন্ডিয়ানার ভ্যালপ্যারিসসা যতদূর তার চেয়েও বেশি পা হবে।  
ভদ্রলোক বললেন, কেউ কেউ চিজেলামস পিল ব্যবহার করে।
চোর বলল, একেবারে বাজে জিনিস। আমি তিন মাস খেয়েছি, কোনও কাজ হয়নি। একবছর পটস পেন পালভাইজার আর কিংকেলহ্যামস ব্যবহার করে একটু আরাম পেয়েছিলাম। তবে আমার মনে হয় আমি পকেটে যে কাজু বাদাম রেখে দিতাম সেটা খেয়েই আসলে উপকার হয়েছিল।
ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলেন, ব্যথাটা তোমার কখন বাড়ে, রাতে না সকালের দিকে।
চোর বলল, রাতে, আর ঠিক ওই সময়টাতে কাজের চাপ সবচেয়ে বেশি। আচ্ছা, এবার আপনার হাতটা নামিয়ে নেন। আপনি কি কখনও ব্লিকারস্টাকস ব্লাড বিল্ডার ব্যবহার করে দেখেছেন?
ভদ্রলোক বললেন, না, আমি কখনও ব্যবহার করিনি। তোমার ব্যথাটা কি মাঝে মাঝে হয়, নাকি সারাক্ষণ লেগে থাকে?
চোর এবার বিছানায় এসে বসল। তারপর তার পিস্তলটা নিজের জোড়া হাঁটুর পাশে রাখল। বলল, মাঝে মাঝে হয়। আর এ-জন্যে আমি দোতলা বাড়িতে চুরি করা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ কয়েকবার মাঝখানেই আটকে গিয়েছিলাম। তবে আমার বিশ্বাস, এমনকী ডাক্তাররাও বলতে পারে না কীসে এ রোগ ভাল হয়।
তুমি ঠিকই বলেছ। আমি প্রায় হাজার ডলার খরচ করেছি, কিন্তু উপকার পাইনি, ভদ্রলোক বললেন। তারপর প্রশ্ন করলেন, তোমার ফোলে?
হ্যা ফোলে, বিশেষ করে সকালের দিকে, চোর বলল। আর যখন বৃষ্টি হয়, তখন যে কী কষ্ট পাই!
ভদ্রলোক বললেন, আমিও। সামান্য এক ঝাপটা ভেজা হাওয়াও কখন ফ্লোরিডা থেকে, এদিকে রওয়ানা দিল তা আমি এখান থেকেই বলে দিতে পারি।
চোর এবার পিস্তলটা পকেটে রেখে আরাম করে বসল। বলল, আচ্ছা, আপনি কখনও অপোডেলভক ব্যবহার করেছেন?
একেবারে বাজে জিনিস, ভদ্রলোক মন্তব্য করলেন। তার চেয়ে রেস্টুরেন্টের মাখন মাখা ভাল।  
চোরও একমত পোষণ করল, ঠিকই বলেছেন। বাচ্চা ছেলেদের বেড়াল আঁচড়ে দিলে সেখানে লাগালে কাজ হলেও হতে পারে, কিন্তু ও-সব জিনিসে আমাদের কোনও উপকার হবে না। তবে একটা জিনিসে আরাম হয়, সেটা হলো লাল আঙ্গুর। ছোট্ট ওষুধ বটে, তবে বেশ আরামদায়ক। আচ্ছা, আঙ্গুরের কথা যখন উঠলই, আজ না হয় চুরি করা বাদ যাক। চলেন, একসঙ্গে বেরিয়ে দুজনে কিছু পানাহার করা যাক, জামাকাপড় পরে নেন।
ভদ্রলোক বললেন, মাঝে মাঝে আমার এমন হয়, কারুর সাহায্য ছাড়া আমি জামাকাপড় পর্যন্ত পরতে পারি না। আমার চাকর টমাস বোধ হয় এখন ঘুমাচ্ছে...
চোর বলল, আপনি ওঠেন, আমি আপনাকে জামা পরিয়ে দিচ্ছি।
ভদ্রলোক তার কাঁচাপাকা দাড়িতে হাত বোলালেন। ভদ্রতায় যেন বাধতে লাগল, বললেন, না, না, এটা খারাপ দেখায়।
আরে ওঠেন তো, এই নিন আপনার শার্ট, শার্ট পরিয়ে দিতে দিতে চোর মন্তব্য করল। আমি একটা লোককে জানি, মাত্র দুই সপ্তাহ অম্বেরিস অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করে এমন ভাল হয়ে গেল যে দু'হাত দিয়ে নিজের পোশাক পরতে তার আর অসুবিধা হত না'
ঘর থেকে দুজনে একত্রে বেরিয়ে যাবার পথে ভদ্রলোক হঠাৎ পেছনে ফিরলেন। বললেন, সঙ্গে টাকা নিতে ভুলে গেছি, কাল রাতে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রেখেছিলাম।  
চোর তার ডান হাত ধরে থামিয়ে দিল। বলল, আসেন, আসেন, আমি আপনাকে আসতে বলেছি। টাকার কথা আপনাকে ভাবতে হবে না, আমার কাছে টাকা আছে। আচ্ছা, আপনি কখনও উইচ হ্যাজেল তেল মালিশ করে দেখেছেন?
মূলঃ ও হেনরী (উইলিয়াম সিডনি পোর্টার)
অনুবাদঃ শাহনেওয়াজ খান

No comments:

Post a Comment

Popular Posts