মুসা (আঃ)
ও বনি ইসরাঈলের
জ্ঞানী বৃদ্ধা
|
-আমার মনে হচ্ছে আমরা পথ ভুল করেছি।
-এ কেমন
করে হতে পারে হযরত? আপনি
আল্লাহর নবী। আপনি পথ ভুল করবেন। কেন?
-মনে
হচ্ছে আল্লাহ আমাদের পথ ভুল করিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের অথৈ দরিয়া পার করিয়ে দিলেন। জালেম ফেরাউনকে ও তার
লোক-লস্করকে দরিয়ার পানিতে ডুবিয়ে মারলেন। কিন্তু এ পারে
এসে তো কোনো পথের দিশা পাচ্ছি ন। - বললেন
আল্লাহর নবী হযরত মূসা আলাইহিস সালাম।
-কিন্তু দরিয়ার ওপারে যখন আমরা ছিলাম, পেছন
থেকে ফেরাউন ও তার
লোক লস্কররা যখন আমাদের তাড়া করে ফিরছিল তখন তো আপনাকে পথের জন্যে পেরেশান হতে দেখিনি। বলল একজন ইসরাঈলী জোয়ান।
-কথাটা ঠিকই
বলেছো।
এটাতো পেরেশানীর কথা, চিন্তার
কথা। -একজন বয়োবৃদ্ধ ইসরাঈলী বললো।
তবে আমাদের আলেম ও লেখাপড়া
জানা লোকেরা অনেক কথাই জানে, তারা
এ ব্যাপারে কি বলে?
একজন
ইসরাঈলী আলেম বললো, হ্যা, একটা কথা আমাদের বাপ-দাদাদের
মুখ থেকে শুনেছিলাম। সেটাই হয়তো আমাদের এই পথ ভুলের কারণ হতে পারে।
-কি সে কথা?
-কেন? তোমাদের
অনেকেই তা শুনেছে। তবে সেটাকে হয়তো এর সাথে মেলাতে পারছে না।
-বলুন তো ব্যাপারটা কি? আমরা
তো কিছুই ভাবতে পারছি না।
-কেন তোমরা শোনোনি? মিসরে
বনি ইসরাঈলী মিল্লাতের প্রতিষ্ঠাতা আল্লাহর নবী হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম তাঁর ইন্তিকালের সময় আমাদের পরদাদাদের থেকে এই মর্মে ওয়াদা নিয়েছিলেন যে, তাঁর
কবর থেকে তাঁর হাড্ডিগুলো উঠিয়ে সাথে না নিয়ে তারা এদেশ ত্যাগ করবে না।
-হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমরা
শুনেছি। অনেক আলেম একসাথে বলে উঠলো।
আমাদের পথ ভুল হওয়ার এটা একটা কারণ হতে পারে।
হযরত
মূসা বললেন, আমাদের
পূর্ব পুরুষদের ওয়াদা অবশ্যই আমাদের পালন করতে হবে। তার ওপর আমাদের মহান নবী হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের দিলের খাহেশ পূরণ করা আমাদের জন্যে একটি অবশ্য করণীয় কাজ। আল্লাহ তাঁকে এদেশে এনেছিলেন। তিনি ছিলেন এদেশে আমাদের প্রথম পুরুষ। তাঁর দিনগুলো ছিল অত্যন্ত মর্যাদা ও গৌরবের।
আমাদের পূর্ব পুরুষরা ছিল কৃষি ও পশু
পালনে অভ্যস্ত। তিনি তাদেরকে মিসরের নগর জীবনের সাথে জড়িত না করে গ্রামে ও পাহাড়ে
জঙ্গলে দাওয়াত পৌছান।
তাই শত শত বছর পরে আজো আমরা নগরবাসীদের শিরকী জীবনে অভ্যস্ত হইনি। আমরা আজো আল্লাহ ও তাঁর
নবীর দীন ও শরীয়ত
মেনে চলছি।
একজন
বনি ইসরাঈলী আলেম বললেন, হে আল্লাহর নবী, আপনি
ঠিকই বলেছেন। আমাদের আজকের তওহিদী জীবন, আমাদের
ইবাদত-বন্দেগী এবং আল্লাহর শরীয়ত মেনে চলার জন্যে আমাদের স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা এ সব
কিছুর পেছনে আমাদের মহান পূর্ব পুরুষ এবং আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের সেদিনের সিদ্ধান্ত অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে।
আর
একজন আলেম বললেন, হ্যাঁ, ঠিকই। যদি আমরা নগরবাসী হতাম। নাগরিক জীবনের আরাম আয়েশে অভ্যস্ত হয়ে পড়তাম। মিসরীয়দের মতো আল্লাহর ইবাদত না করে হয়তো পুতুল পূজাই করতাম।
হযরত
মূসা (আঃ) আবার বললেন, আল্লাহর বড় মেহেরবাণী। তিনি আমাদের তার সঠিক দীনের অনুসারী রেখেছেন। বললেন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম। আর এটি সম্ভব হয়েছে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের সঠিক সিদ্ধান্তের ফলে। কাজেই আমাদের এদেশ ছেড়ে চলে যাবার সময় তাঁর হাড়-গোড়গুলো
আমাদের সাথে নিয়ে গিয়ে আমাদের পিতৃভূমিতে কবরস্থ করার যে দাবী তিনি করেন তা আমার কাছে ন্যায়সঙ্গত বলে মনে হয়। কিন্তু তাঁর কবর কোথায়? কে
বলতে পারে একথা? সবাই
মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো।
তারপর
কিছু লোক বলে উঠলো, হ্যাঁ, একথা বলতে পারে মাত্র একজনই।
-কে
সে? তার নাম বলো।
-কোথায়
থাকে?
সে
এক বৃদ্ধা। অতিরিক্ত বয়সের ভারে ন্যুজ পৃষ্ঠ এক বনি ইসরাঈলী বৃদ্ধা। তার কাছে একজনকে পাঠালেন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম। তাকে ডেকে আনলেন। তাকে নিজের কাছে বসালেন। বললেন, ‘বুড়িমা, আপনি কি আল্লাহর প্রিয় নবী এবং আমাদের মহান পূর্ব পুরুষ হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের কবরটি কোথায় তা আমাদের দেখিয়ে দেবেন?
-আল্লাহর
কসম আমি দেখাবো না। তবে একটি শর্ত আছে যদি শর্তটি পূরণ করো তাহলে অবশ্যই দেখিয়ে দেবো।
-শর্তটি কি বলুন।
-শর্তটি
হচ্ছে আপনাকে ওয়াদা করতে হবে জান্নাতে আমি আপনার সাথে থাকবো।
আল্লাহর
নবী মূসা (আঃ) বনি ইসরাঈলের এই বৃদ্ধার শর্তটি পছন্দ করতে পারলেন না। কারণ এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর ব্যাপার। কেবলমাত্র ভালো কাজের জোরে বা কারোর সুপারিশে কেউ জান্নাতে যাবেনা। আল্লাহ কাকে জান্নাতে নেবেন আর কাকে নেবেন না এটা তাঁর এখতিয়ার। মূসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ জানিয়ে দিলেন বৃদ্ধার শর্ত মেনে নাও।
কাজেই
হযরত মূসা বললেন, বুড়িমা
আমি আপনার শর্ত মেনে নিলাম। আনন্দে বনি ইসরাঈলের বৃদ্ধার দুটি চোখ চকচক করে উঠলো।
যেন সেখানে ঝাড় লণ্ঠন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। যেন সাত রাজার ধনের চেয়ে অনেক বেশি কিছু তার হাতে এসে গেছে।
-আমার
সাথে এসো।
বলে
বৃদ্ধা হাঁটা দিল একদিকে। বৃদ্ধার পেছনে পেছনে চললো সবাই। একসময় সবাই এসে পৌছুলো একটি পানি ভরা ডোবার কাছে।
-পানি
সেচে ডোবাটা খালি করো।
সবাই
পানি সেচার কাজে লেগে পড়লো।
এক সময় ডোবাটি পানি শূন্য হলো।
-এবার
কোদাল আনো।
ডোবার মাঝখানের মাটি কেটে উপরে ওঠাও।
ঠকঠক
আওয়াজ শুরু হলো।
মাটির নিচ থেকে বের হয়ে এলো একটি শরীরের হাড়গোড়। হযরত মূসা হাড়গুলো জমা করলেন। সেগুলো নিয়ে আবার রওয়ানা হলেন। এবার পথ তাঁর কাছে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো দিনের আলোর মতো।
মুসতাদরাক
হাকেম বর্ণিত একটি হাদীসের ভিত্তিতে গল্পটি রচিত।
No comments:
Post a Comment