নদী ঘুমিয়েছে - মজার গল্প – হাসির গল্প – ছোট গল্প |
নদী
ঘুমিয়েছে - মজার গল্প – হাসির গল্প – ছোট গল্প
এক
সাদাসিধে গুরু আর তার বারোজন শিষ্য। তারা বেরিয়েছে হজ্জ্ব করতে। পথে পড়ল এক নদী।
তখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে। এক শিষ্য নদী পার হতে যাচ্ছিল।
গুরু
বলেনঃ ওরে বোকা, রাতের বেলা না বুঝেশুনে এভাবে নদী পার হতে নেই। নদীরা হল চির
রহস্যের আধার। কোন নদীর কী স্বভাব চরিত্র তা না জেনে অমন করে নদীতে নামতে নেই। শুনেছি,
এ নদী, বড় তেজী, সাপের মত
ফোস ফোস করে। আবার দৈত্যদানোর মত ধোয়া ছেড়ে উথালপাতাল করে নিজের পাড় ভেঙে গাছপালা,
বাড়ি-ঘর, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি সব নিজের গর্ভে
নিয়ে তবেই খানিক শান্ত হয়। এভাবে এ নদী কত জনপদ, মানুষজনকে
খেয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আগে একজন যেয়ে দেখে আস ও নদী শান্ত কিনা! না ভাংচুর করছে।
এক
শিষ্য একখণ্ড শুকনো কাঠের মাথায় আগুন ধরিয়ে যায় নদীতীরে। সে দেখবে, নদী
শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে, না ক্রোধে ফোস ফোস করে পাড় ভেঙে ক্ষেতের
ফসল, গাছপালা আর বাড়িঘর পেটের ভেতরে নিচ্ছে। নদী তীরে গিয়ে
শিষ্য দেখে, না নদী শীতল পাটির মতো বিছানো অবস্থায় ঘুমুচ্ছে।
শিষ্য
ছিল সাবধানী। ভাবলঃ এ নদী রাক্ষুসে। এ কোন মক্কর, কে জানে! হয়ত ঘুমোয়নি, ঘাপটি মেরে পড়ে আছে। হয়ত আমাদের দিয়ে
রাতের খাবার খেয়ে নেবে সেজন্যই এমন ভাল মানুষ সেজেছে। তাই সে পরীক্ষা করার জন্য তার
হাতের আগুন ধরানো চেলা কাঠ দিয়ে নদীকে খোঁচা মারে। আগুন ধরানো অংশ পানিতে ডোবাতেই
ফোস ফোঁস শব্দ হয়, আর বের হয় ধোয়া। শিষ্য ভয়ে দৌড়ে পালায় চেলা কাঠ নিয়ে।
হাঁফাতে
হাঁফাতে গুরুর কাছে গিয়ে বলেঃ এ বড়ো নচ্ছার নদী। আমাদের খাবার মতলবে মটকা মেরে পড়ে
আছে। যেই আগুনের চেলা ডোবালাম, অমনি গোখরো সাপের মত ফোস ফোস করে উঠল। আর
ধোয়াও ছাড়ল। ভাগ্যিস পাড়ের মাটি ভেঙে আমাকে গিলে খায়নি।
তখন
গুরু বলেঃ তাহলে বিশ্রাম করা যাক। নদী ঘুমালে তবেই পার হব।
আগুন
জ্বেলে বসে, বিশ্রাম করছে গুরু-শিষ্যের দল।
গুরু
বলেঃ এই নদী যে ভয়ঙ্কর আর রাক্ষুসে তা আমি জানি কেমনে সে কথাই তোমাদের বলি। সে আমার
দাদার আমলের ঘটনা। একবার তিনি দুটো গাধার পিঠে চার বস্তা চিনি চাপিয়ে নদী পার হচ্ছিলেন।
ওরা তো ভেজা কাপড়ে হাতে শুকনো কাপড় নিয়ে হাত উঁচু করে সাঁতরে নদী পার হলেন। গাধা দুটোও
পার হল। নদীর অপর পাড়ে গিয়ে দেখে আমার দাদার পরা কাপড় ভিজেছে। তবে হাত উঁচু করে
রেখেছিলেন বলে, হাতের শুকনো কাপড়ও ঠিকই আছে। ভেজা কাপড় বদলে শুকনো কাপড়
পরে গাধার কাছে গিয়ে তো তিনি তাজ্জব। আরে চিনি কই? বস্তা তেমনি
টাইট করে বাধা। কোন ফুটাফাটা নেই। শুধু মরা ছাগল নদীতে যখন ভেসে যায় তখন তার ফোলা
পেটের মত বস্তাগুলো আর ফোলা নেই। বস্তাগুলো চুপসে গেছে। তোমরা বুঝলে ব্যাপারখানা। চিনি তো। এমন মিষ্টি জিনিস। আর নদী যাই
হোক, তারও লোভ সামলানো সম্ভব হয়নি। চার বস্তা চিনিই খেয়ে সাবাড় করে দিয়েছে।
এ নদী চোর, ডাকাত, সাপের মতো যাকে ইচ্ছে
ছোবল মারে, দৈত্যের মতো লোকালয় নিশ্চিহ্ন করে। তাই নদী যখন ঘুমায়নি,
ফোস ফোস করছে তখন আর একে বিশ্বাস নেই। চল আজ গাছতলায় যাত্রাবিরতি। কাল দিনের বেলায় দেখা যাবে।
পর
দিন সকালে সেই শিষ্য রাতের চেলা কাঠখানা নিয়ে আবার দেখতে যায় ও নদী রাতে তো জেগে
ছিল,—এখন ঘুমিয়েছে
কিনা। দিনের বেলা। তাই রাতের আগুনসুদ্ধ
নদীতে ডোবানো চেলার মাথায় আর আগুন জ্বালায়নি। চেলার পোড়া মাথাটা ভেজাই আছে। সেই
চেলা কাঠের মাথা দিয়ে শিষ্য নদীকে খোঁচা মারে। নদী ফোস করে না। ভাল করে পরীক্ষা করার
জন্য আবার খোচায়। না, নদী
চুপ। গভীর ঘুমে মগ্ন। শেষবার পরীক্ষা। এবার বাড়ি মারে পানিতে। তাও ফোস নেই,
ফাস লাপাত্তা, ধোয়া উধাও। খুশিতে ঝিলিক মেরে ওঠে
শিষ্যের মন। গুরু খুশিখুশি তার সব শিষ্য। নির্ভয়ে তারা পার হয় নদী।।
No comments:
Post a Comment