বাংলা অনুবাদ গল্প,ষ্টিফেন লিকক,Stephen Leacock,Funny Short Story,Bangla translation,Bangla Funny Story,mojar golpo,translated story,হাসির গল্প, |
বাংলা অনুবাদ গল্প - মাই
ফিনান্সিয়াল ক্যারিয়ার - ষ্টিফেন লিকক - My Financial
Career - Stephen Leacock – Bangla Translation
Main Story in English link - My Financial Career
ঠিক বলতে পারব না অর্থই অনর্থের মূল কি না, তবে ব্যাংকে যাবার মানে যে আগ বাড়িতে অনর্থকেই ডেকে আনা তাতে সন্দেহ নেই। আমার অন্তত তাই মনে হয়। ব্যাংকে গেলেই হাত পা সব যেন পেটের মধ্যে সেঁধিয়ে যেতে চায়। সবকিছু ভুল হতে থাকে। সত্যি কথা বলতে কি, ব্যাংকের লোকজনকে দেখলেই আমি কেমন যেন ঘাবড়ে যাই। ব্যাংকের জানালা, টাকা পয়সা সবকিছু আমাকে কাহিল করে তোলে।
ব্যাংকে ঢুকলেই আমি পুরোপুরি একটা গাধা হয়ে যাই। ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারি, তবু আমার মাসিক বেতন যখন পঞ্চাশ ডলার ছাড়িয়ে গেল তখন বাধ্য হয়ে আমাকে ব্যাংকে যেত হল। কারণ তখন আমার মনে হল একমাত্র ব্যাংকই হল আমার ঐ টাকা রাখার সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা।
বেশ এলোমেলো পা ফেলে ব্যাংক কর্মচারীদের দিকে বোকার মত তাকাতে তাকাতে শেষ পর্যন্ত ব্যাংকে ঢুকতে পারলাম আমি। আমার ধারণা ছিল ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে হলে ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করতে হয়। তাই একাউন্ট লেখা কাউন্টারটার দিকে এগিয়ে গেলাম। কাউন্টারে বসে থাকা লোকটা ছিল বেশ লম্বা ও শান্ত প্রকৃতির। কিন্তু তাকে দেখামাত্রই আমি ঘাবড়ে গেলাম। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, ম্যানেজারের সাথে একবার দেখা করতে পারি? একদম একা? ঐ একদম একা কথাটা আমি বলতে চাইনি তবু তা মুখ ফসকে বেরিয়ে এল।
আমার দিকে তাকালেন ম্যানেজার। সম্ভবত একজন শাঁসাল মক্কেল মনে করে আমাকে। ভাবল, নিশ্চয় তাকে কোন গোপন কথা বলব। তাই আমাকে তার ঘরে টেনে নিয়ে গেল, তারপর ভেতর থেকে বন্ধ করে দিল দরজাটা।
এখানে কেউ আমাদের বিরক্ত করবে না, বলল সে বসুন।
আমরা মুখোমুখি বসলাম, কিন্তু কী বলব বুঝতে না পেরে চুপ করে থাকলাম।
-আপনি নিশ্চয় পিংকারটনদের একজন? ম্যানেজারই কথা বলে উঠল।
বুঝতে পারলাম আমার হাব ভাব দেখে আমামে গোয়েন্দা ভেবেছে সে। আর এই ভাবনা আমাকে বেশি ঘাবড়ে দিল।
- না, না, তাড়াতাড়ি বললাম আমি। মোটেও গোয়েন্দা নই। আসলে আমি আপনার ব্যাংকে একটা একাউন্ট খুলতে চাই।
আমার কথায় কিছুটা নিশ্চিত হল ম্যানেজার। গভীরভাবে তাকিয়ে আমাকে জরিপ করতে লাগল। সম্ভবত আমাকে একজন ধনকুবের ভেবেছে সে। তাই বলল, নিশ্চয় অনেক টাকা জমা রাখতে চান?
-হ্যা, ফিসফিস করে বললাম আমি। তা বলতে পারেন। আপাতত ছাপ্পান্ন ডলার দিয়ে একাউন্ট খুলতে চাই। তারপর প্রত্যেক মাসে পঞ্চাশ ডলার করে জমা দেব।
আমার কথায় একেবারে চুপসে গেল ম্যানেজার। তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বলল, মি, মন্টেগোমারি, এই ভদ্রলোক ছাপ্পান্ন ডলার দিয়ে একটা একাউন্ট খুলতে চান। আপনি এর ব্যবস্থা করে দিন। বলেই আমার দিকে ফিরল সে। আপনি আসতে পারেন।
ধন্যবাদ জানিয়ে আমি ভেতরের দিকে ঢুকতে গেলাম, কিন্তু সে আমাকে কাউন্টারের দিকের রাস্তাটা দেখিয়ে দিল। গেলাম সেদিকে একাউন্ট্যান্টের কাউন্টারে গিয়ে ছাপ্পান্ন ডলারের প্যাকেটটা ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে বললাম, এই যে ডলার।
খুব শান্ত ভাবে আমার কাছ থেকে ওটা নিয়ে আরেকজনের হাতে দিল সে। একটুকরো কাগজে টাকার পরিমান লিখল, তারপর একটা খাতায় আমার নাম লিখে সই করতে বলল। তখন ঠিক বুঝতে পারছি না কী করছি আমি। সমস্ত ব্যাংকটাই তখন আমার চোখের সামনে দুলছে। রীতিমত কাঁপতে কাঁপতে বলি টাকাটা জমা হয়ে গেল।
-হ্যা।
-তাহলে এখন আমি চেক কাটতে পারি?
-হ্যা।
একটা ছোট্ট জানালা পথে একজন আমার দিকে চেক বইটা এগিয়ে দিল। আরেকজন পাশ থেকে বলে দিল কীভাবে চেক কাটতে হয়। আমার ইচ্ছে ছিল জমাকৃত টাকা থেকে আপাতত ছয় ডলার তুলব। কিন্তু কী লিখতে কী লিখলাম কে জানে। ব্যাংকের লোকজন আমাকে অবশ্য মিলিওনার ভেবেছে। সেভাবেই তাকাচ্ছে আমার দিকে।
কর্মচারীটা চেক হাতে নিয়ে অবাক হল। বলল, আপনি সব টাকাই তুলে নিতে চান?
এবার বুঝতে পারলাম চেকটাতে আমি ছয় ডলার নয়, ছাপ্পান্ন ডলার লিখেছি। বুঝলাম, সবকিছু বুঝিয়ে বলা সম্ভব নয়। ব্যাংকের সব কর্মচারী তখন কাজ থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই সম্মান বাঁচাতে বললাম, হ্যা সবটাই।
-আপনি আপনার সব টাকাই তুলে নিচ্ছেন?
-হ্যা, প্রতিটি পয়সা পর্যন্ত।
হতভম্ব হয়ে যাওয়া কর্মচারী বলল, আপনি আর টাকা জমা রাখবেন না?
-কক্ষণ না।
একটা মিথ্যে আশা জেগে উঠল আমার মনে। সম্ভবত ওরা ভাবছে চেক লেখার সময় ওদের কথায় আমি অপমানবোধ করেছি, আর তাই তুলে নিচ্ছি টাকাটা। এই ভাবনায় সন্তুষ্ট বোধ করলাম আমি, বুক টান টান করে দাঁড়ালাম।
কর্মচারীটি বলল, টাকা কীভাবে নেবেন?
-কেন?
-মানে, জানতে চাইছি কত টাকার নোট দেব।
এবার বুঝতে পারি তার কথা। তাই বললাম, পঞ্চাশ ডলারের নোট দিন।
তাই দিল সে। তারপর বলল, বাকি ছয়?
-খুচরা দিন।
সে তাই দিল। আর তা নিয়েই ব্যাংক থেকে ছুটে বেরিয়ে এলাম আমি। আমার পেছনে ব্যাংকের বিশাল দরজা বন্ধ হবার সঙ্গে সঙ্গে আমি যেন হো হো শব্দের প্রচণ্ড হাসির ঝড়ের মধ্যে পড়লাম। ঐ হাসির ঝড় আমাকে তাড়া করতে লাগল। তারপর থেকে আমি আর ব্যাংকে যাই না। আমার টাকা আমার পকেটেই থাকে। আর বাড়তি যা থাকে তা রেখে দিই একটা মোজার মধ্যে।
অনুবাদ : মীজানুর রহমান কল্লোল
No comments:
Post a Comment