বাংলা অনুবাদ গল্প,পি. জি. ওডহাউস, The Level Business Head, P. G. Wodehouse, Bangla Translation,মজার গল্প, Bangla Funny Story, translated story |
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
এই লোকভীতিকে আমি ঠিক বুঝতে পারি না। এটাকে এক প্রকার রোগ বলে মনে হয়। জো কে বললাম, মরে গেলেও কাউকে ব্যাপারটা জানাব না। সে যদি মনে করে লিখে পড়ে নিলে ধার দেয়াটা অধিকতর নিরাপদ হবে তাতেও আমি রাজি। কিন্তু না,
আমার কোন কথাই টলাতে পারল না তাকে। সে বলল,
তোমাকে বলে কি করব আমি।
-বিশ পাউন্ড দেবে?
-বিশ কেন,
দশ পাউন্ড দেব না। পাঁচ পাউন্ড, এমন কি এক পাউন্ডও পাবে না। তোমার জন্যে শুধু একটা কাজই করতে পারি আমি। তা হচ্ছে ফিরতি পথে লিফট।
এরচেয়ে অপমান আর কি হতে পারে? বহুকষ্টে সংযত কলাম নিজেকে। ঘেন্না-পিত্তি সব উড়িয়ে দিয়ে নীরবে মেনে নিলাম তার প্রস্তাব। একটা জিনিস ভেবে দেখলাম, যদি লুইসের মত সানডাউনেও জোর দিনটা ভাল যায় তাহলে শেষমেষ মনটা তার গলেও যেতে পারে। এই ক্ষণটির জন্যে তাই চাতকের মত অপেক্ষা করতে হবে।।
-ঠিক সকাল এগারটায় রওনা দের। যদি সময় মত হাজির না হও তোমাকে ফেলেই রওনা করতে হবে।
কথা ক'টি বলেই চলে গেল জো। লুইসের সেলুন বার কোচ অ্যান্ড হর্সেস এ একাকী বসে হাবুডুবু খেতে লাগলাম হতাশার সাগরে। এমন সময় এক গল্পপ্রিয় লোক এসে হাজির।
-এইমাত্র যে লোকটা চলে গেল তার নাম নিশ্চয়ই জো?
খোশগল্পে যোগ দেয়ার মত মনের অবস্থা তখন আমার নেই। নিতান্ত ভদ্রতার খাতিরে সামান্য মাথা ঝাকালাম।
-জো’র শেষ খবর শুনেছেন?
-সে একটা জোচ্চোর। ওয়াটার লু কাপের জন্যে একটা কুকুর ঠিক করেছিল জো,
মারা গেছে কুকুরটা।
-জানি।
-কিন্তু এটা নিশ্চয়ই জানেন না কি করেছিল। কিছু লোক এইমাত্র ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করল। কুকুরটা দিয়ে লটারির আয়োজন করেছিল জো।
-বলেন কি!
-হ্যা, টিকিট প্রতি শ পাউন্ড করে নিয়েছে।
-হ্যা, ওটা তো মৃত কুকুর।
-হলে কি হবে, জানায় নি সে।
-কিন্তু মরা কুকুর দিয়ে জো লটারি খেলাল কীভাবে?
-মরা কুকুর দিয়ে লটারী খেলাতে যাবে কেন, সবার কাছেই কুকুরটা তখন জ্যান্ত।
-যে
লোকটা লটারি জিতছে তার কী হল?
-তাকে বাধ্য হয়েই আসল ব্যাপরটা খুলে বলেছে জো। তবে লোকটাকে শুধু টিকিটের টাকাটা ফিরিয়ে দিয়ে বিদায় করেছে সে। তারপরেও কড়কড়ে দু’শো পাউন্ড রয়ে গেছে জোর হাতে। দেখুন, কেমন ধড়িবাজ ঠগ সে!
এমন অভিজ্ঞতা তোমার কখনও হয়েছে, কি, একটা ভয়ঙ্কর অনুভূতি তোমার সব আদর্শকে টুকরো টুকরো করে ধুয়ে মুছে নিয়ে গেল, আর তুমি পড়ে অছি বিষ কালো ভীষণ অন্ধকারে, যেখানে কোন বন্ধুকে ইঞ্চি পরিমান বিশ্বাস করাও অসম্ভব। আমি নিশ্চিত জুলিয়া ফুফুও এরকম সন্দেহ দেখে বড় রাগ হয়। যখনই ফুফুর কাছে কোন কিছু চেয়েছি, নিজের ভাগ্যটাকে গড়ার জন্যে খুব সামান্যই চেয়েছি তাঁর কাছে,
ফুফু বরাবরই আমাকে হতাশ করেছেন।
তবে জোর ব্যাপারটি অন্যরকম। এখানে মনুষ্য কাঠামোর ভেতর আত্মগোপনকারী শয়তান নিজের মত করে চিন্তা করেছে, আসল মানুষটিকে চিন্তা করতে দেয় নি। আমার পঞ্চাশ পাউন্ড হজম করার পরেও তার সন্তুষ্টি আসেনি, কূটকৌশলে স্বত্ত্বটুকু লিখিয়ে নিয়েছে মাত্র পাঁচ পাউন্ডের বিনিময়ে। তুমিই বল,
কর্কি, ভাল মানুষের কাজ হল এটা? তখন সবচে দুঃখের ব্যাপার কি জান,
চোখের সামনে সব ঘটেছে অথচ কিছুই করতে পারছি না। এমনকি সামান্য ভৎসনা পর্যন্তও না। তার অকিঞ্চিৎকর সাহায্যের প্রস্তাবটা অন্তত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে পারতাম, কিন্তু ট্রেন ভাড়া বাঁচাতে গিয়ে তাও সম্বব হয় নি। এ ধরনের লোকের সংস্পর্শে এলে নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে যায়। তার এই টাকার থলের ভেতর হাত গলাবার কুচিন্তুাটা সারারাত আমাকে জাগিয়ে রাখল। ফেরার পথে একটা চেষ্টা চালান যেতে পারে। কিন্তু শেষমেষ মন সায় দিল না এতে। আমার ক্ষতি হয়েছে হোক, অন্তত হাত দুটোকে কলঙ্কিত করব না। এ জন্য নিশ্চয়ই ঈশ্বর আমার দিকে সুদৃষ্টি দেবেন। তা ছাড়া ওই কাজটি সহজসাধ্যও নয়।।
পরদিন আমার ধারণাই সত্যি হল। গাড়িতে উঠে জো থলেটা তার অপর পাশে এমন জায়গায় রাখল যেখানে কিছুতেই হাত বাড়াতে পারব না। জোর মত ধূর্তলোকের পক্ষে এমন করাটাই স্বাভাবিক।
আমাদের কি অদৃষ্ট, কর্কি! জীবনটাকে কখনও পুরোপুরি উপভোগ করতে পারলাম না। অবশ্য এর পেছনেও একটা উদ্দেশ্য আছে। না পাওয়া আমাদের পারমার্থিক জ্ঞানকে প্রসারিত করে,
ভবিষ্যৎ জীবনের জন্যে তৈরি হই আমরা; কিন্তু তবু একটা খেদ থেকেই যায়। আমার ব্যাপারটা দেখ। মোটরিং কেমন পন্দ করি সে তো জানোই। চমৎকার একটা মোটরিং ডে পেলাম, অথচ একটুও উপভোগ করতে পারলাম না।
সে কথা স্মরণ হলে এখনও আমার বুকের ভেতরটা হিম হয়ে আসে। পথে মনটাকে স্থির রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু মনের গতি আটকায় কে?
ফুফুর সাথে অত্যাসন্ন সাক্ষাৎ পর্বের ভয়াবহ দৃশ্যটি কল্পনা করে বার বার শিউরে উঠতে লাগলাম।
একটা মনোরম পল্লীর ভেতর দিয়ে এগোচ্ছিলাম আমরা। সূর্য তখন ঝকঝকে আকাশে পূর্ণ তেজে জ্বলছে। গাছে গাছে কিচির মিচির করেছে পাখির দল। আর আমাদের টু-সীটারের ইঞ্জিন মৃদু গুঞ্জন তুলে কাজ করে যাচ্ছে একমনে।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ একটা অসঙ্গতি লক্ষ করলাম ইঞ্জিন থেকে কেমন একটা হিস হিস শব্দ হচ্ছে। একটু পরেই রেডিয়েটরের ক্যাপ থেকে ধোঁয়াটে বাষ্প বেরোতে লাগল।
জো একবার কি দু’বার উদ্বিগ্ন কণ্ঠে হোটেলের কাউকে গালমন্দ করল। বার বার বলা সত্ত্বেও রেডিয়েটরে পানি দেয় নি সে।
গছি-গাছালিতে ঘেরা একটা বাড়ি দেখিয়ে জোকে বললাম, ওখানে পানির একটা ব্যবস্থা হতে পারে।
গাড়ি থামাল জো। সরল মনেই তাকে বললাম, চিন্তা কর না,
তোমার টাকার থলেটা আমি দেখব।
-তার কোন দরকার হবে না। এটাও যাবে আমার সাথে।
-বালতি ভরে পানি আনবার সময় থলেটা তোমার অসুবিধা করবে।
-দরদ দেখাবার জন্যে ধন্যবাদ। আমি অতটা বোকা নই যে শেয়ালের হেফাজতে মুরগী রেখে যাব।
-টাকার থলেটা নিয়ে গাড়ি থেকে নামল জো। বাড়িটা রাস্তার ধারেই। চারদিকে লোহার রেলিঙ দিয়ে ঘেরা, মাঝখানে একটা গেট। জোর হাতের ধাক্কায় ঝটাং করে খুলে গেল গেটটা। গেট পেরিয়ে বাগানের ভেতর ঢুকে পড়ল সে। কিছুদূর এগোতেই ভেতর থেকে একটা কুকুর স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে দৌড়ে বেরিয়ে এল।
থমকে দাড়াল জো। কুকুরটাও ততক্ষণে স্থির। তারা একে অপরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। জো হঠাৎ বিদঘুটে ভঙ্গিতে ভেংচি কেটে উঠল,
গর - র -
কুকুরটা তার উট শব্দের কোন মানে খুঁজে পেল না। নড়ল তো নাই বরং আর কৌতুহলী হয়ে উঠল। দূর থেকেই চিনতে পারছিলাম এটা নরম স্বভাবের সেই ভয়ংকর জাতের কুকুর, যেগুলো দেখামাত্র উচ্ছাসিত হয়ে ওঠে সবাই এবং নির্দ্বিধায় খোচা মেরে বসে পাঁজরে। কিন্তু জো ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেল। এক পা এগিয়ে আরেকটু কাছে এল কুকুরটা। জোর গন্ধ শোকার জন্যেই হয়ত ঘনিষ্ঠ হতে চাইছিল কুকুরটা। তার একজন বন্ধু হিসেবে এ কথা বলতে পারতাম। তাকে কিন্তু আনন্দ বা লাভ কোনটাই না থাকায় উৎসাহ পেলাম না।
-সরে যা সামনে থেকে। খেকিয়ে উঠল জো।
জোর বদমেজাজকে পাত্তা না দিয়ে আরেকটু সামনে ঝুকল কুকুরটা। পরমুহুর্তে কলজে কাপান শব্দে ডেকে উঠল ঘেউ ঘেউ করে। বুদ্ধি শুদ্ধি সম্পূর্ণ লোপ পেল জো’র। কুকুরটাকে শান্ত করার চেষ্টা না করে একটা পাথর তুলে ছুঁড়ে মারল।
এটা সাধারণ বুদ্ধির ব্যাপার। একটা বাড়িতে ঢুকে সে বাড়ির কুকুরের সাথে দুর্ব্যবহার করা স্বভাবতই বোকামি। মানুষ ভয়ে তাড়িত হলে কতটা আত্মবিস্মৃত হয় তারই একটা জ্বলন্ত দৃষ্টান্তু এখন আমার সামনে। যে ত্থলেটা সারাক্ষণ যক্ষের ধনের মত জো আগলে রেখেছিল সেটাকে নির্দ্বিধায় হাতছাড়া করল। চাক্ষুষ না দেখলে কখনও বিশ্বাস হত না আমার। কুকুরটাকে বিপজ্জনক ভঙ্গিতে এগোতে দেখে পিছু হটতে লাগল জো। গেটের দিকে ঝটিতি একবার তাকিয়ে সে টের পেল কুকুরটাকে এড়িয়ে কিছুতেই গেট পার হওয়া সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে কুকুরটা লাফ দেয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। গলা ছেড়ে বিকট এক চিৎকার দিয়ে থলেটা ছুঁড়ে মারল জো। দু'শো পাউন্ড ঠাসা মোটা থলেটা কুকুরটার বুকে লেগে চার পায়ের মাঝখানে স্থির হল। আঘাত পেয়ে থমকে দাঁড়াল কুকুরটী। এই ফাকে তিড়িং বিড়িং করে বেরিয়ে এল জো। সশব্দে আটকে দিল গেট। বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে নিজের বোকামি বুঝতে পারল জো। থলেটা ওভাবে ছুড়ে মারা একদম উচিত হয়নি। এখন উপায়?
-ধূস
শালা, আপন মনে বিড়বিড় করতে লাগল সে। খুব সম্ভব নিজেকে কষে গাল দিচ্ছিল।
থলেটা ফেলে গেটের কাছে ছুটে এল কুকুরটা। গেটের শিকগুলোর সরু কি দিয়ে নাক গলিয়ে ধাক্কা দিতে লাগল সর্বশক্তিতে।
-কাজটা কেমন হল? খোচা মারার মোক্ষম সুযোগটা হাতছাড়া করলাম না। আহ! দেখার মত চেহারা হল জোর। সত্যিই আমি খুশি হয়েছিলাম কর্কি। যে ধূর্ত লোকটা নিজের খলবুদ্ধিপূর্ণ চাতুর্য নিয়ে গর্ব করে বেড়ায় তার আকস্মিক করুণ দশা আমাকে আনন্দ দিয়েছিল। সত্যিই, এই মুহূর্তে তার জন্যে তিল পরিমাণ সহানুভূতিও ছিল না আমার।।
-হায় খোদা,
কি হবে এখন?
কিছুক্ষন হাঁ করে দাড়িয়ে থাকার পর জবান খুলল জো।
-চিৎকার করলে বোধহয় ভাল হবে, পরামর্শ দিলাম তাকে।
গলা ফাটিয়ে চিৎকার শুরু করল জো। কিন্তু কোন লাভ হল না। অযথাই গলার ভেতরটাকে কোলাব্যাঙের বাসা বানিয়ে ফেলল। আসলে বাড়ির ভেতর কেউ ছিল না তখন। বাড়ির মালিক জমিতে চাষ দিতে গিয়েছিল।
জো ইতোমধ্যে ভাঙতে শুরু করেছে। কণ্ঠে তার রাজ্যের হতাশা, ইস অনেক দেরি হয়ে গেল!
প্রথম দৌড়ের আগে সানডাউনে পৌছুতে পারব না। তার মানে একশো পাউন্ড গচ্চা! ওরে,
কি হবে রে আমার!
জো’র আক্ষেপ আমাকে আশার আলো দেখাল। ভাল করেই বুঝতে পারলাম কি ঘটতে যাচ্ছে। একটা রেস মিস করার একজন বুকি’র জন্যে বিরাট ক্ষতি। বাজি জেতার আশায় দলে দলে লোক আসবে সানডাউনের রেসে, জোর থলেটা আবার গিলবে অনেকগুলো পাউন্ড। জো যদি সময়মত হাজির হতে না পারে,
তাহলে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর থলেতে যাবে পাউন্ডগুলো।
দেখ, জোকে বললাম, যদি পঞ্চাশ পাউন্ড আমাকে ধার দাও, তাহলে থলেটা নিয়ে আসতে পারি। কুকুরকে ভয় পাই না আমি।
জো কোন কথা বলল না। একবার আমার দিকে আরেকবার থলের দিকে তাকাতে লাগল। ভেবে পাচ্ছিল না কি করবে। এ সময় ক্ষণিকের জন্যে ভাগ্য আমার ওপর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। বসে থাকতে থাকতে বিরক্তি ধরে গিয়েছিল কুকুরটার। লম্বা এক হাই তুলে উঠে দাঁড়াল ওটা, ধীরগতিতে দৌড়াল বাড়ির ভেতর দিকে। কুকুরটা চোখের আড়াল হলেই গেটের ভেতর চলে গেল জো। লম্বা লম্বা পা ফেলে এগোল থলেটার দিকে।
উপায় উদ্ভাবনে আমি কেমন পারদর্শী, তুমি ভাল করেই জান কর্কি।
রাস্তার ওপর সরু একটা লাঠি দেখতে পেলাম। দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে তুলে নিলাম লাঠিটা। মুহূর্ত বিলম্ব না করে রেলিঙের শিকগুলোর ওপর সজোরে বুলিয়ে আনলাম ওটা। বিচ্ছিরি খটাং শব্দ পুরো বাড়িটাকেই যেনো নাড়িয়ে দিল। থলের কাছে পৌছুতে এক কদম কি ইঞ্চি আটেক বাকি ছিল জো’র ঠিক তখনই ফিরে এল কুকুরটা, অমনি উল্টোদিকে ঘুরে দৌড় লাগাল। আগের মতই বেরিয়ে এসে ঝটাং করে আটকে দিল গেট।
চরমে পৌছুল জো’র বিরক্তি। আমি তার মন মেয়াজের থোড়াই কেয়ার করে আমার দাবিটা স্মরণ করিয়ে দিলাম, বেশি না,
মাত্র পঞ্চাশ পাউন্ড।
রাজি হবার কোন ইচ্ছা ছিল না জো’র, কিন্তু মাথা নাড়তে বাধ্য হল সে। সঙ্গে সঙ্গে গেট খুলে ভেতরে ঢুকলাম। কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে আমার দিকে ছুটে এল। আমি ভাল করেই জানি এটা আর কিছু নয়, নিছকই এটার স্বভাব। হাঁটু গেড়ে বসে আলতো করে কুকুরটার পিঠ চাপড়ে দিলাম। কুকুরটা আমার দু’কাধে পা তুলে দিয়ে গাল লেহন করতে লাগল। এটার মাথার দুপাশে হাত বুলিয়ে দেয়ার সময় আমার একটা হাত কামড়ে ধরে আদুরে ভঙ্গিতে নরম কামড় দিচ্ছিল। আমি অন্য হাতে তার বুক চাপড়ে দিলাম। ব্যস, সৌজন্যের পালা শেষ। নিশ্চিন্ত মনে ভেতরের দিকে চলে গেল কুকুরটা।
পাছে জো তার ওয়াদা ভেঙে ফেলে এই আশঙ্কায় আমার যা করণীয় চুপিসারে করে ফেলাম। তারপর দিব্যি ভাল মানুষের মত থলেটা নিয়ে জোর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
উকিল জো,
ওই মানবজাতির কলঙ্ককে তখন ঠিক একটা হাবাগোবা শিশুর মত দেখাচ্ছিল। তবে এমন শিশুকে কেউ পছন্দ করবে না। পছন্দ করবে তার মুখে ঝেড়ে লাথি হাকাতে। টাকার থলেটা যখন তাকে ফেরত দিলাম, আমার ধারণা উপযুক্ত শাস্তি সে পেয়েছিল। জো’কে হেয়ালি করে বললাম, বড় নোটগুলো থেকে নিয়েছি।
-মানে?
-আমার
পঞ্চাশ পাউন্ড। ওগুলো এখন আমার পকেটে বিশ্রাম নিচ্ছে।
-এটা
কি বলছ তুমি?
পঞ্চাশ পাউন্ড তোমার হতে যাবে কেন?
প্রতিশ্রুতির কথা স্বরণ করিয়ে দিলাম জোকে। সে না বোঝার ভান করে বলল,
ঝামেলা করতে চাও?
এটা আমার অপছন্দ। আমি এমন বোকা নই যে কুকুরের সাথে খেলা করার জন্যে তোমাকে পঞ্চাশ পাউন্ড দেব। ভদ্রলোকের মত ঝটপট পাউন্ডগুলো বের করে ফেল। আর তোমার যদি ইচ্ছে হয় কুকুরটার সাথে আরও কিছুক্ষণ খেলতে পার,
ততক্ষণে অন্য বাড়িগুলোতে গিয়ে দেখি পানির কোন ব্যবস্থা হয় কিনা।।
দূরাত্মা, বুঝলে, কর্কি, শুধু এই একটা মাত্র বিশেষণ যোগ করা যায় জোর সাথে। ওই মুহূর্ত আমি যেনো তার পুরো আত্মাটাকেই দেখতে পাচ্ছিলাম, যেখানে অমাবস্যা রাতের গাঢ় অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নেই।
পানি আনতে গিয়ে জো যে হাওয়া হল। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ঝিঝি ধরে গেল পায়ে। আশঙকা হল কোন বাড়িতে গিয়ে সে আবার কুকুরের খপ্পরে পড়ল কিনা?
এমন সময় একটা পদশব্দ কানে এল। ঘাড় ফিরিয়ে দেখি একটা লোক।
কাছে এসে থমকে দাঁড়াল লোকটা। দেখে কৃষক বলে মনে হল। মুখ ভর্তি দাড়ি, জামা কাপড় মলিন। একবার গাড়ি আরেকবার আমার ওপর দৃষ্টি বোলাতে লাগল সে। জিজ্ঞেস করলাম, বাড়িটা আপনার?
-কি বললেন? চেঁচিয়ে উঠল সে।
ভাবভঙ্গি তো বুঝলাম লোকটা কানে খাট। গলা এক ধাপ চড়িয়ে দিয়ে আবার শুধালাম, এ বাড়ির মালিক কি আপনি?
-হ্যাঁ, হ্যাঁ। মাথা ঝাকাল সে।
-পানির জন্যে এসেছি আমরা,
তাকে আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে বললাম।
ওয়াটার শব্দটাকে ডটার ধরে নিয়ে উত্তর দিল, আমার কোন মেয়ে নেই।
আবার ভাঙ্গা রেকর্ডের মত চেঁচাতে হল। লোকটা বুঝতে পারল এবার। আপনার বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাইনি, বললাম তাকে। আমার সঙ্গী আরেক বাড়িতে পানি আনতে গেছে।
-ও আচ্ছা। কিছুটা অপ্রস্তুত হল সে।
-আপনার কুকুর আমার সঙ্গীকে ভয় দেখিয়েছে।
-কি বললেন?
-আপনার কুকুর, বুঝতে পারছেন?
-কথা শেষ হবার আগেই সে মাথা ঝাকাল, জি বিক্রি করব কুকুরটা।
-কত নেবেন? স্রেফ মজা করার জন্যেই বললাম।
-পাঁচ শিলিং দিলেই হবে।
No comments:
Post a Comment