বাংলা অনুবাদ গল্প,পি. জি. ওডহাউস, The Level Business Head, P. G. Wodehouse, Bangla Translation,মজার গল্প, Bangla Funny Story, translated story |
বাংলা অনুবাদ গল্প - যেমন কুকুর তেমন মুগুর – পি. জি. ওডহাউস - The Level Business Head - P. G. Wodehouse – Bangla Translation - part 3 of 3
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
তুমি তো জান কর্কি, শেষ জীবনটা আরাম আয়েশে কাটাবার আশায় একটা বয়সে মানুষ ধন সম্পদের দিকে ঝুকে পড়ে আর সে ধন সম্পদ অর্জনের মত মাথা খুব কম লোকেরই আছে।
তোমার কথাই ধরা যাক। তুমি যদি এমন পরিস্থিতিতে পড়তে এটা অবশ্য তোমাকে আঘাত করার জন্যে বলছি না, নিছকই উদহারণ এই মুহূর্তে নির্ঘাত কাল লোকটার সাথে একটা গোলমাল বাধিয়ে ছাড়তে। কিন্তু আমি কি করলাম? যখন লোকটা পাঁচ শিলিংয়ের কথা বলল তাজা বোমার মত একটা বুদ্ধি বিস্ফোরিত হল আমার মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে পাঁচ শিলিং বের করে দিয়ে বললাম, ডাকুন কুকুরটাকে।
শিলিংগুলো পকেটে ভরে সজোরে শিস্ দিল লোকটা। অমনি দৌড়ে চলে এল কুকুরটা। ওটার পাজারে একটু হাত বুলিয়ে কোলে তুলে নিলাম। তারপর সোজা ঢুকিয়ে দিলাম গাড়ির ভিতর। একটু পরেই বড় এক বালতি পানি নিয়ে জো হাজির। ভরা বালতিটা বয়ে আনতে খুব কষ্ট হয়েছে তার। ছলকে পড়া পানিতে ভিজে গেছে ট্রাউজারের নিচের অংশ।
রেজিয়েটরের ক্যাপ খুলে পানি ঢালতে লাগল জো। এমন সময় আচমকা ঘেউ ঘেউ করে উঠল কুকুরটা। আঁতকে উতে পিছিয়ে গেল জো। অজান্তেই হাত থেকে পড়ে গেল বালতিটা। আর পড়বি তো পড় একেবারে পায়ের উপর। জুতা না থাকলে নির্ঘাত থেঁতলে যেত তার ডান পা। তবুও আঘাতটা একেবারে কম নয়। নইলে দু’হাতে ডান পা ধরে ক্যাঙ্গারুর মত অমন লাফাতে যাবে কেনো?
-গাড়ির
ভেতর কুকুর রেখেছে কে? নাক মুখ কুঁচকে সীমাহীন বিরক্তি প্রকাশ করল জো।।
-আমি রেখেছি।
-তাহলে তুমিই ওটাকে ভাল করে বের করতে পারবে।
-ওটাকে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি আমি।
-অন্তত আমার গাড়িতে নয়।
-ঠিক আছে,
আমার কুকুর নিতে না চাইলে কুকুরটা তোমারই হবে। ওটাকে বিক্রি করব তোমার কাছে। তারপর ওটার ব্যাপারে যা ভাল বোঝ করবে।
-কোন কুকুর কেনার দরকার নেই।
-যাই
বল কুকুরটা না বেচে আমি নড়ছি না। আমার কুকুর তবু জ্যান্ত আর তুমি তো দিয়েছিলে একটা মরা কুকুর।
-এর জন্য কত চাও তুমি?
-মাত্র এক একশ পাউন্ড!
মাথায় হাত দিল জো। একটু ভেবে নিয়ে বলল, ঠিক আছে, দেব। কিন্তু একথা কাউকে বলতে পারবে না। কথাটা জানাজানি হলে সবাই আমাকে বোকা ঠাওরাবে।
একটু দ্বিধাগ্রস্ত মনে হল জোকে। কোন ফন্দি খুঁজে বেড়াচ্ছিল কিনা কে জানে। তাকে চিন্তা ভাবনার কোন সুযোগ না দিয়ে বললাম, একশ নয়,
দেড়শ পাউন্ড দিতে হবে। যত দেরি করবে পাউন্ডের পরিমাণও বেড়ে যাবে তত।
-শোন, শেন! ব্যস্ত হয়ে আমাকে থামাতে চেষ্টা করল জো।
-কোন শোনাশুনি নেই, জেদী কণ্ঠে বললাম, শেষ হচ্ছে, এক মিনিটের মধ্যে একশ পাউন্ড দেবে,
নইলে পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।
কর্কি, বুড্ডা বন্ধু। আমার জীবনে বহু সময় বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা পেয়েছি আমি। কেউ দিয়েছে খুশি মনে,
কেউ বা দিয়েছে অনিচ্ছায়, কিন্তু আমার এইটুকু জীবনে কোন দাতাকে এভাবে গলার রগ ফুলিয়ে কাশতে দেখিনি। তখন নিশ্চয়ই এই ঘাড় খাট লোকটার রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল। তার ঠোট দুটো এমন ভাবে কাপছিল যেনো সে বিড়বিড় করে প্রার্থনা করছে। শেষমেষ থলের ভেতর হাত ঢোকাল জো। হিসেব করে পাউন্ডগুলো বের করে আনল।
জোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম, তোমার মনে আঘাত দিতে চাইনি, ছেলে। পাউন্ড গুলো এভাবে না হাতালে সমাজে আমার মুখ দেখানোই দায় হয়ে যেত। এখন তাহলে আসি,
বন্ধু। বিদায়! পরিচিত কেউ তোমার গাড়িতে আমাকে দেখে ফেললে আমার সামাজিক সর্যাদা ক্ষুন্ন হবে। কাজেই সবচেয়ে কাছের রেলস্টেশনের দিকে হাঁটব আমি।
-কিন্তু আপদটার কী হবে?
-কিসের আপদ?
-গাড়ি থেকে কুকুরটা বের করবে কে?
জো এমনভাবে বলল যেন ওই কুকুর জাতের কোন অচ্ছুৎ প্রাণী। সেই সঙ্গে আমার প্রতি ঘৃণা বর্ষন করতে লাগল দু’চোখের বিষদৃষ্টি থেকে।
-বের করব কেন? এটা তো বেচে দিয়েছি। ওটার ওপর থেকে সব দায়দায়িত্ব আমার শেষ।
-কিন্তু গাড়িতে উঠতে না পারলে তো সানডাউনে পৌছতে পারব না।
-সানডাউনে যাবার এত তাড়া কেন তোমার? সব জানা থাকা সত্ত্বেও উগড়ালাম।
-দেরি হলে নির্ঘাত একশটি পাউন্ড খসে যাবে।
-আহারে, তাই! কিন্তু গাড়ি থেকে কুকুর নামানোতো বিরাট ঝামেলার কাজ। পাউণ্ড পঞ্চাশেক বকশিশ পেলে কাজটা করে দিতে পারি।
দৃষ্টিতে অগুন থাকলে এই মুহূর্তে জো আমাকে ভস্ম করে ফেলত। তবে মনে মনে সে যে আমার পিন্ডি চটকাচ্ছিল তাতে কোনও সন্দহ নেই। ঝামেলায় না গিয়ে সোজাসুজি বললাম, কুকুরটা নিয়ে যাও বা ফেলে যাও এটা সম্পূর্ণ তোমার ব্যাপার। ওতে আমার কিছু যায় আসে না।
বাধ্য হয়ে আবার থলেতে হাত দিতে হলো তাকে। গুনে শুনে পঞ্চাশ পাউন্ড হাতে নিয়ে কুকুরটা বের করলাম গাড়ি থেকে। আর একটি কথাও না বলে গাড়ি নিয়ে চলে গেল জো। এটাই ছিল জো’র সাথে আমার শেষ দেখা। দোয়া করো আর যেন ওই অমানুষটার সাথে দেখা না হয়।
কুকুরটা নিয়ে কালো লোকটার কাছে ফিরে গেলাম। চেচামেচি করে তাকে বোঝালাম আসলে কুকুরটার কোন দরকার নেই আমার। সে শিলিং কটা ফিরিয়ে দিতে যাছিল, আমি মৃদু হেসে তার কাঁধ চাপড়ে দিয়ে বললাম, ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন। আমার আশীর্বাদস্বরূপ শিলিং গুলো আপনাকে দিলাম।
শিশুর সরল হাসি ছড়িয়ে পড়ল কৃষকের মুখে। আমিও হৃষ্টচিত্তে গলা ছেড়ে গিয়েছি। এমনকি নাচটাও বাদ রাখিনি।
পরদিন পনব্রোকারের কাছ থেকে ব্রোচটা ছাড়িয়ে এনে আবার ব্যুরো ড্রয়ারে রেখে দিলাম। ঠিক তার পরদিন ফুফু এসে হাজির। ঘরে ঢুকেই আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি হানলেন তিনি। কড়াসুরে বলে উঠলেন, তুমি নাকি মিস ভাইনিংকে আমার ব্রোচটা দাওনি?
-হ্যাঁ।
-ড্রয়ারটা তিনি ভাঙতে চেয়েছিলন।
-ভাঙতে দিলে না কেন?
-তোমার সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্বে ছিলাম আমি। দায়িত্বটা অবহেলা করি কী করে?
-তবে আমার মন কি বলছে জান?
ব্রোচটা যথাস্থানে নেই।
-বুঝলাম না?
-ব্রোচটা তুমি অন্য জায়গায় সরিয়েছ। বন্ধক রেখেছ কারও কাছে। মিস ভাইনিং আমাকে সব লিখেছেন। আর তোমাকে আমি ভাল করেই চিনি।।
এমন পরিস্থিতির জন্য আগে থেকেই তৈরি ছিলাম। গাম্ভীর্য দেখিয়ে বললাম, আমাকে ভাল করে চিনলে আমার সম্পর্কে এরকম কথা বলতে পারতে না। তুমি জান না ফুপি, আমার প্রতি তোমার সন্দেহ কতটা অমুলক!
-ঠিক আছে,
ড্রয়ারটা খোল। তাহলে প্রমান হবে সব।
-ড্রয়ারটা তাহলে ভাঙতে বল?
-হ্যা, ভাঙ।
-উদ্ধত ভঙ্গিতে ফুফুর দিকে তাকিয়ে শীতল কণ্ঠে বললাম, সত্যিই কিন্তু ডুয়ারটা ভেঙে ফেলব?
-বলছি তো ভাঙ।
-চিন্তা করে দেখ।
-খুব ভাল করে চিন্তা করেছি।
একটা লোহার ডান্ডা দিয়ে ড্রয়ারটা এমনভাবে ভাঙলাম আবার ওটা না গড়া অবধি স্থানটা ফাক থাকবে। ড্রয়ারের ভগ্নাবশেষের মাঝ থেকে উসকে যাওয়ার ব্রোচটা বোরাল। ফুফুর দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, আমার প্রতি অন্তত কণা পরিমাণ বিশ্বাস রেখ ফুফু।
জুলিয়া ফুফু মুহূর্ত কয়েক হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। তার মুখটা ফ্যাকাসে। কোনরকমে আমতা আমতা করে বললেন, স্ট্যানলি আমি তোমায় ভুল বুঝেছি। আমি ঠিক আমি, সত্যি খুবই দুঃখিত।
-দুঃখ করে আর কী হবে? ক্ষতি যা হবার তা তো হলই। অযথাই ড্রয়ারটা ভাঙলে।
-ড্রয়ারের কথা বাদ দাও। এটা তোমাকে অবিশ্বাস করার একটা সামান্য খেসারত।
বুঝলে কর্কি, তারপর থেকেই এবাড়িতে আমার শুভদিন শুরু। ফুফুকে আমি ক্ষমার সুতা দিয়ে বেধে ফেলেছি। জানি না কতদিন এ বাঁধন টিকবে। তবে এই সময়টুকু্র ভেতর যতটা সুবিধা ভোগ করা যায় ততই লাভ। আজ রাতে তোমাকে দাওয়াত করার কথা বলতেই ফুপু রাজি হয়ে গেলেন। চল লাইব্রেরীতে যাই। পিকাডেলি থেকে ভাল কিছু সিগার আনিয়েছি। আপাতত সেগুলো সদ্ব্যবহার করিগে।
অনুবাদঃ শরীফুল ইসলাম ভূইয়া
No comments:
Post a Comment