মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Monday, May 3, 2021

অনুবাদ গল্প -হাসির গল্প - সবজান্তা লোকটি (দি ম্যান হু নিউ টূ মাচ) - আলেকজান্ডার ব্যারন - The Man Who Knew Too Much by Alenxander Baron – Bengali translation

 

অনুবাদ গল্প - দি ম্যান হু নিউ টূ মাচ - আলেকজান্ডার ব্যারন - The Man Who Knew Too Much by Alexander Baron – Bengali
মজার গল্প,হাসির গল্প,অনুবাদ গল্প, The Man Who Knew Too Much, Alexander Baron, Bangla translation, translated story,

অনুবাদ গল্প - দি ম্যান হু নিউ টূ মাচ - আলেকজান্ডার ব্যারন - The Man Who Knew Too Much by Alexander Baron Bengali

প্রাইভেট কোয়েলশের (Private Quelch) সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাত হয় ট্রেনিং ডিপোতে সেনাবাহিনীতে যোগদানের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই যে কেউ তার ইউনিফর্ম, রাইফেল এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের পাশাপাশি একটা ডাকনাম লাভ করে প্রাইভেট কোয়েলশের ঝুঁকে পড়া, ঢাণ্ডা শরীর, আর হর্ন রিম চশমার ফাঁকে জড়ান দৃষ্টি দেখলে প্রায় কারোরই বুঝতে অসুবিধা হয় না যে কেন তাকে প্রফেসর উপাধি দেয়া হয়েছে আর তারপরেও যে দুএকজনের মনে বিষয়ে ক্ষীন সন্দেহ থাকে, প্রাইভেট কোয়েলশের মাত্র মিনিট পাঁচেক বক্তৃতা শুনলে তাদের সেই সন্দেহ চিরদিনের মত দূর হয়ে যায়

মাস্কেট্রি (Musketry) বিষয়ে প্রথম পাঠের কথা মনে পড়েছে আমার নর্থ-ওয়েষ্ট ফ্রন্টিয়ারের রিরণ পরা এক সার্জেন্টকে ঘিরে দাঁড়িয়েছিলাম সবাই ভীষন মনোযোগে; গাড়ো কিশমিশ রঙা মানুষটা আমাদের বোঝাচ্ছিলেন, সার্ভিস রাইফেলের মেকানিজম মাজল ভেলোসিটি (muzzle velocity) তিনি বললেন আমাদের, অর্থাৎ রাইফেল থেকে নিক্ষেপ্ত বুলেটের ছোটার গতি হল প্রতি সেকেন্ড দুহাজার ফুটেরও বেশি

কথার মাঝে একটি কণ্ঠস্বর বাধা প্রদান করল প্রতি সেকেন্ডে দু হাজার চারশ চল্লিশ ফুট কথাটা বলে প্রফেসর

-ঠিক

নীচু স্বরে বললেন সার্জেন্ট, তারপর আবার ফিরে গেলেন মাস্কেট্রির পাঠে পাঠ শেষে তিনি প্রশ্ন করলেন আমাদের, আর সম্ভবত প্রতিশোধ নেয়ার মনোভাবেই একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলেন প্রফেসরকে প্রত্যেকটা প্রশ্নেরই ফটাফট উত্তর দিল প্রফেসর প্রযুক্তিগত ব্যাখ্যা, রাইফেলের পার্টস, সেগুলো যত্ন নেয়ার কলাকৌশ সবই তার মুখস্ত

সার্জেন্ট জানতে চাইলেন, আগে কোন ট্রেনিং নিয়েছিলে?

এমন একটা বাক্যে জবাব দিল প্রফেসর, যে বাক্য শুনতে শুনতে পারে আমাদের কান পচে গিয়েছিল না, সার্জেন্ট, এসবই জেনেছি মাথা খাটিয়ে বই পড়ে।

প্রফেসরের সঙ্গে এরকমই ছিল আমাদের প্রথম সাক্ষাতটা তারপর দিনে দিনে তার সম্বন্ধে, ক্রমে ক্রমে সে আরও উন্নতি করতে চায় শিগগিরই যে সে কমিশন পাবে, সে বিষয়ে তার মনে কোনও সন্দেহ নেই

উচ্চাশা পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে লাগল প্রফেসর ফলে আমরা প্রশাংসা না করে পারলাম না ট্রেনিং ম্যানুয়াল জোগাড় করে পড়তে লাগল সে রাত জেগে ইনষ্ট্রাকটরদের কান ঝালাপালা করে পড়তে লাগল প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে ড্রিল আর রোড মার্চ সে যে কেবল প্রবল উৎসাহের সঙ্গে করল তা- নয়, তার অক্লান্ত ভাব আর ফুর্তি আমাদের মাথা গরম করে ফেলতে লাগল ত্রিশ মাইল মার্চ শেষে কেউ যদি বলে, এখন একটা গান গাইলে কেমন হয়, বন্ধুরা? তাহলে মেজাজ ঠিক রাখা কঠিন পে টেবলে (pay table) তার স্যালুট ছিল দেখার মত আশেপাশে অফিসারদের দেখলেই শুকনা হাত তুলে ঝট করে স্যালুট দিত সে, তারপর মার্চ করে ক্যান্টিনে চলে যেত ঠিক একজন গার্ডসম্যানের মত

দিনের পর দিন জ্ঞানের যাবতীয় বিষয় নিয়ে একঘেয়ে স্বরে বক্তৃতা করে চলল সে প্রথম প্রথম তার প্রতি আমাদের একটা শ্রদ্ধাভাব ছিল, কিন্তু একসময় অফুরন্ত সেই জ্ঞানের বড়ি গেলা আমাদের পক্ষে আর সম্ভব হল না অবস্থা এমনি হল যে তাকে এগিয়ে আসতে দেখলেই বুক ধুকপুক করতে লাগল আমাদের মাঝেমাঝে আমরা অবশ্য ব্যঙ্গ আর বাস্তব রসিকতার সাহায্যে আত্মরক্ষার চেষ্টা করতে লাগলাম, কিন্তু উচ্চাশা পূরণে বিভোর প্রফেসর সে সব খেয়ালই করল না

যখন আমাদের কেউ একটা ভুল করে, সবার সামনে তার সেই ভুল শুধরিয়ে দেয় প্রফেসর আমাদের কারও ভেতরে হালকা জ্ঞানের আভাস দেখা গেলে প্রফেসর ভারী জ্ঞানের অবতারণা করে সেটাকে চাপা দেয় সকালের কঠোর পরিশ্রমের পর রাইফেল পরিস্কার করতে করতে আমরা হয়ত অডারলি অফিসারের (Orderly Officer's praise) প্রশংসা শুনে একটু শান্তি পাচ্ছি, এমন সময় প্রফেসর বলে উঠবে, থাম, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি, এভাবে পরিস্কার করলে তো রাইফেলের সর্বনাশ হয়ে যাবে

এয়ারক্র্যাফট চিনতে পারলে গর্ববোধ করতাম আমরা একদিন আমরা হাঁটাহাটি করছি, অনেক ওপর থেকে কানে ভেসে এল একটা প্লেনের গুঞ্জন প্রখর সূর্যের আলোয় আমরা কেউই সেটাকে দেখতে পেলাম না কিন্তু

ওপরদিকে মাথা পর্যন্ত না তুলে প্রফেসর বলল, ওটা নর্থ আমেরিকান হার্ভড় ট্রেনার ইঞ্জিনের কর্কশ শব্দেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে

আমাদের মত সাধারণ বুদ্ধির মানুষ প্রফেসরের সঙ্গে পাল্লা দেবে কীভাবে? তবে আমরা কেউই গরমের ঝিম ধরানো সেই বিকেলের কথা ভুলতে পারব না, যেটা ঘটনাচক্রে প্রফেসরের জীবনের মোড় সম্পূর্ণ ঘুরিয়ে দিয়েছিল

গরম ঘাসের ওপর হাঁসফাঁস করছিলাম আমরা, আর আমাদের হ্যান্ড গ্রেনেডের পাঠ দিচ্ছিলেন করপোরাল টার্নবুল

বয়সে তরুণ হলেও করপোরাল টার্নবুল সাধারণ কেউ নন সাফল্যের সঙ্গে তিনি ফিরে এসেছেন ডানকার্ক থেকে আমাদের চোখে তিনি বীর আমরা বলাবলি করি, তিনি এতই শক্ত মানুষ যে গায়ে পেরেক পুতলেও ফিরে তাকাবেন না।

-তোমরা দেখতে পাচ্ছ, বললেন করপোরাল টার্নবুল, হ্যান্ড গ্রেনেড়ের গায়ে অনেকগুলো খোপ আছে 

-চুয়াল্লিশ

-কী? তাকালেন করপোরাল কাঁধের ওপর দিয়ে

-চুয়াল্লিশটা খোপ

তার দিকে তাকিয়ে আছে প্রফেসর বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে।

করপোরাল কিছু বললেন না, কিন্তু তার ভ্রু কুঁচকে গেল আবার ক্লাস নেয়ার জন্য মুখ খুললেন তিনি

-আরেকটা কথা করপোরাল পাথরের মত জমে গেলাম আমার সবাই আবার কথা শুরু করেছে প্রফেসর আলোচনাটা গ্রেনেডের পাঁচটা বৈশিষ্ট দিয়ে শুরু করলে ভাল হত না? আমাদের ইনস্ট্রাকটর সবসময় ভাবেই আলোচনা শুরু করেন

এবার জ্বলে উঠল করপোরালের চোখ বেশ, আলোচনাটা তাহলে তুমিই কর, বলে হ্যান্ড গ্রেনেডটা তিনি ছুঁড়ে দিলেন প্রফেসরের দিকে লজ্জার কোনো চিহ্ন দেখা গেল না প্রাইভেট কোয়েলশের মধ্যে গ্রেনেডের ওপর একটা নিখুঁত বক্তৃতা দিল সে ভয়াবহ নীরবতার মাঝে শুনে গেলাম আমরা ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলেন করপোরাল টার্নবুল বক্তৃতা শেষ হলে তিনি বললেন, ধন্যবাদ, প্রাইভেট কোয়েলশ। এবার যথাস্থানে ফিরে যাও, বিদায় নেয়ার জন্য আমরা সবাই লাইন হয়ে দাঁড়াবার পর আবার মুখ খুললেন করপোরাল

-তোমরা কেউ কেউ হয়ত শুনেছ, প্লাটুন অফিসার তোমাদের ভেতরে থেকে একজনকে বেছে নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন আমাকে থেমে একে একে আমাদের সবার দিকে তাকালেন করপোরাল, যেনো চূড়ান্ত্রভাবে নেয়ার আগে মনস্থির করছেন পদোন্নতির সময় তাহলে এসে গেছে আমাদের বেশির ভাগই একবার করে প্রাইভেট কোয়েলশের দিকে না তাকিয়ে পারলাম না সচেতনভাবে নিরীহ মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে সে

-হ্যাঁ, প্লাটুন অফিসার তোমাদের ভেতর থেকে একজনকে বেছে নিতে বলেছেন রান্নাঘরের স্থায়ী দেখাশোনার জন্য অনেক ভেবে-চিন্তে দেখলাম, এই কাজের জন্যে সবচেয়ে যোগ্য হল প্রাইভেট কোয়েলশ

পরে অনেক দিন এটা নিয়ে রসিকতা করা হয়েছে ঘটনাটা আমাদের সবার জন্য ছিল রসিকতা আর আনন্দের ঘটনাটার দিন পর এই বিষয়েই কথা বলতে বলতে ক্যান্টিন থেকে ফিরছিলাম আমি আর আমার বন্ধু ট্রাওয়ার (Trowe)

খোলা দরজা দিয়ে দেখতে পেলাম, দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে যেনো কোণঠাসা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিন রাঁধুনী; আর রান্নাঘরের ভেতর থেকে ভেসে আসছে সুপরিচিত একটা একঘেয়ে স্বর

-নাহ, তোমাদের আলু ছোলার এই জঘন্য অবৈজ্ঞানিক আর অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতি আমি আর কিছুতেই সহ্য করব না এতে করে যে প্রতিদিন কত মূল্যবান ভিটামিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান অর্জন করাতে হবে

-ওরে বাবা রে আবার সেই বক্ততা! নিঃশব্দে পালিয়ে এলাম আমরা দুই বন্ধু

অনুবাদকঃ খসরু চৌধুরী

ট্যাগঃ মজার গল্প,হাসির গল্প,অনুবাদ গল্প, The Man Who Knew Too Much, Alexander Baron, Bangla translation, translated story, Bengali translation

No comments:

Post a Comment

Popular Posts