mojar golpo,ছোট গল্প,শিক্ষামূলক গল্প,Funny Short Story,Shaktipada Rajguru,Hero,হিরো,শক্তিপদ রাজগুরু,মজার গল্প |
মজার গল্প - হিরো – শক্তিপদ রাজগুরু –Mojar golpo – Hero - Shaktipada Rajguru
উদয় কুমার স্বপ্ন দেখে সে রুপোলি পর্দার হিরো হবে।
হিরো হবার জন্যই যেন সে এই ধরণীতে অবতীর্ণ হয়েছে। বন্ধুরাও বলেছিল উত্তমকুমারের পর
তুই হবি দুসরা নম্বর উদয় কুমার। উদয়ের বাবার এখানে বিশাল ধানকল-তেলকল-পাটের আড়ত। গঞ্জের ধনী ব্যবসায়ী।
গাড়ি, ট্রাক-ব্যবসা-বাণিজ্য কি নেই। উদয়ের বাবা রামনিধি সেকেলে ধরনের মানুষ। এখনও সেই ছোট ধুতি
আর ফতুয়া পরেই গদিতে বসেন, হাজার হাজার টাকার কারবার করেন। গলায়
কণ্ঠি-কদমছাঁট চুল। রামনিধির সুপুত্র উদয়ের মেকাপ সম্পূর্ণ আলাদা।
এখনকার টাইট জিন্স-চক্কর-বক্কর কাটিং শার্ট-মাথায় বাবুই পাখির বাসা, দামী বিদেশি সেন্টের ভুরভুরে
গন্ধ। গাড়ি নিয়ে ঘোরে বন্ধুদের সঙ্গে।
আর উদয়ের বন্ধু-নিতুর এক পিসতুতো কাকা মিলটন - সে নাকি ফিল্মের সুবিখ্যাত পরিচালক। নিতুই বলল—আরে তুইতো হিরো
হবিই-সিওর। চল মিলটনদার কাছে, মিলটনদা এবার নিজেই প্রডিউসার ধরে ছবি করছে। হিরোইন নিয়েছে মুম্বাই-এর বিপাশা বসুকে। ও তো নতুন চেহারা খুঁজছে হিরো করার জন্য। ওদের আড্ডার সবাই
বললো-মুম্বাই-এর নামীদামী হিরোইন নিয়েছে
আর তার বিপরীতে অচেনা মুখ হিরো?
নিত্য বললো ওই মুখ আর পাবলিক দেখছে না, আর তাই নতুন মুখ, আর উদয়ের মতো কাউকে
দেখলে ওরা লুফে নেবে।
উদয় যেন আশার আলো দেখছে। তার বাবা রামনিধির মতে ছেলে
বি. এ পাস করেছে গদিতে বসে ব্যবসা-বাণিজ্য দেখুক। কিন্তু উদয় চায় ফিল্মের হিরো হতে। গদিতে বসে দু-নম্বরি ব্যবসা করে তার বাবার মতো টাকা রোজগার করতে সে চায় না।
নিত্যর কথায় বলে উদয়-হ্যা রে নিত্য, একটা চান্স দেবে আমাকে
তোর সেই মিলটনদা?
নিত্য বলে-মিলটনদা আমাকে অন্ধের মতো ভালোবাসে।
উদয় তার গাড়িতে করে নিত্যকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছে
স্টুডিওতে, উদয় আজ সেজেছে দারুণ। চেহারাটা
তার ভালই, মাথায় সেই বাবুই বাসা চুল, পরনে
দামী শার্ট-ওদের গাড়িটা স্টুডিওতে ঢুকছে, দেখা যায় কয়েকজন হিরো তার মধ্যে দু-একজন চেনা মুখ ফ্লোরে
শ্যুটিং করতে ঢুকছে। উদয়ের মনে হয় সেও একদিন ওদের মতোই করে স্টুডিওতে ঢুকবে।
স্টুডিও-র মাঠের ওদিকে সারিবদ্ধ ঘর, এক-একজন ডিরেক্টরের। ঘরের মধ্যে চেয়ারে আলো করে বসে আছে সেই ভুবন বিখ্যাত পিসতুতো
কাকা মিলটন সেন। সামনের কয়েকটা চেয়ারে বেশ কয়েকজন চামচা, ওদিকে
বসে একজন মহিলা অভিনেত্রী।
ঘরের দেওয়ালে ‘মন মাতানো হাসি’র একটা বড় প্ল্যাকার্ড।
মিলটন বললো বসো উদয়। হিরো হবার মতো যোগ্যতা তোমার আছে কিনা দেখতে হবে। যদি সেই যোগ্যতা
থাকে--আমিই তোমায় এই “মন মাতানো হাসি” ছবিতে চান্স দেব। অবশ্য মুম্বই-এর হিরোইনকে ম্যানেজ করে
নেব। তবে যোগ্যতা যাচাই করতে হবে তোমার। এর মধ্যে চা-ও এসে গেছে।
স্টুডিও ক্যান্টিনের দুধ ছাড়া লিকার চা। ওরা বলে লাল চা,
-খাও উদয়। কবে তোমার শ্যুটিং ডেট জেনে যাবে।
উদয় বলে—আমাকে কি পরীক্ষা দিতে হবে?
মিলটন বলে—ক্যামেরা টেস্ট, ভয়েস টেস্ট আর একটা ছোট সিন্ অভিনয় করিয়ে টেস্টের কিছু তুলে
দেখে নিতে হবে। এসব তো যন্ত্রের ব্যাপার।
মিলটন তার সহযোগীকে বলল-স্টুডিওর একটা ডেট নে। হাফ শিফটের কাজ। আবার মিলটন বলে,
ওদিকে-তোদের স্টুডিও ভাড়া-ক্যামেরাম্যান-সাউন্ড-আলো-টেকনিসিয়ান এসব মিলিয়ে বেশ কিছু টাকা খরচা পড়বে হে। সেটা প্রায় হাজার পঁচিশেক
টাকা।
উদয়ের কাছে টাকাটা কোনও ব্যাপারই না। উদয় বলে, ওর
জন্য ভাববেন না। পকেট থেকে চেক বই বার করে মিলটনের নামে একটা পচিশ হাজার টাকার চেক
দিয়ে বলে-কালই ব্যাঙ্ক থেকে তুলে নিতে
পারেন।
মিলটন ভাবল যে নিত্য এবার একটা বিশাল মুরগি নিয়ে এসেছে। অবশ্য ওর তবে এত দরাজ দিল হবে ভাবেনি।
মিলটন বলল--তাহলে পরশুদিনই তোমার টেস্টের ব্যবস্থা করব।
উদয়কে নিয়ে ফিরছে নিত্য, পরশুদিন ওর টেস্ট করা হবে। নিত্য বলে, দেখবি তুই ঠিক পাস করে যাবি। স্ক্রিপটা পড়ে নিবি ভালো করে আর এর মধ্যে আয়নার
সামনে দাড়িয়ে কয়েকটা পোজ নিয়ে অ্যাক্টিং করবি। একবারে রিয়েল প্রেমিকের মতো করে
চাই। ওসব আমি তোকে কালই দেখিয়ে দেব। পাবলিসিটি কেমন হয়। ব্যানারে পোস্টারে ছবি ইয়া
বড় করে।
উত্তম কুমারের পর উদয় কুমার। উদয়ও স্বপ্ন দেখছে।
নির্দিষ্ট দিনে উদয় বেশ সেজেগুজেই গাড়ি হাকিয়ে এসেছে। অবশ্য তার পরিবারের কাউকে
খবরই দেয়নি উদয়।
নিত্যই বলে এখন থেকে একটানা ফিল্মে চান্স পেতে চলেছিস, ছবি শুরু হলে তখন ওরা জানবে। এসব কথা কাউকে বেশি জানাস না।
উদয়ও এতবড় অ্যাডভেঞ্চারের কথা কাউকে বলেনি। মিলটন
তার কয়েকজনকে নিয়ে রেডি। দুরুদুরু বুকে ফ্লোরে ঢুকছে উদয়। মুখে পড়েছে ঝাঝালো আলো
দু-দিক দিয়ে। ক্যামেরাম্যান যেন তার দিকে
বন্দুকের নল তাক করে রয়েছে। মিলটনের গলা শোনা যায়-সাইলেন্স-স্টার্ট- সাউন্ড-ক্যামেরা, ক্যামেরা
ম্যান জানায়-রোলিং। মিলটন চিৎকার করে-অ্যাকশন। উদয় এবার
তার অদৃশ্য প্রেমিকের উদ্দেশ্যে গদগদ ভাষায় সে তার স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী ডায়লগ বলে
চলেছে। তার কণ্ঠস্বর কাঁপছে-ঘামছে উদয়। হাঁটু দুটোও কাপছে। তবু
কোনও মতে ডায়লগ শেষ করে। দুপুরে লাঞ্চ ভালোই হয়েছে। ছবির ফিল্ম ওয়াশ করা হচ্ছে। এর পরেই আবার
ল্যাবরেটারিতে যাবে টেস্ট করে আসবে। ওদিকে বলির পাঁঠার মতো বসে আছে উদয়। কে জানে কি
রির্পোট আসবে। তার ওপরই নির্ভর করছে উদয়ের ভাগ্য।
মিলটন হাসিমুখে ফিরে এসে উদয়কে বলে-দারুণ-দারণ হয়েছে হে। নিত্য বলে,
কিরে বলেছিলাম না উদয় তুই পারবি।
মিলটন বলে, তোমাকেই হিরো বানাবো, আজ ফাইনাল ডিসাইড করলাম। বোম্বেতে কথা বলে হিরোইনকেও রাজি করিয়েছি।
তবে লাখ কয়েক টাকা বেশি নিচ্ছে।
মিলটন বলে, আজই তোমার সঙ্গে কন্টাক্ট করতে চাই। আর শোনো উদয়। নতুন হিরো তুমি,
বেশি টাকা দিতে পারব না। এখন সাইনিং পাঁচ হাজার রাখো। এরপর থেকে দেব
আড়াই হাজার টাকা। উদয়ের টাকার দরকার নেই। তার বাবা গদিতে বসে দু-নম্বরি কারবার করে যা পায় তা কম নয়। উদয় জানে বাবার আলমারিতে দু-নম্বরি করা কত লাখ টাকার বান্ডিল আছে কে জানে? ওসব টাকা
দিনের আলোর মুখ দেখেনি।
উদয় বলে-টাকার কথা বলছি না।
মিলটন বলে কাজ করবে তার দাম নিতে পারবে না-তাই কি মানতে হবে-নাও।
উদয় মুগ্ধ হয়ে ওঠে মিলটনের কথায়। সই করে এদিকে সহকারী
প্রোডাকশন ম্যানেজার শুটিং-এর ডেট জানিয়ে
দেয়। আর মিলটন বলে তার সহকারী পরিচালককে, শ্যাম, উদয়কে একটা চিত্রনাট্যের কপি দিয়ে দিবি শ্যুটিং-এর
আগে। ওর রোলটা আমি বুঝিয়ে দেব।
এর মধ্যে দু-একদিন আউটডোর শ্যুটিংও হয়েছে। একটা বাগানে ওরা গেছে গাড়িতে করে। ক্যামেরা
রয়েছে। বড় বড় রিফ্লেকটার থেকে আলো শিল্পীদের মুখে ফেলা হচ্ছে। উদয় আর দু-একজন শিল্পী। দু-জন মহিলা শিল্পীও আছে। এর মধ্যে উদয়ের
ছবিও দু-একটা কাগজে ছাপিয়েছে—পাড়ায় গেছে
তার হিরো হবার খবর। এরপর হিরোইন আসবে বোম্বে থেকে তার সঙ্গে টানা শুটিং।
সেদিন সন্ধ্যায় ফিরেছে শুটিং থেকে উদয়। নিত্যও এসেছে।
নিত্য বলে-খুব বিপদে পড়েছে মিলটনদা। প্রডিউসার
যে চেক দিয়েছে সেটা ক্লিয়ার হয়ে আসেনি, আউটস্টেশন চেক। ওদিকে
কাল থেকে টানা শুটিং, লাখ সাতেক টাকার জন্য সব আটকে না যায়।
বম্বে থেকে হিরোইনও এসে গেছে। টাকা আসতে আরও দিন সাতেক সময় লাগবে। এলেই দাদা টাকাটা
দিয়ে দেবে। মিলটনদাও চেষ্টা করছে এদিক থেকে ম্যানেজ করবার। খুব আপসেট দেখলাম মিলটনদাকে।
উদয়ের চোখ ভেসে ওঠে তার বাবার আলমারিতে রাখা সেই ঠাসা
টাকার বান্ডিলগুলো। ওগুলো আলমারিতে পড়েই আছে। বাবা টাকা কোথায় রাখে জানে উদয়। উদয়ের
ভাগ্যও এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। হিরো হওয়ার চান্স দিয়েছে তার মতো একটা সৎ লোক টাকার
জন্য বিপদে পড়বে?
উদয় মিলটনদাকে বলে, টাকাটা যদি আমি দিই হবে?
মিলটন ওকে ধরে বলে- উদয় খুব বাঁচালে ভাই। টাকাটা আমি মুম্বাই-র থেকে এলেই
দিয়ে দেব, সাত দিনের মধ্যে।
উদয় বলে—আমি কালই যাবার সময় টাকাটা নিয়ে
যাব।
উদয় তাই রাত্রেই আলমারি থেকে সাত লাখ টাকার বান্ডিল
বের করে অ্যাটাচিতে রাখে। আলমারির তাক বেশ খালি হয়ে গেছে। কদিন পর টাকা পোলে আলমারিতে
রেখে দেব! বাবা জানতেও পারবে না।
মিলটনদা টাকাটা পেয়ে খুশি। বলে---আজ অন্য সিনগুলো শ্যুট করবো, সন্ধ্যার
প্লেনে হিরোইন আসছে, কাল থেকে ওর সঙ্গে টানা শুটিং। তারপর দিন
আর শ্যুটিং হয় না। ওদিকে তার স্টুডিওটার অফিসেও তালা পড়েছে। মিলটনদারও আর দেখা নেই।
এর মধ্যে প্রোডাকশনের লোকজনরাও হাজির হয়েছে। তাদের কাজের বকেয়া টাকাও বাকি। মিলটন
ঠকিয়েছে।
উদয় বলে আমাদের নিয়ে যে শ্যুটিং করল।
ক্যামেরাম্যান বলে- ছাই করেছে। ক্যামেরাই চলেছে তাতে রিলও ছিল না। ওসব ওর ছবির নতুন হিরো,
তোমার কাছে কত টাকা ঝেড়েছে?
চুপ করে থাকে উদয়। উদয়ের বাবা আলমারির তাক খালি দেখে
ধরে উদয়কে। বাবাও শুনেছে উদয়ের হিরো হবার কাহিনী।
বাবা বলে—আমি লোকের থেকে দু-নম্বরি করে কামাচ্ছি ও ব্যাটা আমার চেয়েও বড় দু-নম্বরি রে, তাই চোরের উপর বাটপারি করে গেছে। এবার তাই হিরো সাজার সখ ছেড়ে দিয়ে গদিতে বসে ব্যবসা দেখ। আর হিরো হয়ে কাজ নেই।
No comments:
Post a Comment