মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Sunday, May 16, 2021

শিক্ষামূলক ঘটনা - চাঁদের নামে নাম

শিক্ষামূলক ঘটনা,চাঁদের নামে নাম

শিক্ষামূলক ঘটনা - চাঁদের নামে নাম

প্রায় পাঁচশ বছর আগের কথা ভারতের দক্ষিণে একটি ছোট রাজ্য ছিল নাম আহমদনগর সে রাজ্যের সুলতান হোসেন শাহ হঠাৎ মারা গেলেন অমনি সিংহাসনের দখল নিয়ে শুরু হলো বিবাদ সুলতানের ভাইবোন, ছেলেমেয়ে সবাই চায় সিংহাসন একজন বলে, আমি বয়সে সবার বড় সিংহাসনে আমার দাবি বেশি

আরেকজন বলে, সুলতান আমাকেই সিংহাসনে বসতে বলে গেছেন আমি বসব আহমদনগরের মসনদে

দিনে দিনে তাদের বিবাদ চলল বেড়ে রাজ্যের মানুষের মনে ভয়, এই বুঝি লড়াই বাধল!

দিল্লির সিংহাসনে তখন মোগল বাদশাহ আকবর বিরাট তাঁর সাম্রাজ্য বিশাল তাঁর সৈন্যবাহিনী সে আমলে এত বড় বাদশাহ দুনিয়াতে খুব কমই ছিলেন গুটিকয়েক ছোট ছোট রাজ্য ছাড়া ভারতের সমস্ত জায়গাই তাঁর দখলে আহমদনগরের সিংহাসনের এক দাবিদার বাদশাহ আকবরের দরবারে গিয়ে হাজির হলেন বললেন, হুজুর, আমাকে কিছু সৈন্য দিয়ে সাহায্য করুন আহমদনগরের সিংহাসন পেলে আপনাকে অনেক ধনদৌলত উপহার দেব বাদশাহ আকবর মনে মনে ভাবলেন, বেশ তো, একেই সিংহাসনে বসিয়ে দিই পরে এক সময়ে রাজ্যটিকে আমার অধীনে এনে ফেলব এমন সুযোগ সহজে মেলে না আকবর তার ছেলে মুরাদকে ডেকে বললেন, এখনই সৈন্যদল নিয়ে আহমদনগর রওনা হও আশা করি বিনা যুদ্ধেই রাজ্যটি দখল করতে পারবে

শাহজাদা মুরাদ বিরাট এক সৈন্যবাহিনী নিয়ে আহমদনগর চললেন সাথে চলল বড় বড় কামান নিয়ে অনেকগুলো ঘোড়ায় টানা গাড়ি

মোগলবাহিনী আহমদনগর আক্রমণ করতে এগিয়ে আসছে! খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল রাজ্যের লোকেরা ভাবল এবার আর রক্ষা নেই রাজ্যের রাজা নেই, সেনাপতি নেই, নেই উজির-নাজির এতদিন যারা সিংহাসনের দাবি নিয়ে বিবাদ করছে, তারা কে কোথায় পালিয়েছে তার খোঁজ নেই মোগল সৈন্যদের সাথে লড়াই করবে কে? এবার বুঝি রাজ্য যায়! লোকজন ভয়-ভাবনায় আকুল হয়ে উঠল সুলতান হোসেন শাহর একটি মেয়ে ছিল নাম চাঁদ সুলতানা হোসেন শাহ বেঁচে থাকতেই তার বিয়ে হয়েছিল পাশের রাজ্য বিজাপুরে বিয়ের মাত্র কয়েক বছর পর স্বামীর মৃত্যু হলো চাঁদ সুলতানা বাপের রাজ্যে এসে বাস করছিলেন সুলতান হোসেন শাহ মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন যুদ্ধ এবং ঘোড়দৌড়েও দক্ষ করে তুলেছিলেন রাজ্যের এই দুর্দিনে চাঁদ সুলতানা সামনে এগিয়ে এলেন সবাই তাকে নেতা বলে মেনে নিল

আহমদনগর বিজাপুর রাজ্যের মধ্যে সীমানা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত দুই রাজ্যের লোকদের মধ্যে মোটেও মিল ছিল না চাঁদ সুলতানা দেখলেন, দুই রাজ্য মিলে মোগলদের সাথে লড়াই করলে জয়ী হওয়া কঠিন নয় তিনি বিজাপুরে ছুটে গেলেন বিজাপুরের রাজাকে বললেন, মহামান্য রাজা, মোগলবাহিনী আহমদনগর দখল করলে বিজাপুরের বিপদ হবে এক সময় আপনার রাজ্যও মোগলেরা দখল করে নেবে আসুন, আমরা দুই রাজ্য মিলে তাদের বিরুদ্ধে এগিয়ে যাই চাঁদ সুলতানার কথা শুনে বিজাপুরের রাজার টনক নড়ল তাইতো, বিপদ যে একেবারে ঘরের কাছে! এখন নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করার সময় নয় দুই রাজ্যের মধ্যে দুশমনি আর রইল না বিজাপুরের রাজা বিরাট এক সৈন্যদল নিয়ে আহমদনগর পৌছলেন দুই রাজ্যের মিলিত বাহিনী মোগলদের সাথে লড়াই করতে তৈরি হলো শাহজাদা মুরাদের মোগলবাহিনী বিনা বাধায় আহমদনগরের রাজধানীর কাছে পৌছে গেল রাজধানী উচু পাথরের দেয়াল দিয়ে ঘেরা যেমন উচু তেমনি পুরু সেই দেয়াল পেরিয়ে শহরে ঢোকা বড়ই কঠিন সামনে লোহার দুটি সিংহদরজা সেই দরজা ভেতর থেকে বন্ধ মোগল সেনাপতি বললেন, দেয়ালের উপর কামান দাগাও দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকতে হবে বৃষ্টির মতো কামানের গোলা পড়তে থাকল সারা রাজধানী সেই গোলার আওয়াজে কাঁপতে লাগল থরথর করে

এদিকে চাঁদ সুলতানাও বসে নেই তার আদেশে সৈন্যরা দেয়ালের উপর থেকে মোগল সৈন্যদের উপর হামলা চালাল তাদের বন্দুকের গুলিতে কত মোগল সৈন্য যে মারা পড়ল, কত যে জখম হলো কে তার হিসাব রাখে! তবু মোগলবাহিনীর কামান দাগার বিরাম নেই শেষে দেয়ালের এক জায়গার বেশ কিছুটা ভেঙে গেল মোগল সৈন্যরা খুশিতে হৈহৈ করে উঠল আহমদনগরের সৈন্যরা ভাবল, এবার বুঝি শত্রুরা শহরে ঢুকে পড়ে! চাঁদ সুলতানা তার সৈন্যদের দ্বিগুণ বেগে কামানের গোলা ছুড়তে আদেশ দিলেন তিনি নিজেও বন্দুকের গুলি ছুড়ছেন এক সময় তার গুলি শেষ হয়ে গেল আশেপাশে সোনা, রূপা, তামার যত মুদ্রা পাওয়া গেল তাই বন্দুকে ভরে ছুড়তে লাগলেন ধীরে ধীরে রাত নেমে এলো সেদিনের মতো লড়াই বন্ধ হলো মোগলদের সেনাপতি ভাবলেন, রাজধানীর দেয়াল তো ভাঙা শেষ এবার একটু ঘুমিয়ে নিই কাল সকালে কুচকাওয়াজ করে শহরে ঢুকে পড়ব তারপর চাঁদ সুলতানাকে মোগল বাদশাহর সাথে লড়াই করার মজা বুঝিয়ে ছাড়ব।। এদিকে চাঁদ সুলতানার চোখে ঘুম নেই তিনি সব সৈন্যসামন্ত, নগরের লোকজন সবাইকে ডাকলেন বললেন, আপনারা বিপদে সাহস হারাবেন না মোগলরা আমাদের রাজধানী দখল করতে পারবে না আমরা আজ রাতের মধ্যেই এই দেয়াল মেরামত করে ফেলব সকলেই কাজে নেমে পড়ুন

যে কথা সেই কাজ হাজার হাজার মানুষ ভাঙা দেয়াল মেরামত করতে লাগল ইটসুরকি ভারে ভারে এসে দেয়ালের কাছে বোঝাই হলো শত শত মিস্ত্রি খুব তাড়াতাড়ি কাজ করে চলল চাদ সুলতানা শুধু হুকুম দিয়ে বসে রইলেন না নিজেও জোগানদারের কাজে হাত লাগালেন যেভাবেই হোক ভোরের আগেই দেয়াল মেরামত করে ফেলা চাই।।

সকাল হলো দলে দলে সৈন্যরা এসে দেয়ালের কাছে জড়ো হলো কিন্তু একি! দেয়াল যে সেই আগের মতো! বরং আগের চেয়েও যেন মজবুত! মোগল সেনাপতি হাল ছেড়ে দিলেন নাহ, আর নতুন করে হামলা করা যাবে না এর মধ্যেই তাদের অনেক শক্তি ক্ষয় হয়েছে শাহজাদা মুরাদ আহমদনগরের লোকদের শক্তি সাহসের তারিফ করলেন চাঁদ সুলতানার সাথে মোগল শাহজাদার সন্ধি হলো মোগলেরা ভাবল, চাদ সুলতানাই এদেশের সিংহাসনে বসার জন্য সবচাইতে যোগ্য চাঁদ সুলতানাকে সিংহাসনে বসিয়ে মোগলেরা নিজেদের দেশে ফিরে গেল

No comments:

Post a Comment

Popular Posts