সুলতান মাহমুদ গজনভী,খোরাসান বিজয়, সাইদা খানম,শিক্ষামূলক ঘটনা,সত্য ঘটনা, সুলতান আব্দুল মাজীদ |
ক্ষমা নেই - সুলতান মাহমুদ ও খোরাসান এর সাইদা খানম - শিক্ষামূলক ঘটনা – সত্য ঘটনা
বহুকাল আগের কথা। সেই সময়ে গজনি নামে এক বিরাট রাজ্য ছিল। সে রাজ্যের শাসক ছিলেন সুলতান মাহমুদ। তার ধনজন সৈন্যসামন্ত কোনোকিছুর অভাব ছিল না। তিনি অনেক দেশ জয় করেছিলেন। অনেক দেশের রাজা-বাদশাহ তার ভয়ে কাঁপত।
ইরানে একটি রাজ্য
ছিল - নাম খোরাসান। সুলতান মাহমুদ যখন দেখলেন, খোরাসানের সিংহাসনে বসে আছেন এক নারী, তখন তিনি ভাবলেন এই তো সুযোগ! এবার হামলা করে সহজেই খোরাসান দখল করা যায়। হামলা করার আগে তিনি সেই বীর নারীর কাছে একটি চিঠি লিখলেন, সুলতানা, এখন থেকে আপনি আমার নামে খোরাসান রাজ্য শাসন করুন। আমার নামে মুদ্রা তৈরি করে সেই মুদ্রা রাজ্যে চালু করুন। নয়তো লড়াই করার জন্য তৈরি থাকুন। সেই বীর নারী জবাব দিলেন, সুলতান মাহমুদ, আমি জানি আপনি দিগ্বিজয়ী বীর। লড়াই করে বহু দেশ জয় করেছেন। এখন আমাদের এই ছোট রাজ্যটিও দখল করতে চাইছেন। তবে জেনে রাখবেন, আমরাও তৈরি আছি। ভাবছেন, খোরাসানের সিংহাসনে বসে আছে এক অবলা নারী। তাকে হটিয়ে দিতে কতক্ষণ! কিন্তু হামলা হলে আমরা লড়ব, জীবন বাজি রেখে আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব। তাতে হারি আর জিতি, আমার নাম সবাই শ্রদ্ধার সাথে মনে রাখবে। কিন্তু আপনার নামে সবাই অপবাদ দেবে। বলবে, সুলতান মাহমুদ পররাজ্যলোভী। হামলাকারী। অন্যের রাজ্যে হামলা চালিয়ে তিনি অন্যায় করেছেন। আমরা অধীনতা মেনে নেব না। স্বাধীনতা টিকিয়ে
রাখার জন্যে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা লড়াই করব।।
এই চিঠি পেয়ে সুলতান মাহমুদ ভারি অবাক হলেন। মনে মনে সুলতানার সাহসের তারিফ করলেন। তিনি আর খোরাসান রাজ্যে হামলা করলেন না। কে এই বীর নারী? তাঁর নাম সাঈদা খানম।
সুলতান মজিদ ছিলেন তাঁরই ছেলে। সিংহাসনে বসে মজিদ হলেন জুলুমবাজ। মা তাকে সুপথে ফিরে আসতে বললেন। বললেন, ‘প্রজাদের উপর জুলুম বন্ধ করো! দেশের মানুষকে সুখ দাও, শান্তি দাও। কিন্তু কে শোনে কার কথা! দেশ জুড়ে অশান্তি দেখা দিল। আইন নেই, কানুন নেই। প্রজাদের আহাজারিতে খোরাসানের বাতাস ভারী হয়ে উঠল। সাঈদা খানম কোনো উপায় না দেখে রাজধানী সিরাজের বাইরে চলে এলেন। প্রজাদের পক্ষে যোগ দিলেন তিনি। প্রজাদের নিয়ে তৈরি করলেন বীর সেনাদল। জুলুমবাজ ছেলের সাথে মায়ের লড়াই বাধল। লড়াইতে সুলতান মজিদ হেরে গেলেন। মজিদকে এবার তাঁর মায়ের সামনে নিয়ে আসা হলো। মা ছেলেকে বললেন, “তোমার অপরাধের কোনো সীমা নেই। তুমি ছিলে রাজ্যের সুলতান, প্রজাদের সব ভার ছিল তোমার উপর। কিন্তু তুমি তার কিছুই করনি। উল্টো তুমি তাদের উপর জুলুম চালিয়েছ। যাও, আজ থেকে তোমার জায়গা হবে ঐ কয়েদখানা।
সুলতান মজিদ কেঁদে ফেলে বললেন, মা, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।
সাঈদা খানম বললেন, তোমাকে আমি বারবার সাবধান করেছি। কিন্তু তুমি শোনোনি। আমি ন্যায়বিচার করেছি। তুমি আমার ছেলে, কিন্তু তুমি তো জুলুমবাজ। আমি তোমাকে কিছুতেই ক্ষমা করব না। সিপাহিরা এবার সুলতান মজিদকে কয়েদখানায় নিয়ে গেল। রাজ্যের প্রজারা সাঈদা খানমের নামে ধন্য ধন্য করতে লাগল।
No comments:
Post a Comment