বিচার – মজার গল্প – ছোট গল্প – হাসির গল্প |
বিচার
– মজার গল্প – ছোট গল্প – হাসির গল্প
এই
গল্প সিলেট জেলার। সিলেট বিল-হাওড়ের দেশ। আর বিল-হাওড় বিস্তর বলেই এককালে তাতে নানা প্রজাতির
মাছও ছিল বেশুমার। ফুল কথা, একরকম মাছের রাজত্বেই যেন কায়েম
হয়েছিল, হাকালুকিতে, টাঙ্গুয়ার হাওড়ে,
স্নানঘাটে, বানিয়া চং আর সুনামগঞ্জের দিরাই-সাল্লার নিম্নাঞ্চলে। তো এমনি এক
বিলে এক আজদাহা রাক্ষুসে বোয়াল একটি ভেদা বা মেনি (কোন কোন অঞ্চলে বলে ‘রয়না’) মাছকে
মাৎস্যন্যায়ের গা জোয়ারি রীতি অনুযায়ী খাওয়ার জন্য
তাড়া করে। প্রাণভয়ে ও আতঙ্কে ভেদা পানি কেটে তীব্র গতিতে ছুটতে থাকে। তার তখন ত্রাহি
অবস্থা। হঠাৎ সে দেখে পানিতে ভাসছে এক ‘হাগাটালু’ মাছ। দাড়কিনা
প্রজাতির মাছকে সিলেট অঞ্চলে মুন্সিমাছও বলে। আকারে ছোট হলেও এ মাছ বুদ্ধিতে বড়, কূটকৌশলে
পারঙ্গম। মুখে কিছু দাড়ি-গোঁফ গোছর উপাদান থাকায় এ মাছকে মুন্সিমাছ
নাম দেয়া হয়েছে।
ক্ষুধার্ত
বোয়ালকে তেড়ে আসতে দেখে বিপন্ন ভেদা বলে : মুন্সি ভাই, মুন্সি ভাই আমাকে বাঁচাও।
মুন্সিমাছ
এগিয়ে আসে। জিজ্ঞাসা করেঃ ব্যাপার কি?
ভেদা : ঐ
দেখ না, রাক্ষুসে বোয়াল আমাকে খেতে চায়।
মুন্সিমাছঃ
কি ব্যাপার ওকে খেতে চাও কেন?
বোয়াল : দেখ
না, ওর গায়ে-গতরে কত মাংস আর চেকনাই। ওর
মাংস যা নরম আর তুলতুলে, খেতে খুব সুস্বাদু।
মুন্সিমাছ : তা,
আমার সামনে যখন পড়েছ—তখন তো আর খেতে পার
না। টঙ্গে চল। সবাই মিলে বিচার-বিবেচনা করে যদি খাওয়ার পক্ষে রায় দেয়
তাহলে খাবে। ওকে খাওয়ার হক তোমার আছে। তুমি বড়, ছোট মাছকে খেয়েই
তোমার জীবন রক্ষা করতে হবে। এটাই মৎস্য রাজ্যের নিয়ম। তবে নিয়মের ব্যতিক্রম আছে বলেই
নিয়মের প্রমাণ মেলে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করা হচ্ছে। বিচারের পর খাওয়া---সামনে পেয়েই গেলা নয়।
বোয়াল : পেটে
রাজ্যের ক্ষিদে, এতসব নীতিকথা ভাল লাগছে না। কোথায় তোমার টং
না কাছারি সেখানে চল। তাদের কি রায়
শুনি।
পানি
কেটে চলছে প্রথমে ভেদা, পরে মুন্সিমাছ এবং শেষে বোয়াল। পথ দেখিয়ে নিচ্ছে
দাড়কিনা মুন্সি। খাড়ির ভেতর
চলছে তিন মৎস্যপ্রবর। সেখানে পাতা ছিল ফাক ফাক ঘরের জাল। ভেদা জালের ফোকর গলে বেরিয়ে
গেল। মুচকি হেসে এক দৌড়ে বেরিয়ে গেল মুন্সিমাছও। কিন্তু জালের বড় ফাঁকা অংশে আটকে
গেল বোয়ালের মাথা।
বোয়ালঃ
মুন্সি, দেখত আমার গলা আর মুখ আটকে গেল কিসে?
মুন্সি : ও
কিছু না, টঙ্গে বিচার-বিবেচনা শুরু হয়েছে।
তোমার মুখের মাপ নেয়া হচ্ছে। ভেদা যে খাবে—তা খেতে পারবে কিনা
সেজন্য মুখের মাপ নিতে হবে না?
একটু
পরে জালের প্রচণ্ড নড়াচড়া দেখে জেলে দৌড়ে এসে পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে বোয়ালের হা করা
মুখের দু'পাশের কানকোর ভিতরে হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে।
বোয়াল
বলে :
মুন্সি, এটা কি? আমার দম
যে বের হয়ে যাচ্ছে।
মুন্সি
মাছ :
মৎস্য সমাজ বিচার করে বলেছে, তুমি স্বৈরাচারী। তুমি ছোটদের খেয়ে ফেল। তাই রায়ে তোমার ফাসির হুকুম হয়েছে। এখন
রায় কার্যকর হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment