মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Wednesday, August 26, 2020

দি অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্যা ড্যান্সিং ম্যান – স্যার আর্থার কোনান ডয়েল – শার্লক হোমস সিরিজ - বাংলা অনুবাদ - The Adventure of the Dancing Men - Bengali Translation - Sir Arthur Ignatius Conan Doyle - Sherlock Holmes Series - part - 1

দি অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্যা ড্যান্সিং ম্যান – স্যার আর্থার কোনান ডয়েল – শার্লক হোমস সিরিজ - বাংলা অনুবাদ -  The Adventure of the Dancing Men - Bengali Translation - Sir Arthur Ignatius Conan Doyle - Sherlock Holmes Series 


দি অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্যা ড্যান্সিং ম্যান স্যার আর্থার কোনান ডয়েল শার্লক হোমস সিরিজ - বাংলা অনুবাদThe Adventure of the Dancing Men - Bengali Translation - Sir Arthur Ignatius Conan Doyle - Sherlock Holmes Series - part – 1

ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাচের পাত্রটার দিকে তাকিয়ে আছে হোমস, যেন দুনিয়ার কোনওদিকে খেয়াল নেই তার। কী এক রাসায়নিক পদার্থ ফুটছে ওটাতে, দুর্গন্ধে গুলিয়ে উঠল আমার গা। বিরক্ত হয়ে উঠে পড়তে যাব, এমন সময় হোমস বলে উঠল, ‘তা হলে ওয়াটসন, দক্ষিণ আফ্রিকার শেয়ার বাজারে তুমি টাকা খাটাচ্ছ?’
তুমি জানলে কী করে?’ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি। সম্পর্কে তোমাকে তো আমি কিছু বলিনি!' আমার দিকে ঘুরল সে। হাতে কাঁচের নল, ধোঁয়া উঠছে তা থেকে। হেসে, মাথা নেড়ে সে বলল, তা হলে স্বীকার করছ, অবাক করে দিয়েছি তোমাকে?
হ্যা, করছি। 
তা হলে কাগজে লিখে সই করে দাও। 
কেন?”
ব্যাখ্যা করতে শুরু করলেই বলবে, আরে তো পানির মত সহজ। 
হেসে ফেললাম আমি।না-, বল তুমি, তেমন কিছু বলব না। 
তোমার বাঁ হাতের তর্জনী,’ উঠে দাঁড়িয়ে বক্তৃতার ঢঙে বলতে শুরু করল হোমস, আর বুড়ো আঙুলের মাঝের ফাঁকটুকু দেখেই বুঝতে পেরেছি, তোমার সামান্য সঞ্চয় তুমি, সোনার খনিতে খাটাতে সাহস পাচ্ছ না।  
আঙুলের ফাকের সঙ্গে টাকা খাটানোর কী সম্পর্ক? নাহ, কিছুই বুঝতে পারছি না।  
আছে, খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। দুই ঘটনার মাঝখানের সূত্রগুলো ধরিয়ে দিলেই পানির মত সহজ হয়ে যাবে।
এক নম্বর, গতরাতে তুমি ক্লাব থেকে ফিরলে, তোমার বা হাতের তর্জনী আর বুড়ো আঙুলের ফাঁকে চকের দাগ ছিল।  
হ্যা, তাতেই বা কী?’  
আঃ, শোনই না সব। দুই নম্বর, বিলিয়ার্ড স্টিকটা ঠিক রাখার জন্যে তুমি চকটা ওখানটাতেই রাখ। তিন, থার্সটন ছাড়া আর কারও সঙ্গে তুমি বিলিয়ার্ড খেল না। চার, মাসখানেক আগে তুমি আমাকে বলেছিলে, থার্সটন দক্ষিণ আফ্রিকার সোনার খনিতে টাকা খাটাতে চায়। তুমিও ওর পার্টনার হতে চাও। এর মেয়াদ শেষ হতে তখন মাসখানেক বাকি ছিল। পাঁচ হলো, তোমার চেক বই আমার ড্রয়ারে তালা দেয়া আছে। এবং বেশ কিছু দিন হলো তুমি চাবিটা আমার কাছ থেকে নাওনি। তা হলে কি এই দাঁড়াচ্ছে যে, তুমি টাকা খাটাতে রাজি নও?’
উঃ, হোমস!’ চেঁচিয়ে উঠলাম আমি।সত্যিই কি সহজ!
হুঁ, তা তো বলবেই,গম্ভীর হবার ভান করল সে।বুঝিয়ে দেবার পর সব সমস্যাই পানির মত সহজ মনে হয়। তা আরেকটা ধাধা দিচ্ছি, উত্তর বের কর। আমি এর মাথা মুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারলাম না,বলে এক চিলতে কাগজ টেবিলের ওপর মেলে ধরল সে।
তাতে কার্টুনের মত করে আঁকা কিছু নাচুনে মূর্তির ছবি
তো কোনও বাচ্চার আঁকিবুকি বলে মনে হচ্ছে,তাচ্ছিল্য স্বর্ণকীট ভরে বললাম আমি।
, তোমার বুঝি তাই মনে হলো?
কেন, ছাড়া কিই-বা হতে পারে?’  
মি. হিলটন কিউবিট অন্য কিছু ধারণা করছেন। রিডলিং থর্প ম্যানর থেকে চিঠি সহ এই কাগজটা আজকের প্রথম ডাকে এসেছে। ভদ্রলোকও আজই আসবেন।  
হোমসের কথা শেষ না হতেই কলিংবেল বেজে উঠল।এসে গেছে বোধহয়,' বলল হোমস
সিঁড়িতে ভারি পায়ের শব্দ শোনা গেল। পরমুহূর্তে ঘরে ঢুকল বিশালদেহী এক ভদ্রলোক। টকটকে গায়ের রং, ঝকঝকে স্বচ্ছ চোখ আর নিখুঁতভাবে কামানো চিবুক। পরিষ্কার বোঝা গেল আমাদের বেকার স্ট্রীটের কুয়াশা ঘন এই জঘন্য পরিবেশের সঙ্গে ওর কোনোই সম্পর্ক নেই। পূর্ব উপকূলের তাজা বাতাস নিয়েই যেন সে ভিতরে ঢুকল। আমাদের সঙ্গে করমর্দনের পালা শেষ করে চেয়ারে বসল সে। তারপর টেবিলের কাগজটাতে চোখ পড়তেই অস্বস্তি ভরে জিজ্ঞেস করল, “কিছু বুঝতে পারলেন, মি. হোমস? শুনেছি, যত জটিল আর অদ্ভুত সব রহস্য আপনি পছন্দ করেন। এরচেয়ে বিদঘুটে ধাঁধা নিশ্চয়ই আপনি আগে দেখেননি, তাই না?
হ্যা, তা ঠিক। নড়েচড়ে বসল হোমস। দেখে মনে হয় বাচ্চাদের দুষ্টুমি করে আঁকা ফালতু ছবি। খুদে কার্টুন মার্কা মানুষ নাচতে নাচতে চলেছে -প্রান্ত থেকে -প্রান্তে। বৈশিষ্ট্যহীন। আপনি এটাকে এত গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন, মি. কিউবিট?
গুরুত্ব আমি দিচ্ছি না। দিচ্ছে আমার স্ত্রী। ভয়ে বেচারি আধমরা হয়ে গেছে। মুখ ফুটে কিছু বলছে না ঠিকই। তবে আমি স্পষ্ট দেখছি ওর চোখে আতঙ্ক। তাই...
কাগজটা আবার আলোয় মেলে ধরল হোমস। স্কুলের খাতা থেকে ছিড়ে নেয়া একটা পাতা। পেন্সিলে আঁকা ছবিগুলো ঠিক এমন বেশ খানিকক্ষণ ধরে পরীক্ষা করে দেখার পর সযত্নে কাগজটা ভাঁজ করে পকেট বুকে রেখে হোমস বলল, “ঘটনাটা কি খুলে বলবেন, মি. কিউবিট?
নিশ্চয়ই। তবে আগেই বলে রাখছি, আমি কিন্তু গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। কাজেই বুঝতে অসুবিধে হলে জিজ্ঞেস করবেন আমাকে। গত বছর, মানে আমাদের বিয়ের সময় থেকেই শুরু করি। ধনী না হলেও, রিডলিং থোর্পে আমরা পাঁচশো বছরের পুরনো নরফোকের সবাই এক ডাকে চেনে আমাদের। জুবিলি উৎসব উপলক্ষে গত বছর লণ্ডন গিয়েছিলাম। উঠেছিলাম রাসেল স্কোয়ারের একটা মেসে। ওখানেই পরিচয় হয় এলসি প্যাট্রিকের সাথে। আশ্চর্য সুন্দরী এক আমেরিকান তরুণী। গভীরভাবে ভালবেসে ফেললাম ওকে। রেজিস্ট্রি অফিসে বিয়ে করে ওকে নিয়ে চলে এলাম নরফোকে। ভাবছেন, সম্রান্ত বংশের একজন পুরুষ হয়ে মেয়েটির অতীত জীবন কিংবা সামাজিক অবস্থান না জেনে কী করে বিয়ে করলাম। আসলে মুখে আর কী বলব, ওকে দেখলে, আলাপ করলেই বোঝ যায়। আমি কোনও ভুল করিনি। এলসি খুব সরল, অকপট। কিছুই লুকোয়নি আমার কাছে। বিয়ের আগে আমাকে সরাসরি বলেছিল, অনিচ্ছাসত্ত্বেও কিছু বাজে ব্যাপারে জড়িয়ে পড়েছিল সে। তাতে ভীষণ মানসিক কষ্টে ভুগেছে। সব ভুলতে চায়। বলেছিল, ওর ব্যক্তিগত চরিত্রে কোনও কলঙ্ক নেই। প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিল আমাকে, ওর অতীত নিয়ে যেন কোনও প্রশ্ন না তুলি। অবশ্য - বলেছিল, শর্ত কঠিন মনে হলে ফিরে যেতে। ওর শর্ত মেনে নিয়েছিলাম আমি এবং আজ পর্যন্ত আমি আমার কথা রেখেছি।
বিয়ের পর এক বছর কেটে গেছে। সত্যি বলছি, মি. হোমস, দাম্পত্য জীবনে আমরা খুবই সুখী। কিন্তু মাসখানেক হলো, অশান্তির কালো ছায়া ঘিরে রেখেছে আমাদেরকে। আমেরিকা থেকে একটা চিঠি এল, এবং সেই থেকেই শুরু। ওটা পড়েই ফ্যাকাসে হয়ে গেল ওর মুখ। তারপর চিঠিটা দুমড়ে-মুচড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল ফায়ারপ্লেসের আগুনে। সম্পর্কে একটা কথাও বলল না আমাকে। প্রতিজ্ঞার কথা ভেবে আমিও কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলাম না। এরপর থেকেই কেমন জানি হয়ে গেল সে। সারাক্ষণই উৎকণ্ঠিত হয়ে থাকে। জোরে একটু শব্দ হলেও চমকে ওঠে। যেন ভয়ঙ্কর কিছু ঘটার অপেক্ষাতে রয়েছে। নিশ্চিন্তে নির্ভর করতে পারত: আমার ওপর। অতীতে যাই ঘটে থাকুক, তবু ওর সততা সম্পর্কে একবিন্দু সন্দেহ আমার নেই, মি. হোমস। আমার বংশ কলঙ্কিত হোক কিংবা আমার কোনও ক্ষতি হোক, এমন কিছুই এলসি করতে পারে না; বিষয়ে আমি নিশ্চিত। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপারটা ঘটেছে সপ্তাহখানেক আগে। এক মঙ্গলবারে ঘরের জানালার চৌকাঠে এই ধরনের কিছু ছবি দেখতে পাই, চক দিয়ে আঁকা। ভাবলাম, কাজের ছেলেটা করেছে। কিন্তু জিজ্ঞেস করতেই সে কসম কেটে অস্বীকার করল। যা হোক, নিজহাতে আমি মুছে দিলাম ওগুলো এটা এলসিকে বলতেই যেন কেঁপে উঠল। মুহুর্তে সামলে নিয়ে অনুনয় করে আমাকে বলল, এমন কোনও ছবি দেখলে যেন ওকে অবশ্যই দেখাই। এক সপ্তাহের মধ্যে আর এমন কোনও ছবি-টবির দেখা পেলাম না। মাত্র গতকাল পেলাম একটা কাগজ। বাগানের সূর্য-ঘড়িটার ওপর পড়ে ছিল। এলসিকে দেখাতেই সে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। এরপর থেকে আর সে কোনওমতেই স্বাভাবিক হতে পারছে না। আচ্ছন্নের মত পড়ে আছে। আর থেকে থেকে আতঙ্কে শিউরে উঠছে। ওর এই অবস্থা দেখে একটা চিঠি লিখে কাগজটা পাঠিয়ে দিলাম আপনার কাছে। এটা নিয়ে পুলিশের কাছে গেলে হেসেই অস্থির হত তারা। এলসির জন্যে আমি সব করতে পারি, মি. হোমস। ওর ভালর জন্য আমি শেষ পয়সাটিও বিসর্জন দিতে রাজি আছি।
এতক্ষণ তন্ময় হয়ে আমরা শুনছিলাম ভদ্রলোকের কাহিনি। শেষ হবার পরও খানিকক্ষণ গুম হয়ে বসে রইল হোমস। আমি তো ভদ্রলোকের পত্নী-প্রেম দেখে একেবারে মুগ্ধ।
আচ্ছা, মি. কিউবিট, আপনি সরাসরি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেও তো দেখতে পারেন,' হঠাৎ বলল হোমস।এই পরিস্থিতিতে আপনাকে তার সব খুলে বলা উচিত।  
তা আমি পারব না, মি. হোমস। প্রতিজ্ঞা প্রতিজ্ঞাই। নিজ থেকে বললে অবশ্যই ভাল হত। নিজের যুক্তি অনুযায়ী চলার স্বাধীনতা নিশ্চয়ই আমার আছে, কী বলুন?
অবশ্যই। ব্যাপারে আপনি আমার আন্তরিক সহযোগিতা পাবেন, মি. কিউবিট। আচ্ছা, আপনার বাড়ির আশপাশে কি কোনও অচেনা লোককে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন?
না। আমাদের এলাকাটা খুবই নিরিবিলি। নতুন মুখ দেখলে অবশ্যই মনে থাকত।  
এই ছবিগুলোর নিশ্চয়ই কোনও গুরুত্বপূর্ণ অর্থ আছে। কিন্তু এটা এত সংক্ষিপ্ত যে, আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। আপনার কথা থেকেও এমন কিছু পেলাম না যার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করতে পারি। জানালার আঁকগুলো দেখতে পেলেও একটা কাজ হত। ঠিক আছে, আপনি নরফোকে ফিরে যান। আশপাশে নজর রাখবেন। এমন ছবি, কোথাও দেখতে পেলে সাথে সাথে নকল করে পাঠিয়ে দিবেন আমার কাছে। কোনও নতুন মুখ আপনার এলাকায় দেখলে তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিবেন। কিছু ঘটার সম্ভাবনা দেখলে সোজা চলে আসবেন আমার এখানে। প্রয়োজন পড়লে আমি নিজেই চলে যাব আপনার বাড়িতে।  
নাচুনে মূর্তির ব্যাপারটা হোমসকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে, বুঝতে পারলাম। প্রায়ই কাগজটা বের করে গভীর মনোযোগর সাথে দেখে সে। এটা নিয়ে গবেষণা করতে তার প্রায় পনেরো যোলো দিন কেটে গেল। অথচ সম্পর্কে সে একটি কথাও বলল না আমাকে। একদিন বাইরে বেরুনোর মুহূর্তে সে ডাকল আমাকে। বাইরে যেতে নিষেধ করল। সেই নাচুনে মূর্তির উৎস মি. হিলটন কিউবিট নাকি আসবে। আজ সকালেই এসেছে তার টেলিগ্রাম হোমসের ধারণা, নরফোকে সাংঘাতিক কোনও ঘটনাই ঘটেছে।
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। এসে পড়ল লোকটা। তার চেহারা দেখে অবাক হয়ে গেলাম। একেবারে ভগ্নদশা। কপালে ভাঁজ, চোখের কোণে কালি পড়েছে। সমস্ত শরীরে তার ক্লান্তি আর উদ্বিগ্নতার ছাপ।আমি আর পারছি না, মি. হোমস,' বলে এলিয়ে পড়ল সোফাতে। অজানা শত্রু আমার চারপাশে এঁকেই চলেছে বিদঘুটে এই ছবি। আর তাই দেখে তিল তিল করে মরণের পথে এগোচ্ছে আমার স্ত্রী। কত আর সহ্য হয় বলুন? স্পষ্ট দেখছি, তিলে তিলে নিজেকে ধ্বংস করছে এলসি।'
এর পরও উনি কিছু জানাননি আপনাকে?’ জিজ্ঞেস করল হোমস।
না। কিছু যেন বলতে গিয়েও থেমে যায়। ওর ভয় ভাঙানোর অনেক চেষ্টা করেছি। পারিনি।  
আপনি নিজে নিশ্চয়ই খবরটবর কিছু সংগ্রহ করেছেন?’  
হ্যা। নতুন আঁকা কয়েকটা ছবিও এনেছি। লোকটাকেও দেখেছি।
ছবি আঁকা লোকটাকে দেখেছেন?উত্তেজিত হয়ে উঠল হোমস।।
হ্যা, আঁকার সময় দেখেছি। পুরো ঘটনাটা আপনাকে বলছি। আপনার এখান থেকে যাবার পরদিনই দেখলাম যন্ত্রপাতি রাখার কালো দরজায় আরেক দল নাচিয়ে মূর্তি। চক দিয়েই আঁকা। আপনা কথামত ওগুলো কাগজে তুলে এনেছি,' বলে সে পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ টেবিলের ওপর রাখল।বাহ্, চমৎকার!’ খুশি হলো হোমস। জিজ্ঞেস করল, তারপর?
ছবিটা তুলে নেয়ার পর মুছে ফেললাম। দু'দিন পর সেই একই জায়গায় আবার দেখলাম। এই যে সেগুলোও এনেছি। হোমসের দিকে বাড়িয়ে দিল সে কাগজগুলো
মালমশলা দেখি ভালই জোগাড় করেছেন,' উচ্ছসিত কণ্ঠে বলল হোমস।এর তিন দিন পর সূর্য-ঘড়ির ওপর নুড়ি চাপা দেয়া এই কাগজটা পেলাম। সেই একই রকম। তখনই ঠিক করলাম, এবার পাহারা দেব। রিভলভার নিয়ে পড়ার ঘরের জানালা থেকে নজর রাখতে শুরু করি। ওখান থেকে লন আর বাগান স্পষ্ট দেখা যায় এক রাতে ঘর অন্ধকার করে বসে পাহারা দিচ্ছি। বাইরেটা চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে। রাত তখন দুটোর মত হবে। হঠাৎ পায়ের শব্দে চমকে তাকালাম, ঘরে ঢুকল আমার স্ত্রী। ঘুমোবার জন্যে বারবার করে অনুরোধ করল আমাকে। একটু রুক্ষ স্বরেই ওকে বললাম, “বদমাশটা কে আমি দেখতে চাই।
এলসি বলল, “প্লীজ, মাথা গরম কোরো না। নিশ্চয় কেউ ঠাট্টা করে করছে এসব। আর যদি ব্যাপারটা তোমার কাছে অসহ্য মনে হয়, তা হলে চল না কিছুদিনের জন্য অন্য কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসি।"
না, তা যাব না আমি,” কঠোর ভাবে বললাম।ঠাট্টা কৌতুকের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালানটা গাধামি হবে।
এলসি বলল, “ঠিক আছে, এখন তা হলে শুতে যাই চল। কাল বরং কথা বলব সম্পর্কে,” বলতে বলতে সে শক্তভাবে চেপে ধরল আমার হাত। এরপর কাপতে শুরু করল। ঝট করে বাইরে তাকালাম আমি। যন্ত্রপাতি রাখার ঘরের কাছটাতে কী যেন নড়ে উঠল। খেয়াল করে দেখতেই বুঝলাম একজন মানুষের ছায়ামূর্তি ওটা। আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে ওটা দরজার সামনে বসল গুড়ি মেরে। রিভলভারটা তাক করে ছুটে বাইরে যেতে চাইলাম। প্রাণপণ শক্তিতে আমাকে জাপটে ধরল এলসি। ঝটকা মেরে সরাতে চাইলাম ওকে, পারলাম না। শেষে যখন নিজেকে মুক্ত করতে পারলাম, ততক্ষণে পালিয়ে গেছে শয়তানটা। তবে এঁকে রেখে গেছে সেই একই নাচুনে মূর্তি। টুকে নিলাম। আশপাশে অনেক খোঁজাখুঁজিও করলাম কিন্তু ওর টিকিও দেখতে পেলাম না। অবাক কাণ্ড কী জানেন? ঘাপটি মেরে ছিল কোথাও। কারণ সকালে ওগুলোর পাশে দেখতে পেলাম আরও নতুন কিছু মূর্তি।
সবই টুকে এনেছেন তো?আগ্রহী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল হোমস।
অবশ্যই। ওই কাগজগুলোর মধ্যেই সব আছে। 
সব এনে ভাল করেছেন। সাংঘাতিক জরুরী এগুলো হ্যা, এবার বলুন আপনার কাহিনির বাকি অংশটুকু!
আর বিশেষ কিছু বলার নেই। তবে সেদিন রাতে এলসির ওপর ভীষণ রেগে গিয়েছিলাম। ওভাবে আমাকে আটকে না দিলে ব্যাটা উল্লুককে আমি ঠিকই ধরতে পারতাম। 
কেন সে -কাজ করল, জিজ্ঞেস করেননি?
করেছি। আমার বিপদের ভয়েই নাকি করেছে। আপনার কি তাই ধারণা?
আমার ধারণা ঠিক এর উল্টো। লোকটার ক্ষতির ভয়েই সে আমাকে আটকে ছিল। ওই মুহূর্তে আরও মনে হয়েছিল, লোকটাকে এবং তার আঁকা ছবিগুলো সম্পর্কে সব জানে এলসি। কিন্তু, বিশ্বাস করুন, মি. হোমস, ওর কণ্ঠস্বর আর চাউনিতে এমন করুণ আকুতি আমি দেখেছিলাম, যে ওর সম্পর্কে অমন ধারণা করার জন্যে পরে সত্যিই অনুতপ্ত হলাম। ওর দ্বারা আমার কোনও ক্ষতি হওয়া অসম্ভব।
এখন আমার ইচ্ছে, খামারের কিছু লোকজন দিয়ে পাহারা বসিয়ে বাঁদরটাকে ধরে ধোলাই দিই।
এতে আপনার সমস্যার সমাধান হবে বলে আমার মনে হয় না একটু চুপ থেকে আবার জিজ্ঞেস করল হোমস, আজ কি আপনি লণ্ডনে থেকে যাবেন?  
নাহ, ফিরতেই হবে আমাকে। এলসিকে একা রাখা ঠিক হবে না। সে- অবশ্য ফিরে যাবার জন্য অনুরোধ করেছে।  
ঠিক আছে। দুচার দিনের মধ্যে নরফোকে আমরাও যাব।  
হিলটন কিউবিট বেরিয়ে যেতেই কাগজগুলো নিয়ে যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ল হোমস। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেল। ওর দেখা, লেখা কোনটাই যেন শেষ হতে চায় না। পাশে বসে থাকলেও আমার অস্তিত্ব সে সম্পূর্ণ ভুলে গেল। কাজের মধ্যে শুনগুন গান আর শিস দিতে দেখে বুঝলাম, ফলাফল সন্তোষজনকই। ঝাড়া দু'ঘণ্টা পর সোল্লাসে সে চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠল। খানিকক্ষণ ঘরের -প্রান্ত থেকে -প্রান্ত পায়চারি করল। আবার চেয়ারে বসে লিখতে শুরু করল। লেখা শেষ করে সে তাকাল আমার দিকে।

No comments:

Post a Comment

Popular Posts