মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Wednesday, January 8, 2020

লর্ড আর্থার সেভিলের অপরাধ - অস্কার ওয়াইল্ড - বাংলা অনুবাদ গল্প - Lord Arthur Savile's Crime – Oscar Wilde - Translation in Bengali Part 2 of 4 -

রহস্য গল্প,বড় গল্প,উপন্যাস,অস্কার ওয়াইল্ড,বাংলা অনুবাদ গল্প,LORD ARTHUR SAVILE’S CRIME,Translation in Bengali,Oscar Wilde,bangla translation,


LORD ARTHUR SAVILE’S CRIME –Oscar Wilde - Translation in Bengali Part 2 of 4 - লর্ড আর্থার সেভিলের অপরাধ - অস্কার ওয়াইল্ড - বাংলা অনুবাদ গল্প
- - - - - - - - - - - - - - 
পর্বঃ ২ 
মেয়েদের অপেক্ষা করিয়ে রাখা ঠিক নয়, লর্ড আর্থার,’কোনরকমে মুখে একটা হাসি টেনে বললেন মি. পজার্স।ওঁদের ধৈর্য খুব কম,’ লর্ড আর্থারের সুন্দর ঠোঁট প্রচণ্ড বিরক্তিতে বেঁকে গেল। এই মুহুর্তে বেচারি
ডাচেসের বিন্দুমাত্র গুরুত্ব নেই তাঁর কাছে। মি.পজার্সের সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন তিনি।বলুন এখানে কী দেখেছেন। যা বলবেন সত্য বলবেন। আমি কচি খোকা নই। ব্যাপারটা জানতেই হবে।
চোখ পিটপিট করলেন মি.পজার্স, অস্বস্তির সঙ্গে শরীরের ভার চাপালেন এক পা থেকে অন্য পায়ে।
লর্ড আর্থার, -চিন্তা আপনার মাথায় কিভাবে এল যে যা বলেছি তার চেয়েও বেশি কিছু আছে আপনার হাতে?
আপনার হাবভাব দেখে বুঝতে পেরেছি। বলুন, কী দেখেছেন আমার হাতে। বিনে পয়সায় বলতে হবে না। কাজটার জন্যে পাবেন একশো পাউণ্ড। মুহূর্তের জন্যে জ্বলে উঠল মি. পজার্সের নিস্প্রভ চোখজোড়া গিনি? শেষমেষ জানতে চাইলেন তিনি- গলা নামিয়ে
নিশ্চয়। আগামীকালই চেক পাঠিয়ে দেব! আপনার ক্লাব কোনটা?
আপাতত আমার কোন ক্লাব নেই। ঠিকানা হচ্ছেআপনাকে বরং কার্ড দিই একটা। পকেট থেকে পিজ্জবোর্ডের (gilt-edge pasteboard) ছোট্ট একটা কার্ড বের করে এগিয়ে দিলেন মি. পজার্স লর্ড আর্থারের দিকে। তাতে লেখা
মি. সেপটিমাস. আর. পজার্স
প্রফেশনাল কিরোম্যান্টিস্ট,
১০৩০ ওয়েস্ট মুন স্ট্রীট
আমার সময় দশটা থেকে চারটা বললেন মি. পজার্স। পরিবারসুদ্ধ এলে ফিস কম নেই।
তাড়াতাড়ি বলুন,হাত বাড়িয়ে দিলেন লর্ড আর্থার।
চারপাশে চোখ বুলিয়ে দরজার ভারি পর্দাটা টেনে দিলেন মি. পজার্স। বলতে একটু সময় লাগবে, লর্ড আর্থার, আপনি বরং বসুন।তাড়াতাড়ি বলুন!’ চূড়ান্ত অসহিষ্ণুতায় মেঝেতে পা ঠুকলেন লর্ড আর্থার সেভিল
মুচকি হেসে পকেট থেকে একটা ম্যাগনিফাইং গ্লাস বের করে, রুমাল দিয়ে যত্নের সঙ্গে মুছলেন মি. পজার্স।

দুই
দশ মিনিট পর বেন্টিঙ্ক হাউস থেকে ছিটকে বেরিয়ে এলেন লর্ড আর্থার। মুখে আতঙ্ক, চোখ থমথম করছে বিষাদে। তীব্র শীতের রাত, গ্যাসের বাতি কাঁপছে এখানে-ওখানে। হু হু করে বইছে হাড় কাঁপানো বাতাস, কিন্তু লর্ড আর্থারের হাত আর কপাল আগুনের মত গরম। টলতে টলতে এগিয়ে চললেন তিনি। এক পুলিশ তাঁর দিকে তাকাল সন্দেহের চোখে, ভিক্ষা চাইতে গিয়ে পিছিয়ে এল এক ভিখারিতার মনে হয়েছে ওই লোকটা তার চেয়েও দুর্দশাগ্রস্ত। একটা গ্যাসবাতির নিচে দাঁড়িয়ে আপন হাতের দিকে তাকালেন লর্ড আর্থার, এখনই যেন সেখানে পাওয়া যাচ্ছে রক্তের আভাস। হত্যা! হ্যা, একটা হত্যাকাণ্ডের চিহ্ন এখানে দেখতে পেয়েছেন কিরোম্যান্টিস্ট। শীতের এই রাতও যেন সে-কথা জেনে গেছে, কানের কাছে এসে যেন তা শুনিয়ে যাচ্ছে দমকা বাতাস। হত্যা, তোমার দ্বারা সংঘটিত হবে ভয়াবহ এক হত্যাকাণ্ড! কথাটা কে বলল! চমকে উঠলেন লর্ড আর্থার, ওই দুরের বাড়িটার ছাদ নাকি রাস্তার ওপাশের অন্ধকার কোণ? পার্কের কাছে এসে থামলেন তিনি। কপালের তাপ কমানোর জন্যে ঠেকালেন লোহার ঠাণ্ডা রেলিংয়ে। তাপ কমল না।
হত্যা! হত্যা কাণ্ড!’ বলতে লাগলেন ফিসফিস করে, যেন এই কথাটা বার বার আওড়ালে তার আতঙ্ক কমবে। কিন্তু তা তো হলোই না, আপন কণ্ঠ তাঁকে আরও আতঙ্কিত করল। এক সময় তার মনে হলো, সামনে যে পথচারী পাবেন তাকে ডেকে খুলে বলবেন সব কথা, সন্ধ্যার পর থেকে যা যা ঘটেছে কিছুই বাদ দেবেন না। পার্ক ত্যাগ করে এগিয়ে চললেন তিনি, অক্সফোর্ড স্ট্রীট পেরিয়ে ঢুকে পড়লেন কুখ্যাত গলির মধ্যে। সস্তা প্রসাধনচর্চিতা দুই মেয়ে রসিকতা করে উঠল তাঁকে দেখে। দ্রুত পা বাড়ালেন লর্ড আর্থার। হঠাৎ একটা বাড়ির ভেতর থেকে, ভেসে এল গালাগালি আর মারধরের শব্দ, কেঁদে উঠল কে যেন হাউমাউ করে। লর্ড দেখলেন, শতচ্ছিন্ন পোশাকে শিশুরা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে রাস্তার পাশে। অদ্ভুত এক করুণায় ছেয়ে গেল তাঁর মন। এই যে সব নিস্পাপ শিশু, এদের ভাগ্যও কি তাঁর মতই পৃর্বনির্দিষ্ট? এরাও তাঁর মতই বড় সেই দাবার দাবা খেলার গুটি মাত্র? কিছুক্ষণ পর নিজেকে তিনি আবিষ্কার করলেন মেরিলিবোনের (Marylebone) সামনে। দুরে দেখা যাচ্ছে, গ্যাসবাতির সারি। দেয়াল- ঘেরা একটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা ক্যাব, ভেতরে চালক গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এবার দ্রুত এগোলেন তিনি পোর্টল্যান্ড প্লেসের দিকে। বার বার দৃষ্টি বোলালেন চারপাশে, যেন কেউ তাঁকে অনুসরণ করছে। রিচ স্ট্রীটের (Rich Street) বাঁকে ঝুঁকে পড়ে কী যেন পড়ছে দুজন পথচারী। কৌতুহল দমন করতে না পেরে এগিয়ে গেলেন তিনি সেদিকে। দেয়ালে সাটা
রয়েছে শাদা একটা প্ল্যাকার্ড, তাতে কালো হরফে বড় বড় করে লেখাহত্যাকারীকে ধরিয়ে দিন। মাঝারি উচ্চতার তিরিশ/চল্লিশ বছরের একটা লোকের জন্যে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। পরনে তার কালো কোট আর চেক ট্রাউজার, মাথায় বিলিকক হ্যাট, ডান গালে কাটা দাগ। লেখাগুলো বার বার পড়লেন লর্ড আর্থার। একদিন হয়তো তাঁর ছবিওয়ালা প্ল্যাকার্ডে ছেয়ে যাবে লণ্ডনের দেয়াল, হয়তো তাঁর মাথার জন্যেও ঘোষিত হবে পুরস্কার। কথাটা ভাবতেই শিউরে উঠলেন তিনি। আর এক মুহুর্তও সেখানে দেরি না করে, ঘুরে, দেখতে দেখতে মিশে গেলেন রাতের অন্ধকারে। এরপর কোথায় কোথায় গেলেন, তাঁর পরিষ্কার মনে নেই। পিকাডিলি সাকাসে (Piccadilly Circus) যখন পৌছলেন, তখন আকাশে ফুটেছে। ঊষার আলো। এবার বাড়ি ফিরতেই হয়, ঘুরলেন তিনি বেলগ্রেভ স্কোয়ারের (Belgrave Square) দিকে। সবজি আর ফল বিক্রেতারা ইতিমধ্যেই তাদের গাড়ি হাঁকাতে শুরু করেছে কভেন্ট গার্ডেনের (Covent Garden) উদ্দেশে। নিজেদের মধ্যেই হাসাহাসি করে গড়িয়ে পড়ছে তারা, এক চালক ডাকছে আরেক চালকের নাম ধরে। বিক্রি সেরে তারা যখন ফিরে আসবে, তখনও ঘুম ভাঙবে না বেশিরভাগ শহরবাসীর। রাতের অন্ধকারে মুখ লুকানো পাপের লণ্ডনকে তারা চেনে না, দুপুরের ধোয়াটে লণ্ডন সম্বন্ধেও তাদের পরিষ্কার ধারণা নেই। ঈর্ষার দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন লর্ড আর্থার সেভিল, অনেক কিছু জানে না বলেই তারা কত সুখী! অবশেষে তিনি যখন পৌছুলেন বেলগ্রেভ স্কোয়ারে, আকাশে তখন ধরেছে নীলের ছোপ, বাগানে কিচিরমিচির করছে পাখিরা।

তিন
বেলা বারোটায় যখন ঘুম ভাঙল লর্ড আর্থারের, ঘরে তখন ঝাপিয়ে পড়েছে উজ্জ্বল সূর্যালোক। বিছানায় উঠে বসে তাকালেন তিনি জানালা দিয়ে। শহরটার ওপর যেন ঝুলে আছে তাপের একটা পর্দা, বাড়ির ছাদগুলো দেখাচ্ছে মলিন রূপোর মত। নিচের স্কোয়ারে দৌড়াদৌড়ি করছে শিশুরা, জনতার ঢল ছুটে চলেছে পার্কের
দিকে। জীবন কখনও তার এত সুন্দর মনে হয়নি, অশুভ যেন এই মুহূর্তে অতি দূরের কোন বস্তু ট্রেতে করে এক পেয়ালা চকোলেট নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল তাঁর ভ্যালেট। চকোলেটটা এক চুমুকে শেষ করে, পর্দা সরিয়ে গেলেন তিনি গোসলখানা আলো এসে পড়েছে ছাদের স্বচ্ছ স্ফটিক ভেদ করে, মার্বেল পাথরের ট্যাঙ্কে পানি ঝিকমিক করছে চন্দ্রকান্তমণির মত (moonstone)! ঝাপিয়ে পড়লেন তিনি পানিতে, মাথাটাও ডুবিয়ে দিলেন, যেন মুছে ফেলতে চান লজ্জার কোন স্মৃতি। গোসলখানা থেকে যখন বেরিয়ে এলেন, মনের অস্থিরতা দূর হয়ে প্রায় শান্তি নেমে এসেছে। নাস্তার পর ডিভানে শরীরটা এলিয়ে দিয়ে একটা সিগারেট ধরালেন লর্ড আর্থার ম্যান্টেল-শেলফের ওপর কিংখাবের ফ্রেমে বাঁধা সিবিল মার্টনের একটা ছবি লেডি নোয়েলের (Noel) বলনাচে যখন প্রথম দেখা হয়, তখন ঠিক এইরকমই ছিল। ছোট, চমৎকার আকৃতির মাথাটা হেলে আছে একপাশে, যেন নলখাগড়ার মত সরু গলাটা বহন করতে পারছে না সৌন্দর্যের ভার।
ফটোটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে লর্ড আর্থারের মনে হলো, মাথার ওপর ঝুলছে নিয়তির যে-খড়গ, সেটা সরে যাওয়া পর্যন্ত মেয়েটিকে বিয়ে করা হবে মহা এক অন্যায়। যেভাবেই হোক, পিছিয়ে দিতে হবে বিয়েটা। মেয়েটিকে যদিও তিনি খুবই ভালবাসেন, তবু হত্যাকাণ্ডটা ঘটে না যাওয়া পর্যন্ত ওকে বিয়ে করার কোন অধিকার তার নেই। নিজেকে তখনই তিনি সঁপে দেবেন সিবিল মার্টনের হাতে, যখন তাঁর জন্যে লজ্জায় মাথা হেঁট করার কোন সম্ভাবনা ওর থাকবে না। সুতরাং প্রথম কাজ এখন হত্যাকাণ্ডটা ঘটানো ওটা শিগগির ঘটানোই তাঁদের উভয়ের পক্ষে মঙ্গল। -অবস্থায় অন্য কেউ হলে বিয়ের জন্যে মোটেই অপেক্ষা করত না। কিন্তু লর্ড আর্থারের কথা আলাদা। কর্তব্য সম্বন্ধে তিনি সম্পূর্ণ সচেতন। তাছাড়া মানুষের চরিত্রে যে-বস্তুটা সবচেয়ে দুর্লভ, সেটাও তাঁর রয়েছে ন্যায়নিষ্ঠতা (conscientious) নিয়তির কারনে যে হত্যাকাণ্ডটা ঘটাতে তিনি বাধ্য, সেটাকে তাঁর খুব বড় কোন অপরাধ মনে হচ্ছে না। পাপ নয়, কাজটা যেন এক ধরনের উৎসর্গ। নিজে বাঁচতেএবং অপরকে বাঁচাতে এই কাজ তাঁকে করতেই হবে।
গত রাতের অঁনুভূতি এখন আর তাঁর মধ্যে নেই। বরং পাগলের মত যে ঘুরে বেড়িয়েছেন এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তায়, এই গলি থেকে সেই গলিতে, সেটা ভাবতেও এখন লজ্জা লাগছে। যা অবশ্যম্ভাবী, তা ঘটার চিন্তায় অস্থির হওয়া তাঁর মত মানুষের সাজে না। তো, যা হবার হয়ে গেছে, এখন কাজ হলো সিদ্ধান্ত নেয়া। একটা কাগজ নিয়ে কাকে কাকে হত্যা করা যায়, তার একটা তালিকা করতে বসলেন লর্ড আর্থার। প্রথমেই মনে পড়ল লেডি ক্লিমেনশিনা বিউচ্যাম্পের (Clementina Beauchamp) কথা। মায়ের দিক থেকে ২য় কাজিন, সবাই ডাকে লেডি ক্লিম বলে। বুড়ির এমনিতেই প্রচুর বয়স হয়েছে, স্বাভাবিক মৃত্যুই হতে পারে যেকোন দিন, ফলে তাঁকেই মনে হলো সবদিক থেকে উপযুক্ত। সময় নষ্ট না করে জোগাড়যন্ত্রে লেগে পড়লেন লর্ড আর্থার সেভিল। প্রথমেই সারা উচিত কিরোম্যান্টিস্টের ব্যাপারটা। মি. সেপটিমাস পজার্সের নামে ১০৫ পাউণ্ডের একটা চেক লিখে, খামে ভরে, ভ্যালেটকে পাঠালেন তিনি ওয়েস্ট মুন স্ট্রীটে। তারপর আস্তাবলে টেলিফোন করে বের করতে বললেন ঘোড়ার গাড়ি। সাজসজ্জা সেরে রওনা দেয়ার সময় আবার তাকালেন তিনি সিবিল মার্টনের ছবির দিকে। প্রতিজ্ঞা করলেন, ওর জন্যে যে-উৎসর্গ তিনি করতে যাচ্ছেন, সেই কথা তিনি ওকে কখনোই জানাবেন না। বাকিংহামের দিকে যেতে যেতে একটা ফুলের দোকানে থেমে সিবিলকে এক ঝুড়ি নার্সিসাস (narcissus) পাঠালেন লর্ড আর্থার, তারপর, ক্লাবে গিয়ে সোজা ঢুকলেন লাইব্রেরিতে। বেল টিপে ওয়েটারকে ডেকে লেমন আর সোডা দিতে বললেন, আর একটা বিষবিজ্ঞানের (Toxicology)বই আনতে বললেন  অনেক চিন্তা-ভাবনা করে কাজটা সারার জন্যে তিনি বিষকেই বেছে নিয়েছেন। বিষই সবচেয়ে ভাল। কোন শক্তি খাটানোর ঝামেলা নেই, নেমে আসবে নিশ্চিত মৃত্যু। আরেকটা ব্যাপারে লর্ড আর্থার খুব সজাগ। তিনি চান না, লেডি ক্লিমেনশিনার সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে গুজব রটুক সস্তা সংবাদপত্রে। বিষবিজ্ঞান সম্বন্ধে অবশ্য তাঁর কোন ধারণাই নেই। ওয়েটারও যখন রাফস গাইড আর বেইলিজ মাগাজিন (Ruff’s Guide and Bailey’s Magazine) ছাড়া আর কিছুই পেল না, তিনি নিজেই গেলেন বুক শেলফের কাছে এবং শেষমেষ খুঁজে পেতে বের করলেন রয়্যাল কলেজ অভ ফিজিশিয়ানসের প্রেসিডেন্ট স্যার ম্যাথিউ রীডের (Mathew Reid) সম্পাদনায় লেখা আরস্কিনস টক্সিকোলজি (Pharmacopoeia, and a copy of Erskine’s Toxicology) প্রথম ভলিউমে তিনি কিছু পেলেন না। কিন্তু দ্বিতীয় ভলিউমে পেলেন পছন্দসই একটা বিষ- অ্যাকোনিটাইন (aconitine) পাওয়া যায় ক্যাপসুলের আকারে, বিন্দুমাত্র, যন্ত্রণাদায়ক নয়, কাজ করে তৎক্ষণাৎ, সুস্বাদু। হ্যা, মনে মনে ঠিক এমন একটা বিষই তিনি খুঁজছিলেন। কি পরিমাণ ব্যবহার করলে মারাত্মক হবে, সেটা টুকে নিয়েই ছুটলেন লর্ড আর্থার সেন্ট জেমস স্ট্রীটের বিখ্যাত ওষুধের দোকান পেসল
অ্যান্ড হামবিজের (Pestle and Humbey) উদ্দেশে। অভিজাত লোকদের সমস্যা মি. পেসল নিজেই মেটান, অর্ডার শুনে মেডিক্যাল সাটিফিকেট চাইলেন তিনি। কিন্তু লর্ড আর্থার যখন বললেন, পাগলামির লক্ষণ দেখা দিয়েছে তাঁর এক নরওয়েজিয়ান ম্যাস্টিফের (mastiff) মধ্যে, ইতিমধ্যেই দুবার কামড় না দিয়েছে সে কোচম্যানের পায়ে, মি. পেসল কোন আপত্তি তো আর করলেনই না, বরং বার বার প্রশংসা করতে লাগলেন বিষ সমন্ধে তাঁর অসাধারণ জ্ঞানের জন্যে।
ওষুধের মোড়কটা লর্ড আর্থারের একেবারেই পছন্দ হলো না। তাই বণ্ড স্ট্রীটে এসে মোড়কটা ফেলে দিয়ে ক্যাপসুলটা ভরলেন তিনি চকোলেটের একটা বাক্সে, তারপর সোজা গাড়ি ছোটাতে বললেন লেডি ক্লিমেনশিনার বাড়ির দিকে।
ইউ নটি ফেলো!’ ঘরে ঢুকতেই চেঁচিয়ে উঠলেন লেডি ক্লিম।এত দিনে বুঝি মনে পড়ল আমার কথা?
মাই ডিয়ার লেডি ক্লিম, বিশ্বাস করুন, এত ঝামেলায় ছিলাম যে অনেক চেষ্টা করেও এখানে আসার সময় করে উঠতে পারিনি,হাসলেন লর্ড আর্থার।
নিশ্চয় শিফন কিনে দিয়েছ সিবিল মার্টনকে, আর বক বক করেছ সারা দিন? এত, কী কথা থাকে বাপু তোমাদের, আমাদের সময় তো আমরা বলার মত কথাই খুঁজে পেতাম না
-ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে গত চব্বিশ ঘন্টা সিবিলের সঙ্গে দেখাই হয়নি আমার। যতদূর মনে হয়, - খুব ব্যস্ত ছিল নিজের কাজ নিয়ে
সে তো বুঝতেই পারছি, তাছাড়া কি আর দেখতে আসে বিশ্রী এই বুড়িকে! পাগল বানিয়ে ছাড়ল আমাকে  (On a fait des folies pour moi) বাতটা আবার বেড়েছে, একটা হার্ট অ্যাটাকও হয়ে গেল কয়েক দিন আগে। ডাক্তারগুলো তো কোন কাজেরই নয়, ওরা আছে শুধু ফিস নেয়ার জন্যে। আমার অসুখ তো বহু দূরের কথা, বুকের জ্বালাপোড়া পর্যন্ত কমাতে পারেনি
আপনার জন্যে একটা ওষুধ এনেছি,বললেন লর্ড আর্থার গম্ভীর হয়ে।চমৎকার জিনিস, একজন আমেরিকানের আবিষ্কার।
আমেরিকান আবিষ্কার আমি পছন্দ করি না, আর্থার। একদম পছন্দ করি না। আমেরিকানদের কয়েকটা উপন্যাসও পড়ে দেখেছি, একেবারে অখাদ্য
কিন্তু এই ওষুধ সত্যিই ভাল, লেডি-ক্লিম! আপনার অসুখ একদম সেরে যাবে। এটা আপনাকে খেতেই হবে,পকেট থেকে ছোট্ট বাক্সটা বের করে লর্ড আর্থার বাড়িয়ে দিলেন তাঁর দিকে।
বাক্সটা তো চমৎকার, আর্থার। উপহার দিচ্ছ? সত্যিই, তমি বড় ভাল ছেলে এই সেই আশ্চর্য ওষুধ? দেখতে তো একেবারে চকোলেটের মত। এখনই খাব।
না, না,আঁতকে উঠে লেডি ক্লিমের হাতটা ধরে ফেললেন লর্ড আর্থার।ভুলেও এই কাজ করবেন না। এটা হোমিওপ্যাথির ওষুধ, বুকের জ্বালাপোড়া শুরু হবার আগে খেলে কোন উপকারেই আসবে না। আবার অ্যাটাক হলে তখন খাবেন এটার কার্যক্ষমতা আপনাকে হতবাক করে দেবে।
মনে হচ্ছে এখনই খাই,ক্যাপসুলটা মাথার ওপরে তুলে ধরলেন, লেডি ক্লিমেনশিনা, ভেতরে টলটল করছে তরল, স্বচ্ছ অ্যাকোনিটাইন। ওষুধটা সুস্বাদু। তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। ব্যাপার হলো কি, ডাক্তারদের ঘৃণা করলেও ওষুধ আমি খুব ভালবাসি। অ্যাটাক না হওয়া পর্যন্ত থাক এটা।
অ্যাটাক কবে হবে?আগ্রহী হয়ে উঠলেন লর্ড আর্থার।খুব শীঘ্রই?’
এক সপ্তাহের আগে বোধ হয় নয়। তবে অ্যাটাকের কথা কি বলা যায়?
অন্তত, এই মাস শেষ হবার আগে একবার হবেই, তাই না?
                                                      পরের পর্ব 
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে একজন ভবিষ্যতদ্রষ্টা গণকের নিকট গেল এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করল, মুহাম্মদের (সাঃ) নিকট যা অবতীর্ণ হয়েছিল সে তার উপর কুফরী করল। [আবু হুরায়রা কর্তৃক বর্নিত এবং আহমাদ আবু দাউদ কর্তৃক সংগৃহীত]

No comments:

Post a Comment

Popular Posts