মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Wednesday, January 8, 2020

লর্ড আর্থার সেভিলের অপরাধ - অস্কার ওয়াইল্ড - বাংলা অনুবাদ গল্প - Lord Arthur Savile's Crime – Oscar Wilde - Translation in Bengali Part 3 of 4 -

রহস্য গল্প,বড় গল্প,উপন্যাস,অস্কার ওয়াইল্ড,বাংলা অনুবাদ গল্প,LORD ARTHUR SAVILE’S CRIME,Translation in Bengali,Oscar Wilde,bangla translation,


LORD ARTHUR SAVILE’S CRIME – Oscar Wilde - Translation in Bengali Part 3 of 4
লর্ড আর্থার সেভিলের অপরাধ - অস্কার ওয়াইল্ড - বাংলা অনুবাদ গল্প 
- - - - - - - - - - - - - - - - - - 
পর্ব ৩ 
সেরকমই আশঙ্কা করছি। কিন্তু এত সহানুভূতিশীল আজ তুমি, আর্থার! সত্যিই সিবিলের সাহচর্যে উন্নতি হয়েছে তোমার। যাই হোক, এবার যে তোমাকে বিদায় দিতে হয় বাছা। আজ রাতে ভোজ সারার কথা বিশ্রী কিছু লোকের সঙ্গে। এখন একটু ঘুমিয়ে না নিলে ভেজের সময় জেগেই থাকতে পারব না। গুড-বাই, আর্থার, সিবিলকে আমার ভালবাসা জানিয়ে, আর অশেষ ধন্যবাদ তোমাকে আমেরিকান এই ওষুধের জন্যে।
খেতে ভুলবেন না যেন,’ উঠে দাঁড়ালেন লর্ড আর্থার।
প্রশ্নই ওঠে না। এত কষ্ট করে দিয়ে গেলে, আমি কি তা ভুলতে পারি? আরও প্রয়োজন হলে চিঠি লিখব তোমাকে।
সতেজ মন নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন লর্ড আর্থার, বুকের পাষাণভার নেমে গেছে। রাতের বেলা তিনি দেখা করলেন সিবিল মার্টনের সঙ্গে। বললেন, এত ব্যস্ত ছিলেন যে অনেক চেষ্টা সতেও দেখা করার সময় বের করতে পারেননি। এবং এই ব্যস্ততা চলবে আরও বেশ কিছু দিন। সুতরাং বিয়েটা আপাতত পিছিয়ে দিতে হবে, মাথার ওপরে ঝামেলা রেখে তিনি বিয়ে করতে চান না। সিবিল যেন, তাকে ভুল না বোঝে। চিন্তার কিছু নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে, শুধু ধৈর্য ধারণ করতে হবে কয়েকটা দিনের জন্যে। তাঁদের দুজনের সাক্ষাৎ হলো পার্ক লেনে, মি. মার্টনের বাড়ির কনজারভেটরিতে (conservatory) বক্তব্য শেষ করার পর লর্ড আর্থারের মনে হলো, সিবিল বুঝি জীবনে কখনও এত খুশি হয়নি। মেয়েটির সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে লর্ড আর্থার এক সময় ভাবলেন, চুলোয় যাক মি. পজার্স, বিয়ে তিনি এখনই করবেন, আর একটা চিঠিতে সব জানিয়ে দেবেন লেডি ক্লিমেনশিনাকে। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলেন তিনি কঠোর হাতে। কর্তব্য চিন্তা থেকে বিচ্যুত হলেন না লর্ড আর্থার। তার ভালবাসা অবোধ প্রাণীর ভালবাসা
নয়, এই ভালবাসার পেছনে বিবেক আছে। সামান্য টা মাস ধৈর্য না ধরে এরকম চমৎকার একটি মেয়ের সারাটা জীবন তিনি দুঃখে ভরিয়ে দিতে পারেন না। আর যা- করুন, এই অধিকার তাঁর নেই। তিনি সিবিলকে সান্ত্বনা দিলেন এবং বিনিময়ে সান্তনা পেলেন। পর দিন বেরিয়ে পড়লেন লর্ড আর্থার ভেনিসের উদ্দেশে। তবে যাবার আগে একটা চিঠিতে স্পষ্ট ভাষায় মি. মার্টনকে আপাতত বিয়ে স্থগিত রাখার কথা জানাতে ভুললেন না।

চার
ভেনিসে লর্ড আর্থারের হঠাৎ দেখা হয়ে গেল তার ভাই লর্ড সার্বিটনের (Surbiton) সঙ্গে এমনই যোগাযোগ, যেদিন তিনি পৌচেছেন, সেদিনই কর্ফু (Corfu) থেকে ব্যক্তিগত ইয়টে (yacht) করে ভেনিসে এসেছেন লর্ড সার্বিটন। দুভাই মিলে আনন্দে উৎসবে কাটিয়ে দিলেন এক পক্ষকাল। সকালে ঘোড়া ছোটালেন। লিডোতে (Lido), কিংবা কালো গণ্ডোলায় (gondola) ভ্রমণ করলেন গ্রীন ক্যানালে; বিকেলে ইয়টে কথা বললেন দর্শণার্থীদের সঙ্গে; রাতে ডিনার সারলেন ফ্লোরিয়ানে (Florian), তারপর পিয়াজ্জায় (Piazza) বসে রইলেন তবু লর্ড আর্থার ঠিক সুখ পেলেন না। প্রতিদিন লেডি ক্লিমেনশিনার মৃত্যুসংবাদের আশায়, দেখলেন তিনি টাইমসের শোকসংবাদের কলাম, প্রতিদিনই হতাশ হলেন। এক পর্যায়ে তার ভয় লাগল যে কোন দুর্ঘটনা
বুঝি ঘটে গেছে। মনে মনে আপসোস করতে লাগলেন যেতে চাওয়া সত্ত্বেও লেডি ক্লিমকে বাধা দিয়েছেন বলে। সিবিলের চিঠিগুলো ভালবাসায় ভরা, কিন্তু তাতে কোথায় যেন বেদনার সুর। লর্ড আর্থারের
মনে হলো, সিবিলের কাছ থেকে তিনি যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন চিরদিনের জন্যে।
পনেরো দিন পর ভেনিসের ওপর বিরক্তি এসে গেল লর্ড সার্বিটনের। তিনি এখন যেতে চান রাভেন্না (Ravenna) উপকূলে, পিনেটামে (Pinetum) নাকি শিকারের জন্যে মিলছে প্রচুর বনমুরগি। একেবারেই যাবার ইচ্ছে ছিল না লর্ড আর্থারের, কিন্তু ভাইয়ের পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত রাজি হতে হলো। ১৫ তারিখে খুব সকালে রওনা দিলেন তাঁরা। শিকারটা ভালই হলো, মুক্ত বাতাসে দূর হলো বিষণ্ণতা, কিন্তু ২২ তারিখে লর্ড আর্থার আবার দারুণ উদ্বেগ অনুভব করতে লাগলেন লেডি ক্লিমেনশিনার ব্যাপারে। ফলে ভাইয়ের বহু জেদ সত্ত্বেও ট্রেনযোগে তিনি ফিরে এলেন ভেনিসে। হোটেলে পা দিতেই মালিক তার হাতে ধরিয়ে দিল একগাদা টেলিগ্রাম। দ্রুত খাম ছিড়ে টেলিগ্রামগুলো দেখতে লাগলেন লর্ড আর্থার। লেডি ক্লিমেনশিনা হঠাৎ মারা গেছেন ১৭ তারিখ রাতে!
প্রথমেই তাঁর মনে পড়ল সিবিলের কথা। তাই একটা টেলিগ্রামে জানিয়ে দিলেন, শিগগিরই তিনি ফিরছেন লণ্ডনে। তারপর ভ্যালেটকে ডেকে গোছাতে বললেন জিনিসপত্র, স্বাভাবিকের পাঁচ গুণ বকশিশ দিলেন গণ্ডোলার মাঝিদের। ভারমুক্ত মন নিয়ে সিটিংরুমে আসতে তিনটে চিঠি পেলেন লর্ড আর্থার। একটা লিখেছে সিবিল, যার পুরোটাই শোক আর সহানুভূতিতে ঠাসা। অন্য দুটোর একটা লিখেছেন মা, একটা লেডি ক্লিমেনশিনার সলিসিটর। ঘটনার রাতে লেডি ক্লিম ডিনার সেরেছেন ডাচেসের সঙ্গে, রসিকতায় মাতিয়েছেন উপস্থিত সবাইকে, তারপর বাড়ি ফিরে গেছেন বুকে ব্যথার কথা বলে। পর দিন সকালে তাকে পাওয়া গেছে মৃত অবস্থায়। ধস্তাধস্তির কোন চিহ্ন না পেয়ে বোঝা গেছে, একরকম শান্তিতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। স্যার ম্যাথু লীডকে অবশ্য ডাকা হয়েছিল, কিন্তু তাঁর আর কিছু করার ছিল না। ২২ তারিখে যথাযোগ্য মর্যাদায় লেডি ক্লিমকে সমাহিত করা হয়েছে বিউচ্যাম্প চ্যালকটে (Beauchamp Chalcote) মরার মাত্র কদিন আগে উইল করে গেছেন তিনি। কার্জন (Curzon) স্ট্রিটের বাড়িটা পারেন লর্ড আর্থার, আসবাবপত্র আর তৈলচিত্রগুলো
মিনিয়েচারগুলো পাবেন তার বোন লেডি মার্গারেট রুফোর্ড (Margaret Rufford), আর নীলাকান্তমণির (amethyst) নেকলেসটা সিবিল মার্টন। লেডি ক্লিমের সম্পত্তি যদিও খুব বড় নয়, লর্ড আর্থারের জন্যে উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন সলিসিটর মি. ম্যানফিল্ড (Mansfield) তিনি গেলে অনেক বিল মেটাতে হবে। বৃদ্ধা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট কখনোই ঠিকঠাক রাখেননি। লেডি ক্লিমেনশিনার কথা ভেবে খারাপই লাগল লর্ড আর্থারের। সত্যিই মহিলা তাঁকে বড় ভালবাসতেন। সব অঘটনের মূলে রয়েছে ওই পাজি মি.পজার্স। সিবিলের কথা মনে হতে অবশ্য শোক অনেকটা লাঘব হয়ে এল। এই কাজ করা ছাড়া আর তো কোন উপায়ও ছিল চেয়ারিং ক্রসে (Charing Cross) যখন পৌছুলেন লর্ড আর্থার, তখন তিনি সুখী মানুষ। মার্টন পরিবার তাঁকে সহানুভূতি
জানাল। সিবিল বলল, সে আর দেরি করতে রাজি নয়। ফলে বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেল জুন। কানায় কানায় যেন আবার পূর্ণ হয়ে উঠল লার্ড আর্থারের জীবন।
একদিন লেডি ক্লিমের সলিসিটর আর সিবিলের সঙ্গে কার্জন স্ট্রীটের বাড়িটাতে গেলেন তিনি পুরানো চিঠিপত্র আর প্যাকিং বাক্স পোড়াতে। একটা ড্রয়ার খুলে হঠাৎ উল্লসিত হয়ে উঠল সিবিল
কি পেয়েছ, সিবিল?’ কাজ করতে করতে মুখ তুলে হাসলেন লর্ড আর্থার।
একটা খুব সুন্দর চকোলেটের বাক্স। নিশ্চয় ডাচ। এটা আমাকে দাও।
- চকোলেটের এই বাক্সটাতেই ছিল অ্যাকোনিটাইন। ওটার কথা একরকম ভুলেই গিয়েছিলেন লর্ড আর্থার। বললেন, ‘নাও। ওটা আমি দিয়েছিলাম লেডি ক্লিমকে
ভেতরের চকোলেটটাও নেব? আমার মনে হয় না লেডি ক্লিমেনশিনা চকোলেট পছন্দ করতেন।
ভয়ঙ্কর একটা চিন্তা উকি দিল লর্ড আর্থারের মনে।চকোলেট? কই দেখি!’
ভেতরে একটা চকোলেট আছে। খুব পুরানো, খাবার কোন ইচ্ছেই আমার নেই। কিন্তু কী ব্যাপার, আর্থার, তোমার চোখ-মুখ অমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে কেন?
ছুটে এসে সিবিলের হাত থেকে বাক্সটা কেড়ে নিলেন লর্ড আর্থার। ভেতরে, ক্যাপসুলে টলটল করছে অ্যাকোনিটাইন। তাহলে লেডি কিমকে তিনি মারতে পারেননি, স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তাঁর। আবিষ্কারটা নাড়িয়ে দিল লর্ড আর্থারকে। ক্যাপসুলটা আগুনে ছুড়ে ফেললেন তিনি, তারপর নিদারুণ হতাশায় গুঙিয়ে উঠে ধপাস করে বসে পড়লেন সোফায়।

পাঁচ
আবার বিয়ে স্থগিত হয়ে যাওয়ায় খুবই ভেঙে পড়লেন মি. মার্টন। বিয়ের পোশাকের অর্ডার পর্যন্ত দিয়ে দেয়ায় বিয়ে ভেঙে দেয়ার জন্যে সিবিলের সঙ্গে পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন লেডি জুলিয়া (Julia) কিন্তু লর্ড আর্থারের ওপর তার অগাধ আস্থা। ওদিকে চরম হতাশায় কয়েকটা দিন কাটানোর পর মানসিক স্থিরতা ফিরে পেলেন লর্ড আর্থার সেভিল। বিষে যখন কাজ হলো না, এবার তিনি চেষ্টা চালাবেন ডিনামাইট কিংবা অন্য কোন বিস্ফোরকের সাহায্যে। কাকে কাকে হত্যা করা যায়, আবার তার তালিকা করতে বসলেন লর্ড আর্থার এবং সবদিক বিবেচনা করে শেষমেষ সিদ্ধান্ত নিলেন, উড়িয়ে দেবেন তিনি তার চাটা-ডীন অভ চিচেস্টারকে (Dean of Chichester) ডীন অত্যন্ত শিক্ষিত, রুচিবান মানুষ। ঘড়ির এক মহামূল্যবান সংগ্রহ রয়েছে তাঁর। পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের সমস্ত প্রাপ্য ঘড়িই তিনি সংগ্রহ করেছেন। পরিকল্পনাটা সফল করার ব্যাপারে চাচার এই বাতিকই তাঁকে সাহায্য করবে। বিস্ফোরক বসাতে হবে কোথায়, সে-বিষয়ে অবশ্য তাঁর কোন ধারণা নেই। স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ড বা লণ্ডন ডিরেকটরিও -ব্যাপারে কোন সাহায্যে আসবে না।
হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল রাশিয়ান এক বন্ধু কাউন্ট রুভালফের (Count Rouvaloff) কথা। শীতকালে লেডি উইণ্ডারমিয়ারের ওখানেই প্রথম পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পিটার দ্য গ্রেটের জীবনী লেখার জন্যে তথ্য সংগ্রহের কাজে বর্তমানে তিনি লণ্ডনেই রয়েছেন। সবাই সন্দেহ করে যে তিনি একজন নিহিলিস্ট এজেন্ট (Nihilist agent) লর্ড আর্থার অনুভব করলেন, এই কাজের জন্যে তিনিই উপযুক্ত। সুতরাং একদিন সকালে পরামর্শ নেয়ার জন্যে গেলেন তিনি রুভালফের ব্লুমসবারির বাসস্থানে।
রাজনীতিটা তাহলে সিরিয়াস ভাবেই নিলেন, বিস্ফোরকের কথা শুনে বললেন কাউন্ট রুভালক। জবাবে লর্ড আর্থার বললেন যে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তার নেই, ব্যাপারটা সম্পূর্ণ পারিবারিক।
বিস্মিত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন কাউন্ট রুভালফ। কিন্তু যখন বুঝলেন লর্ড আর্থার রসিকতা করছেন না, একটা কাগজে ঠিকানা লিখে, সাক্ষর করে বাড়িয়ে দিলেন তাঁর দিকে। মাই ডিয়ার! ফেলো, এই ঠিকানা হাতে পাবার জন্যে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড অনেক খরচা করতে রাজি হবে।
কিন্তু তা তারা পাবে নাহাসলেন লর্ড আর্থার। কাউন্ট রুভালকের করমর্দন করে নেমে এলেন তিনি নিচতলায় ঠিকানাটা দেখে কোচম্যানকে গাড়ি ছোটাতে বললেন সোহো স্কয়ারের (Soho Square) উদ্দেশে। সেখানে পৌছে গাড়ি বিদায় করে হাঁটতে লাগলেন তিনি গ্রীক স্ট্রীট ধরে এবং শেষমেষ (cul-de-sac) এসে উপস্থিত হলেন। বেইলিজ কোর্টের একটা সবুজ বাড়ির সামনে। দরজায় টোকা দিতে বেরিয়ে এল কড়া চেহারার এক বিদেশী, বিশ্রী ইংরেজিতে জানতে চাইল তার আসার উদ্দেশ্য। কাউন্ট রুভালফের কাগজটা বাড়িয়ে দিলেন লর্ড আর্থার। ওটা দেখতেই বাউ করে লোকটা তাকে নিয়ে গেল ভেতরবাড়িতে। একটু পরেই এসে পৌছুলেন, হের উইঙ্কেলকফ (Winckelkopf), কাঁধে ওয়াইনের দাগ লাগা ন্যাপকিন, বাম হাতে কাটাচামচ।
আপনার কাছে আমাকে পাঠিয়েছেন, কাউন্ট রুভাঁলফ, বাউ করলেন লর্ড আর্থার। বিশেষ একটা ব্যাপারে কথা বলতে চাই। আমার নাম স্মীথ, মি. রবার্ট স্মীথ, আমার প্রয়োজন একটা বিস্ফোরক ঘড়ি
আপনি আসায় খুব খুশি হলাম, লর্ড আর্থার, হাসলেন ছোটখাট জার্মান ভদ্রলোক। ভয় পাবেন না, আমাদের কাজটাই এমন যে সবার পরিচয় জানতে হয়। আপনাকে দেখেছি আজি লেডি উইণ্ডৱিমিয়ারের ওখানে। লেডির সঙ্গেও আমার খুব ভাল পরিচয় আছে। নাস্তা সেরে নেয়া পর্যন্ত কি দয়া করে আমার সঙ্গে একটু বসবেন? আমার কাছে রাইন ওয়াইন আছে। বন্ধুরা বলেন, জার্মান দূতাবাসের ওয়াইনগুলো নাকি এর কাছে কিছুই নয়
ওয়াইনে চুমুক দিতে দিতে লর্ড আর্থার বুঝতে পারলেন, বাড়িয়ে বলেননি, ভদ্রলোক, এত ভাল ওয়াইন তিনিও খুব বেশি খাননি।
বিস্ফোরক ঘড়ি,’ বললেন উইঙ্কেল-কফ, বিদেশে রফতানির জন্যে খুব ভাল জিনিস নয়। কাস্টমসে পার করা গেলেও ট্রেনের সময় প্রায়ই ঠিক থাকে না, ফলে গন্তব্যে পৌছুবার আগেই বিস্ফোরণ ঘটে যায়। আপনি যদি বাড়ির জন্যে চান, তাহলে অত্যন্ত চমৎকার একটা জিনিস দিতে পারি। ফলাফল গ্যারান্টিযুক্ত জানতে পারি, এটা আপনি কার ওপর ব্যবহার করতে চান? যদি পুলিশ কিংবা স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত কারও জন্যে চান, তাহলে আপনাকে আমি সাহায্য করব না। পরোক্ষভাবে হলেও ইংরেজ গোয়েন্দারাই আমাদের সবচেয়ে ভাল বন্ধু। ওদের বোকামির জন্যেই আমরা যা খুশি তা- করতে পারি। সুতরাং ওদের একটাকেও আমি হারাতে চাই না।
নিশ্চিত থাকতে পারেন,’ বললেন লর্ড আর্থার, ‘পুলিশের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই আসলে ঘড়িটা আমি চাই ডীন অভ চিচেস্টারের জন্যে।
তাহলে নিশ্চয় ব্যক্তিগত ব্যাপার?’
সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত।
কাঁধ ঝাকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন, হের উইঙ্কেলকফ কয়েক মিনিট পর ফিরলেন পেনির সমান গোল একখানা ডিনামাইট আর ছোট্ট একটা ফরাসী ঘড়ি নিয়ে।
উজ্জ্বল হয়ে উঠল লর্ড আর্থারের চোখ-মুখ: হ্যা, হ্যা, ঠিক এমন একটা জিনিসই চাইছিলাম,’ বললেন তিনি। এবার বুঝিয়ে দিন, বিস্ফোরণ ঘটে কিভাবে
ওটাই তো আমার রহস্য। গর্বের দৃষ্টিতে হের উইঙ্কেলকফ তাকালেন আপন সৃষ্টির দিকে। বলুন, কখন ফাটাতে চান এটাকে, আমি ঠিক সেভাবেই মেশিন সেট করে দেব।
আজ মঙ্গলবার, এখনই যদি পাঠাতে পাবেন---’
তা সম্ভব নয়; অনেক কাজ আছে হাতে, তবে আগামীকাল পাঠানো যাবে।
তাহলেও অনেক সময় হাতে থাকবে,’বললেন লর্ড আর্থার, ‘বিস্ফোরণের সময় শুক্রবার ঠিক দুপুরবেলা। ওই সময়ে ডীন বাড়িতে থাকেনই
শুক্রবার, ঠিক দুপুরবেলা,’ বিড়বিড় করে বললেন হের উইঙ্কেলকফ, তারপর সময়টা টুকে রাখলেন বড় একটা লেজারে।
এবার দয়া করে বলুন,’ উঠে পড়লেন লর্ড আর্থার, ‘কত দিতে হবে।
কাজটা এত সামান্য, লর্ড আর্থার, যে বলতেও আমার লজ্জা লাগছে। ডিনামাইটটা সাত শিলিং ছয় পেন্স, ঘড়িটা তিন পাউণ্ড দশ শিলিং, আর পাঠাতে লাগবে ধরুন আট শিলিং। কাউন্ট রুভালফের কোন বন্ধুর কাজে আসলে আমি ধন্য হই।
আপনার পাওনা, হের উইঙ্কেলক?’.
ওহ, সেটা নিয়ে আপনাকে মাথা ঘামাতে হবে না। টাকার জন্যে আমি কাজ করি না। এই কাজ আমার কাছে একটা দারুণ আনন্দের ব্যাপার। আমার এই শিল্পের মাঝেই আমি বেচে আছে
চার পাউণ্ড দুই শিলিং ছয় পেন্স টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখলেন লর্ড আর্থার, তারপর হের উইঙ্কেলকফকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেলেন পার্কে।
                                                  পরের পর্ব (শেষ পর্ব)
------------------------------------
হে ঈমানদারগণ! মদ,জুয়া,মূর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শরসমূহ এ সমস্তই হচ্ছে ঘৃণ্য শয়তানী কার্যকলাপ এগুলো থেকে বিরত থাকো, আশা করা যায় তোমরা সফলতা লাভ করবে। (সুরা আল মায়েদাহ - ৯০) 

No comments:

Post a Comment

Popular Posts