মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) ও উট ব্যবসায়ী |
মহানবী (সা)
ও উট ব্যবসায়ী
মদীনা শহরের
বাইরে এসে জমায়েত হয়েছে অনেক ব্যবসায়ী। তাদের সাথে ছিল অনেক পণ্যসামগ্রী। কিছু
ব্যবসায়ী নিয়ে এসেছিল বেশ ক’টি এগুলো বিক্রির জন্য আনা হয়েছে। সেখানে লাল রংয়ের
একটি উটও ছিল। উটটি দেখতে ছিল ভারি সুন্দর। পাশের পথ ধরে মহানবী (সা) কোথাও হেঁটে
যাচ্ছিলেন। হঠাৎ লাল রংয়ের উটটি তার চোখে পড়ল। উটটি তার খুব পছন্দ হলো। মনে মনে ভাবলেন, উটটি তিনি কিনে নেবেন। তাই উটের মালিককে তিনি উটের দাম জিজ্ঞেস করলেন।
মালিকের হাকা দাম নবীজির পছন্দ হলো। তিনি সন্ধ্যার সময় উটের দাম মিটিয়ে দেবেন এ শর্তে উটটি বাড়ি নিয়ে গেলেন।
মহানবী (সা)
চলে যাবার পর ব্যবসায়ীরা উট বেচা নিয়ে নানারকম আলোচনা শুরু করল। তাদের কেউ কেউ
বলল, একজন অপরিচিত লোককে উট বাকিতে দেয়া ঠিক হয়নি। তিনি যদি দাম পরিশোধ না করেন, তা হলে কী হবে? এ রকম নানান কথাবার্তা হলো ব্যবসায়ীদের
মধ্যে।
আলোচনার এক
ফাঁকে এক মহিলা মুখ খুলল। সে বলল, তোমাদের ভয়ের কোনো কারণ আমি দেখি না। দেখনি, লোকটার কী সুন্দর
চেহারা! কত শান্ত সুন্দর মেজাজ! এমন লোক কোনদিন প্রতারণা করতে পারে না। তোমরা
নিশ্চিন্তে থাক, উটের দাম ঠিকই ফিরে পাবে। তারপরও উটের মালিকের মনের অস্থিরতা কাটে
না। সারাদিন সে দুঃশ্চিন্তায় কাটিয়ে দেয়।
দেখতে দেখতে
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো । এমন সময় একজন লোক এসে পৌছাল সেখানে। সে উটের দাম নিয়ে হাজির হলো। সাথে কিছু খাবার ও খেজুরও নিয়ে এলো। এগুলো নবীজী
পাঠিয়েছেন। উটের দাম হাতে পেয়ে উটের মালিক খুশি হলো। তার ওপর খেজুর ও খাবার পেয়ে সে অবাক হলো। তাই দিনভর লোকটিকে অযথা সন্দেহ করার জন্য মনে মনে
অনুতপ্ত হলো। অন্য ব্যবসায়ীরাও ঘটনা দেখে অবাক হলো।
পরের দিনের
ঘটনা। ব্যবসায়ীরা প্রবেশ
করল মদীনায়। অনতিদূরে তারা কিছু মানুষের ভিড় দেখতে পেল। তাই তারা কাছে এগিয়ে গেল। ব্যবসায়ীরা দেখতে
পেল, একজন লোক জনতার উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন। তারা দেখতে পেল গতকাল যিনি উট
কিনেছিলেন তিনিই সেই ব্যক্তি। ব্যবসায়ীরা তার ভালো ভালো কথা শুনে
অভিভূত হলো। নবীজীর ভাষণের মাঝেই একজন আনসার হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এই যে
ব্যবসায়ীদের-দেখছেন, এরা বনু ছায়নাবা গোত্রের লোক।
এদের একজনের
পূর্বপুরুষ আমাদের বংশের একজনকে হত্যা করেছিল। তাই এখনই সুযোগ। আমি মনে করি, এদেরও হত্যা করে আমরা প্রতিশোধ নিতে পারি। আপনি হুকুম দিলেই হয়। মহানবী (সা) আনসারের কথা শুনে বললেন,
হে আনসার! না না, তা হয় না। একজনের অপরাধের জন্য অন্য কোন ভাই শাস্তি পেতে পারে
না। একটু আগে ব্যবসায়ীরা আনসারের কথা শুনে আতকে উঠেছিল। তাদের গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। তারা ভাবছিল, এই
বুঝি ঘনিয়ে এলো মৃত্যু কিন্তু পরক্ষণেই মহানবী (সা)-এর বক্তব্য শুনে তারা স্বস্তি
ফিরে পেল। মহানবী (সা)-এর ন্যায়পরায়ণতা দেখে
তারা অভিভূত হলো।
No comments:
Post a Comment