মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Thursday, December 5, 2019

বিশ বছর পরে - ও. হেনরী - After Twenty Years - O. Henry - Translation in Bengali -

After Twenty Years - O. Henry - Translation in Bengali -  

After Twenty Years - O. Henry (William Sydney Porter) - Translation in Bengali -  আফটার টুয়েন্টি ইয়ারস - বাংলা অনুবাদ

বিশ বছর পরে 
টহল পুলিশটি রাস্তা দিয়ে এমনভাবে হেটে যাচ্ছিল, দেখে মনে হচ্ছিল সে যেনো কোন খুব গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ অফিসার। সবসময় এভাবেই সে হেটে চলে। তাকে কেমন দেখাচ্ছে এব্যাপারে সে মোটেও ভাবছিল না। তার দিকে নজর দেয়ার মত খুব কম মানুষই ছিল সেসময় রাস্তায়। তখন হয়তো রাত দশটার মত বাজে আর খুব ঠান্ডা পড়েছিল বাহিরে। হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথে বাতাস বইছিল।
যে রাস্তা ধরে সে চলছিল, তার প্রতিটি দরজাই সে পরীক্ষা করে দেখছিল, ভালোভাবে বন্ধ করা হয়েছে কিনা। আবার মাঝে মাঝে রাস্তায় ডানে বামে ফিরে দেখছিল সবকিছু ঠিক ঠাক আছে কিনা। তাকে একেবারে একজন আদর্শ ও সুদর্শন পুলিশের মতই লাগছিল।
এলাকাটা নিঝুম হয়ে যায় অল্প রাতেই। এখানে সেখানে সিগারের দোকান বা সারারাত খোলা খাবারের দোকানের আলো চোখে পড়লেও অন্য দোকান-পাট সবই বন্ধ। বিশেষ এক জায়গায় এসে পায়ের গতি কমিয়ে দিল পুলিশটিএকটা লোহা-লক্কড়ের দোকানের আঁধার দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা লোক, ঠোটের ফাকের সিগারেটটায় এখনো আগুন ধরানো হয় নি। পুলিশটি কাছে আসতেই ওকে আশ্বাস দিয়ে তাড়াতাড়ি বলল সে, সব কিছু ঠিক আছে, অফিসার। আমি শুধু এক বন্ধুর জন্যে অপেক্ষা করছি। আজকে এখানে দেখা করার কথা হয়েছিল বিশ বছর আগে। হাস্যকর মনে হচ্ছে তোমার, তাই না? তোমার সন্দেহ দূর করার জন্যে বুঝিয়ে বলছি ব্যাপারটা। অনেক কাল আগে ঠিক এখানটায় একটা রেস্তোরাঁ ছিল বুড়ো জো ব্র্যাডির রেস্তোরা।
পাঁচ বছর আগেও ছিল। তারপর উঠে যায়, বলল পুলিশটি
দরজায় দাঁড়ানো লোকটা দেশলাই ঠুকে সিগারেট ধরাল। তারই আলোয় দেখা গেল বিবর্ণ মুখ, চওড়া চিবুক, উজ্জ্বল চোখ আর ডান চোখের ভুরুর কাছাকাছি একটা কাটা দাগ। ওর স্কার্ফে লাগানো পিনে বড়সড় হীরে একটাখাপছাড়াভাবে বসানো।
লোকটা আবারো বলল, বিশ বছর আগে এই রাতে আমি আর আমার সবচাইতে অন্তরঙ্গ বন্ধু জিমি ওয়েলস বুড়ো জো ব্র্যাডির দোকানে খেয়েছিলাম। ওর মতো ভাল লোক হয় না। ও আর আমি জন্মেছি নিউইয়র্কে, বড় হয়েছি এক সাথে, ভাইয়ের মতো। আমার বয়েস তখন আঠার আর জিমির কুড়ি। পরের দিন সকালবেলা সৌভাগ্যের সন্ধানে আমার পশ্চিমে যাবার কথা। জিমিকে কিছুতেই নিউইয়র্কের বাইরে নেয়া গেল না, তার মতে দুনিয়াতে এ-ই একমাত্র জায়গা। হ্যা, আমরা ঠিক করলাম সেই তারিখ ও সময় থেকে ঠিক বিশ বছর পরে জো ব্র্যাডির দোকানে দেখা করব আমরা, তা আমাদের অবস্থা যা-ই থাক আর যতদূর থেকেই আসতে হোক না কেনো আন্দাজ করেছিলাম, যেভাবেই হোক, এই বিশ বছরে আমাদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যাবে আর সুদিনের মুখও দেখব আমরা।
খুব মজার ব্যাপার মনে হচ্ছে, পুলিশটি মন্তব্য করল, দু-বারের দেখা হবার ভেতর সময়টা খুব লম্বা বলে মনে হচ্ছে, তাই না? চলে যাবার পর বন্ধুর খোজ-খবর পান নি আর?
তা, কিছুদিন চিঠিপত্র লেখালেখি ছিল বটে। কিন্তু বছর খানেক পর যোগাযোগ হারিয়ে ফেললাম। বুঝলেন কিনা, পশ্চিম অঞ্চলটা খুব বিরাট জায়গা আর আমিও খুব ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছিলাম। কিন্তু আমি জানি বেঁচে থাকলে জিমি আসবেই। অমন সত্যবাদী আর অটল লোক আর হয় না। ও ভূলবে না কখনো। আজ রাতে ওর সাথে দেখা করব বলে হাজার মাইল দূর থেকে এসেছি, বন্ধুর দেখা পেলেই সেটা সার্থক হবে
ছোট-ছোট মনিমুক্তা-বসানো সুন্দর একটা ঘড়ি পকেট থেকে বের করল লোকটা।
দশটা বাজতে তিন মিনিটঠিক কাঁটায় কাঁটায় দশটার সময় রেস্তোরার দরজা থেকে বিদায় নিয়েছিলাম আমরা।
পশ্চিমে গিয়ে বরাতটা খুলে গেছে, তাই না? পুলিশটি জিজ্ঞেস করল।
নিশ্চয়ই! জিমির ভাগ্যে তার অর্ধেক জুটে থাকলেও খুশি হব আমি। এত ভাল ছেলে, অথচ খুব দুরবস্থায় দিন কাটছিল ওর। পশ্চিমে গেলে তুমি শিখতে পারবে কিভাবে খারাপ লোকদের সাথে পাল্লা দিয়ে টাকা বানাতে হয়।
হাতের লাঠিঠা নাচাতে-নাচাতে দু-পা এগোল পুলিশটি, যেতে হচ্ছে আমাকে আশা করছি আসবেই আপনার বন্ধু। ঠিক দশটা বাজলেই চলে যাচ্ছেন নাকি?
তা কেন? অন্তত আধঘণ্টা সময় দেব ওকে। বেচে থাকলে নিশ্চয়ই এই সময়ের মাঝেই হাজির হবে জিমি । বিদায়, অফিসার।
শুভরাত্রি, স্যার দরজা পরখ করতে-করতে দূরে এগিয়ে যায় পুলিশটি
ততক্ষণে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাতাসও বইতে শুরু করেছে সজোরেতখনো যে দু-চারজন পথচারী বাইরে ছিল তারা কোটের কলার কান অবধি টেনে পকেটে হাত ঢুকিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেললোহা-লক্কড়ের দোকানের দরজায় হেলান-দেয়া যে-লোকটা হাজার মাইল দূর থেকে এসেছে ফেলে-আসা দিনের বন্ধুর সাথে দেখা করতে, সিগারেট ধরিয়ে অপেক্ষা করে চলল সে।
প্রায় বিশ মিনিট অপেক্ষা করেছে সে। এমন সময় কান অবধি ওভারকোটের কলারে ঢাকা লম্বামতো একটা লোক রাস্তা পেরিয়ে এল। সরাসরি লোকটার কাছে এগিয়ে এসে বলল, তুমি নাকি, বব? সন্দেহের দোলা তার কণ্ঠস্বরে।
আর তুমি কি জিমি ওয়েলস? প্রায় চিৎকার করে ওঠে দরজায় দাঁড়ানো লোকটা।
হায় আল্লাহ! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল নবাগতততক্ষণে পরস্পরের হাত আঁকড়ে ধরেছে তারা। আমার বিশ্বাস ছিল, বেঁচে থাকো তো নিশ্চয়ই তোমার নাগাল পাব এখানে। তা বেশবিশ বছর খুব লম্বা সময়। পুরনো রেস্তোরাঁটা উঠে গেছে, বব, থাকলে ভালো হত। আবারো এক সাথে খাওয়া যেত। পশ্চিমে গিয়ে কপালটা খুলেছে তো?
ভালো, যা কিছু চেয়েছিলাম সবই পেয়েছি। তুমি কিন্তু অনেক বদলেছ, জিমি। আমি ভাবি নি যে আরো দু-তিন ইঞ্চি লম্বা হবে তুমি।
তা কুড়ির পর কিছুটা বেড়েছি আর কী। নিউইয়র্কে নিশ্চই ভালোই চলছে, জিমি?
কোনো রকম। একটা সরকারি অফিসে কাজ করি। চল, আমার জানা একটা জায়গায় বসে পুরনো সব দিন নিয়ে গল্প করা যাবে।
হাত ধরাধরি করে এগিয়ে চলে ওরা। সাফল্য পশ্চিম থেকে আসা লোকটার মধ্যে কিছুটা কেউকেটা ভাব এনে দিয়েছে। তাই নিজের কথাই বলে যাচ্ছিল সে। ওভারকোটে কান পর্যন্ত মোড়া লোকটা শুনে যাচ্ছিল নীরবে।
মোড়ের মাথার ড্রাগ স্টোরটার সামনে উজ্জ্বল বিদ্যুতের আলো। এক সাথে ঘুরে দাড়িয়ে পরস্পরের মুখের দিকে চাইল ওরা। পশ্চিম থেকে আসা লোকটার হাত নেমে এল হঠাৎ করে।
তুমি জিমি ওয়েলস নও। বিশ বছর দীর্ঘ সময়, কিন্তু তাতে মানুষের নাক বদলে যায় না।
ভালো লোক মাঝে-মাঝে খারাপ হয়ে যায়, বলল লম্বা লোকটা, গত দশ মিনিট ধরে তুমি গ্রেফতার হয়ে আছ, বব। শিকাগো পুলিশ আন্দাজ করেছিল যে তুমি এদিকটায় আসবে। তাই আমাদের জানিয়েছে যে তোমার সাথে গল্প করতে চায় তারা। ঝামেলা না করেই যাবে, কী বল? সেটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবেথানায় যাবার আগে এই চিঠিটা পড়ে দেখ এই আলোতেই পড়তে পারবে। তোমার বন্ধু জিমি ওয়েলস এটা পাঠিয়েছে
চিরকুটটার ভাঁজ খুলল পশ্চিম থেকে আসা লোকটা। পড়া শুরু করতেই তার হাত আস্তে আস্তে কাপতে লাগল।
কয়েকটা কথাই লিখা ছিল সেখানেঃ
বন্ধু, বব(তোমার সাথেই দেখা করতে) সঠিক সময়ের ভেতরে যথাস্থানে হাজির হয়েছিলাম। তোমাকে দেখেই চিনতে পারলাম, এই চেহারার মানুষটিকেই শিকাগো পুলিশ খুঁজছে। নিজের হাতে (গ্রেফতারের) কাজটা করতে চাচ্ছিলাম না, তাই কাজটি করার জন্যে অন্য একজন পুলিশকে পাঠালাম - তোমার বন্ধু জিমি

No comments:

Post a Comment

Popular Posts