![]() |
The Caliph, Cupid And The Clock - O. Henry - Translation in Bangla |
দ্যা ক্যালিফ, কিউপিড এন্ড দ্যা ক্লক - ও. হেনরী (উইলিয়াম সিডনী পোর্টার) বাংলা অনুবাদ
ভ্যালেলুনা রাজ্যের উত্তরাধিকারী
রাজকুমার মাইকেল পার্কে তার প্রিয় বেঞ্চটিতে বসে ছিল। সেপ্টেম্বরের রাতের শীতলতা তার দেহে দুর্লভ ও বলবর্ধক ওয়াইনের মতো দ্রুত
জীবনী শক্তি সঞ্চার করছিল যেনো। পার্কের
বেঞ্চগুলো ছিল শূন্য। প্রাক হেমন্ত শীতের ঠাণ্ডার ছোঁয়ায় পার্কে ঘুরে বেড়ানো
লোকেরা আগেই বাড়ীতে চলে গিয়েছে। এই মাত্রই যেন চাঁদের আলোয় বাড়ির ছাদগুলোও আলোকিত
হল আর এর পাশাপাশি বাড়ীর চতুষ্কোণ আঙ্গিনাগুলোও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। মিহি ধারায়
ঝরে-পড়া ঝরনার পাশে ছেলেমেয়েরা হৈ-হুল্লোরে ব্যস্ত। ছায়াবৃত কোণগুলোতে বনপরীরা
প্রেম নিবেদনে ব্যস্ত ছিল যা মানুষের চর্মচক্ষুতে ধরা পড়ে না। দেশি মিস্ত্রির তৈরি মাউথ-অর্গান কে যেন বাজিয়ে চলেছে পথের ধারে। ছোট্ট পার্কের
মনোরম পরিবেশের চারদিকে রাস্তার মোটরগুলো বিচিত্র হর্ন বাজিয়ে চলেছে পিপ, মিউ,
ভ্যাপ। চলমান ট্রেনের গর্জন যেন বাঘ-সিংহের মতো পার্কটির নির্জনতার ওপর
ঝাপিয়ে পড়তে চাইছে। গাছের মাথার ওপর শোভা পাচ্ছে প্রাচীন পাবলিক বিলডিঙের টাওয়ারের
একটা গোল আলোকোডাসিত ঘড়ি।
প্রিন্স মাইকেলের ভেঁড়া জুতো-জোড়া
মেরামত করা সুদক্ষ মুচিরও আয়ত্তের বাইরে। জীর্ণ বস্ত্রের যে-কোনো ব্যবসায়ী তার
পরিহিত পোশাক সম্বন্ধে কথা বলতে অস্বীকার করবে। দুই সপ্তাহের ক্লান্তির রেখা পড়েছে
তার চেহারায়। ধূসর-বাদামি—লাল—সবজে-হলুদ—এসব
বিচিত্র রঙের সম্মিলিত সমন্বয় বা কোরাসের সুর যেন। যার প্রচুর পয়সা আছে তেমন কোনো
মানুষই ওর মতো জঘন্য টুপি ব্যবহার করে না। প্রিয় বেঞ্চটিতে বসে মৃদু হাসল প্রিন্স
মাইকেল। সে ভেবে সুখ পাচ্ছে যে, ইচ্ছে
করলে সামনের সব কয়টি আলোকিত জানালা ওয়ালা বিরাট-বিরাট অট্টালিকা কিনে নেয়ার
সামর্থ্য তার আছে। মানহাটানের এই
গর্বোন্নত নগরীর যে-কোনো ধনীর সমান সোনা, হীরে-জহরৎ, মূল্যবান বস্তু ও শিল্প-সামগ্রী জড়ো করতে পারে সে, এত
বেশি জমিদারি ও সম্পত্তি কিনতে পারে যে তাদের সবগুলো ঘুরে দেখার সময়ও হবে না তার। শাসক
রাজন্যবর্গের সাথে একাসনে বসতে পারে সে।
সমাজ, শিল্পের জগৎ, সুন্দরের সমাবেশ,
সর্বোচ্চ সম্মান, জ্ঞানীর প্রশংসা, তোষামোদ, অনুকরণ, ধনী জমিদারের সঙ্গ, বিবেচনা, যোগ্যতা,
ক্ষমতা,
আনন্দ, যশ, জীবনের সমস্ত মধু ভ্যালেলুনা
রাজ্যের প্রিন্স মাইকেল গ্রহন করতে পারে যখনি সে গ্রহন করতে চায়। যখন খুশি সে তা
নিতে পারে। কিন্তু জীর্ণবাসে পার্কের বেঞ্চে বসে ধ্যানস্থ হতেই তার সাধ। কারণ
জীবন-বৃক্ষের ফল সে আস্বাদ করেছে। মুখের তিক্ত স্বাদ নিয়ে তাই সে যেন স্বর্গ থেকে
এগিয়ে এসেছে মর্ত্যের নিপীড়িত হৃদয়-বেদনার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে।
রাঙা দাড়িওয়ালা মুখ হাসিতে উদ্ভাসিত
হয়ে উঠতেই এসব চিন্তা স্বপ্নের মতো ছায়া ফেলে গেল তার মনের পর্দায়। দরিদ্রতম
ভিক্ষুকের বেশে পার্কে ঘুরে বেড়িয়ে মানুষকে চিনতে ভালো লাগে তার। ধনৈশ্বর্য, উচ্চাসন, মোট কথা
জীবনের কাম্য জিনিসের চেয়ে সত্যানুসন্ধানেই বেশি আনন্দ তার।
ওর প্রধান শান্তি ও সান্ত্বনা
মানুষকে বিপদমুক্ত করা। সত্যিকারের প্রয়োজনে সাহায্য করা, ভাগ্যাহতকে
অপ্রত্যাশিত ও রাজসিক উপহারে সুখি করা—সত্যিকারের রাজকীয় মাহাত্মে
সবকিছু সুবিবেচনার সাথে বিচার করা। টাওয়ারের গায়ের বিরাট ঘড়িটার ওপর নজর পড়তেই
প্রিন্স মাইকেলের হাসি কতকটা বিরক্তিতে পর্যবসিত হল। অনেক বিরাট ব্যাপার নিয়ে
ভাবছে সে সময়ে বিতর্কমূলক গণ্ডিরেখার কাছে গোটা দুনিয়ার বশ্যতা ক্ষিপ্ত করে তোলে
তাকে। এই-যে মানুষের অবিরাম দ্রুত আসা-যাওয়া ঘড়ির ক্ষুদ্র কাটার মাপে নিয়ন্ত্রিত
হচ্ছে—এই চিন্তা সব সময়ই তাকে বিমর্ষ করে তোলে। ইতিমধ্যে
সান্ধ্য-পোশাকে এক যুবক এল। প্রিন্সের
বেঞ্চ থেকে বেঞ্চটিতে সে বসল। মানসিক অস্থিরতার সঙ্গে সে প্রায় আধঘন্টা সিগারেট
টানল,
বারবার করে চাইল গাছের ওপর দিয়ে টাওয়ারের মাথার বড় ঘড়িটার দিকে।
সুস্পষ্ট ওর অস্থিরতা। প্রিন্স লক্ষ করল যে, যুবকের মনঃপীড়ার
কারণ যেভাবেই হোক ঐ ধীর গতিতে চলা ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে জড়িত। মহামান্য প্রিন্স উঠে
গেল যুবকের বেঞ্চে।
আপনাকে বিরক্ত করতে হচ্ছে বলে মাফ
চাইছি,
বলল সে। আমার মনে হয় আপনি মানসিক অশান্তিতে ভুগছেন। আমাকে দিয়ে যদি
আপনার কোনো উপকার হয়, আমি সাহায্য করতে রাজি। আমি প্রিন্স
মাইকেল, ভ্যালেলুনা রাজ্যের সিংহাসনের ভাবী উত্তরাধিকারী।
আমাকে দেখে বিশ্বাস হচ্ছে না নিশ্চয়ই—তাই না? ওটা
আমার সুখ। যাকে সাহায্য করা প্রয়োজন মনে হয় তাকে সাহায্য করি। হয়ত-বা আপনার কষ্ট আমাদের
দুজনের সম্মিলিত চেষ্টায় লাঘব হতে পারে।
যুবক প্রিন্সের দিকে চাইল। দৃষ্টি
উজ্জ্বল বটে কিন্তু কুটির বঙ্কিম রেখা তখনও সোজা হয় নি। ভঙ্গি নিয়েই সে হাসল। ঠিক হাসল কি না যেন বোঝা গেল না। বলল, প্রিন্স আপনাকে দেখে সুখি
হলাম। হ্যা, সত্যি-সত্যি আপনাকে চেনার যো নেই। আপনার সাহায্যের প্রস্তাবের জন্যে ধন্যবান। কিন্তু আপনার
সাহায্যে এতে কোনো সুবিধা হবে বলে তো মনে হয় না। ব্যক্তিগত ব্যাপার, বুঝলেন?
তবুও আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
যুবকের পাশে বসে পড়ল প্রিন্স মাইকেল।
সাহায্য দিতে চেয়ে বহুবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে সে, কিন্তু কখনোই
ঔদ্ধত্যের সাথে কেউ প্রত্যাখ্যান করে নি। তার উন্নত ললাট আর সুন্দর ব্যবহারে এমন
কিছু ছিল যা ঠেকিয়ে রেখেছে অবমাননাকে।
‘ঘড়ি হল মানুষের পায়ের বিরুদ্ধতার
নিগড়। দেখলাম, বারবার করে ঘড়ি দেখছেন আপনি। ওটার চেহারাটা অত্যাচারীর
মতো, নম্বরগুলো লটারির টিকিটের মতোই ভুয়ো আর হাত দুটো নিশি
ভূতের হাতের মতোই ভয়ঙ্কর, দয়ামায়াহীন। অনুনয় করে বলছি,
চোখ-রাঙ্গানো পেতল আর ইস্পাতের ঐ দৈত্যটার দাসত্ব ঝেড়ে ফেলে দিন
আপনি,’ প্রিন্স বলল।
যুবক বলল, সাধারণত
সেটা করি না আমি। কাজকর্মের সময় প্রায়ই ঘড়িটা সঙ্গে রাখি।
‘গাছপালা আর দূর্বাঘাসের মতোই মানব-প্রকৃতিটা আমার ভালোভাবে
জানা’—প্রিন্স বলল গভীর আন্তরিকতার সাথে। ‘দর্শনশাস্ত্রে
পণ্ডিত লোক আমি। চারুকলার গ্র্যাজুয়েট। আর তাছাড়া সৌভাগ্যে-ঈশ্বর প্রদত্ত নেয়ামতের
ভাণ্ডারখানা আমার হেফাজতে। মানুষের এমন দুঃখ কমই আছে ইচ্ছে করলে যা দূর করা আমার
সাধ্যতীত। আপনার চেহারায় দেখতে পাচ্ছি সততা, আভিজাত্য আর অসহায়তার
সংমিশ্রণ। দয়া করে আমার উপদেশ বা সাহায্য নিন। আপনাকে বুদ্ধিমান বলেই মনে হচ্ছে।
চেহারা দেখে আমার সামর্থ্য বিচারের মতো আহাম্মকি করবেন না।’
ঘড়িটার দিকে চোখ পড়তেই যুবকের কপাল
কুঞ্চিত,
নিষ্প্রভ হয়ে এল। দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে তাকাল সে চারতলা এক লাল ইটের
বাড়ির দিকে। বাড়ির খড়খড়িগুলো নামানো, তাদের ফাঁকে দেখা
যাচ্ছে আলোর সামান্য একটু আভাস। নটা বাজতে দশ মিনিট! হতাশায় যুবকের হৃৎপিণ্ডটাই
যেন নিঙড়ে বেরিয়ে আসছে। ঘুরে দাঁড়াল সে, তারপর পা বাড়াল হনহন
করে। ‘দাড়ান!’—প্রিন্সের
গর্জনে তড়াক করে ঘুরে দাঁড়াল যুবক। হেসে ফেলল। দশ মিনিট সময় দিচ্ছি ওকে, তারপরেই
ইতি, বিড়বিড় করে বলল সে। তারপর গলা চড়িয়ে প্রিন্সকে বলল—আপনারই মতো
ঘড়ি গুলোকে আজ থামিয়ে দিব সাথে মেয়েগুলোকেও।
বসুন, শান্ত স্বরে বলে
প্রিন্স। মেয়েরা হল ঘড়ির প্রাকৃতিক শত্রু। সময় রূপ দৈত্যই আমাদের আনন্দকে সঙ্কীর্ণ সীমাবদ্ধ করে দেয়। আমার ওপর যদি আস্থা
থাকে তবে আপনার ঘটনাটা বলুন শুনি। উদ্ভাসিত হাসিতে যুবক নিজেকে যেন ছুড়ে দিল
বেঞ্চের ওপর। সকৌতুকে সে বলতে শুরু করল, হে মহান যুবরাজ, আপনি কি ঐ
বাড়িটা দেখতে পাচ্ছেন—ঐখানে—ঐ যে তিনটে জানালায়
যেখানে আলো দেখা যাচ্ছে? হ্যা, আজ বিকেলে ওখানে
আমি দাড়িয়েছিলাম। আমি—অর্থাৎ ইয়ে, মানে আমরা—সে আমার
বাগদত্তা। আমি কুপথে চলছিলাম—প্রিন্স, অতি বদ ছেলে আমি।
সে সবই জেনে ফেলেছিল, আমি
ওর কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমরা সব সময়ই চাই মেয়েরা আমাদের ক্ষমা করুক, তাই নয় কি প্রিন্স? সে বলেছে—ভেবে দেখার
সময় চাই। তবে, নিশ্চিত জেনো তোমাকে হয়ত সম্পূর্ণ ক্ষমাই করব—নয়ত কখনো
আর তোমার মুখ দেখব না। এর ভেতর আপস-রফা নেই। সে বলেছে—ঠিক সাড়ে
আটটায় ওপরের তলার মাঝখানের জানালার দিকে তাকাবে। যদি তোমাকে ক্ষমা করব বলে মনঃস্থির করি তবে জানালায় সাদা সিল্কের চাদর
ঝুলিয়ে দেব। তাহলেই তুমি জানতে পারবে আমি সবকিছুই ভুলে গেছি। তুমি আমার কাছে আসবে।
আর যদি চাদর না দেখ তবে বুঝবে আমার সব সম্বন্ধ (বিবাহের) চিরদিনের মতো চুকে গেছে।
তিক্ত সুরে যুবক বলল, সে
জন্যেই আমি ঘড়ি দেখছি। সঙ্কেত পাবার নির্দিষ্ট সময়ের পর তেইশ মিনিট পার হয়ে গেছে।
কাজেই আমি এখন কিছুটা অস্থির হলে আপনি নিশ্চয়ই আশ্চর্য হবেন না, জীর্ণ পোশাকধারী প্রিন্স?
আবেগ-জড়িত কণ্ঠে প্রিন্স মাইকেল বলল, ‘আবার বলছি, মেয়েরা হল ঘড়ির
প্রাকৃতিক শত্রু। ঘড়িগুলো এক-একটা
শয়তান আর মেয়েরা ঈশ্বরের রহমতস্বরুপ। আপনার সঙ্কেত-চিহ্ন
এখনও তো দেখা যেতে পারে?’
যুবক বলল, ‘মোটেই না। আপনার ধারণা ভুল। মেরিয়ানকে আপনি
চেনেন না। ঘড়ির কাঁটা ধরে চলে সে। এটাই প্রথম আমাকে আকর্ষণ করে। আহবানের পরিবর্তে আমি
প্রত্যাখ্যানই পেয়েছি। আমার বোঝা উচিত ছিল যে আটটা একত্রিশ মিনিটেই আমার সবকিছু
শেষ হয়ে গেছে। জ্যাক মিলবানের সঙ্গে পশ্চিমে যাব আজ রাত পৌনে বারোটায়। এবার ওঠা
যাক। কিছুদিনের জন্যে জ্যাকের খামারে যাব—তারপর ডুবে যাব হুইস্কির
মধ্যে—গুড নাইট, প্রিন্স।
প্রিন্স মাইকেল হাসল। সুন্দর, ভদ্র,
বিনীত সে হাসি। যুবকের কোটের প্রান্ত টেনে ধরল সে। রাজকুমারের চোখের
ঔজ্জ্বল্য কোমল, স্বপ্নাতুর, ছায়াচ্ছন্ন
হয়ে এল। ধীরে বন্ধু, ধীরে। নির্লিপ্তভাবে প্রিন্স বলল। ন-টার ঘণ্টা পড়া পর্যন্ত দেরি করুন। অনেকের চেয়ে বেশি আমার সম্পদ—ক্ষমতা, জ্ঞান।
কিন্তু ঘড়িতে ঘণ্টা বাজলে আমার বড় ভয় হয়।
‘ন-টা বাজা পর্যন্ত আপনি আমার কাছে
বসুন। ঐ মেয়ে আপনারই হবে। ভ্যালেলুনার উত্তরাধিকারী প্রিন্সের কথা রাখুন। আপনার
বিয়েতে এক লাখ ডলার আর হাডসন নদীর তীরে একটা বাড়ি উপহার দেব আমি। কিন্তু একটা
শর্তে। সে বাড়িতে কোনো ঘড়ি থাকবে না। ওটা আমাদের সুখের সময়কে সীমাবদ্ধ করে দুঃখ
দেয়। আপনি কি এতে রাজি?’
‘নিশ্চয়ই,’ খুশি হয়ে
যুবক উত্তর দিল। ‘ওগুলো অর্থহীন, বাজে সারাক্ষণ টিকটিক করে,
ঘণ্টা বাজায়—আর ডিনারে দেরি
করিয়ে দেয়।’ সে আবার টাওয়ারের ঘড়ির দিকে চোখ তুলল। ঘড়ির কাঁটা ন-টার তিন
মিনিট দূরে দাঁড়িয়ে,’ প্রিন্স মাইকেল বলল, ‘ভাবছি, একটু
ঘুমোব সারাদিন বড় ক্লান্তিতে কেটেছে। দেহটাকে বেঞ্চে ছড়িয়ে দিল, যেন সে এর আগেও এমনি করে শুয়েছে বহু। ঘুম-জড়ানো চোখে প্রিন্স বলল, যে-কোনো দিন সন্ধ্যায় আমার দেখা পাবেন এখানে। অবশ্যি ভালো আবহাওয়া থাকলে।
বিয়ের দিন ঠিক হলে আসবেন—চেক দেব আপনাকে।
‘ধন্যবাদ, ইওর
হাইনেস,’ এতটুকু ব্যঙ্গের লেশ নেই যুবকের কণ্ঠস্বরে। ‘হাডসন নদীর
তীরের বাড়িটার আর দরকার হবে না বলেই মনে হচ্ছে। তবু বড় খুশি হয়েছি। আপনার সদয়
উপহারের প্রস্তাবে।’
প্রিন্স মাইকেল গভীর নিদ্রায় অভিভূত
হয়ে পড়ল। ছেঁড়া টুপিটা বেঞ্চের তলায় গড়িয়ে পড়েছে। যুবক সেটা তুলে প্রিন্সের ঘুমন্ত
মুখের ওপর রেখে আরাম করে একটু নড়ে বসল, যেন একটা গভীর দায়িত্ব থেকে
মুক্তি পেয়েছে।
‘হতভাগ্য!’ বলল সে ছেড়া কাপড়গুলো ওর বুকের ওপর ঠিক
করে দিয়ে। সারা এলাকাটাকে চমকে দিয়ে টাওয়ারের ঘড়িতে ঢং ঢং করে ন-টা বাজল। বুক-ফাটা
দীর্ঘশ্বাস ফেলে নির্দিষ্ট জানলায় শেষবারের মতো তাকাল যুবক—আর উত্তেজনায়
চিৎকার করে উঠল সঙ্গে সঙ্গেই।
ওপরতলার মাঝখানের জানালায় হেলে-দুলে
পৎপৎ করে উড়ছে বহু আকাঙ্ক্ষিত ক্ষমার শ্বেত-শুভ্র সঙ্কেত-চিহ্ন—আলো-আঁধারির
কারচুপিতে চাদরটাকে দেখাচ্ছে জান্নাতের কোনো বিহঙ্গীর সাদা ডানার মতো।
পাশ দিয়ে যাচ্ছিল এক ঘরমুখো নাগরিক।
গোলগাল,
বিলাসী গোছের। বৈচিত্র্যবিহীন এ-শহরের বিশেষ একটা জানলায় সাদা
সিল্কের একখানি চাদর কতবড় আনন্দের বার্তা ঘোষণা করছে সেটা সে কল্পনাও করতে পারবে
না। এগিয়ে গিয়ে যুবক তাকে পাকড়াও করল। দয়া করে সময়টা একবার বলবেন?
যথেষ্ঠ নিরাপত্তার সাথে সাবধানে পকেট
থেকে ঘড়িটা বের করে লোকটি বলল, ‘আটটা বেজে সাড়ে উনত্রিশ,’ অভ্যাসের
বশেই টাওয়ারের ঘড়ির দিকে তাকাল সে। ‘জর্জের কসম! ও-ঘড়িটা আধঘণ্টা এগিয়ে! দশ বছরে এই প্রথমবার বিগড়াতে
(সময় ঠিক করার সময় ভুলবশত আধা ঘন্টা এগিয়ে দেয়া হয়েছে) দেখলাম, মশাই। আমার এ-ঘড়ি কিন্তু এক সেকেন্ডও......।’
শেষের কথাগুলো শূন্যতাকে লক্ষ করেই
বলা। ঘাড় ফিরিয়ে সে দেখল বিলীয়মান ছায়ার মতোই দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে শ্রোতা-যেদিকে
ওপরতলার তিনটে জানলায় আলো।
পরদিন সকালে এল দু-জন পুলিশ নিজস্ব
ডিউটিতে এলো। বেঞ্চির ওপর গুড়ি
মেরে পড়ে-থাকা জরাজীর্ণ একটা দেহ ছাড়া গোটা পার্কটাই জনমানবশূন্য। ওর দিকে তাকাল
তারা।
একজন বলল, ‘মাইক মাতালটা। কুড়ি বছর ধরে এ-পার্কেই আস্তানা ওর। মনে হচ্ছে, জীবনের শেষ হয়ে এসেছে।’
আর একজন পুলিশ ঝুঁকে এল এবং ঘুমন্ত
ব্যাক্তির হাতের মুঠোয় দলা মোচড়া হয়ে থাকা কি যেন দেখল।
‘এই,’ সে বলল,
‘কাকে যেনো ঠকিয়ে ৫০ ডলারের একটা নোট মেরে
দিয়েছে। ব্যাটা কোন ব্র্যান্ডের সিগারেট খায় জানতে ইচ্ছে করছে।’
তারপর শোনা গেলো, ‘র্যাপ, র্যাপ,
র্যাপ,’ ভ্যালেলুনা রাজ্যের উত্তরাধিকারী রাজকুমার মাইকেল এর জুতোর
তলায় পুলিশের মুগরের আঘাতের শব্দ।
তারপর ভ্যালেনার রাজকুমার মাইকেলের
জুতোর তলায় বাস্তবের লাঠির ঘা শোনা গেল, ‘থপ, থপ, থপ’।
Contributor: Anika Nawar
No comments:
Post a Comment