![]() |
অনুবাদ গল্প - দালালের ভালোবাসা - ও হেনরী - The Romance of a busy Broker - O. Henry - Bengali Translation - |
দালাল
হার্ভে
ম্যাক্সওয়েলের
(Harvey
Maxwell, broker) বিশ্বস্থ
কেরানী
(confidential
clerk) পিচার যখন সাড়ে
নয়টায়
তার
মালিককে
তরুণী
শ্রুতিলেখক
(young
lady stenographer) মেয়েটার
সাথে
দ্রুতলয়ে
অফিসে
ঢুকতে
দেখল,
অনাগ্রহের
সাথে
তাদের
দিকে
তাকালেও
তার
বিস্ময়ের
সীমা
রইল
না।
চটজলদি
সুপ্রভাত
পিচার
বলেই
নিজের
ডেস্কে
এমন
ভাবে
ঝাপিয়ে
পড়লেন
যেনো
এটার
উপর
দিয়েই
সে
সামনে
এগিয়ে
যাবে
আর
তারপরই
অপেক্ষমাণ
চিঠি
ও
টেলিগ্রামের
গাদায়
ডুবে
গেলেন।
যুবতী
বছরখানেক
ধরে ম্যাক্সওয়েলের স্টেনোগ্রাফার।
সে
এতটা
সুন্দরী
যা
প্রায়
অ-স্টেনোগ্রাফারসুলভ
(unstenographic)। বিলাস-ব্যসনের
(pomp
adou) চিহ্ন
নেই
তার
ভেতর।
চেন,
বালা
বা
লকেটও
সে
পরে
না।
তার
হাবভাবে
মনে
হয়
না
যে,
সব
সময়
লাঞ্চের
নিমন্ত্রণে
যাওয়ার
জন্যে
তৈরি
হয়ে
আছে।
সাদামাটা
ছাইরঙের
পোশাকে
আজ
।
কিন্তু
সেই
পোশাকই
যেন
একটা
বৈশিষ্ট্য
দিয়েছে
তাকে।
তার
কালো
পাগড়ির
মত
টুপিতে
সবুজে-সোনালি
ম্যাকাও
(macaw) পাখির পালক
।
আজকের
সকালবেলায়
তার
মুখে
ছিল
একটা
হালকা
ও
লাজুক
দীপ্তি।
উজ্জ্বল
চোখ
স্বপ্নিল,
চিবুকে
পাকা
পিচের
(peachblow) লালিমা, হাবভাবে
উপচে
পড়ছে
সুখস্মৃতিজড়িত
তৃপ্তি।
ওর
ধরন-ধারণে
একটা
বৈসাদৃশ্য
লক্ষ
করল
কৌতূহলী
পিচার।
বরাবরের
মতো
সরাসরি
পাশের
ঘরে
নিজের
ডেস্কে
না
গিয়ে
আজ
যেন
সে
কিংকর্তব্যবিমূঢ়
হয়ে
ঘোরাফেরা
করছে
বাইরের
অফিসে।
এমনকি
ম্যাক্সওয়েলের
টেবিলের
ধার
ঘেঁষেও
সে
ঘুরে
এল
একবার।
কিন্তু
মানুষের
বদলে
একটা
যন্ত্র
যেন
বসে
আছে
সে
ডেস্কে।
এই
হচ্ছে
ব্যস্তসমস্ত
নিউইয়র্কের
ব্রোকার,
কল-কাটা
চাকা
আর
স্প্রিং
যাকে
চালিয়ে
নিয়ে
বেড়ায়।
‘ভালো
- কী?
কিছু
বলবে
নাকি?’
চটপট
জিজ্ঞেস
করলেন
তিনি।
টেবিলের
চিঠিপত্রের
গাদাটাকে
দেখাচ্ছে
ছোটখাটো
একটা
মাটির
ঢিবির
মতো।
প্রায়
অধৈর্য-মনে
যান্ত্রিক
আর
কর্মব্যস্ত
চোখে
তিনি
চাইলেন
যুবতীর
দিকে।
কিছু
না,
একটুখানি
হেসে
সরে
গেল
স্টেনোগ্রাফার
।
কনফিডেনসিয়াল
ক্লার্কের
কাছে
গিয়ে
সে
বলল,
‘মি.
পিচার,
মি.
ম্যাক্সওয়েল
কি
আপনাকে
আমার
বদলে
নতুন
একজন
স্টেনোগ্রাফার
রাখার
ব্যাপারে
কিছু
বলেছেন?’
‘বলেছেন,’
পিচার (Pitcher) বলল,
‘বলেছেন
অন্য
কাউকে
রাখতে।
কাল
বিকেলে
এজেন্সিতে
ফোন
করে
বলে
দিয়েছি
আজ
সকালে
গোটাকয়
মেয়েকে
পাঠাতে।
পৌনে
ন-টা
বাজতে
চলল
কিন্তু
এখনও
কোনো
চলন্ত
টুপি
বা
আনারসের
চুয়িং
গামের
দেখা
নেই
(picture
hat or piece of pineapple chewing gum) দেখা
নেই।’
‘তাহলে
কেউ
না-আসা
পর্যন্ত
আমাকে
তো
কাজ
চালিয়ে
নিতেই
হবে,
তাই
না,
নিজের
ডেস্কে
চলে
গেল
যুবতী।
ম্যাকাওর
পালক-লাগানো
পাগড়ি
সদৃশ
টুপি
রাখল
যথাস্থানে।
গরম
বাজারের
সময়
ম্যানহাটানের
ব্যস্তসমস্ত
ব্রোকারকে
যিনি
দেখেননি, মানব-চরিত্রের
অনেকখানিই
তার
অজানা।
দৃপ্ত
জীবনের
কর্মময়
মুহূর্ত
নিয়ে
কবিরা
অনেক
কবিতা
লিখেছেন,
কিন্তু
ব্রোকারের
মুহূর্ত
শুধু
কর্মময়ই
নয়—তাদের
চারপাশে
উত্তপ্ত
গাদাগাদি
করে
আছে
প্রতিটি
মিনিট
আর
সেকেন্ড।
আজকের
দিনটা
হার্ভে
ম্যাক্সওয়েলের
ব্যস্ততার
দিন।
একটানা
গড়গড়
করে
বাজছে
টেপযন্ত্র,
আর
ক্রিং
ক্রিং
করে
বাজাটাও
যেন
টেলিফোনটার
পুরনো
ব্যাধি।
লোকের
ভিড়
জমে
গেছে
অফিসে,
রেলিঙের
ও-পাশে
আনন্দে,
ক্রোধে,
উত্তেজনায়
সুতীক্ষ্ণ
চিৎকার
করে
চলেছে
তারা।
খবর
ও
টেলিগ্রাম
নিয়ে
পাগলের
মতো
ছুটোছুটি
করছে
বার্তাবাহকেরা।
কেরানিরা
ছুটোছুটি
করছে
যেমন
ঝড়ের
সময়
নাবিকরা
করে।
এমনকি
পিচারের
নির্লিপ্ত
মুখটিও
যেন
প্রান
ফিরে
পেয়েছে।
একদিকে
যেমন
শেয়ারবাজারে
চলছে
সমুদ্র
ঝড়,
ভূমিধ্বস,
তুষার
ঝটিকা,
আগ্নেয়গিরি
আর
তুষার
ধসের
প্রলয়
কাণ্ড,
তেমনি
তাদের
ক্ষুদ্রতর
সংস্করণ
পুনরাভিনয়
হচ্ছে
ব্রোকারের
অফিসে
(On
the Exchange there were hurricanes and landslides and snowstorms and glaciers
and volcanoes, and those elemental disturbances were reproduced in miniature in
the broker's offices.)।
চেয়ারখানা
দেয়ালের
দিকে
সরিয়ে
দিয়ে
ম্যাক্সওয়েল
যেন
পায়ের
বুড়ো
আঙুলের
ওপর
ভর
দিয়ে
নাচের
কসরৎ
দেখাচ্ছে।
তারবার্তা
মুদ্রনকারীযন্ত্র
(ticker) থেকে ফোন
আর
ডেস্ক
থেকে
দরজা
পর্যন্ত
একটানা
লাফালাফি
করে
চলেছেন
যেন
তিনি
একজন
প্রশিক্ষিত
ভাড়
(harlequin)। ক্রমবর্ধমান
ব্যস্ততার
ভেতর
হঠাৎ
ম্যাক্সওয়েল
যেন
লক্ষ
করলেন
উটের
পালক-গোঁজা
মখমলের
টুপির
নিচে
কোঁকড়ানো
সোনালি
চুল,
সিলের
নকল
চামড়ার
পোশাক
আর
তার
নিচের
প্রান্তে
হিকোরি
বাদামের
মতো
পুতির
মালা
ঝুলছে
যার
শেষপ্রান্তে
রুপালি
হৃৎপিণ্ডের
প্রতিকৃতি
মেঝেতে
গিয়ে
নেমেছে
আর
এ-সবের
সাথে
সংশ্লিষ্ট
এক
শান্তশিষ্ট
(self-possessed ) যুবতী; পাশেই
দাঁড়িয়ে
পিচার।
‘এই
মহিলা
স্টেনোগ্রাফার্স
এজেন্সি
থেকে
চাকরিটার
ব্যাপারে
এসেছেন,’
বলল
পিচার।
হাত-বোঝাই
কাগজপত্র
আর
টেপ
নিয়ে
ম্যাক্সওয়েল
আধাআধি
ঘুরে
দাঁড়ালেন, ‘কিসের চাকরি?’
কপাল
কুঁচকে
এল
তার।
‘স্টেনোগ্রাফারের
চাকরিটা,’
বলল
পিচার।
‘আজ
সকালে
একজনকে
পাঠিয়ে
দেবার
জন্যে
এজেন্সিতে
খবর
দিতে
বলেছিলেন
গতকাল।’
‘তোমার
মাথা
বিগড়ে
যাচ্ছে
পিচার।
কেন
অমনধারা
কথা
বলব
তোমাকে?
এক
বছর
ধরে
মিস
লেসলি
(Miss
Leslie) যা
কাজ
দেখিয়েছে
তাতে
আমি
বড়
খুশি।
নিজে
থেকে
না
ছাড়লে
এ
চাকরি
তারই।
এখানে
চাকরি-টাকরি
খালি
নেই,
মাদাম।
এজেন্সিকে
মানা
করে
দাও,
পিচার,
আর
কাউকে
এনে
হাজির
কর
না।’
ঘৃণাভরে
বেরিয়ে
যাবার
মুখে
রুপোর
হৃৎপিণ্ডওয়ালি
এখানে-ওখানে
আসবাবপত্রগুলোকে
ধাক্কা
দিয়ে
গেল।
একমুহূর্ত
কাজ
ফেলে
রেখে
পিচার
হিসাবরক্ষককে
(bookkeeper ) বলল, ‘দিনকে-দিন
আনমনা
হয়ে
যাচ্ছে
বুড়ো।’
ক্রমেই
দ্রুততরহয়ে
ওঠে
ভিড়
আর
ব্যবসার
গতি।
এমন
অন্তত
গোটা-ছয়
কোম্পানির
শেয়ার
মার
খাচ্ছে
আজ,
যাতে
রয়েছে
ম্যাক্সওয়েলের
মক্কেলদের
মোটা
টাকার
লগ্নি।
চাতক
পাখির
ডানা
ঝাপটাবার
মতোই
দ্রুত
বেচা
আর
কেনার
ফরমাশ
আসতে
থাকে।
তার
নিজেরই
গোটাকতক
লগ্নির
(holding) ভরাডুবি হবার
জোগাড়।
তবু
শক্তিশালী,
সঠিক
যন্ত্রের
মতো
অবিচল
কাজ
করে
চলেছেন
তিনি।
জ্যা-টানা
ধনুকের
মতো
প্রস্তুত,
সর্বশক্তি
নিয়ে
ঝাপিয়ে
পড়ছেন,
ইতস্তত
না
করে
দিচ্ছেন
সঠিক,
নির্ভুল
নির্দেশ।
কাজ
এগিয়ে
চলেছে
ঘড়ির
কাঁটার
মতো।
স্টক,
বন্ড,
কর্জ,
বন্ধকি,
মুনাফা,
নিরাপত্তা—এ
হচ্ছে
টাকার
জগৎ।
মানবিক
জগৎ
বা
প্রকৃতির
জগতের
প্রবেশাধিকার
নেই
এখানে।
খাবার
সময়
হতেই
কিছুটা
ভাটা
পড়ল
এ-উন্মাদনায়।
ডেস্কের
পাশে
দাঁড়াল
ম্যাক্সওয়েল।
হাত-ভর্তি
কাগজপত্র,
টেলিগ্রাম,
চিঠি।
ডান
কানের
ওপর
একটা
ফাউন্টেনপেন,
অবিন্যস্ত
চুল
লেপটে
রয়েছে
ঘর্মাক্ত
কপালে।
খোলা
জানালা
দিয়ে
বসন্ত
ঋতু
পাঠিয়ে
দিচ্ছে
হৃদয়াবেগের
ছিটেফোঁটা
উষ্ণতা।
জানলা-পথে
হঠাৎ
এল
খাপছাড়া—হয়ত-বা
পথভোলা
সুবাস
একটা,
লাইলাক
ফুলের
মিষ্টি
গন্ধ।
মুহূর্তে
নিশ্চল
দাঁড়িয়ে
পড়লেন
ব্রোকার।
‘গন্ধটার
মালিক
মিস
লেসলি-এটা
তার
নিজস্ব।
হ্যা,
হয়েছে।
আজই
বলব
ওকে।
আগে
বলি
নি
কেন
ভাবছি।’
সশব্দ
চিন্তা
করেন
তিনি।
বেঁটে
লোক
দ্রুত
হাঁটতে
গেলে
যেমন
পা
ফেলে,
সেরকম
ভঙ্গিতে
পাশের
ঘরে
ঢুকলেন
তিনি,
দাঁড়ালেন
স্টেনোগ্রাফারের
ডেস্কে
ভর
দিয়ে।
মৃদু
হেসে
স্টেনোগ্রাফার
তার
দিকে
চাইল।
গালের
ওপর
পলকে
লালিমা
খেলে
গেল
তার।
চোখে
একটা
সদয়
আন্তরিকতার
ভাব।
ডেস্কে
কনুই
রাখলেন
ম্যাক্সওয়েল।
তখনো
হাতের
ওপর
কাগজের
তাড়া
আর
ডান
কানে
ফাউন্টেনপেন।
‘মিস
লেসলি’,
চটপট
বলে
চললেন
তিনি।
‘হাতে
সময়
খুবই
কম।
এরি
ভেতর
তোমাকে
কিছু
বলতে
চাই।
আমার
স্ত্রী
হবে
তুমি?
আর-আর
লোকের
মতো
ভালোবাসার
সময়
পাইনি
জীবনে
কিন্তু
তবু
সত্যি
তোমাকে
ভালোবেসেছি।
দয়া
করে
জবাব
দাও,
তাড়াতাড়ি—হুলুস্থুল
বাধিয়ে
বসেছে
ওরা।’
‘কী
সব
বকছ
আবোল-তাবোল?’
প্রায়
চেঁচিয়ে
উঠল
যুবতী!
‘ছানাবড়া
চোখ
করে
তার
দিকে
তাকিয়ে
রইল
সে।’
‘বুঝতে
পারছ
না?
তোমাকে
আমি
বিয়ে
করতে
চাই।
মিস
লেসলি,
আমি
তোমাকে
ভালোবাসি,
সত্যি।
কাজের
চাপ
একটু
কমতেই
ছুটে
এসেছি
কথাটা
বলব
বলে।
ঐ
দেখ,
ফোনে
ডাকাডাকি
করছে।
ওদের
একটু
থামতে
বল,
পিচার।
তুমি
রাজি
হবে,
মিস
লেসলি?’
ভ্যাবাচ্যাকা
খেয়ে
গেল
স্টেনোগ্রাফার।
গোড়ায়
মনে
হল
বিস্ময়ে
হতবাক
হয়ে
গেছে
সে,
তারপর
ফোটা
ফোটা
অশ্রু
গড়িয়ে
পড়ল
তার
দু-গাল
বেয়ে।
তারপর
মিষ্টি
করে
হেসে
ফেলল
এবং
এক
হাতে
ব্রোকারের
গলা
জড়িয়ে
ধরে।
‘এখন
বুঝেছি,’
নরম
গলায়
বলল
সে,
‘তোমার
এই
পুরনো
ব্যবসা
তোমার
মাথা
থেকে
সব
খালি
করে
দিয়েছে।
প্রথমে
ভয়
পেয়ে
গিয়েছিলাম।
তোমার
কি
মনে
নেই,
হার্ভে? গতকাল সন্ধ্যা
আটটায়
যে
আমাদের
বিয়ে
হয়েছে
মোড়ের
ছোট
গির্জায়।’
মারুফ আল মাহমুদ
মারুফ আল মাহমুদ
-----------------শেষ-------------------
তোমাদের মধ্যে যারা একা ও নিঃসঙ্গ , তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ,
তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে স্বচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ
প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিবাহে সমর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত
না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন। (সূরা নূর : আয়াত ৩২-৩৩)
No comments:
Post a Comment