মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Sunday, December 8, 2019

ম্যামন অ্যান্ড দ্যা আর্চার - বাংলা অনুবাদ - Mammon and The Archer - O. Henry - Translation in Bangla -

Mammon and The Archer - O. Henry - Translation in Bangla
Mammon and The Archer - O. Henry - Translation in Bangla 

ম্যামন অ্যান্ড দ্যা আর্চার - ও. হেনরী (উইলিয়াম সিডনী পোর্টার)
অবসরপ্রাপ্ত (সাবান) উৎপাদক রকওয়ালস ইউরেকা সোপকোম্পানির মালিক প্রবীণ অ্যানথনি রকওয়াল (Anthony Rockwall) তার ফিফথ এভিনিউর বাড়ির লাইব্রেরির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলেন। তার বাড়ির ডানদিকে বসবাসকারী প্রতিবেশী অভিজাত সভার সদস্য জনাব জি. ভ্যান স্কাইলাইট সাফোক জোনস (G. Van Schuylight Suffolk–Jones) তার অপেক্ষামাণ মোটর গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে, যথারীতি তার উদ্দত নাকের ডগা কুঁচকে, সাবান-প্রাসাদের সামনের অধিরোহে অবস্থিত ইতালীয় রেনেসাঁ ধাচের শিল্পটির দিকে তাকালেন।
অকর্মণ্য অহংকারী বুড়োর মুর্তি,” আগের সাবান রাজ মন্তব্য করলেন।ইডেন মাসেল এখনো হিমায়িত নেসেলরোড পাবে যদি তিনি দেখে না থাকেন ("The Eden Musee'll get that old frozen Nesselrode yet if he don't watch out.) সামনের গ্রীষ্মে আমি বাড়িটায় লাল, সাদা আর নীল রঙ লাগাব, দেখি তাতে ওর কুঁচকানো নাক কপাল পর্যন্ত ওঠে কি না
অ্যানথনি রকওয়াল কোনোদিন ঘণ্টা বাজানোর ধার ধারতেন না। দরজায় গিয়ে সোজা তিনি চিৎকার করে উঠলেন, মাইক, এমন শব্দে, যা একদিন কানসাসের তৃণভূমিকে চিরে খানখান করে দিত।আমার ছেলেকে বল,’ আদেশপ্রার্থী ভৃত্যকে হুকুম দিলেন অ্যানথনি, ‘বাড়ি থেকে বের হবার আগে সে যেন একবার এখানে দেখা করে যায়।
যখন যুবক রকওয়াল (রিচার্ড) লাইব্রেরিতে ঢুকল, বৃদ্ধ তার হাতের খবরের কাগজ সরিয়ে রেখে তার দিকে তাকালেন। তাঁর প্রশস্ত, মসৃণ রক্তিম মুখে সদয় গাম্ভীর্য। এক হাতে মাথার সাদা চুলগুলোতে তিনি বিলি কাটছেন আর হাতে পকেটের চাবিগুলোকে বাজাচ্ছেন।রিচার্ড,অ্যানথনি রকওয়াল বললেন, তুমি কত দামের সাবান ব্যবহার কর?’
রিচার্ড যেন একটু চমকে উঠল। মাত্র দু-মাস হয় সে কলেজ থেকে বাড়ি এসেছে। তাই বাবাকে এখনও সে ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারে নি। প্রথম দিন পার্টিতে গেলে মেয়েদের যা হয়, তেমনি বাবার কাছ থেকেও প্রতিমুহূর্তে সে কোনো অপ্রত্যাশিত ব্যবহার আশা করছিল।
বাবা, আমার মনে হয়, ডজনে ছয় ডলার হবে হয়তো।
আর কাপড় (এর ক্ষেত্রে খরচ)?’
সাধারণত ষাট ডলারের কাছাকাছি
তুমি খাটি ভদ্রলোক,’ অ্যানথনি মত প্রকাশ করলেন। শুনেছি, আজকালকার ছেলেরা প্রতি ডজন সাবান বিশ ডলার আর পোশাক বাবদ একশো ডলারের ওপর খরচ করে। তাদের মতো করে নষ্ট করার মতো টাকা তোমারও আছে অথচ যেটুকু খরচ করা সঙ্গত উচিত, তার বেশি তুমি কখনো খরচ কর না। আমি এখনো সেই পুরনো ইউরেকা সাবানই ব্যবহার করে থাকি। শুধু মনমানসিকতার জন্য নয়, ওটাই সবচেয়ে খাঁটি বলে। একটি সাবানের দাম যখনই দশ সেন্টের বেশি হবে তখনই জেনে রেখো, বেশি পয়সা দিয়ে তুমি শুধু বাজে গন্ধ আর লেবেলই কিনছ। কিন্তু বর্তমান যুগ, অবস্থা আর সমাজে তোমার স্থান বিবেচনা করে দেখলে পঞ্চাশ সেন্ট খরচ তোমার মতো ছেলের পক্ষে খুবই শুভবুদ্ধির পরিচায়ক। যা বললামতুমি খাঁটি ভদ্রলোকই বটে। লোকে বলে, তিন পুরুষের বুনিয়াদ না থাকলে কেউ ভদ্রলোক হতে পারে না। কিন্তু সেটা বাজে কথা টাকা থাকলে সাথে-সাথেই মসৃণ পথে ভদ্রলোকত্বের আবির্ভাব হয়। টাকাই তোমাকে ভদ্রলোক করেছে। শুধু কি তাই? টাকা আমাকেও প্রায় ভদ্রলোক বানিয়ে ফেলেছে। আমার দু-পাশে যে দু-জন বুড়ো ভদ্রলোক আছেন তাঁদের বাড়ির মাঝখানের বাড়িটা আমি কিনেছি বলে রাতে তাদের ঘুম হয় না। ঠিক তাদের মতোই আমিও উদ্ধত, বদমেজাজি আর বিরক্তিজনক হয়ে উঠেছি
কয়েকটা জিনিস আছে যা টাকা থাকলেও হয় না বা করা যায় নাবিষণ্ণভাবে মন্তব্য করল তরুণ রকওয়াল।
এখন, একথা বলবে না,’ বুড়ো অ্যানথনি ক্ষুব্ধ হলেন।সব সময়ই আমি টাকার ওপরে টাকা বাজি ধরি। ওয়াই পর্যন্ত পুরো বিশ্বকোষ আমি তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখেছি, কিন্তু এমন কিছু পাই নি যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না। ভাবছি সামনের হপ্তায় পরিশিষ্টটা ধরব। আমি সব সময়েই টাকার পক্ষে। এমন একটা জিনিসের নাম কর তো যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না?’
যেমন ধরুন,’ একটু উত্তেজিত হল রিচার্ড, ‘টাকা লোককে সমাজের অভিজাত শ্রেণীতে ঢোকাতে পারে না।
তাই নাকি?’ অনর্থের মূল অর্থের জোরাল সমর্থক অ্যানথনি গর্জে উঠলেন, বল তো তোমার উঁচুতলার সমাজ আজ কোথায় থাকত যদি প্রথম অ্যাস্টরের কাছে সমুদ্র পেরোবার সামান্য জাহাজ ভাড়াটাও না থাকত?’
রিচার্ড দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
এই কথাটাই আমি বলতে চাইছি,’ শান্তস্বরে বৃদ্ধ আবার বললেন।আর এইজন্যই তোমাকে আমি ডেকেছিলাম। নিশ্চয়ই তোমার কিছু হয়েছে। আমি সপ্তাহ দুয়েক ধরে এটা খেয়াল করে আসছি। বলে ফেল কী হয়েছে তোমার। আসল সম্পত্তি বাদেই চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আমি এক কোটি দশ লাখ ডলার নগদ এনে দিতে পারি যদি তোমার লিভারের দোষ হয়ে থাকে, সাগরেদি ্যাম্বলার’ (the Rambler) তোমাকে নিয়ে যাত্রার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দু-দিনেই সে তোমাকে বাহামায় পৌছে দিতে পারবে
আপনার ধারনা খুব খারাপ হয়নি বাবা, কাছাকাছি গিয়েছেন
ওহ, অ্যানথনি সাগ্রহে বললেন। কী নাম মেয়েটার?’ রিচার্ড লাইব্রেরির মেঝেতে পায়চারি করতে শুরু করল। তার এই অমার্জিত বুড়ো বাবার মধ্যে যথেষ্ট বিশ্বস্থতা আর সহানুভূতির পরিচয় পেয়ে সে কিছুটা ভরসা লাভ করল।
 তুমি তাকে বলছ না কেন?’প্রশ্ন করলেন অ্যানথনিতোমাকে পেলে সে নিশ্চয়ই লাফিয়ে উঠবে। তোমার টাকা আছে, সুন্দর চেহারা। তোমার স্বভাবও বেশ মার্জিত। তোমার হাত দুটোও বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ইউরেকা সাবান তাতে লেগে নেই। কলেজেও পড়েছ, অবশ্য এগুলো নিয়ে সে মোতেও মাথা ঘামাবে না।
কিন্তু আমি সে সুযোগটাই পাচ্ছি না,’ রিচার্ড বলল।
তৈরি করে নাও,’ অ্যানথনি বললেন, তাকে নিয়ে পার্কে যাও, নইলে ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতে যাও বা উপাসনালয় থেকে তার সাথে হেঁটে হেটে বাড়ি ফের, সুযোগ বের কর (এই সুযোগে তাকে তোমার প্রস্তাবটা দিয়ে দাও)
আপনি সমাজের কলটাকে চেনেন না, বাবা। যে স্রোত কলটাকে চালায়, মেয়েটা তারই অংশ। তার সময়ের ঘণ্টা মিনিট আগে-থেকেই হিসেব করা। মেয়েটাকে আমার বিয়ে করতেই হবে বাবা, নইলে চিরদিনের জন্য আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যাবে। অথচ আমি তাকে লিখতেও পারি না। নাহ, সে আমি পারবও না
তুমি কি বলতে চাও যে, আমার সকল সম্পদের বিনিময়েও তুমি দু-এক ঘণ্টার জন্যেও মেয়েটাকে কাছে পেতে পার না?’
বড় বেশি দেরি হয়ে গিয়েছে, বাবা। পরশু দুপুরে সে দু-বছরের জন্যে ইউরোপ যাচ্ছে। কাল সন্ধ্যায় মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য আলাদাভাবে কথা বলার সুযোগটা পাব। বর্তমানে সে লার্চমন্ট (Larchmont)  তার খালার বাড়িতে আছে। সেখানেও আমার যাওয়া সাজে না। তবে আগামীকাল সন্ধ্যা সাড়ে আটটার ট্রেনে সে গ্রান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনে (Grand Central Station) পৌঁছোবে। সেখানে একটা গাড়ি নিয়ে উপস্থিত থাকবার অনুমতি পেয়েছি আমি। ব্রডওয়ে হয়ে ওয়ালাকাস থিয়েটারে যাব আমরা। সেখানে তার মা আরো অনেকে লবিতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবেন। আপনি কি মনে করেন যে, (ব্যস্ত) পরিবেশে সাত-আট মিনিট সময়ে সে আমার কথায় কান দেবে? অসম্ভব। আর থিয়েটারে অথবা তারপরেই-বা আমি তেমন কি সুযোগ পাব? কিছুই না। না বাবা, জট খোলার সাধ্য আপনার টাকারও নেই। টাকা দিয়ে এক মিনিট সময়ও কেনা যায় না। তা যদি যেত, তবে ধনীলোকেরা অনেক বেশিদিন বাঁচতে পারত। মিস ল্যানট্রির (Miss Lantry) চলে যাবার আগে তার সাথে একটু কথা বলার কোনো আশাই দেখছি না।
ঠিক আছে, রিচার্ড,উৎফুতল্ল বৃদ্ধ বললে তুমি এখন ক্লাবে যেতে পার। তোমার লিভারের কোনো অসুখ হয় নি জেনে আমি নিশ্চিন্ত। তুমি বলতে চাও টাকা দিয়ে সময় কেনা যায় না? অবশ্য নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে অনন্তকালকে বেঁধে নিয়ে তোমার বাড়িতে কেউ দিয়ে আসবে না। কিন্তু অনেক সময়েই দেখেছি, সোনার খনির ভেতর দিয়ে চলার কালে সময় বাবাজির (Father Time) পা বেশ জখম হয়, ফলে তিনি আস্তে হাঁটতে বাধ্য হন।
রাত্রে অ্যানথনি যখন সান্ধ্যকাগজ পড়ছিলেন, সেইসময় অ্যালেন ফুপু এসে হাজির হলেন। যদিও একেবারেই বৃদ্ধা, তবু বেশ ভদ্র সহানুভূতিশীল তিনি একটু বেশি উচ্ছাসপ্রবণ তিনি এসেই প্রেমিকদের দুঃখের কাহিনী শুরু করলেন।
সে আমাকে সবই বলেছে,’ অ্যানথনি হাই তুললেন।আমি তাকে বলেছি যে, আমার সমস্ত টাকাই সে ইচ্ছেমতো কাজে লাগাতে পারে। তাতে সে কী বলল, জান? উল্টো টাকাকেই আক্রমণ করল। বলল, টাকায় নাকি কিছুই হয় না। বলল, আমি একা কেন, দশজন কোটিপতির চেষ্টায়ও সামাজিক নিয়মের বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম হবে না।
আহ! অ্যানথনি!’ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন অ্যালেন ফুপু, তুমি যদি টাকার কথা শুধু একটু কম ভাবতে! সত্যিকারের ভালোবাসার কাছে টাকা কিছুই না। ভালোবাসা শাশ্বত, শক্তিমান। যদি একটু আগে মুখ খুলত, মেয়েটা নিশ্চয়ই আমাদের রিচার্ডকে প্রত্যাখ্যান করতে পারত না। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে এখন সময় পার হয়ে গেছে। ওর কাছে প্রস্তাবটা দেয়ার কোনো সুযোগই আর রিচার্ড পাবে না। তোমার সমস্ত বিষয়-সম্পত্তিও তোমার ছেলের জীবনে সুখ এনে দিতে পারল না
পরদিন রাত আটটায় অ্যালেন ফুপু একটা পোকা-খাওয়া কাগজের বাক্স থেকে একটা অদ্ভুত রকমের সোনার আঙটি বের করে ভাতিজা রিচার্ডকে দিলেন।আজ রাতে এটা পরবে, বাবা,’ প্রায় অনুনয় করলেন তিনি।তোমার মা এটা আমাকে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এটা নাকি ভালোবাসায় সৌভাগ্য আনে। তিনি আরও বলেছিলেন, তুমি যখন সত্যিকারের ভালোবাসার পাত্রীকে খুঁজে পাবে তাকে এটা দিও।
তরুণ রকওয়াল (রিচার্ড) সশ্রদ্ধভাবে আঙটিটা নিয়ে কড়ে-আঙুলে পরতে চেষ্টা করল কিন্তু আঙুলের মাঝামাঝি এসে সেটা আর উঠতে চাইল না। তখন আংটিটা খুলে সে ওটা বুকপকেটে রাখল। তারপর গাড়ির জন্য ফোন করল। স্টেশনে গিয়ে ঠিক -৩২ মিনিটে বিরাট জনসমুদ্রের মধ্যে মিস ল্যানট্রিকে খুঁজে বের করল রিচার্ড মা আর অন্য সবাইকে বসিয়ে রাখা উচিত হবে না, কী বলেনমিস ন্যানট্রি বলল।
যত তাড়াতাড়ি পার ওয়ালাস থিয়েটারে চল,’ মিস ল্যানট্রির কথায় সায় দিয়ে ড্রাইভারকে হুকুম করল রিচার্ড।
৪০ সেকেন্ডে তীরবেগে ওরা ব্রডওয়েতে উঠে এলো এবং গন্তব্যস্থলে এগিয়ে চলল। ৩৪ তম রাস্তাটিতে এসে তরুণ রিচার্ড হঠাৎ একধাক্কায় গাড়ির দরজাটা খুলে ফেলল। তারপর ড্রাইভারকে গাড়ি থামাবার হুকুম করল।
আমার আঙটিটা পড়ে গিয়েছে। গাড়ি থেকে নামতে নামতে সে কৈফিয়ৎ দিল
আঙটিটা আমার মায়ের, তাই হারাতে চাইনা আমি আপনাকে এক মিনিটও দেরি করাবো না, আমি দেখেছি ওটা কোথায় পড়েছে
এক মিনিট না হতেই সে আঙটিটা নিয়ে গাড়িতে ফিরে এল। কিন্তু সেই এক মিনিটের মধ্যেই একটা গাড়ি ঠিক আড়াআড়িভাবে সামনে এসে দাড়িয়েছে। ড্রাইভার বাঁ দিক দিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইল। কিন্তু একটা ভারি এক্সপ্রেস ওয়াগন তাকে বাধা দিল। ডানদিক দিয়ে যাবার জন্যও চেষ্টা করল সে, কিন্তু একটা ফার্নিচার-ভ্যান, যার ওখানে যাবার কোনোই প্রয়োজন থাকতে পারে না, পথ আটকাল ড্রাইভারটা পিছিয়ে যেতেও চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না। নিরুপায় হয়ে আশা ছেড়ে দিল সে আপন মনে গালিগালাজ শুরু করে দিল। অসংখ্য গাড়িঘোড়ার ভিড়ে সবদিকের পথ বন্ধ মাঝে মধ্যে যে-ধরনের গাড়িঘোড়ার ভিড় বড় বড় শহরের ব্যবসা-বাণিজ্য আর যাতায়াতের ব্যাপারে হঠাৎ অচলাবস্থা সৃষ্টি করে দেয়, ঠিক তেমনি ভিড় জমেছে এখানে।
গাড়ি চালাচ্ছ না কেন,’ অধৈর্য হয়ে উঠল মিস ল্যানট্রি আমাদের যে দেরি হয়ে যাবে।রিচার্ড উঠে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকাল। দেখল, ব্রডওয়ে, সিক্সথ এভিনিউ আর থার্টিফার্থ স্ট্রিট যেখানে মিলেছে সেই জায়গাটায় ওয়াগন, ট্রাক, ট্যাক্সি, ভ্যান ইত্যাদির এত ভিড় যে, মনে হয় ছাব্বিশ ইঞ্চি কোমরে বাইশ ইঞ্চি বেলট পরানো হয়েছে। এর ওপর চারদিক থেকে আরো গাড়ি পূর্ণবেগে এগিয়ে আসতে চাইছে, যে ভিড়ের চাপ আরো বাড়ছে। ফলে ড্রাইভারদের রাগারাগি আর ক্রুদ্ধ গালাগাল-গোলমাল আরো বাড়িয়ে তুলছে। মনে হয়, ম্যানহাটানের সমস্ত যানবাহন তাদের আশেপাশে জড়ো হয়েছে। রাস্তার দু-পাশে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে যে হাজার হাজার লোক এই দৃশ্য দেখছিল, তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশিদিন ধরে নিউইয়র্কে আছে, সেও কখনো হয়ত -রকমটা দেখে নি।
আমি সত্যি বড় দুঃখিত,’ বসে পড়ে বলল রিচার্ড।আমরা বোধ হয় আটকা পড়ে গিয়েছি। এক ঘণ্টার কমে এই ভিড় কমবে বলে মনে হয় না আমারই দোষ! আমার আঙটিটা যদি না পড়ত, তবে এতক্ষণ আমরা...’
আঙটিটা একটু দেখি তো,’ মিস ল্যানট্রি বাধা দিল, কিছুই যখন করা যাবে না, তখন ভেবে আর কী হবে? তাছাড়া থিয়েটার আমার কাছে বড় বিরক্তিকর লাগে।
-----
রাত এগারটায় অ্যানথনি রকওয়ালের ঘরের দরজায় কে যেন মৃদু টোকা দিলভেতরে এস,’ লাল ড্রেসিংগাউন পরা অ্যানথনি চেঁচিয়ে উঠলেন। জলদস্যুদের সম্বন্ধে একটা বই পড়ছিলেন তিনি। ভেতরে ঢুকলেন অ্যালেন ফুপু দেখে মনে হল তিনি যেন কোনো ধূসরকেশী ফেরেশতা, কোন কাজে হয়তো পৃথিবীতে নেমে এসেছেন।
ওদের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে,’ মৃদু কোমল স্বরে বললেন তিনি।মেয়েটা রিচার্ডকে বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছে। থিয়েটারে যাবার পথ এমনভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল যে, দু-ঘণ্টার আগে তাদের গাড়িটা সেই ভিড় ঠেলে কোনোমতেই বেরোতে পারে নি বুঝলে অ্যানথনি, আর কখনো টাকার ক্ষমতা নিয়ে বড়াই করো না। নিঃস্বার্থ প্রেমের প্রতীক ছোট্ট আঙটিটার কারনেই রিচার্ডের জীবনে সুখ এসেছে আঙটিটা রাস্তায় পড়ে যাওয়ায় সেটা নিতে সে রাস্তায় নামে কিন্তু আবার চলতে শুরু করার আগেই রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। সেই অবরুদ্ধ গাড়িতে সে তার প্রিয়াকে ভালোবাসার কথা জানায় তাকে জয়ও করে। প্রকৃত ভালোবাসার কাছে টাকা সত্যিই কিছু নয়।
যাক,’ বুড়ো বললেন, ‘ছেলেটা যা চেয়েছিল তাই সে পেয়েছে। এতেই আমি খুশি। আমি তাকে বলেছিলাম, -ব্যাপারে যত খরচই হোক না কেন, আমি পিছিয়ে যাব না, যদি...’
কিন্তু অ্যানথনি, তোমার টাকা কিই-বা করতে পারল?
অ্যালেন,’ তাকে হাতের গল্পের বইটা দেখিয়ে বললেন অ্যানথনি, আমার জলদস্যু ভীষণ বিপদে পড়েছে। তার জাহাজ ফুটো হয়ে গিয়েছে। টাকার দাম সে এত বেশি বোঝে যে তাকে ডুবিয়ে দেয়া মোটেই ভালো হবে না। একটু অপেক্ষা কর বোন। এই অধ্যায়টা পড়ে শেষ করে নিই।
 -----
গল্পটা এখানেই শেষ হওয়া উচিত ছিল পাঠকদের মতো আমারও আন্তরিক ইচ্ছা তাই। কিন্তু আসল সত্যকে উদ্ধার করতে হলে কুয়ার নিচ পর্যন্ত যেতেই হবে।
------
পরদিন লাল রাঙা হাত নীল গলাবন্ধ পড়া একজন লোক অ্যানথনি রকওয়ালের বাড়িতে এল। তার মুখ থেকেই জানা গেল, তার নাম কেলি (Kelly) আসামাত্রই তাকে লাইব্রেরি-ঘরে স্বাগতম জানানো হল।
এই যে,’ অ্যানথনি তার চেক বই-এর জন্যে হাত বাড়ালেন, সাবানের বিলটা তো ভালোই ছিল। তুমি তো ,০০০ ডলার নগদই পেয়েছ, তাই না
আরও ৩০০ ডলার নিজেই দিয়েছি,’ কেলি বলল, ‘হিসেবের চাইতে কিছু বেশিই খরচ হয়েছে। এক্সপ্রেস ওয়াগন আর ট্যাক্সি প্রতিটির পেছনে ডলার করে পড়েছে কিন্তু ট্রাক আর ঘোড়ার গাড়ি বেশির ভাগই ১০ ডলার করে নিয়েছে। মোটর-চালকরা চেয়েছিল ১০ ডলার করে, আর কয়েকটা মাল-বোঝাই গাড়ির প্রত্যেকে নিয়েছে ২০ ডলার করে। সব চেয়ে মুশকিলে ফেলেছিল পুলিশ। তাদের দুজনকে দিতে হয়েছে ১০০ ডলার আর বাকি সবাইকে ২০ আর ২৫ ডলার করে। কিন্তু মি. রকওয়াল, অভিনয়টা কি নিখুঁত হয় নি?  মি. উইলিয়াম . ব্র্যাডি (William A. Brady) বাইরের গাড়ি-ঘোড়ার এই অরাজক অবস্থা দেখতে উপস্থিত ছিলেন না এতে আমি সত্যিই খুশি হয়েছি। যদিও তাঁকে দুঃখ দেবার ইচ্ছা আমার মোটেই ছিল না, তবু মনে হয় দৃশ্য দেখলে হিংসায় নিশ্চয়ই তাঁর বুক ফেটে যেত বিনা রিহার্সেলেই সবকিছু কী নিখুঁতভাবে শেষ হয়! সবাই ঠিক নির্দিষ্ট সময়টিতে কী করে যে হাজির হল, আশ্চর্য! দু-ঘণ্টার কমে একটা সাপেরও সাধ্য ছিল না (এই রাস্তা দিয়ে) গ্রিলির ভাষ্কর্যটি পর্যন্ত যায়
তের ডলার - এই নাও কেলি,’ চেকখানা ছিড়তে ছিড়তে বললেন অ্যানথনি
তোমার পাওনা ,০০০ আর তুমি যে অতিরিক্ত ৩০০ খরচ করেছ দুয়ে মিলে তেরশত তুমি নিশ্চয়ই টাকাকে ঘৃণা কর না, কী বল?’
আমি?’ কেলি বলল।যে লোকটাদারিদ্র্যকথাটা আবিষ্কার করেছিল, তাকে ধরতে পারলে দাঁত দিয়ে ছিড়ে টুকরো-টুকরো করে কিছু রাখতাম না তার
কেলি দরজা পর্যন্ত গেলে অ্যানথনি তাকে আবারও ডাকলেন। আচ্ছা, ভিড়ের মধ্যে তুমি কি তীরধনুকধারী আর উলঙ্গ (নিচে টিকা দ্রষ্টব্য) একটি মোটামতো ছেলেকে দেখেছিলে?’ প্রশ্ন করলেন তিনি।
কই না তো!’ কেলি বিস্মিতভাবে বলল।আমি তো দেখি নি। আপনি যা বলছেন, সে যদি ঐরকমই হয়, তাহলে আমি যাবার আগে পুলিশ নিশ্চয়ই তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে
আমি আগে ভেবেছিলাম, কাজের সময় শয়তানের বাচ্চাটাকে পাওয়া যাবে না,’ হেসে উঠলেন অ্যানথনি আচ্ছা, এবার তুমি যেতে পার, কেলি। বিদায়।
টিকা সমূহঃ
১। ১ম এস্টরঃ একজন অ্যামেরিকান ব্যবসায়ী ধনকুবের যিনি জাতীতে জার্মান। সমুদ্র পথেই তিনি অ্যামেরিকা এসেছিলেন বিশাল ধন সম্পদের মালিক হয়েছিলেন।
২। বাহামা দ্বীপপুঞ্জঃ কিউবার উত্তরে অ্যামেরিকার ফ্লোরিডার কাছে প্রায় ৭০০ দ্বীপ নিয়ে বাহামা দ্বীপপুঞ্জ। নজরকাড়া বীচ স্বাস্থকর পরিবেশের জন্যে অ্যামেরিকার মানুষের ঘুরতে যাওয়ার প্রথ পসন্দ হল বাহামা দ্বীপপুঞ্জ।
৩। ম্যানহাটানঃ অ্যামেরিকার নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের একটি বিভাগ। অনেকেই এটাকে শহর বলে থাকেন। এটি অ্যামেরিকার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার একটি। উচু উচু বিল্ডিঙ এর জন্যে এটি পৃথিবী বিখ্যাত।
৪। লেখক আসলে এখানে গ্রীকদের মূর্খতাপ্রসূত ধর্ম বিশ্বাসকে ব্যাঙ্গ করেছেন। ধনুক হাতে উলঙ্গ বালকটি হল কিউপিডভেনাসের সন্তান ভালোবাসার দেবতা।
মারুফ মাহমুদ, ঢাকা কলেজ 

No comments:

Post a Comment

Popular Posts