মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Saturday, September 5, 2020

ছোট গল্প - দ্যা লাস্ট স্পিন - ইভান হান্টার - বাংলা অনুবাদ - Short Story - The Last Spin - Evan Hunter - Bengali Translation

 

ছোট গল্প - দ্যা লাস্ট স্পিন - ইভান হান্টার - বাংলা অনুবাদ - Short Story - The Last Spin - Evan Hunter - Bengali Translation

ছোট গল্প - দ্যা লাস্ট স্পিন - ইভান হান্টার - বাংলা অনুবাদ - Short Story - The Last Spin - Evan Hunter - Bengali Translation

 

যে ছেলেটা তার উল্টোদিকে বসে আছে সে তার শত্রু উল্টোদিকে বসে থাকা ছেলেটার নাম টিগো সবুজ রঙের একটা সিল্ক জ্যাকেট পরেছে সে, কমলা রঙের ডোরাকাটা হাতা জ্যাকেটটা ড্যানিকে বলছে টিগো তার শত্রু তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চিক্কার করছে জ্যাকেট, শক্র, শত্রু!

এটা একটা দারুণ জিনিস, টেবিলের ওপরের আগ্নেয়াস্ত্রটা দেখিয়ে বলল টিগো এটা কিনতে প্রায় পঁয়তাল্লিশ ডলার খরচা হয়ে যাবে তোমার একটা স্টোর থেকে এটা কিনতে চেষ্টা করে দেখো অনেক টাকা। 

টেবিলের ওপর রাখা আগ্নেয়াস্ত্রটা স্মিথ অ্যাণ্ড ওয়েসন ৩৮ পুলিস স্পেশাল টেবিলের ঠিক মাঝখানে শোভা পাচ্ছে ওটা নল কেটে দুইঞ্চি করায় ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে অস্ত্রটার বাটটা চেককাটা কাঠবাদামের কাঠ দিয়ে বানানো অস্ত্রটার রং হালকা নীল তিনটা ৩৮ স্পেশাল গুলি রাখা আছে ওটার পাশে অস্ত্রটার দিকে নিস্পৃহ চোখে তাকাল ড্যানি সে নার্ভাস এবং শঙ্কিত তবু মুখে তার প্রভাব পড়তে দেয়নি একটুও নিজের অনুভূতি টিগোর কাছে প্রকাশ করতে চাইছে না সে টিগো তার শত্রু তাই টিগোর সামনে মুখোশ পরে বসে আছে একটা ভুরু খাড়া করে সে বলল, এধরনের জিনিস আগেও দেখেছি এটার মধ্যে স্পেশাল কিছু নেই 

ওটা দিয়ে আমাদের যা করতে হবে তা ছাড়া, টিগো বলল বড় বড় বাদামী চোখ দিয়ে তাকে মাপছিল টিগো চোখ দুটো দেখলে মনে হয় যেন পানি টলটল করছে দেখতে কুৎসিত নয় টিগো মাথায় ঝাকড়া চুল, নাকটা হয়তো একটু বেশি লম্বা তবে তার মুখ আর চিবুক যুৎসই মুখ আর চিবুকের গড়ন দেখে সহজেই তাকে বিড়াল বলে ডাকা যায় 

কেন শুরু করছি না আমরা? জিজ্ঞেস করল ড্যানি ঠোট ভেজাল সে, তাকিয়ে আছে টিগোর দিকে 

তুমি জানো, বলল টিগো, তোমার সঙ্গে আমার শত্রুতা নেই  

আমি জানি  

সংঘ এটাই বলেছে সংঘ এটাই বলেছে কীভাবে আমরা এটার মীমাংসা করব কিন্তু আমি তোমাকে জানাতে চাই তুমি কোথেকে এসেছ তার কিছুই জানি না আমি-শুধু জানি তুমি নীল সোনালী রঙের একটা জ্যাকেট পরেছ  

আর তুমি পরেছ সবুজ-কমলা রঙের, ড্যানি বলল, এবং এটা যথেষ্ট আমার জন্য  

নিশ্চয়ই, কিন্তু আমি যা বলতে চাচ্ছিলাম...  

সারারাত বসে বসে আমরা কথা বলতে যাচ্ছি, নাকি ব্যাপারটা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছি? জানতে চাইল ড্যানি যা আমি বলতে চেষ্টা করছি তা হলো, কথা চালিয়ে গেল টিগো, ঘটনাক্রমে আমাকে এ কাজের জন্য বাছাই করা হয়েছে তা জানো? দুই ক্লাবের ক্যাচাল মিটিয়ে ফেলতে চাইলে আমার মনে হয়, তোমাকে স্বীকার করতে হবে গতকাল রাতে আমাদের এলাকায় আসা উচিত হয়নি তোমার ছেলেদের  

কিছুই স্বীকার করার নেই আমার, নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলল ড্যানি 

ভাল, সে যাহোক, ক্যাণ্ডি স্টোরে গুলি করেছে ওরা কাজটা ঠিক হয়নি সাময়িক যুদ্ধ বিরতি চলার কথা  ঠিক আছে, ঠিক আছে, ড্যানি বলল

তো আমরা এভাবে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে সম্মত হয়েছি মানে বলতে চাচ্ছি, আমাদের একজন আর... তোমাদের একজন ঠিক এভাবেই রাস্তায় হাঙ্গামা ছাড়া এবং কোন আইনি সমস্যা ছাড়া  

চলো এটা মেনে চলি আমরা, বলল ড্যানি

আমি বলতে চাচ্ছি, এ ঘটনার আগে আমি এমনকী রাস্তায়ও কখনও দেখিনি তোমাকে সুতরাং এটা আমার ব্যক্তিগত কোন বিষয় না যেভাবেই এটা করে থাকুক না কেন... 

আমিও তোমাকে কখনোই দেখিনি,বলল ড্যানি। 

দীর্ঘক্ষণ তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল টিগো তুমি এখানে নতুন এসেছ তাই ঠিক কোথেকে এসেছ তুমি? 

ব্রনক্স থেকে এসেছে আমার পরিবারের সদস্যরা

অনেক বড় পরিবার তোমার?

একবোন দুই ভাই, ব্যস এই 

আমার শুধু একটা বোন আছে কাঁধ ঝাঁকাল টিগো

ভাল দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে সুতরাং, ফের দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে চলো কাজটা সেরে ফেলি 

অপেক্ষা করছি আমি, ড্যানি বলল

আগ্নেয়াস্ত্রটা তুলে নিল টিগো, তারপর একটা গুলি তুলে নিল টেবিলের ওপর থেকে ক্যাচ টিপে সিলিণ্ডার ভাঁজ করে একটা গর্তে গুলিটা ঢোকাল তারপর অস্ত্রটা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে সিলিণ্ডার ঘোরাল

ঘুরে চলেছে সে, বলল, কোথায় সে থামবে কেউ জানে না টা চেম্বার আছে সিলিণ্ডারে, গুলি আছে একটা সিলিণ্ডার ঘোরা থামলে গুলিটা ফায়ারিং পজিশনে চলে আসতে পারে সিলিণ্ডারটা পাঁচবার ঘোরালে প্রতিবার এ সম্ভাবনা থাকবে গুলিটা কোথায় আছে পরীক্ষা করে দেখতে চাও?  

চাই  

প্রথমে আমি পরীক্ষা করব, টিগো বলল তার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল ড্যানি

কেন?

তুমি প্রথমে করতে চাও?

আমি জানি না 

আমি তোমাকে একটা সুযোগ দিচ্ছি দাঁত বের করে হাসল টিগো প্রথম বারেই আমি আমার মাথা উড়িয়ে দিতে পারি

কেন তুমি আমাকে সুযোগ দিচ্ছ? জানতে চাইল ড্যানি 

কাঁধ ঝাঁকাল, টিগো পার্থক্যটা কোথায় তাতে? সিলিণ্ডারটা দ্রুত ঘুরিয়ে দিল সে।। 

রাশানরা এ জিনিস বানিয়েছে? জানতে চাইল ড্যানি 

হ্যা

আমি সবসময় বলি ওরা হচ্ছে ক্রেইজি বাস্টার্ডস 

হ্যা, আমি সবসময়... কথা বলতে বলতে থেমে গেল টিগো থেমে গেছে সিলিণ্ডারটা লম্বা করে নিশ্বাস নিল সে, ৩৮-এর নলটা মাথায় ঠেকাল, তারপর ট্রিগারে চাপ দিল 

খালি চেম্বারে ক্লিক শব্দ তুলল ফায়ারিং পিন 

ব্যাপারটা সোজা, তাই না? জিজ্ঞেস করল সে টেবিলের ওপর দিয়ে ঠেলে দিল অস্ত্রটা তোমার পালা, ড্যানি

অস্ত্রটার দিকে হাত বাড়াল ড্যানি বেইসমেন্ট রূমটা ঠাণ্ডা; কিন্তু ঘামতে শুরু করেছে সে নিজের দিকে অস্ত্রটা টেনে নিল তারপর ওটা টেবিলে রেখেই ট্রাউজারে দুহাতের ভেজা তালু মুছল আগ্নেয়াস্ত্রটা হাতে তুলে নিয়ে স্থির দৃষ্টিতে ওটার দিকে তাকিয়ে রইল 

চমৎকার একটা জিনিস, টিগো বলল ভাল জিনিস পছন্দ করি আমি 

হ্যা, আমিও, ড্যানি বলল কোন কিছু হাতে নিয়ে স্পর্শ করেই তুমি বলে দিতে পারবে জিনিসটা ভাল কিনা 

বিস্মিত দেখাল টিগোকে গতকালই একজনকে একথা বলেছি আমি আমাকে মাতাল ভেবেছে সে  

অনেক মানুষই ভাল জিনিস চেনে না, কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল ড্যানি 

ভাবছিলাম, টিগো বলল, যখন বড়ো হব সেনাবাহিনীতে যোগ দেব আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কাজ করতে ভাল লাগবে আমার 

আমিও তা ভেবেছি আমার ওন্ড লেডি অনুমতি দিলে এখনই জয়েন করতাম এখন আমি জয়েন করতে চাইলে তার সাইন লাগবে  

হ্যা, এরা সব একই রকম, বলল টিগো, হাসছে তোমার ওন্ড লেডি কি এখানে জন্মেছে, নাকি ওন্ড কান্ট্রিতে?  

ওন্ড কান্ট্রিতে, জানাল ড্যানি 

তুমি জানো, তাদের ধ্যান-ধারণাও পুরনো

আমি তা হলে ঘোরাই, ড্যানি বলল 

হ্যা, মত দিল টিগো।। 

বাঁ হাত দিয়ে সিলিণ্ডারে থাবড়া লাগাল ড্যানি সিলিণ্ডার ঘুরতে ঘুরতে একসময় স্থির হয়ে গেল ধীরে ধীরে রিভলভারটা মাথায় তাক করল ড্যানি চোখ বন্ধ করতে চাইল সে, কিন্তু সাহসে কুলাল না তার শত্রু টিগো লক্ষ করছে তাকে সে-ও স্থির চোখে টিগোর দিকে তাকাল, তারপর ট্রিগারে চাপ দিল।।  

একটা বিট মিস করল তার হার্ট, তারপর রক্তের গর্জন ছাপিয়ে খালি ক্লিক শব্দটা শুনতে পেল তড়িঘড়ি করে অস্ত্রটা টেবিলের ওপর রেখে দিল সে 

একেবারে ঘামিয়ে দিয়েছে তোমাকে, তাই না? টিগো বলল কিছু না বলে মাথা ঝাকাল ড্যানি টিগোকে লক্ষ করছে সে অস্ত্রটার দিকে তাকিয়ে আছে টিগো।। 

এবার আমি, না? টিগো বলল গভীর শ্বাস টানল সে, তারপর ৩৮টা তুলে নিয়ে সিলিণ্ডার ঘুরিয়ে দিল থামার অপেক্ষা করছে তারপর মাথায় অস্ত্রটা তাক করল 

ব্যাং! টিগো বলল, তারপর ট্রিগার চাপল আবারও খালি চেম্বারে ক্লিক শব্দ তুলল ফায়ারিং পিন দম ছেড়ে টেবিলে অস্ত্রটা নামিয়ে রাখল টিগো 

ভেবেছিলাম এবার আমি শেষ, বলল সে

তোমার হার্টবিট শুনতে পাচ্ছিলাম, ড্যানি বলল 

ওজন কমানোর দারুণ উপায় এটা, জানো তুমি? নার্ভাসভাবে হাসল টিগো তারপর তার হাসি প্রকৃত হাসি হয়ে উঠল যখন সে দেখল ড্যানিও তার সঙ্গে হাসছে সত্যি না এটা? এভাবে তুমি দশ পাউন্ড ওজন কমাতে পারো  

আমার ওল্ড লেডির দেহ ঘরের মত, হাসতে হাসতে বলল ড্যানি এরকম ডায়েট তার ট্রাই করা উচিত নিজের রসিকতায় নিজেই হাসছে সে টিগোও তার হাসিতে যোগ দিলে খুশি হয়ে উঠল 

এটাই সমস্যা, বলল টিগো রাস্তায় সুন্দর এক যুবতীকে দেখে ভাবলে-আহ, কী দারুণ! তারপর তাদের বয়স বাড়তে থাকল আর তারা মোটা হওয়া শুরু করল মাথা নাড়ল সে 

প্রেমিকা আছে তোমার? জানতে চাইল ড্যানি

হ্যা, আছে একটা

নাম কী তার?

, তুমি চেনো না ওকে

চিনতেও তো পারি, ভ্যানি বলল 

ওর নাম জুয়ানা টিগো লক্ষ করছে তাকে ও প্রায় পাঁচ ফুট দুই, বাদামী চোখ 

আমার মনে হয় আমি ওকে চিনি, বলল ড্যানি মাথা ঝাকাল সে হ্যা, আমার মনে হচ্ছে আমি ওকে চিনি চমকার ও, তাই না? জানতে চাইল টিগো সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ল, যেন ড্যানির উত্তর তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ 

হ্যা, ও চমৎকার, বলল ড্যানি 

হ্যা হেই, হয়তো কখনও আমরা... নিজেকে থামাল টিগো অস্ত্রটার দিকে তাকাল, তার আকস্মিক উদ্দীপনা পুরোপুরি উবে গেছে বলে মনে হলো এবার তোমার পালা, বলল সে 

এবার কিছুই হবে না, ড্যানি বলল সিলিণ্ডারটা ঘুরিয়ে দিল সে, শ্বাস টেনে গুলি করল 

খালি ক্লিক শব্দটা বিকট শোনাল নিঃশব্দ কামরায়

ম্যান! ড্যানি বলল

আমরা খুব ভাগ্যবান, জানো? টিগো বলল

নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত 

খালি চেম্বার কমিয়ে দিতে পারি আমরা ছেলেরা এটা পছন্দ করবে না আমরা যদি... ফের নিজেকে থামাল সে, তারপর টেবিলের ওপরের একটা গুলির দিকে হাত বাড়াল ফের সিলিণ্ডারটা বের করে দুভাগ করল, দ্বিতীয় গুলিটা ঢোকাল সিলিণ্ডারে এখন এখানে দুটো গুলি পাচ্ছি আমরা,' বলল সে দুটো গুলি, ছটা চেম্বার তার মানে চারের জন্য দুই ভাগ করো এটাকে, তা হলে তুমি পাবে দুইয়ে এক একটু বিরতি দিল সে গেইম খেলতে তুমি? 

... এজন্যেই তো আমরা এখানে, তাই না?

নিশ্চয়ই

ঠিক আছে তা হলে

গেছ, মাথা নাড়তে নাড়তে বলল টিগো সাহস আছে তোমার, ড্যানি

তুমি সেই একজন যার সাহসের প্রয়োজন, শান্ত কণ্ঠে বলল ড্যানি এবার তোমার ঘোরানোর পালা  

আগ্নেয়াস্ত্রটা তুলে নিল টিগো অলস ভঙ্গিতে সিলিণ্ডারটা ঘোরাতে শুরু করল 

পরের ব্লকটায় থাকো তুমি, তাই না? জিজ্ঞেস করল ড্যানি 

হা সিলিণ্ডারে এখনও থাবড়া চালাচ্ছে টিগো মৃদু একটা শব্দ করে ঘুরছে ওটা 

কী, অবাক কাণ্ড, আমার মনে হয় কখনোই আমরা রাস্তায় পরস্পরকে পাশ কাটিয়ে যাইনি এমনও হতে পারে এখানে আমি নতুন বলে 

হ্যা, তুমি তো আবার একটা ক্লাবের সঙ্গে জড়িত  

তোমার ক্লাবের লোকজনকে পছন্দ করো তুমি? জানতে চাইল ড্যানি সিলিণ্ডার ঘোরর শব্দ শুনতে শুনতে অবাক হয়ে ভাবছে এমন একটা বেকুবি প্রশ্ন কেন করছে সে  

ঠিক আছে ওরা কাঁধ ঝাকাল টিগো এদের কেউই : আসলে পাঠায়নি আমাকে কিন্তু ক্লাবটা আমার ব্লকে সুতরাং কী করার আছে, তোমার, হ্যা? সিলিণ্ডার থেকে হাত সরিয়ে নিল সে ঘোরা বন্ধ হয়ে গেল সিলিন্ডারের অস্ত্রটা মাথায় তাক করল।  

থামো। চিক্কার করে উঠল ড্যানি 

হতভম্ব দেখাল টিগোকে কী ব্যাপার? 

কিছু না আমি শুধু বলতে চেয়েছিলাম... মানে... ভুরু কোঁচকাল ড্যানি আমার ক্লাবের খুব বেশি লোকের সঙ্গে খাতির নেই আমার  

মাথা ঝাকাল টিগো এক মুহূর্তের জন্য পরস্পরের চোখে চোখে তাকিয়ে রইল তারা তারপর কাঁধ ঝাঁকিয়ে গুলি করল টিগো 

খালি ক্লিক শব্দে ভরে উঠল বেইসমেন্ট রুম ছিঃ! ছিঃ! টিগো বলল 

ম্যান, ফের তুমি এটা বলতে পারো টেবিলের ওপর দিয়ে রিভলভারটা ঠেলে দিল টিগো 

মুহুর্তের জন্য ইতস্তত করল ড্যানি অস্ত্রটা তুলতে চাইছে না সে নিশ্চিত অনুভব করছে দুই গুলির যে কোন একটির পারকাশন ক্যাপে এবার আঘাত করবে ফায়ারিং পিন সে নিশ্চিত এবার ঠিক ঠিক নিজেকে গুলি করবে 

মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আমি টার্কি পাখি, টিগোকে বলল সে, ভাবনা কণ্ঠস্বরে রূপান্তরিত হওয়ায় বিস্মিত 

মাঝে মাঝে আমিও এভাবে অনুভব করি, টিগো বলল।। 

একথা আমি কখনও কাউকে বলিনি, ড্যানি বলল ক্লাবের লোকদের কখনও বললে তারা হাসাহাসি করবে আমাকে নিয়ে  

কিছু কিছু ব্যাপার আছে যা নিজের ভেতর রেখে দিতে হয় পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যাকে তুমি বিশ্বাস করতে পারো।  

বিশ্বাস করতে পারো এমন কেউ থাকা উচিত? ড্যানি বলল। যত্তো সব, তোমার লোকজনকে তুমি কিছুই বলতে পারবে না। তারা বুঝবে না।

হাসল টিগো। এটা একটা পুরনো গল্প। কিন্তু ঘটনা এরকমই। কী করতে চাও তুমি?  

হ্যা। মাঝে মাঝে এখনও আমার মনে হয় আমি টার্কি পাখি।  

নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, টিগো বলল। শুধু এটাই না যদিও। মাঝে মাঝে এমনও হয়... ওয়েল, রাস্তায় কাউকে তুমি প্যাদালে পরে অবাক লাগে না তোমার? যেমন... বুঝতে পারছ কী বলতে চাচ্ছি? যেমন... লোকটা তোমার কে? কী কারণে তুমি তাকে মারছ? কারণ সে কারও মেয়ের সঙ্গে লটর পটর করে কেটে পড়েছে? মাথা ঝাকাল টিগো। মাঝে মাঝে, জটিল হয়ে পড়ে ব্যাপারটা।  

হ্যা, কিন্তু... ফের ভুরু কোঁচকাল ড্যানি। ক্লাবের সঙ্গে লেগে থাকতেই হবে তোমাকে, তাই না?  

নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই... কোন সন্দেহ নেই। ফের পরস্পরের চোখে চোখ আটকে রইল তাদের।

ওয়েল, এই যে শুরু করছি, ড্যানি বলল। অস্ত্রটা তুলে নিল সে। এটা ঠিক... মাথা ঝাকাল সে, তারপর সিলিণ্ডার ঘুরিয়ে দিল। ঘুরতে ঘুরতে এক সময় নেমে গেল সিলিণ্ডার। অস্ত্রটা পরীক্ষা করছে সে। ট্রিগারে চাপ দিলে নল দিয়ে গুলি দুটোর একটা বেরিয়ে আসবে কিনা ভাবছে।

তারপর গুলি করল সে। ক্লিক।

ভাবিনি তুমি এভাবে চালিয়ে যাবে, বলল টিগো।

আমিও ভাবিনি।  

তোমার সাহস আছে, ড্যানি, বলল টিগো। অস্ত্রটার দিকে তাকাল। ওটা তুলে নিয়ে আবার খুলল সিলিণ্ডার।

কী করছ তুমি? জিজ্ঞেস করল ড্যানি।।

আরেকটা গুলি, টিগো বলল। ছয় চেম্বার তিন গুলি। তিন দুগুণে ছয়। খেলবে তুমি?

তুমি?

ছেলেরা বলেছে... নেমে গেল টিগো। হ্যা, খেলব আমি, যোগ করল সে, তার কণ্ঠস্বর কৌতূহল জাগায় এমন নিচু।

এবার তোমার পালা, তুমি জানো।

আমি জানি, টিগোকে আগ্নেয়াস্ত্রটা নাড়াচাড়া করতে দেখল ড্যানি।

লেকে কখনও নৌকা বেয়েছ তুমি?  

টেবিলের উপর দিয়ে ড্যানির দিকে তাকাল টিগো, চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সে। একবার, বলল সে। জুয়ানার সঙ্গে গিয়েছিলাম।  

মজা,.. মজা আছে এতে, কোনও?

হ্যা। হ্যা, দারুণ মজা। বলতে চাচ্ছ তুমি কখনও এভাবে নৌকা চালাওনি?  

না, ড্যানি বলল।  

হেই, তোমার চেষ্টা করা উচিত, ম্যান, উত্তেজিত ভাবে বলল টিগো। তবে ভাল লাগবে তোমার। হেই, চেষ্টা করবে তুমি। হ্যা, ভাবছিলাম হয়তো এই রোববারে আমি... বাক্যটা শেষ করল না সে।

আমার ঘোরাবার পালা, ক্লান্ত ভাবে বলল টিগো। সিলিণ্ডার ঘুরিয়ে দিল সে। ভাল একজন মানুষ মারা যাচ্ছে, বলল সে। রিভলভারটা মাথায় ঠেকিয়ে ট্রিগার টেনে দিল।

ক্লিক।

নার্ভাসভাবে হাসল ড্যানি। কোন বিরাম নেই, বলল সে।

কিন্তু ঈশ্বরের কসম, সাহস আছে তোমার। জানি না আমি আর এভাবে চালাতে পারব কি না।  

নিশ্চয়ই তুমি পারবে, টিগো আশ্বস্ত করল তাকে। শোনো, ভয় পাবার কী আছে এতে? আগ্নেয়াস্ত্রটা টেবিলের ওপর দিয়ে ঠেলে দিল সে।

সারারাত ধরে কি আমরা এ-ই করে যাব? জিজ্ঞেস করল ড্যানি।

ওরা বলেছে... তুমি জানো...  

ওয়েল, এটা এত খারাপ না। বলতে চাচ্ছি আমাদের এই অপারেশন ছিল না। কথা বলার একটা সুযোগও পাব না আমরা, হা? মৃদু হাসল সে।

হ্যা, টিগো বলল, চওড়া হাসিতে ভরে আছে তার মুখ। এটা এত খারাপ না, না?

না, এটা... ওয়েল, তুমি জানো, ক্লাবের লোকগুলোর সঙ্গে কে তর্ক করতে পারে?

অস্ত্রটা তুলে নিল সে। আমরা পারি... শুরু করল টিগো।

কী?

আমরা বলতে পারি... ধরো আমরা গুলি করা চালিয়ে যেতে লাগলাম কিন্তু কিছুই ঘটল না, সুতরাং... কাঁধ ঝাকাল টিগো।

যত্তোসব! সারারাত ধরে আমরা এভাবে চালিয়ে যেতে পারি না, পারি আমরা?

আমি জানি না।

চলো এবার শেষ বারের মত ঘোরানো হোক। শোনো, ওরা এটা পছন্দ করবে না। হঠাৎ হাজির হতে পারে ওরা, জানো?

আমার মনে হয় না ওরা এটা পছন্দ করবে। ক্লাবের জন্য আমাদের দুজনের এভাবে মীমাংসা করার কথা।  

খ্যাতা পোড়া ক্লাবের! বলল টিগো।

আমরা কী পরস্পরের... পরের শব্দগুলো মুখ দিয়ে বের হওয়া কঠিন মনে হলো। যখন বের হলো, তার চোখ ড্যানির মুখ থেকে সরল না। বন্ধু হয়ে যেতে পারি না?

নিশ্চয়ই পারি আমরা, দৃঢ় কণ্ঠে বলল ড্যানি।

নিশ্চয়ই পারি আমরা! কেন নয়?

শেষ বারের মত ঘোরাও, টিগো বলল। এসো, দ্য লাস্ট স্পিন।  

বাদ দাও, বলল ড্যানি। হেই, তুমি জানো, ওরা এই বুদ্ধি বের করায় আমি খুশি। তুমি জানো এটা? সত্যিই আমি খুশি! সিলিণ্ডার ঘুরিয়ে দিল সে। শোনো, এ রোববারে কি তুমি লেকে যেতে চাও? মানে তোমার এবং আমার বান্ধবীসহ? দুটো নৌকা নিতে পারি আমরা। অবশ্য তুমি চাইলে একটাও নেয়া যায়।

হ্যা, একটা নৌকা, বলল টিগো।

হেই, জুয়ানাকে পছন্দ করবে তোমার বান্ধবী। করবেই। প্রথম শ্রেণীর জিনিস ও।  

থেমে গেল সিলিণ্ডার। অস্ত্রটা দ্রুত মাথায় ঠেকাল ড্যানি। রোববারকে উৎসর্গ করে এবার, বলল সে। টিগোর দিকে তাকিয়ে হাসল, হাসিটা ফিরিয়ে দিল টিগো। এরপর গুলি করল সে।

ছোট বেইসমেন্ট রুম কাপিয়ে দিল বিস্ফোরণটা, উড়িয়ে নিয়ে গেল ড্যানির মাথার অর্ধেকটা, মুখ ছিন্নভিন্ন। মৃদু একটা আর্তনাদ বেরিয়ে এল টিগোর গলা চিরে, তার দুচোখে আশ্চর্য বেদনামাখা এক দৃষ্টি। তারপর সে টেবিলে মাথা রেখে কাঁদতে শুরু করল।

মূল: ইভান হান্টার 

রূপান্তরঃ হাসান মোস্তাফিজুর রহমান

 

No comments:

Post a Comment

Popular Posts