মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Monday, August 9, 2021

বাঙ্গালীর হাসির গল্প – অনুমতিপত্র - জসীম উদ্দীন – Onumotipotro – Jasimuddin - Bangalir hasir golpo

Bangla Funny Story, children story, Funny Short Story, hasir golpo, mojar golpo, হাসির গল্প,মজার গল্প, বাঙ্গালীর হাসির গল্প, Bangalir hasir golpo, জসীম উদ্দীন

বাঙ্গালীর হাসির গল্প অনুমতিপত্র -  মোহাম্মাদ জসীম উদ্দীন মোল্লা Onumotipotro Jasimuddin - Bangalir hasir golpo

- - - - - - - - - - -

বনের মাঝে দুইঘর শেয়াল পাশাপাশি বাস করে -বাড়ির শেয়াল প্রতিদিন রাতে মোরগ, মুরগি, হাঁস, কবুতর চুরি করে আনে আর শেয়ালনি (মহিলা শেয়াল) সেগুলো টুকরো করে দাঁত দিয়ে চিরে তার ছেলেমেয়েদের খাওয়ায়, নিজেরাও কিছু খায়, কিছু ফেলায় খেয়ে-দেয়ে -বাড়ি -বাড়ি গিয়ে গল্প করে বেড়ায় তাদের গায়ে তেল চকচক করে শেয়ালনি গুমরে মাটিতে পা ফেলে না শানকুনি সাপের চামড়ার জামা পরে, শামুকের মালা গলায় পরে শেয়ালনি বন ভরে ঘোরে

আর এ বাড়ির শেয়াল কিছুই আনতে পারে না মাঝে মাঝে মাঠ থেকে মরা গরুর শুকনো ঠ্যাং, মাছের কাঁটা আর ছাগ বকরির হাড় কুঁড়িয়ে নিয়ে আসে তা কি দাঁতে ভাঙা যায়?

তাই খেয়ে এ বাড়ির শেয়াল আর শেয়ালনি কোনোরকমে জীবন ধারণ করে ছোট ছোট বাচ্চাগুলো সেই শুকনো হাড়গোড়ও খেতে পারে না না খেয়ে তারা শুকিয়ে পাটখড়ির মত হয়ে গেছে দিনরাত খাবার দাও, খাবার দাও বলে মায়ের শুকনো স্তন চাটতে থাকে সেই স্তনেও কি দুধ আসে? নাহ না খেয়ে শেয়ালনির স্তনের দুধও শুকিয়ে গিয়েছে

সেদিন বাচ্চাদের কান্নায় থাকতে না পেরে শেয়ালনি শেয়ালকে বলল, তুমি একেবারে অকম্মার ঢেকি একটা -বাড়ির শেয়াল রোজ রাত্রে গেরস্তবাড়ি হতে কত হাঁস মুরগি নিয়ে আসে তুমি আন শুধু মরা গরুর শুকনো হাড়-ঠ্যাং হাঁস মুরগি চোখে দেখতে পাও না?  

শেয়াল বলল, শেয়ালনি! তুমি রাগ করো না আমি তো সারারাত চেষ্টা করি গেরস্তবাড়ি গেলেই তাদের কুকুরটা আমার উপর তেড়ে আসে কি করে হাঁস মুরগি আনব?

কথাটা তো সত্যই শেয়ালনি কিছুক্ষণ ভেবে বলল, তুমি যাও- -বাড়ির শেয়ালের কাছে উপদেশ নিয়ে আস তার কাছে জেনে আস কি করে গেরস্তকে ফাঁকি দিয়ে হাঁস মুরগি চুরি করে আনা যায়!

সেদিন সন্ধ্যাবেলা -বাড়ির দরজায় গিয়ে, হুয়া, হুক্কা, হুয়া, কি কর ভায়া? বলে শেয়াল উপস্থিত হল

-বাড়ির শেয়াল লেজ উঁচু করে ডাকল, কেয়া হুয়া কেয়া হুয়া! ভাই শেয়াল?

-বাড়ির শেয়াল বলল, দেখ ভাই! তুমি রোজ গেরস্তবাড়ি হতে হাঁস মুরগি চুরি করে এনে খাও আমি তো একদিনও কিছু আনতে পারি না আমার গৃহিণী আমাকে তোমার কাছে আসতে বলল বল তো ভাই, কি করে তুমি হাঁস মুরগি চুরি কর?

হাঁস মুরগি চুরি করার কৌশল আছে শেয়াল প্রথমে তার শেয়ালনিকে গেরস্তবাড়ির নিকটের জঙ্গলে গিয়ে ডাকতে বলে শেয়ালনির ডাকে গেরস্তবাড়ির কুকুর দৌড়ে যায়। তাকে তাড়া করে শেয়ালনি তখন গভীর জঙ্গলে গিয়ে পালায় ইতিমধ্যে শেয়াল গেরস্তবাড়ির মোরগ মুরগির খোপ হতে ইচ্ছামতো হাঁস, মুরগি, কবুতর চুরি করে নিয়ে আসে এক বাড়িতে রোজ চুরি করলে গেরস্ত হুশিয়ার হয়ে উঠে তাই আজ যদি সে গ্রামের ওই বাড়িতে হানা দেয়, কাল সে আর এক গ্রামের আর এক বাড়িতে গিয়ে মোরগ মুরগি ধরে আনে এইসব তার ব্যবসায়ী কৌশল যাকে তাকে তো বলা যায় না!

সে তাই ফাঁকি দিয়ে বলল, ভাই! আমি তো এমনিই মোরগ মুরগি ধরে আনি তুমিও যাও না ভাই!

-বাড়ির শেয়াল বলল, আরে ভাই! আমি তো কতবার গিয়েছি চুরি করতে, কিন্তু গেরস্তবাড়ির বাঘা কুকুর আমার খোজে যখন তেড়ে আসে, তখন তো পালিয়ে প্রাণ পাই না

-বাড়ির শেয়াল বিজ্ঞের মতো হেঁসে বলল, তুমি তাও জান না? সমস্ত পশুজাতির রাজা হল সিংহ! আমার কাছে সেই সিংহ রাজার অনুমতিপত্র আছে হাঁস মুরগি ধরতে গেলে কুকুর যখন তেড়ে আসে, তখন আমি সেই অনুমতিপত্র দেখাই কুকুর অমনি চুপ করে থাকে কুকুরও তো পশু! সে কি পশুরাজের হুকুম অমান্য করতে সাহস পায়?

শেয়াল জিজ্ঞাসা করল, সিংহরাজের দেখা কোথায় পাব?

আরে তাও জানো না? ওই পাহাড়টা দেখতে পাচ্ছো না? তারই একটু ওধারে যে ঘন শালবন আছে, সেইখানে সিংহ থাকে

এই কথা শুনে মনের আনন্দে হুয়া হুয়া, হুক্কা হুয়া ডাকতে ডাকতে শেয়াল বাড়ি ফিরল সারারাত শেয়ালনির সঙ্গে বনে সে বনে ঘুরে কয়েকটি কাঁকড়া আর কিছু মধুর চাক সংগ্রহ করল পশুরাজের সঙ্গে দেখা করতে তো খালি হাতে যাওয়া যায় না! শেয়াল নি গোপনে কিছু সজারুর কাটা জোগাড় করে রেখেছিল দুর্দিনে ছেলেমেয়েদের খেতে দিবে তাও একটা ছাগলের চামড়ায় বেঁধে দিল তারপর সারারাত জেগে দুইজনে নানারকম জল্পনা কল্পনা চলল, কিভাবে সিংহের নিকট গিয়ে দাঁড়াতে হবে, কিভাবে তাঁকে সালাম করতে হবে

সকাল হলে সবকিছু সঙ্গে নিয়ে, একটি ব্যাঙের ছাতা মাথায় দিয়ে শেয়াল পশুরাজ সিংহের বাড়ি রওয়ানা হল

ঘন বেতের জঙ্গল ছেড়ে বড় বড় জামগাছ, আমগাছ সেইসব গাছের ডালে ডালে জড়িয়ে রয়েছে শ্যামা লতা, আমগুরুজ লতা, আর জারমনি লতার ঝাড় সেসব ছাড়িয়ে শালের বন শালফুলের গন্ধে বাতাস ভরে উঠেছে গাছের ডালে ডালে মৌমাছির চাক হতে টস্ টস্ করে মধু ঝরে পড়ছে সেসব ছাড়িয়ে ঘন শ্বেতখড়ির বন সাদা সাদা ফুল ফুটে সমস্ত বন আলো করে রেখেছে যেতে যেতে শেয়াল দেখতে পেল, সামনেই সিংহরাজার বাড়ি পাহাড়ের সামনে একটি গহ্বর (গর্ত বা খোঁড়ল) সামনে নানারকম জানোয়ারের হাড়গোড় কত যে পড়ে রয়েছে কে তা নিরূপণ করবে?

সেইখানে গিয়ে শেয়াল ডেকে উঠল, হুয়া, হুয়া, হুয়া!

গহ্বরের ভিতর হতে সিংহ গর্জন করে উঠল, গো গোকে গো?

শেয়াল দশ হাত সালাম করে জোড়হাতে উত্তর দিল, মহারাজ! আমি আপনার গরিব প্রজা শেয়াল আপনার নিকট কিঞ্চিৎ ভেট নিয়ে এসেছি

এই বলে শেযাল ছাগলের চামড়ায় বাধা সেইসব দ্রব্যসামগ্রী আর মৌমাছির চাকখানা সিংহের সামনে তুলে ধরল মৌমাছির চাকখানা মুখে পুরিয়া সিংহ বড়ই খুশি হল

সে হেঁসে বলল, তা কি মনে করে শেয়াল?

শেয়াল জোড় হাত করে বলল, মহারাজ! আমি প্রতিদিন রাতে গেরস্তবাড়িতে হাঁস মুরগি ধরতে যাই; কিন্তু গেরস্তবাড়ির কুকুরটা আমাকে দেখলেই তেড়ে আসে আপনি আমাকে একখানা অনুমতিপত্র লিখে দিন তার মধ্যে এমন সব কথা লিখে দিবেন, যা পড়ে কুকুর যেন আমাকে দেখে তেড়ে আসে

শেয়ালের কথা শুনে সিংহ খুব কৌতুক বোধ করল এমনভাবে তো কেহ তার কাছে অনুমতিপত্র চাইতে আসে না! কিন্তু কি করে সিংহ অনুমতিপত্র লিখবে সে তো লেখাপড়াই জানে না অনেক ভেবেচিন্তে সে তার লেজ

হতে কয়েক গুচ্ছ লোম ছিঁড়ে দিল আর বলল, এই তোমার অনুমতিপত্র কুকুর যখন তোমার উপর তেড়ে আসবে, তখন এটা দেখাইলেই সে শান্ত হয়ে যাবে।

সিংহরাজের নিকট থেকে অনুমতিপত্র পেয়ে শেয়াল খুশি হয়ে বাড়ি ফিরল।।

রাত্র হলে সে সেই অনুমতিপত্র ঠোটে আটকে, গেরস্তবাড়ির মুরগির ঘরে হানা দিল তৎক্ষণাৎ গেরস্তবাড়ির বাঘা কুকুরটি ঘেউ ঘেউ শব্দ করে তেড়ে আসল

শেয়াল তখন নিরুপায় হয়ে বনের মধ্যে পালিয়ে গেল সমস্ত কাহিনী শুনে শেয়ালের বউ বলল, কুকুর যখন তেড়ে আসল, তখন তুমি সিংহের দেওয়া অনুমতিপত্রখানা দেখালে না কেন?

শেয়াল বলল, তুমি তো বললে অনুমতিপত্র দেখাইলে না কেন? কিন্তু মারমুখো হয়ে কুকুর যখন তেড়ে আসছিল, তখন অনুমতিপত্র দেখায় কে? কার বুকে এতখানি সাহস আছে যে অনুমতিপত্র দেখানোর জন্যে কুকুরের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে?

No comments:

Post a Comment

Popular Posts