Jadur Putul - Tin Goyenda - Rakib Hasan (part 2 of 2) |
১ম পর্বের লিঙ্কঃ
Jadur Putul - Tin Goyenda - Rakib Hasan (part 2 of 2)
জাদুর পুতুল ও তিন গোয়েন্দা - রকিব হাসান
(দুই পর্বের ২য় পর্ব) ১ম পর্বের পর থেকেঃ
ঘোৎ-ঘোৎ করে উঠল দুপা, বিড়বিড়
করে কি যেন বলল। বোধহয় গোয়েন্দাদের মজা দেখাবে বা এ রকম কিছু। তারপর জুতোর গোড়ালিতে
ভর করে চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরে দাড়াল। চলে গেল যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে, ‘এতে কি
প্রমাণ হলো?’ রবিনের
প্রশ্ন।
‘জ্যোতিষীর কাছে
গেলে জবাব মিলতে পারে,’ ঠাট্টা
করল কিশোর।
‘ব্যাপারটা অদ্ভুত,’ চিন্তিত
ভঙ্গিতে বললেন রাশেদ পাশা। ‘আমার ধারণা
দুপা বা সিম্বুকে নিয়ে আরও ঘটনা ঘটবে।’
‘সিম্বু সম্পর্কে আর কি জানো, চাচা?’ কিশোর
জিজ্ঞেস করল!
‘আটলান্টা রাজ্যের
অনেকেই জানে সিম্বুর কথা। গৃহযুদ্ধের আগে এই পুতুলটাকে নিয়ে একটা গুজব চালু হয়েছিল,’ রাশেদ
পাশা বললেন । ‘ধনী এক বুড়ো বাস
করত এখনকার রূট থ্রী-এইটি রোডের ধারে, বিশাল এক বাড়িতে। আপনার বলে কেউ ছিল না বুড়োর। কালো
চামড়ার এক চাকরকে নিয়ে থাকত বিশাল বাড়িতে। চাকরটাকে
পছন্দ করত বুড়ো। চাকরটারও ছিল বুড়োর জন্যে জান-প্রাণ। ভুডুর মত খারাপ ম্যাজিকে
বিশ্বাস করত চাকরটা। তার মালিককেও সে ভুডু চর্চায় উৎসাহিত করে তোলে। যাই হোক, গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ইউনিয়ন আর্মি হামলা চালায়
দক্ষিণ এবং পুবে। নিজের ধন-সম্পদের
কি দশা হবে তা ডেবে খুবই চিন্তায় পড়ে যায় বুড়ো।’
‘খুবই স্বাভাবিক,’ মন্তব্য
করল কিশোর।
রাশেদ চাচা বলে চললেন, ‘সোনার টাকা, মোহর-যা
কিছু ছিল তার, সব গলিয়ে সোনার বার বানিয়ে মাটিতে পুঁতে রাখে
বুড়ো। সে-সব পাহারা দেয়ার জন্যে ওগুলোর সঙ্গে রেখে দেয় একটা সিম্বু পুতুল! পুতুলটা
বানিয়ে দিয়েছিল তার কালো-চাকর। ইউনিয়ন আর্মিকে ঠেকাতে পাথরের দেয়ালও তুলেছিল বুড়ো।
কিন্তু ঠেকাতে পারেনি। সৈন্যরা বাড়িতে ঢুকে খুন করে বুড়ো আর তার চাকরকে। যতটুকু
জানি, সোনা-দানার সন্ধান আজতক কেউ পায়নি!’
‘দারুণ গল্প!’ রবিন বলল।
‘সেই গুপ্তধনের
খোজ করেনি কেউ?’
‘করেছে নিশ্চয়। আমি জানি না,’ জবাব দিলেন রাশেদ পাশা। ‘তবে কেউ ওগুলোর খোজ
পেলে মূল্যবান সিম্বু পুতুলটাও পেয়ে যাবে।’
‘তা পাবে,’ মুসা বলল।
‘সেই সঙ্গে অভিশাপের
শিকারও হওয়া লাগবে হয়তো।’
নীরব. হয়ে গেল চারজনেই। চুপচাপ খাওয়া শেষ করল। তারপর এয়ারপোর্টে গেল তিন গোয়েন্দা, রাশেদ
পাশাকে পৌছে দিতে। রাশেদ পাশা নিউ
ইয়র্কে যাবেন বিশেষ কাজে।
যাবার পথে কেন যেন অস্বস্তি লাগতে লাগল
কিশোরের। অদ্ভুত এক অনুভূতি। র্যার ভিউ মিররে চোখ রেখে বলল, ‘কেউ আমাদের পিছু
নিয়েছে।’
সামনের ট্রাফিক লাইটে দাড়াতেই চেনা
গেলো লোকটাকে। সাদা একটা মার্সিডিজ, কিশোরদের ট্যাক্সির প্রায়
গা ঘেঁষে দাড়াল। এক, চোখো সেই লোকটা।
‘হয়তো ভেবেছে তার
খামটা মেরে দিয়েছি আমরা!’ নিচু স্বরে বলল রবিন।
‘মনে হয়,’ চিস্তিত
ভঙ্গিতে মাথা দোলালেন রাশেদ পাশা। ‘আমাদেরকে
খুন করার ইচ্ছে থাকলেও অবাক হব না। সাবধানে থাকতে হবে। বিশেষ করে তোমাদের। আগামী ক’দিন কি প্ল্যান তোদের, কিশোর?
কি করবি ভাবছিস?’
‘কোস্টের দিকে যাব।
সৈকতে ঘুরে বেড়াব। দেখি, আরও কি কি করা যায়।’
‘যা-ই করিস, সাবধানে
থাকিস, বলা যায় না......’
আর কয়েক মিনিটের মধ্যে এয়ারপোর্টে
পৌছে গেল ওরা। পিয়েরে দুঁপার টিকিটিও দেখা গেল না আর আশেপাশে। চাচাকে প্লেনে
প্লেনে তুলে দিয়ে আবার ট্যাক্সি নিল কিশোর। হোটেলে ফিরে এল তিন গোয়েন্দা। রাস্তার
ওপারে দুঁপার গাড়িটা দেখতে পেল কিশোর।
‘লোকটা আসলে চায় কি?’ মুসার
প্রশ্ন
‘লোকটা বোধহয় ধরেই
নিয়েছে আমরা তার খাম চুরি করেছি। তাই পিছু ছাড়ছে না,’ কিশোর
বলল লোকটার ওপর আমাদেরও নজর রাখতে হবে।’
ট্যাক্সি ভাড়া চুকিয়ে হোটেলে ঢুকল
ওরা। রুমে এসে ব্রীফকেসটা বিছানার ওপর ছুঁড়ে ফেলল কিশোর। ওটার দিকে তাকাতেই চোখ
স্থির হয়ে গেল রবিনের।
‘কিশোর! ব্রিফকেসের
নিচে কি যেন একটা লেগে আছে,’ চিৎকার করে উঠল সে। ‘কি ওটা?’
একটা খাম আটকে আছে ব্রিফকেসের তলায়।
‘আরি!’কিশোরও
অবাক। ‘এটা এল
কোথেকে?’ খামটা
খুলে নিল সে। ‘বুঝতে পেরেছি। ব্রিফকেসের তলায়
কোনভাবে লেগে গিয়েছিল চিবানো চিউয়িং গাম। তাতে আটকে গেছিল খামটা। চেঁয়ারেই পড়ে
ছিল ওটা,
মিথ্যে বলেনি দুপা। বড়ই
কাকতালীয় ঘটনা এবং অদ্ভুত।’
‘খোলো তো দেখি!’ তাড়া
দিল মুসা।– ‘ভেতরে কি, আছে
দেখার জন্যে তর সইছে না আমার।’
খাম খুলল কিশোর। ভেতরে জরাজীর্ণ মলিন
এক টুকরো কাগজ। তাতে অদ্ভুত কিছু কথা লেখা ছড়ার ঢঙে ৷ কিশোর জোরে জোরে পড়ে শোনাল।
“ভাবছ ওটা আছে হোথায়
খুঁজলে পাবে নাকো সেথায়
পাহাড় বেয়ে ওঠো মাথায়
আবার নামো নিচে
অনেক গভীর শিকড় যেথায়
পাহারা দেয় সিম্বু সেথায়
সোনা চুরির ফন্দি ছাড়ো
মানে মানে কেটে পড়ো
নইলে আছে দুঃখ অনেক
বাচবে নাকো কেউ!”
অবাক হয়ে গেল ওরা।
‘রাশেদ আঙ্কেল যে
বুড়ো লোকটার গল্প বলেছে এটা নিশ্চয় তাঁর কাজ!’ অবশেষে
বলল রবিন। ‘ঐ লোক তার ক্রীতদাসের সাহায্যে
সোনাদানা লুকিয়ে রেখেছিল। পাহারার ব্যাবস্থা করেছে সিম্বুকে দিয়ে।’
‘জ্যোতিষীর
ভবিষ্যদ্বানীর সাথে খাপা খাপে মিলে যাচ্ছে,’ ফাকা
শোনাল মুসার কন্ঠ। ‘আমরা লোভে পড়ে গুপ্তধনের সন্ধানে
বেড়োলেই অভিশাপ নেমে আসবে আমাদের উপর।’
‘দূর!, তোমার
অভিশাপ! কে বিশ্বাস করে?’ মুখ ঝামটা দিল রবিন।
‘যা-ই বলো,’ অদ্ভুত
কিছু যে ঘটছে এখানে, ‘তাতে কোন সন্দেহ
নেই। কি বলো, কিশোর?’
চিন্তিত ভঙ্গিতে নিচের ঠোটে চিমটি
কাঁটতে কাটতে ফিরে তাকাল কিশোর, হুঁ!
‘আমাদের এখন কি করা
উচিত তাহলে?’ রবিনের প্রশ্ন।
হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল কিশোর! ‘ব্যাপারটার
শেষ দেখে ছাড়ব। সোনা যদি পেয়েই যাই পুলিশ বা কোন চ্যারিটির হাতে তুলে দেব।’
জানালার কাছে গিয়ে দাড়াল কিশোর। দুপা
ওদের দিকে নজর রাখছে কিনা দেখার জন্যে পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিল। বৃষ্টি শুরু
হয়েছে,’ জানাল
সে। ‘আমাদের বন্ধুটি এখনও আগের জায়গায় দাড়িয়ে, না
না, চলে যাচ্ছে। ভেবেছে হয়তো বড়-বৃষ্টির মধ্যে আমরা কোথাও
বেরোব না।’
আকাশ ফুটো করে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল।
গাছের শাখায় ঝোড়ো হাওয়ার মাতামাতি।
‘চলো, এই
সুযোগে বেরিয়ে পড়ি’ প্রস্তাব দিল মুসা, ‘রেইনকোট
আছে। কাজেই ভিজতে হবে না বৃষ্টিতে। আর ক্যাম্পিং-এর জন্যে গর্ত খোড়ার কিছু
যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছিলাম। ওগুলোও নেব সাথে’
‘প্রস্তাবটা মন্দ না,’ নিমরাজি
হলো কিশোর। ‘ঠিক আছে, চলো।
চুপচাপ হোটেলে বসে থাকতে ভাল্লাগবে না। দেখেই আসি সিম্বুকে পাওয়া যায় কিনা।’
কয়েক মিনিট পরে হোটেলের পেছনের দরজা
দিয়ে বেরিয়ে এল ওরা। এখানে ওদের বাইক রেখেছে। সাবধানে মোটর সাইকেল দুটো নিয়ে উঠে
এল মেইন রোডে। তাকাল এদিক-ওদিক। নাহ্, সাদা মার্সিডিজের চিহ্নও
নেই কোথাও। রাস্তা প্রায় জনমানবশূন্য। গন্তব্য বুড়োর বাড়ি।’
ভাগ্য ভালই বলতে হবে। একটু পরেই থেমে
গেল বৃষ্টি। মেঘ সরিয়ে দিয়ে হেসে উঠল ঝলমলে চাঁদ। নদীর ধারে চলে এসেছে ওর নদীর
পাশের সরু রাস্তায় ঢুকে পড়ল। অনেকটা পথ যাবার পর চোখে পড়ল বুড়োর বাড়ি। রাস্তা
মেরামতির কাজ চলছে। বড় বড় সব যন্ত্রপাতি। খানিক দূরে একটা পাথুরে দেয়াল। ঘিরে
রেখেছে বুড়োর শতাব্দী প্রাচীন বাড়িটাকে। মোটর সাইকেল থামাল ওরা। হেঁটে ঢুকে পড়ল
গেট দিয়ে। চাঁদটাকে আড়াল করে দিতে শুরু করেছে মেঘ। বাতাস উঠছে। একটু পরেই আবার
নামল বৃষ্টি।
‘বাহ্, দারুণ!’ বলল
মুসা। ‘এই আসে এই যায়!’
টর্চ, জ্বেলে এগোচ্ছে ওরা।
বড় বড় ওক গাছের ডালে ঝুলে থাকা এক ধরনের শ্যাওলার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে যাত্রা।
টর্চের আলোতে খুব কম-জায়গাই আলোকিত হচ্ছে।
কানের পাশে নিশাচর পাখি ডেকে উঠে
দারুণ চমকে দিল ওদেরকে। ডাকতে ডাকতে বৃষ্টির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল।
ঘ্যাঙর-ঘ্যাঙ-কোরাস ধরেছে ব্যাঙ। হাঁটু ডুবে যাওয়া গভীর জলায় নেমে পড়েছে কিশোর।
পায়ের নিচে পিচ্ছিল কি একটা কিলবিল করে উঠল। আতকে উঠল ও। এক লাফে উঠে এলো তীরে।
‘কি হলো,’ জানতে
চাইল রবিন।
‘সাপ!’ বিড়বিড়
করল কিশোর, ‘গোখরো! আরেকটু হলেই গেছিলাম।’
পুরানো বাড়িটার কাছাকাছি এসেছে ওরা, এমন
সময় মড়মড় করে একটা ডাল ভেঙে গেল। মুসা দেখল ডালটা সোজা রবিনের গায়ে পড়তে যাচ্ছে।
সাবধান করে দেয়ার সময় নেই। প্রচণ্ড এক থাক্কা মারল রবিনকে। ছিটকে পড়ে গেল রবিন।
‘আরেকটু হলে আমিও
গেছিলাম,’ খসখসে
গলায় বলল মুসা।
কিশোরের দিকে তাকাল মুসা। সিম্বু
পুতুলের কারণে মিউজিয়ামের দুর্ঘটনাগুলোর
কথা মনে পড়ে গেছে তার। ‘ফিরে যাবে নাকি?’
‘নাহ্? ওই
তো সামনেই বাড়িটা।’
ওটাকে এখন আর বাড়ি বলা যায় না। দেয়াল
গুলো শুধু খাড়া হয়ে আছে, ছাদ অদৃশ্য! এবড়ো-খেবড়ো মেঝে। আবর্জনা,
ভাঙা কাঠ আর অন্যান্য পরিত্যক্ত জিনিসপত্রে, বোঝাই
মাটির নিচের ঘরটা।
“ভাবছ ওটা আছে হোথায়, খুঁজলে
পাবে নাকো সেথায়, পাহাড় বেয়ে ওঠো মাথায়, আবার নামো নিচে, অনেক গভীর শিকড় যেথায়, পাহারা দেয় সিম্বু সেথায়, সোনা চুরির ফন্দি ছাড়ো,
মানে মানে কেটে পড়ো, নইলে আছে দুঃখ অনেক,
বাচবে নাকো কেউ!” বিড়বিড়
করে ছড়াটা আওড়াল কিশোর। ছোটখাটো একটা পাহাড়ের মত টিলার, মাথায়
চড়ে তরাইয়ের চারপাশে চোখ বোলাল। বেশির ভাগটাই সমতল।
নেমে কোন দিকে যেতে হবে? জানতে
চাইল রবিন।
মনে হয় বাড়ির পেছন দিকে যেতে বলেছে।
চলো, দেখে আসি দেখা গেল বাড়ির পেছন থেকে মাটি ঢালু হয়ে নেমে গেছে।
‘অনেক গভীর শিকড়
যেথায়,
পাহারা দেয় সিম্বু সেথায়,’ এবার
আবৃত্তি করল রবিন।
‘কিসের শিকড়? এদিকে
কোনও বড় গাছটাছ তো চোখে পড়ছে না।’
‘রুট সেলারের, কথা
বলেনি তো?’ বলে উঠল কিশোর। ‘ঠিক! তা-ই
বুঝিয়েছে। সেলার শব্দটা ইচ্ছে করে বাদ দিয়েছে। গুপ্তধন শিকারীকে ধোঁকা দেবার জন্যে
রুট মানে শিকড়। সেলার বাদ দেয়াতে শুধু গাছপালাই খুঁজে বেড়াবে যারা গুপ্তধন খুঁজতে
আসবে। আমরাও সেই ধোকায় পড়ে গিয়েছিলাম।--আগেকার দিনে ঘর-বাড়িতে রূট সেলার থাকত বলে
জানতাম। লোকে শাক-সব্জি রাখত রুট সেলারে। তখন তো আর ফ্রিজ আবার হয়নি।’
‘তা ঠিক,’ মাথা
দোলাল রবিন, ‘কিন্তু প্রশ্ন হল রুট সেলারটা কোথায়?’
‘চলো, ওই
টিলায় উঠে লাফালাফি করি,’বুদ্ধি দিল কিশোর। ‘ফাঁপা হলে
শব্দ শুনেই বোঝা যাবে।’
‘কিন্তু টিলায় চড়ব
কেন?’ মুসার
প্রশ্ন।
‘পাহার বেয়ে ওঠো
মাথায়,
আবার নামো নিচে, বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে
ছড়াকার,’ জবাব দিল কিশোর। ‘সে-জন্যেই
উঠব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ওই টিলার নিচেই কোনখানে আছে গুপ্তধন।’
পাহাড়ের গায়ে লাফালাফি করতে গিয়ে
কাদা,
মেখে ভুত হয়ে গৈল তিনজনেই।
ঘণ্টাখানেক এ ভাবেই চলল। হঠাৎ মুসা বলে উঠল, দাড়াও।
দাড়াও। এখানে ফাঁপা একটা আওয়াজ শুনেছি। খুঁড়ে, দেখা যাক।
পরের আধঘন্টা নিবিষ্ট মনে মাটি খুঁড়ে
চলল তিন গোয়েন্দা। পরিশ্রমের ফল মিলল অবশেষে। মাটি সরে বেরিয়ে এল কাঠ। আধ পচা কাঠে
শাবল দিয়ে বার কয়েক গুঁতো মারতেই ভেঙে গেল। টর্চের আলোতে একটা গর্ত দেখতে পেল ওরা।
বারো ফুট মত হবে। খালি গর্ত।
-গুঙিয়ে উঠল মুসা। খামোকাই এত
খাটলাম!
“এক মিনিট,” বলল
কিশোর । “এখানেই কোথাও আছে। নইলে এত খাটতে যেত
না বুড়ো। রুট সেলারের কাঠের মেঝের নিচেই রেখেছে সোনার বারগুলো।”
সঙ্গে করে আনা টুল কিট থেকে রশি বের
করল কিশোর । রশির এক মাথায় হুক লাগিয়ে মাটিতে গাথল। রশি বেয়ে প্রায় বারো ফুট নিচে
নেমে এল। মেঝেতে আবার ঠুকতে শুরু করল ফাঁপা আওয়াজ শোনার আশায়। এবার বেশিক্ষণ
পরিশ্রম করতে হলো না। শুনতে পেল প্রত্যাশিত শব্দটা। কুঠুরির কাঠের তত্তা ভেঙে খুলে
ফেলেছে ওরা, এ সময় রট সেলারে ঢুকতে শুরু করল বৃষ্টির পানি। পরিস্থিতি,
আরও খারাপ করে দেয়ার জন্যেই যেন ওপরের একটা গর্তে জমা পানিও উপচে
গিয়ে ঢাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে শুরু করল সেলারে। দেখতে দেখতে গোড়ালি ডুবে গেল ওদের
ক্রমেই বাড়ছে পানি।
‘এখানে থাকলে তো
দেখছি ডুবে মরব,’ মুখ অন্ধকার হয়ে গেছে রবিনের, ‘জ্যোতিষীর
কথাই শেষ পর্যন্ত ফলে যাবে মনে হচ্ছে!’
‘সত্যি চলে যেতে
চাইছ?’ জিজ্ঞেস
করল কিশোর।
‘দেখি আরেকটু,’ গুপ্তধন
পাওয়ার আশা কিশোরের মতই ছাড়তে পারল না রবিনও। দেয়ালের আরেকটা তক্তা খুলে আনল মুসা।
পাহাড়ের গায়ে একটা সুড়ঙ্গ চোখে পড়ল। উচ্চতায় পাঁচ ফুটেরও কম। ওপরের দিকে উঠে গেছে
সুড়ঙ্গটা। ফলে পানি ওটার নাগাল পাবে না।
‘বুড়ো এটা তৈরি করে
রেখে গেছে,’ বলল কিশোর। ‘জানত, বৃষ্টি
হলে পানি ঢুকতে পারে। তাই এমন জায়গায় বানিয়েছে, যাতে পানি না
জমে।’
মাথা নির্চু করে সুড়ঙ্গের মধ্যে ঢুকে
পড়ল ওরা। দশ ফুট যাবার পরে বাম দিকে মোড় নিল ওরা। ধীরে ধীরে এগোতে লাগল হামাগুড়ি
দিয়ে। কড়াৎ করে বাজ পড়ল। এবং ঠিক ওই মুহূর্তে অযাচিত ভাবে সিম্বুর মুখোমুখি হলো
ওরা। একটা লোহার সিন্দুকের ওপর চুপ করে বসে রয়েছে ছোষ্ট মূর্তিটা। হা করে তাকিয়ে
রইল তিনজনেই।
সিন্দুকে কি বারগুলো আছে?-সবার
মনেই খেলে গেল একই প্রশ্ন।
‘বাক্সটা
খুলব?’ ফিসফিস
করে যেন নিজেকেই প্রশ্ন করল কিশোর।
‘কি-কি-ক্কিন্তু, সিম্বুর
অভিশাপ’ ভয়ে কথাটা শেষ করতে পারলো না মুসা।
‘বাক্সটা খুলে
যদি......’ রবিনও ভয় পাচ্ছে। সিম্বুর কদাকার ছোট্ট
মুখটার দিকে তাকিয়ে ভয় লাগছে ওদের।
ফিসফিস করে বলল কিশোর, সিম্বু,
আমরা তোমার কোন ক্ষতি করতে আসিনি তোমার, সোনা
চুরি করার ইচ্ছেও আমাদের নেই। আমরা শুধু দেখতে চাই বাক্সের ভেতর সোনাগুলো আছে
কিনা।
আস্তে রূরে মূর্তিটা এক পাশে সরিয়ে
রাখল কিশোর। বাক্স খোলার চেষ্টা করল। খুব মজবুত তালা। ওদের কাছে এই তালা খোলার
যন্ত্র নেই।
‘এখন কি করা?’ সপ্রশ্ন
দৃষ্টিতে কিশোরের দিকে তাকালো রবিন। ‘সিম্বুকে নিয়ে যেতে
পারি আমরা......’ কথা শেষ হলো না তার। বিকট
শব্দে বাজ পড়ল আবার।
‘রূটসেলারে পানি
জমছে জানা কথা,’ কিশোর বলল। ‘বেশি দেরি
করলে ভরে যাবে। বেরোনোর উপায় থাকবে না আমাদের। তারচেয়ে চলো এখন চলে যাই। কাল
বৃষ্টির পানি নেমে গেলে আবার আসা যাবে। তালা খোলার যন্ত্র নিয়ে আসব কাল।’
‘ঠিক বলেছ,’ সঙ্গে
সঙ্গে বলে উঠব মুসা।
স্বস্তি পেল সিম্বুর প্রহরায় রাখা
সোনা দেখতে গিয়ে তাকে রাগিয়ে দিতে হলো না বলে।
প্যাসেজওয়ে ধরে পিছিয়ে এল ওরা। রুট
সেলারে ঢুকল। পানিতে থইথই করছে সেলার।
‘গর্ত থেকে পানি
সরানোর ব্যবস্থা করতে না পারলে সকালের মধ্যে সেলার পুরো ডুবে যাবে,’ নিচের
দিকে তাকিয়ে বলল কিশোর।
শাবল দিয়ে খুঁচিয়ে সেলার থেকে পানি
সরে যাওয়ার জন্যে একটা মুখ তৈরি করল ওরা। সেলারের ছাত যাতে ভেঙে ধসে পড়তে না পারে, সে-জন্যে
তক্তা দিয়ে আটকে রাখার ব্যবস্থা করল।
‘করলাম- তো,’ চিত্তিত
ভঙ্গিতে বলল কিশোর, ‘কিন্তু থাকবে কিনা
জানি না। চলো, যাওয়া যাক।’
দড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এল ওরা ওরা। কারও
নজরে পড়ল না। দুপার সাদা মার্সিডিজটাও দেখতে পেল না কোথাও। ঘন্টাখানেক পর রকি বিচ
থেকে একটা অপ্রত্যাশিত ফোন এল। কিশোরের মেরিচাচীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন। অপারেশন লাগবে।
চাচাকে খবর পাঠাল কিশোর। তক্ষুণি
বাড়ি যেতে তৈরি হলো। আফসোস করে বলল, ‘সিম্বুর সোনা দেখা
আর হলো না আমাদের। যাকগে, কি আর করা! চাচী ভাল হয়ে গেলে আবার আসব এখন
আমি এয়ার পোর্টে ফোন করছি টিকেটের জন্যে।’
পরদিন সকালের ফ্লাইটের, টিকেট
পেল ওরা। এয়ারপোর্টে আসার পথে লক্ষ করল পিছু পিছু সাদা মার্সিডিজটাও আসছে।
‘বাজি ধরে বলতে পারি, আমাদেরকে
চলে যেতে দেখে খুবই অবাক হচ্ছে দুপা,’ রবিন
বলল।
মাসখানেক, পরে
তিন গোয়েন্দার হেডকোয়ার্টারে বসে গল্প করছে কিশোর, মুসা,
রবিন ও ওদের বন্ধু বিড ওয়াকার।
সিম্কুর গল্প শুনে বিড জিজ্ঞেস করল, ‘সোনার
বারগুলো দেখতে গিয়েছিলে আর?’
গিয়েছিলাম,’ জবাব
দিল কিশোর, ‘তবে যেতে দেরি কবে ফেলেছিলাম।
‘মানে?’ ভুরু
কোচকাল বিড। ‘তুলে নিয়ে গেছে নাকি কেউ গুপ্তধনগুলো?’
‘না,’ মাথা
নাড়ল কিশোর, ‘বুড়োর বাড়ির পাশে যে রাস্তাটা বানানো
হচ্ছিল,
দেখে এসেছিলাম, পরের বার গিয়ে দেখি সেটা তৈরি হয়ে
গেছে। বুড়োর বাড়ি ভেঙে ফেলেছে। টিলা সমান করে বাড়ির ওপর দিয়ে চলে গেছে ছয় লেনের,
কংক্রিটের ঝকঝকে রাস্তা।’
‘তারমানে,’ হতাশ
হলো বিড, ‘বুড়োর গুপ্তধন চিরকালের জন্যে চাপা
পড়ে গেল মাটির নিচে?’ গস্তীর ভঙ্গিতে মাথা দোলাল
কিশোর।
‘হ্যা, সিম্বু
তার মনিবের জিনিস বেশ ভালমতই পাহারা দিয়ে রেখেছে। মনে হয় কাউকে ছুঁতে দেয়নি।
দুপাকেও না।
-------------শেষ-------------
No comments:
Post a Comment