মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Tuesday, August 6, 2019

তারিক বিন জিয়াদের স্পেন বিজয় - Tariq bin Ziyad Conquered Spain - Part 3 of 3



তারিক বিন জিয়াদের স্পেন বিজয় - Tariq bin Ziyad Conquered Spain - Part 3 of 3 
তারিক বিন জিয়াদের স্পেন বিজয় 

৩য় পর্ব শুরুঃ 
এ সময় সেনাপতি তারিক মূসার নিকট থেকে এক জরুরী বার্তা পেলেন। মূসা জানালেন যে, তিনি স্পেনে আসছেন। তার না পৌঁছা পর্যন্ত তারিক যেন তার সামরিক অভিযান স্থগিত রাখেন। এই অদ্ভুত আদেশে রুদ্ধ হয়ে গেল তারিকের অগ্রগতি। এই আদেশের নানাবিধ কারণ হতে পারে। হয়তো এত বড় অভিযানে তরুণ তারিকের কোন আবেগময় সিদ্ধান্তের ফলে মুসলিম বাহিনীর বিপর্যয় ঘটতে পারে অথবা তিনি হয়তো তারিকের স্পেন বিজয়ের কৃতিত্বে নিজেও অংশ নিতে চাইলেন। তারিক এবং তার সঙ্গীরা এই আদেশে বিস্মিত হলেন। তাঁর উপদেষ্টারা তাকে বললেন বিজয়কে সংহত করার এই উপযুক্ত সময়। নিষ্ক্রিয়তা বা জড়তা আত্মহত্যার শামিল হবে। কারণ শত্রুরা তাহলে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করার সময় পাবে। সকলেই তাঁকে পরামর্শ দিলেন এগিয়ে যেতে এবং রাজধানী দখল করে নিতে।
এমন কি কাউন্ট জুলিয়ানও তাকীদ দিলেন ভীত পলায়নপর শত্রুবাহিনীকে তাড়াতাড়ি খতম করে দিতে। কারণ সময় পেলে শক্তি সঞ্চয় করবে তারা। তিনি আরো উপদেশ দিলেন, সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন ডিভিশনে ভাগ করে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দিকে পাঠিয়ে দিতে। তাই করলেন তারিক। মুঘিস আল রূমীর নেতৃত্বে একদল সৈন্যকে পাঠালেন কর্ডোভাতে। অন্য একদলকে পাঠালেন মালাগায়। তৃতীয় অপর একদলকে পাঠিয়ে দিলেন গ্রানাডায়। শাকদাল নদীর তীরে উঁচু পাইন বনের ভেতর মুঘিস আল-রূমীর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী শিবির স্থাপন করল। কর্ডোভা একটি প্রাচীন শহর। কোন এক সময় স্পেনের রাজধানীও ছিল। সেখানে জমায়েত হয়েছিল কয়েক শস্পেনীয় সৈন্য। সেখানকার শাসনকর্তাও ছিলেন সাহসী লোক। তিনি অভিযাত্রী মুসলিম বাহিনীকে বাধা দেয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। রূমী তাদের আশ্বাস দিলেন যদি তারা শহরের দরজা খুলে দেয় এবং আত্মসমর্পণ করে, তবে তাদের জীবন রক্ষা করা হবে। জনসাধারণ তাঁর প্রস্তাবে রাযী হলো। কিন্তু শাসনকর্তা তাদের দেখিয়ে দিলেন যে, মুসলিম বাহিনী সংখ্যায় ক্ষুদ্র, কাজেই তারা শহর জয় করতে পারবে না।
রূমী সন্ধানী দল পাঠালেন জানতে যে, শহরের রক্ষা ব্যবস্থা কেমন এবং তার দুর্বল স্থানটিই বা কোথায়। তার সন্ধানী দল ফিরে এলো এক মেষের রাখালকে সঙ্গে নিয়ে। সে জানাল যে, শহর রক্ষী সকল সৈন্যই টলেডোতে চলে গেছে। ধনী লোকেরাও তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে গেছে। শুধু শাসনকর্তা চারশ সৈন্যের একটি অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে শহরে অবস্থান করছেন। মেষের রাখাল শহরের প্রাচীরের একটি ভগ্ন জায়গা দেখিয়ে দিল।
শীতের রাত। প্রচণ্ড ঝড় বইছিল আর বর্ষণ হচ্ছিল মুষলধারে বৃষ্টি। রূমী এক হাজার সৈন্য নিয়ে দেয়ালের ভগ্ন অংশের দিকে যাত্রা করলেন। ঝড়ে নদীটিও তখন স্ফীত হয়ে উঠেছিল। সমস্ত বাধা-বিপত্তি সত্তেও মুসলিম বীরেরা নদীটি পার হয়ে গেল অকুতোভয়ে। এই সময় শুরু হলো শিলাবৃষ্টি। ঝড় তখনও বইছিল প্রচণ্ড বেগে। এই দুর্যোগে কেহ বাইরে যেতে সাহস পায় না। কিন্তু ইসলামের বীর সৈনিকেরা ছিল সিংহ-হৃদয়। কোন বাধাকেই তারা বাধা মনে করতো না। আগেই অনুমান করা হয়েছিল দেয়াল রক্ষী সৈন্যরা এই সময়ে এই দুর্যোগময় আবহাওয়ায় দেয়াল পাহারায় থাকবে না। বাস্তবেও হয়েছিল তাই। তারা কেউ সেখানে ছিল না। মুসলিম সৈন্যরা সাবধানে দেয়ালটির দিকে অগ্রসর হলো। দেয়ালটা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে রূমী দেয়ালের ধার ঘেঁষে একটি উঁচু ডুমুর গাছ দেখতে পেলেন। তিনি গাছ বেয়ে দেয়ালের উপর উঠে গেলেন। দেয়ালের অপর পাশে লাফিয়ে পড়ার আগে তিনি তার লোকদের বললেন দেয়ালের দরজায় ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করতে।
তিনি দেয়ালের অপর পাশে লাফিয়ে পড়লেন। তারপর দেয়ালের ধার ঘেঁষে চুপে চুপে অগ্রসর হলেন দরজা লক্ষ্য করে। সেখানে কয়েকজন সান্ত্রী ছিল। তারা তখন এক কোণায় জড়সড় হয়ে শীতে কাঁপছিল। ঝড়ো বাতাসের শব্দ এবং শিলাবৃষ্টির জন্য তারা কিছুই বুঝতে পারেনি। তরবারি হাতে নিয়ে তাদের মধ্যে লাফিয়ে পড়লেন দুঃসাহসী রূমী। চিৎকার করার আগেই তাদের শেষ করে দিলেন। একটা অসম্ভব কাজ একাকী সমাধা করলেন তিনি। দরজা খুলে দিলেন তার সৈন্যদের জন্য। মুসলমানদের বিজয়ধ্বনি শুনে শহরের শাসনকর্তা তার সৈন্যদের নিয়ে পালিয়ে গেলেন। আশ্রয় নিলেন শহরের পশ্চিমে একটি গির্জায়। সেখানে নিজের অবস্থান সুরক্ষিত করে তুললেন।
দীর্ঘ তিনটি মাস রূমী সেই সুরক্ষিত গির্জাটি অবরোধ করে রইলেন। তবু শাসনকর্তা এবং তার সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করল না। কারণ সেখানে জমা করে রাখা হয়েছিল প্রচুর রসদ। অবশেষে আবিষ্কৃত হলো ভূগর্ভস্থ একটি নালা, যা দিয়ে গির্জায় পানি সরবরাহ হতো। রূমী সেই নালাটি বন্ধ করে দিলেন। ফলে গির্জায় পানি সরবরাহ বন্ধ গয়ে গেল। অবশেষে মরিয়া হয়ে স্পেনীয়রা বেরিয়ে এলো গির্জা থেকে। সাহসের সঙ্গে শেষবারের মত মুসলিম বাহিনীকে রুখে দাঁড়াল। কিন্তু পরাজিত হলো। শাসনকর্তা একটি কালো ঘোড়ায় চড়ে পালাচ্ছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধরা পড়লেন। রূমী সকল ইহুদীকে একত্র করলেনশহরের শাসনভার ছেড়ে দিলেন তাদের উপর। তিনি খ্রিস্টানদের চাইতে ইহুদীদের বেশি প্রাধান্য দিলেন। ইহুদীরা খ্রিস্টানদের ঘৃণা করতো। রূমীর ধারণা ছিল ইহুদীরা মুসলমানদের জন্য সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করবে। মুসলমানদের হাতে এলো কর্ডোভা। পরবর্তীকালে এই কর্ডোভাই হয়ে উঠলো ইউরোপে শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র হিসেবে। পরবর্তীকালে তৎকালীন মুসলিম জাহানের সকল জায়গা থেকে বিদ্বান এবং পণ্ডিত ব্যক্তিগণ সমবেত হতেন এখানে। শুধু তাই নয়। তৎকালীন পরিচিত পৃথিবীর সকল দেশ থেকে ছাত্র আসততা জ্ঞানপিপাসা নিবারণ করতে।
শহরের চারদিকে আরবরা বাগান তৈরি করেছিলেন মাইলের পর মাইল জুড়ে। খাল খনন করে তা থেকে বাগানে পানি সেচ দেয়া হতো। শীঘ্রই কর্ডোভা অভিহিত হলো দ্বিতীয় বাগদাদ নগরী রূপে। ইউরোপ যখন নিমজ্জিত ছিল অজ্ঞানতা আর কুসংস্কারের অন্ধকারে, তখন এই কর্ডোভাতেই জ্বলে উঠেছিল জ্ঞানের আলোকবর্তিকা আর গোটা ইউরোপ তা থেকে আলো আহরণ করে ধন্য হচ্ছিল। এরপর মার্সিয়ার পালা। মার্সিয়া ছিল একটি প্রদেশ। ওরিহোয়েলা ছিল তার রাজধানী। শহরটি ছিল সুরক্ষিত এবং গুরুত্বপূর্ণ। স্পেনের যে কয়েকজন সুদক্ষ সেনাপতি ছিলেন, থিওডোমীর ছিলেন তাঁদের অন্যতম। তিনি এখানে অনেক সৈন্য সংগ্রহ করে মুসলমানদের শেষবারের মত বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেন। তারিকের সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে আগেও তাঁর মুকাবিলা হয়েছে। কাজেই তারিকের বীরত্ব সম্বন্ধে তার জানা ছিল ভালভাবেই। তারিক টলেডোর দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। তাঁর একজন অধীনস্থ সেনাপতির উপর দেয়া হয়েছিল মার্সিয়া দখল করার ভার। সেই সেনাপতির সঙ্গে ছিল অল্প সংখ্যক সৈন্য। এই সংবাদ পেয়ে থিওডোমীর সাহসী হয়ে উঠলেন। তিনি সৈন্যসহ দুর্গ ছেড়ে নেমে এলেন প্রকাশ্য মাঠে। কিন্তু শোচনীয়ভাবে পরাস্ত হলেন। তাঁর অধিকাংশ সৈন্য নিহত হলো। বাকি সৈন্য নিয়ে আবার তিনি দুর্গে আশ্রয় নিলেন। থিওডোমীর ছিলেন বুদ্ধিমান সেনাপতি। তিনি শহরের নারীদের আদেশ দিলেন মাথার চুলের বাঁধন ছেড়ে দিয়ে তীর-ধনুক হাতে নিয়ে শহর প্রাচীরের উপর চলাফেরা করতেযাতে মুসলিম সৈন্যরা মনে করে থিওডোমীরের হাতে অনেক সৈন্য রয়েছে।
সত্যি সত্যি মুসলিম বাহিনী প্রবঞ্চিত হলো। তারা ভাবলো, শহরে এখনো অনেক সৈন্য রয়েছে। তারপর থিওডোমীর দূতের ছদ্মবেশে সন্ধির পতাকা নিয়ে মুসলিম শিবিরে উপস্থিত হলেন। তাকে কেউ চিনতে পারেনি যে, তিনিই বিখ্যাত স্পেনীয় সেনাপতি থিওডোমীর। তাঁকে মুসলিম সেনাবাহিনীর নিকট উপস্থিত করা হলো। তিনি বললেন মহান সেনাপতি, আমাদের হাতে যথেষ্ট সৈন্য রয়েছেআর রয়েছে যথেষ্ট রসদপত্তর। কাজেই আপনি শহর অবরোধ করে রাখলেও আমরা টিকে থাকতে পারবো। কিন্তু আমাদের শাসনকর্তা রক্তপাত ঘৃণা করেন। তাই আমরা আপনার হাতে শহর সমর্পণ করতে প্রস্তুত। কিন্তু এই শর্তে যে, যারা শহর ছেড়ে চলে যেতে চায়, তাদের চলে যেতে অনুমতি দিতে হবে।
মুসলমানগণ উদার প্রকৃতির। তারা তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করে। ইহা ইসলামের শিক্ষা। ধূর্ত থিওডোমীর মুসলমানদের এই মহৎ গুণাবলীর সুযোগটাই গ্রহণ করলেন। মুসলিম সেনাপতি তাঁর শর্তে রাযী হলেন। সন্ধি স্থাপিত হলো। তখন থিওডোমীর তাঁর ছদ্মবেশ খুলে ফেললেন এবং জানালেন যে, তিনিই এখানকার শাসনকর্তা। মুসলিম সেনাপতি সবিস্ময়ে দেখলেন ছদ্মবেশধারী আর কেউই নয়, তিনিই বিখ্যাত স্পেনীয় সেনাপতি থিওডোমীর। থিওডোমীর তার চাতুর্যে সফল হলেন। আনন্দে ফিরে গেলেন নিজ শিবিরে।
পরদিন সকালে যখন শহরের দ্বার খুলে দেয়া হলো তখন মুসলমানগণ সবিস্ময়ে দেখল, শহরের সকল অধিবাসীই চলে যাচ্ছে শহর ছেড়ে। যে অল্প কয়েকজন স্পেনীয় সৈন্য ছিল, তারাও শহর ত্যাগ করে যাচ্ছে। থিওডোমীরের বুদ্ধিমত্তায় মুসলিম সেনাপতি মুগ্ধ হয়ে গেলেন। গুয়ালেট যুদ্ধের আট মাস পরে তারিক রাজধানী টলেডোর প্রাচীরের সম্মুখে এসে দাঁড়ালেন। টলেডো শহরটি উঁচু স্থানে অবস্থিত। তার প্রায় চতুর্দিক বেষ্টন করে আছে খরস্রোতা ট্যাগাস নদী। প্রকৃতিই তাকে সুরক্ষিত করে রেখেছে। কিন্তু আজ তা কোন কাজেই লাগল না। স্পেনীয়রা তারিকের আগমন সংবাদে ভীত হয়ে দলে দলে শহর শূন্য করে দিয়ে ধন-দৌলত নিয়ে পালাচ্ছে। তারিক টলেডোতে প্রবেশ করে সোজা রাজপ্রাসাদে চলে গেলেন। রাজা রডারিকের অন্তঃপুরের স্ত্রীলোকদের উপযুক্ত সম্মান দেখালেন। আশ্বাস দিলেন তাদের সকল রকম সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।
রাজপ্রাসাদের কুঠুরিতে পেলেন মণিমানিক্য এবং দামী পাথরে খচিত পঁচিশটি মুকুট। প্রত্যেকটি মুকুটে উত্তীর্ণ ছিল একজন করে গথ রাজার নাম, যিনি তার রাজত্বকালে তা পরিধান করেছিলেন। মনে হয় প্রত্যেক রাজা তার অভিষেকের সময় নিজ নিজ মুকুট ফরমাস দিয়ে তৈরি করাতেন। তারপর এই রাজার মৃত্যুর পর সেই মুকুট তাঁর স্মৃতিস্বরূপ সযত্নে রক্ষিত হতো এই কুঠুরিতে। এই পঁচিশটি মুকুট ছাড়াও তারিক পেলেন প্রচুর সোনাদানা, হীরা-জহরত, দামী পাথর। আরও পেলেন কতকগুলো স্বর্ণ নির্মিত পাত্র। এই পাত্রগুলো পূর্ণ ছিল মণিমানিক্যে। আরও পেলেন দামী পাথর খচিত তরবারি, দামী বর্ম, রাজাদের বহু মূল্যবান পোশাক, সিল্ক, রেশম ও সার্টিনের কাপড়-চোপড়। তারিক সেখানে একটি ছোট্ট সেনাদল রেখে আরও এগিয়ে গেলেন পলায়ন-কারীদের পশ্চাদ্ধাবন করে। কিছুদূর এগিয়ে তারিক একদল পলায়নপর লোকের সাক্ষাৎ পেলেন। তাদের সঙ্গে ছিল একটি অদ্ভুত মহামূল্যবান জিনিস। ইহাকে বলা হতো সলোমনের টেবিল। এর উপরিভাগ ছিল সোনার তৈরি। এতে বসানো ছিল হীরা, মুক্তা ও রুবী। এর ছিল ৩৬৫ টি পাএক বছরের ৩৬৫ দিনের প্রতীক। পাগুলো তৈরি হয়েছিল পান্না দ্বারা। স্পেনে প্রচলিত কিংবদন্তী অনুযায়ী এই টেবিল নাকি রাজা সলোমনের তৈরি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই টেবিল তৈরি করেছিলেন গথ রাজারা । প্রত্যেক গথ রাজাই এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছিলেন নতুন নতুন মূল্যবান পাথর বসিয়ে। এর কারুকার্য ছিল অত্যন্ত সুন্দর-অত্যন্ত সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছিল টেবিলটি। একটা সমগ্র রাজ্যের দামের চেয়েও টেবিলটি ছিল মূল্যবান। ভারত সম্রাট শাহজাহানের ময়ূর সিংহাসনও এই টেবিলটির নিকট ছিল তুচ্ছ।
তারিক টেবিলটি পেয়ে অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন। স্থির করলেন খলীফা ওয়ালিদকে ব্যক্তিগতভাবে তা উপহার দেবেন। এখান থেকে অল্প দূরেই ছিল একটি গ্রাম। তারিক সেখানে পেলেন ল্যাটিন এবং গ্রীক ভাষার এক গ্রন্থাগার। পুস্তকগুলো ছিল শিল্প ও বিজ্ঞানের এক বিরাট জ্ঞানভাণ্ডার। তারিক সযত্নে রক্ষা করলেন গ্রন্থগুলো এবং ডেকে পাঠালেন তখনকার দিনের পণ্ডিত ব্যক্তিদের গ্রন্থগুলোর অনুবাদ কাজের জন্য। তারিক শুধু একজন সৈনিকই ছিলেন না। গজনীর বিখ্যাত দিগ্বিজয়ী বীর সুলতান মাহমুদের মত ছিলেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক।
অবশেষে মূসা স্পেনে পৌঁছলেন। তারিকের স্পেন বিজয়ের খবর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। মূসা তার শিষ্যের অবাধ্যতায় কিছুটা দুঃখিত হয়েছিলেন। তিনিও চেয়েছিলেন স্পেন বিজয়ের গৌরবে অংশীদার হতে। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্রকে আফ্রিকার শাসনভার দিয়ে এসেছেন। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন আঠার হাজার অশ্বারোহী সেনা। ইয়েমেনের শ্রেষ্ঠ পরিবারগুলো থেকে এবং অন্যান্য বিজিত দেশের কিছু সংখ্যক বাছা বাছা লোকও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। স্পেনের মাটিতে নেমেই তিনি জানতে পারলেন তারিক তার আদেশ অমান্য করে আরো এগিয়ে গেছেন। তিনি অত্যন্ত রেগে গেলেন । কিন্তু কাউন্ট জুলিয়ান তাকে বোঝালেনতার জয় করার জন্য স্পেনের আরো বহু শহর রয়েছে, যেগুলো আরও জনবহুল, আরও সমৃদ্ধ, যেগুলো এখনো কেউ জয় করেনি। তিনি তারিকের পক্ষ থেকে বললেন, তারিক যদি অগ্রসর না হতেন, চুপ করে বসে থাকতেন, তবে তা পাগলামি এবং বোকামি দুইই হতো। কারণ শত্রুবাহিনী সংহত হয়ে রুখে দাঁড়াত মূসার ক্রোধ এতে শান্ত হলো। তারপর মূসা এগিয়ে গেলেন বাকি শহরগুলো জয় করার জন্য। কাউন্ট জুলিয়ান মূসার সেনাবাহিনীকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশ্বস্ত পথ প্রদর্শক দিলেন।
মূসা দ্রুতগতিতে কারমোনার দিকে এগিয়ে গেলেন। ইহা একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং অন্যান্য শহরের তুলনায় সবচেয়ে সুরক্ষিত। এই শহরটি দখল করতে মূসার অনেক দিন লেগে যেত, যদি কাউন্ট জুলিয়ান সাহায্য না করতেন। তার লোকজন মুসলিম বাহিনীর নিকট থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীর ভান করে শহরে ঢুকেছিল। রাতে মুসলিম বাহিনীর জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিল শহরের দ্বার। অধিবাসীরা বাধা দিল না। কাজেই অধিবাসীদের কোন ক্ষতি হয়নি। মূসার আগমনের পূর্বে যারা পালিয়ে গিয়েছিল, শুধু তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হলো।
তারিকের বিজয়ের ফলে স্পেনীয়দের ধারণা হয়েছিল মুসলিম বাহিনীকে বাধা দেয়া নিরর্থক। কারণ তারা অজেয়। কাজেই তারা বাধা দেয়নি। এখান থেকে মূসা অগ্রসর হলেন স্পেনের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর সেভিলের দিকে। সেভিল ছিল গথ বিজয়ের পূর্বে স্পেনের রাজধানী। গির্জার প্রধান পুরোহিতরা তখনো এখানেই বাস করতেন। স্পেনের আর্চবিশপ ওপ্পাশ ছিলেন এই শহরের শাসনকর্তা। তিনি শহরকে রক্ষার জন্য ধর্মের নামে আহ্বান জানালেন। তার আহ্বানে শহরবাসী মুসলিম সেনাবাহিনীকে রুখে দাড়াল। মূসা পাঁচ মাস যাবত শহরটি অবরোধ করে রাখলেন। অবশেষে শহরের অধিবাসীরা আত্মসমর্পণ করলো। মূসা বহুসংখ্যক ইহুদীকে এখানে বসতি স্থাপন করতে দিলেন। কারণ খ্রিস্টানরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে পুনরায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। ইহুদীরা ছিল খ্রিস্টানদের দ্বারা নির্যাতিত। মূসার ধারণা ছিল, ইহুদীরা মুসলমানদের সাহায্য করবে। এখানে একটি ছোট্ট সৈন্যদল মোতায়েন করে মূসা অগ্রসর হলেন মেরিদার দিকে। রোমানদের সময় থেকে মেরিদার ছিল নাম-ডাক এবং গুরুত্ব। কারণ এখানে ছিল সুরক্ষিত দুর্গমালা, সুরম্য অট্টালিকা আর অনেক আঁকজমকপূর্ণ ঐশ্বর্যমণ্ডিত মন্দির। এর অধিবাসীদের যুদ্ধপ্রিয়তা এবং সাহসের ছিল সুনাম। মূসা মেরিদা অবরোধ করলেন। কিন্তু এই শহরের যোদ্ধারা সকাল থেকে সারাদিন মুসলিম বাহিনীকে যুদ্ধে ব্যাপৃত রাখত আর সন্ধ্যা হলেই শহরে গিয়ে আশ্রয় নিত। তিন মাস ধরে অবরোধ চললো। মূসা এই শহর দখল করতে দৃঢ়সংকল্প হলেন। শহরে দুর্গ ভাঙ্গার জন্য প্রস্তুত করলেন সামরিক ইঞ্জিন। কিন্তু আক্রমণ করতে গিয়ে মুসলিম সেনারা পিছু হটে এল অনেক ক্ষতি স্বীকার করে। দুর্গ ভাঙতে গিয়ে হাজার হাজার মুসলিম সেনা শহীদ হলো। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মূসা তৈরি করলেন একটি বুরুজ।
এই ক্ষতি পূরণের জন্য মূসা আফ্রিকা থেকে সৈন্য ডেকে পাঠালেন। জ্যেষ্ঠ পুত্র, আব্দুল আযীয আরও সাত হাজার অশ্বারোহী এবং পাঁচ হাজার তীরন্দাজ সৈন্য নিয়ে আফ্রিকা থেকে স্পেনে উপস্থিত হলেন। একদিন সকালে মুসলিম বাহিনী যখন আক্রমণ করতে এগিয়ে যাচ্ছিল মূসা তখন কৌশলে স্পেনীয়দের প্রলুব্ধ করে বাইরে আনলেন এবং ওঁৎ পেতে তাদের ধ্বংসসাধন করলেন। অবশেষে শহরবাসীরা আত্মসমর্পণ করল । সন্ধি স্থাপিত হলো। দিনটি ছিল ৬ই অক্টোবর, ৭১২ খ্রিস্টাব্দ।
নিহত ও পলায়নকারীদের সম্পত্তি এবং গির্জার ঐশ্বর্য বিজয়ীদের হাতে পড়ল। এই শহরে লুকিয়েছিলেন রডারিকের বিধবা পত্নী ইজিলোনা। তিনিও বন্দিনী হলেন। তারপর মূসার জ্যেষ্ঠ পুত্র তাকে বিয়ে করেন। মূসা যখন মেরিদা দখল করতে ব্যস্ত ছিলেন, তখন খবর এল সেভিলের অধিবাসীরা বিদ্রোহ করেছে। পলায়নকারীরা সেভিলে ফিরে গিয়েছিল। ইহুদীরাও হাত মিলিয়েছিল খ্রিস্টানদের সঙ্গে। তারা সেখানে মোতায়েন মুসলিম শাসনকর্তা এবং তার ছোট্ট সৈন্য দলকে হত্যা করেছে। মূসা আব্দুল আযীযকে সেভিলে পাঠালেন বিদ্রোহ দমন করতে এবং বিদ্রোহীদের এমন শাস্তি দিতে যেন তারা আর কখনও বিদ্রোহ করতে সাহস না পায়। আব্দুল আযীয দ্রুত সেভিলে পৌঁছলেন এবং বিদ্রোহ দমন করে যথাযোগ্য প্রতিশোধ নিলেন। সিংহের মত তিনি বিদ্রোহীদের উপর ঝাপিয়ে পড়লেন এবং যেভাবে সেখানকার ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনীকে তারা হত্যা করেছিল, সেভাবে তাদের হত্যা করা হলো। কেউ শাস্তি থেকে রেহাই পেল না। শহরটি পুনরায় দখল করা হলো। শহরটি শাসনের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করে আব্দুল আযীয ফিরে গেলেন মেরিদায়।
স্পেনের সকল গুরুত্বপূর্ণ শহর মুসলমানদের করতলগত হলো। এখন এই দুই সেনাপতির সাক্ষাতকার আসন্ন হয়ে উঠল। মূসা টলেডোর দিকে অগ্রসর হলেন। মূসার আগমন বার্তা পেয়ে তারিক টলেডো থেকে বাইরে এলেন তার গুরুকে উপযুক্ত অভ্যর্থনা জানানোর জন্য। টালাভিরা নামক স্থানে দেখা হলো দুই গুরু-শিষ্যেরইসলামের ইতিহাসের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্রের। তারিক মূসাকে উপযুক্ত অভ্যর্থনা জানালেন। দুই বিজয়ী বীর পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলেন গভীর আলিঙ্গনে। বহুদিন পর তাদের সাক্ষাৎ। মূসা তারিককে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেই দায়িত্ব পালনে তারিক তাঁকে নিরাশ করেননি। মূসা কিন্তু মনে মনে তারিককে ভৎর্সনা করছিলেন তাঁর আদেশ অমান্য করার জন্য কিন্তু তার বক্তব্য শুনে পরে সস্তুষ্ট হয়েছিলেন। তারপর তারা তৈরি করলেন সারা স্পেন বিজয়ের পরিকল্পনা।
মূসা তারিককে আদেশ দিলেন তার সেনাবাহিনী নিয়ে অগ্রগামী হয়ে এগিয়ে যাবার জন্য। তারিক এগিয়ে গেলেন অগ্রগামী দল নিয়ে। মূসা সেনাবাহিনীর প্রধান অংশ নিয়ে তাকে অনুসরণ করলেন। এখন সম্মিলিত অজেয় বাহিনীর সম্মুখে কোন বাধাই আর টিকল না। তারিক নগরের পর নগর জয় করে চলেছেনঠিক করছেন সন্ধির শর্ত মূসা দিচ্ছেন অনুমোদন।
সম্মিলিত বাহিনী নিয়ে ইসলামের এই দুই বীর আরাগম আক্রমণ করলেন। আরাগম স্পেনের একটি প্রদেশ, সারাগোসা ছিল তার রাজধানী। বিজয়ী বাহিনী রাজধানী সারাগোসা দখল করে ফেলল। সৈন্য বাহিনীকে কঠোর আদেশ দেয়া হলো যেন। জনগণের উপর কোন জুলুম করা না হয়। অধিকন্তু লুটতরাজের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়। তাছাড়াও যথোপযুক্ত সম্মান দেখানো হয় জনসাধারণের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি এবং কোন লোকের সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়নি।
সমগ্র স্পেন জয় করে দুই সেনাপতি পরিকল্পনা করলেন, তাঁরা জয় করবেন ফ্রান্স, তারপর দক্ষিণ ইউরোপ; তারপর তুরস্ক। স্পেন আর ফ্রান্সের সীমান্তে অবস্থিত পিরেনীজ পর্বত। তারা পিরেনীজ পর্বত পার হয়ে ফ্রান্সে প্রবেশ করলেনঅগ্রসর হয়েছিলেন রোন নদী পর্যন্ত। দখল করেছিলেন লিয় নগরীর দুর্গ।
এই সময় দামেশক থেকে তলব আসে প্রত্যাবর্তনের জন্য। তাদের স্পপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল, তা আর পারলেন না সফল করতে। উমাইয়া খলীফা আবদুল মালিক উইল করেছিলেন, ওয়ালীদের মত্য হলে তার ছোট ভাই সুলায়মান সিংহাসনে আরোহণ করবেন। কিন্তু ওয়ালীদ নিজ পুত্রকে উত্তরাধিকারী করতে চেয়েছিলেন। যে কয়জন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ওয়ালীদকে সমর্থন দিয়েছিলেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ছিলেন তাদের অন্যতম। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ হঠাৎ মারা গেলেন। ওয়ালীদও অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ওয়ালীদ চাইলেন, তাঁর সকল সেনাপতি যারা তাঁর কাছে আছেন তাঁরা তাঁর পুত্রকে সমর্থন করুক। মূসা এবং তারিক তার শ্রেষ্ঠ সেনাপতিদের অন্যতম। খলীফার আদেশ পেয়ে তারা খুব তাড়াতাড়ি কায়রোয়ানে প্রত্যাবর্তন করলেন। তারপর মূসা তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্রকে শাসনভার বুঝিয়ে দিয়ে তারিককে সঙ্গে নিয়ে দামেশকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। তাঁর সঙ্গে চলল উটের বিরাট এক বহর। উটের পিঠে ছিল যুদ্ধে প্রাপ্ত দামী আসবাবপত্র, অস্ত্রশস্ত্র, রেশম এবং সার্টিনের পোশাক-পরিচ্ছেদ। ত্রিশটি গাড়িতে ছিল সোনারূপা, মণিমুক্তা হীরা-জহরত, গথ রাজাদের পঁচিশটি রাজমুকুট এবং বিখ্যাত সলোমনের টেবিল। বহু বন্দী ছাড়াও স্পেনের রাজপরিবারের পঁচিশজন রাজপুরুষ তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।
শুধু মূসা এবং তারিককেই নয়। সিন্ধু বিজয়ী মুহাম্মদ বিন কাসিম এবং মধ্য এশিয়া বিজয়ী কুতাইবাকেও ডেকে আনা হয়েছিলইহা দুঃখজনক যে, খলীফা ওয়ালীদের মৃত্যুতে দীর্ঘকাল দিগ্বিজয়ী মুসলিম বাহিনীর বিজয় অভিযান বন্ধ ছিল। আরও দুঃখজনক যে, উমাইয়া রাজপরিবারের দ্বন্দ্বের ফলে ওয়ালীদের পরবর্তী খলীফা ইসলামের এই দিগ্বিজয়ী সেনাপতিদের প্রতি ভাল ব্যবহার করেন নি; বরং নিষ্ঠুর আচরণ করেছিলেন। অথচ ইসলামের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ এই মহান সৈনিকদের প্রাণপাত চেষ্টায় ইসলামী ঝাণ্ডা উডডীন হয়েছিল আটলান্টিক মহাসাগর থেকে সিন্ধু উপত্যকায়---উত্তর আফ্রিকা, এশিয়ার মধ্যভাগ পর্যন্ত।
তারিক প্রমাণ করেছিলেন তিনি শুধু রণকুশলী সেনাপতিই ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক, সর্বোপরি ইসলামের একজন মহান সেবক। ব্যবহারে ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী এবং ভদ্র। তিনি ছিলেন দয়ালুঅত্যাচারী এবং জালিমের শত্রু। একজন সামান্য ক্রীতদাসের পুত্র থেকে নিজ গুণাবলীতে উন্নীত হয়েছিলেন সেনাপতিতে। ধর্মের জন্য, ন্যায়ের জন্য এবং সত্যের প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন অকুতোভয়ে ।।
যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি ছিলেন নির্ভীক—–ঘোরতর সঙ্কটকালে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতির মুকাবিলা করেছেনক্ষুদ্র সৈন্যদল ও অপর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিশাল শক্র-বাহিনীর সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি কখনও সাহস হারাননি আল্লাহর উপর অবিচল বিশ্বাস রেখে ঘোরতর বিপদ থেকে বেরিয়ে এসেছেন বিজয়ীর বেশে। বয়স ছিল তাঁর অল্পকিন্তু এত অল্প বয়সেই তাঁর যোগ্যতার জোরেই উঠেছিলেন গৌরবের উচ্চ শিখরে।
আজ তারিক নেই। কিন্তু ইসলামের ইতিহাস তথা মানব জাতির ইতিহাসে রেখে গেছেন তার কীর্তির অক্ষয় অম্লান স্বাক্ষর। ইসলামের এই তরুণ বীর যোদ্ধার স্মৃতি যুগে যুগে মুসলিম তরুণ মানসে যোগাবে সাহস, যোগাবে প্রেরণা। সাহারা মরু-প্রান্তরে কোন বেদুঈন তাঁবুতে কিংবা বাংলার শ্যামল বেনুকুঞ্জের ছায়ায় কিংবা পৃথিবীর যে কোন মহাদেশের প্রত্যন্ত প্রদেশে যখন কোন তরুণ পাঠ করবে ইসলামের ইতিহাস, তখন ক্ষণিকের জন্য হলেও তার মনের পর্দায় ভেসে উঠবে তারিকের বিজয়-দীপ্ত কাল্পনিক মূর্তি - গুয়ালেট নদী-তীরের রণক্ষেত্রভেসে উঠবে জিব্রাল্টার প্রণালী; যে প্রণালী যুক্ত করেছে ভূমধ্যসাগর আর আটলান্টিক মহাসাগরের অথৈ জলধিআর সেই জিব্রাল্টার পাহাড় যেখানে তারিক প্রথম উড্ডীন করেছিলেন ইসলামের বিজয় পতাকা, যে পাহাড়ের নামকরণ হয়েছিল জাবালুত তারিক - তারিকের পাহাড়, যা পরবর্তীকালে পরিবর্তিত হয়েছে জিব্রাল্টার নামে।
তাঁর স্মৃতি যুগে যুগে মুসলিম তরুণ মানসকে করবে উদ্দীপিতআর তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে ইসলামের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ এই তরুণ দুঃসাহসিক মহান সৈনিকের বীরগাথা বুকে নিয়ে।
                      --------  শেষ   --------

No comments:

Post a Comment

Popular Posts