মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Tuesday, March 31, 2020

রম্য গল্প – একটি কালো গরু

রম্য গল্প – একটি কালো গরু

রম্য গল্পএকটি কালো গরু
বাইরের ঘরের দরজা খোলা ছিল। আমাদের বাইরের ঘরটা আবার একেবারে সদর রাস্তার উপরে সেই দরজা দিয়ে হঠাৎ একটা কালো গরু ঢুকে, আমি কিছু বুঝবার আগেই আমার টেবিলের উপর থেকে ঠিকানা লেখার ডায়েরিটা চিবিয়ে খেয়ে
ফেলল।
চেনা-অচেনা, খারাপ-ভাল, আত্মীয়-অনাত্মীয়, বন্ধু-শত্রু অজস্র লোকের ঠিকানা লেখা ছিল ডায়েরিটায়, বহুদিনের সঞ্চয়। ভীষণ রাগ হল গরুটার উপরে মনে মনে স্থির করলাম একটা বিহিত করতেই হবে। তারপর সামান্য সময়ের মধ্যে অনেক ভেবেচিন্তে থানায় গেলাম। কিস্তু তারা ব্যাপারটা বিশেষ পাত্তা দিল না। বলল, ডায়েরি করতে চান তো, গরুর মালিকের নাম জেনে আসুন। গরু তো মানুষ নয়, সে আসামী হবে কি করে? গরুর মালিকের বিরুদ্ধে এজাহার করতে হবে।
থানা থেকে নিরাশ হয়ে বেরিয়ে আসছি, এমন সময় একজন মোটাসোটা দারোগাবাবু ঘরে ঢুকলেন, হঠাৎ মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন চেনা- চেনা মনে হল। একটু পরেই বুঝতে পারলাম আমার বাল্যবন্ধু সালাম। আমাকে দেখে সালাম যথার্থই খুশি হল।
বর্তমান অবস্থার আলোচনায় এবং পুরনো দিনের সুখ দুঃখের স্মৃতি বিনিময়ে আমাদের দুজনের ত্রুটি হল না। একটা টেবিলে মুখোমুখি বসে অনেক কথাবার্তা হল, সালাম এককাপ চা, একটা পান খাওয়াল। অবশেষে সালামকে আমি গরুর অত্যাচারের কথাটা বললাম। কিস্তু সে পুলিশের দুঁদে দারোগা। খুন- রাহাজানির চেয়ে কম গুরুত্বের জিনিসকে পাত্তা দেয় না, বলল, এখন থেকে আর বাইরের ঘরের দরজা খুলে রেখো না। আর গরুটার খোঁজ নাও!
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, গরুর খোজ কেন নিতে হবে?
সালাম বলল, তুমি খোঁজ না নিলেও গরুটার মালিক হয়তো এতক্ষণে তোমার খোঁজ নেয়া আরন্ত করেছে।
আমি রীতিমত অবাক হয়ে বললাম, গরুর মালিক আমার খোঁজ করতে যাবে কোন দুঃখে? সে তো আমাকে এড়িয়ে চলবে
সালাম গম্ভীর মুখে বলল, দ্যাখো আমি পুলিশের লোক, অনেক রকম দেখলাম এই জীবনে তোমার ডায়েরি খাতা, অতগুলো বাজে লোকের নাম ঠিকানা গলাধঃকরণ করে গরুটার দেহ বিষাক্ত হয়ে মরেও যেতে পারে।
আমি স্তম্ভিত হয়ে বললাম, মানে?, সত্যিই এই বিষয়ের -দিকটা আমি এখন পর্যন্ত ভেবে দেখিনি।' .
সালাম অবিচলিত কণ্ঠে আমাকে বোঝাতে লাগল, দ্যাখো, হয়তো গরুটা দৈনিক দশ লিটার দুধ দেয়। কালো গরু মানেই ভাল, ঘন দুধ। অর সত্তর টাকা লিটার তার মানে দৈনিক সাতশত টাকা, মাসে বিশ হাজার টাকার বেশিই হল। সেই গরুকে তুমি যদি বিষ খাইয়ে মার, গরুওলা ছাড়বে তোমাকে?
আমি কাতর কঠে বললাম, কিন্ত আমি তো গরুকে নিজে থেকে নিমন্ত্রণ করে এনে ডায়েরিটা খেতে দিইনি। আর কি যা তা বকছ একটা পুরনো খাতা খেয়ে একটা অত বড় গরু মারা যাবেই বা কেন?
সালাম বলল, ডায়েরী খেয়ে গরু মরতে পারে না? এইতো সেদিন একজন স্বাস্থ্যবান ভদ্রলোক রাসবিহারী পোষ্টাপিসে ভরদুপুর বেলা থুতু দিয়ে ডাকটিকেট লাগাতে গিয়ে সেই ডাকটিকেট গলায় আটকে জনা পঞ্চাশেক লোকের চোখের সামনেই মারা গেল। বেশি কথা কি, বিস্কুট ভেবে একটা খালি দেশলাই খোল রাস্তা থেকে কুড়িয়ে খেয়ে এই থানার সামনেরই একটা বুড়ো কুকুর পরশুদিন রাতে এমন টেঁচাল যে হাজতের মধ্যে কয়েদীরা পর্যন্ত রাতে এক ফোটা ঘুমাতে পারল না! জানোই-তো আমরা পুলিশের লোক রাতে না ঘুমালে কোনও অসুবিধে হয় না, কিন্তু সিঁদেল চোর ছাড়া বাকি কয়েদীদের কজনেরই বা
রাতজাগা অভ্যেস থাকে? তাদের কি কষ্ট হল ভাব তো?
সালামের ঘুমকাতর কয়েদীদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর চেয়েও এই মুহূর্তে আমার প্রধান সমস্যা হল গরুটা সত্যিই ডায়েরি খেয়ে মারা পড়বে না তো?
স্বয়ং আল্লাহ জানেন, আমার হঠাৎ দেখা বাল্যবন্ধু সালাম দারোগার ভয় দেখানোর হাত থেকে আজ আমি কি অসীম মনোবলে পরিত্রাণ পেয়েছি। সালামের চাচাতো ভাই চার বছর বয়েসে একটা সামান্য বর্ণ পরিচয় বই এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ
চিবিয়ে খায়, তারপরের থেকে সেই জন্যেই নিশ্চয় সে সারাজীবন ধরে ট্যারা হয়ে আছে। তাছাড়া কাগজশুদ্ধ ক্যাডবেরি খেয়ে সাখাওয়াত ইস্কুলের ক্লাশ নাইনের একটা মেয়ে এমন বিপদে পড়ে তার পেট কেটে সেই চকোলেটের মোড়ক বার করতে
হয়েছিল। বন্ধু সালাম কাগজ ভক্ষণের এই রকম কত যে দুষ্ট দৃষ্টান্ত দিয়ে যাচ্ছিল, তার আদি-অন্ত নেই। আমি বহু কষ্টে ঘামতে ঘামতে পালিয়ে এলাম। কিন্তু পালিয়ে যাব কোথায়? ডায়েরি খেয়ে সেই কালো গরুটা কেমন আছে, নিজের অতি নিকট আত্নীয় স্বজনের জন্যেও কোনওদিন এত চিন্তা করিনি! সর্বদা ভয়ে ভয়ে আছি, কখন কালো গরুর অপরিচিত মালিক খুঁজতে খুঁজতে এসে আমাকে ধরবে। মাসে হাজার টাকা মাসোহারা চাইবে।
তোমরা কেউ যদি কোথাও কোনও কালো গরু অসুস্থ হয়ে শুয়ে আছে দ্যাখো, দয়া করে আমাকে খবর দিও, আমি সঙ্গে সঙ্গে গরুর ডাক্তার নিয়ে ছুটব বা তোমরা যদি পার নিজেরাই সেটাকে গরুর হাসপাতালে পৌঁছে দিও, সব খরচা আমার।
আর একটা কথা, আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, দারোগা বাল্যবন্ধু হলেও তার সঙ্গে কথাবার্তা কখনোই নয়।
মূল লেখকঃ তারাপদরায়
পরিবর্তন পরিমার্জনঃ মারুফ আল মাহমুদ

No comments:

Post a Comment

Popular Posts