![]() |
গ্রেট এক্সপেকটেশানস – চার্লস ডিকেন্স – কাহিনী সংক্ষেপ |
আমার
নাম ফিলিপ পিরিপ (Philip Pirrip, Hande)। একেবারে
তখন ছোট আমি, নাম উচ্চারন করতে পারতাম না, করতাম পিপ। আমাদের বাড়ি
সাগর থেকে মাইল বিশেক দূরে। ছেলেবেলায় প্রথম যে স্মৃতি আমার স্পষ্ট করে মনে পড়ে
তা হলো এক শীতের বিকেল। গ্রামের পাশে গির্জা সংলগ্ন আরেক গ্রামে গেছি। ওখানে আমার
বাবা-মা আর পাচ ভাইয়ের কবর। আমি বুঝতে শেখার আগেই মারা গেছে সব ক’জন।
গির্জার চারদিকে লম্বা ঘাস, ঝোপঝাড়। খাড়া হয়ে আছে কবরগুলোর ওপর
স্মৃতি-প্রস্তর। গোরস্থানের ওপাশে বিস্তৃত ভেজা মাঠ, তার উপর
দিয়ে হু হু করে ভেসে আসছে সাগরের ঠাণ্ডা বাতাস। মানুষজনের চিহ্ন নেই আশেপাশে। কাঁদতে
শুরু করলাম আমি।
এমন
সময় কে যেন গর্জন করে উঠল, “চুপ করে থাক, খুদে
শয়তান, নয়তো গলা কেটে ফেলব।”
ভালো
করে তাকিয়ে দেখি, ভয়ঙ্কর দর্শন এক লোক উঠে এসেছে গির্জার দিককার কবরগুলোর ও পাশ থেকে।
কাদামাটি মাখা কাপড় তার পরনে, পায়ে লোহার বেড়ি! মাথায় হ্যাট নেই
লোকটার, নোংরা একটা ন্যাকড়া বাঁধা সেখানে। পায়ে ছেঁড়া
জুতা। ঠাণ্ডায় ঠক ঠক করে কাপছে সে-।
আমার
বোন মিসেস গারগেরি বিশ বছরেরও বেশি বড় আমার চেয়ে। কারণে অকারণে মহিলা আমাকে তো
বটেই
তার স্বামীকেও চড়টা চাপড়টা লাগাতে কসুর করে না। আমাদের বাড়ির ঠিক সাথে মি. জো’র কামার
শালা। গির্জা প্রাঙ্গণ থেকে এক নিঃশ্বাসে ছুটে বাড়ি পৌছে দেখলাম সেটা বন্ধ। জো
একলা বসে আছে রান্নাঘরে। বোন ফিরে এল বাইরে থেকে। হাতে একটা ছড়ি। আমার ঘরেফেরা
নিয়ে খুব একচোট হলো। তারপর খাবার দেয়া হলো আমাদের। ওই খাবার থেকে জো’র চোখকে
ফাঁকি দিয়ে মাখন সহ বড় একটা রুটি চালান করে দিলাম পকেটে। ও হ্যা, বলতে
ভুলে গেছি, ওই গোরস্থানের বিকট দর্শন লোকটাই বলেছিল খাবার
নিয়ে যাবার জন্য। তাই এই চুরি।
আজ
বড়দিন। এ উপলক্ষে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে পরিচিত অনেককেই। হঠাৎ কয়েকজন সৈনিকের
আবির্ভাব ঘটল। ওরা মি, জো’র সাহায্য
চায়। জানা গেল, দু’জন পলাতক আসামীকে
খুঁজতে বের হয়েছে ওরা। সন্দেহ করা হচ্ছে, জলাভূমিতেই লুকিয়ে আছে
ওরা। সৈনিকেরা একজোড়া ভাঙা হাতকড়া মেরামত করার জন্য জো’কে অনুরোধ
করল। জো লেগে গেল কাজে। মেরামতের কাজ শেষ হওয়ার পর অনেকেই সৈনিকদের সাথে পলাতক কয়েদীদের
খুজে বের করার কাজে অংশ নিতে চাইল। জো নিজেও আগ্রহ প্রকাশ করাতে আমিও ওর সঙ্গী
হলাম-।
পুবাল
বাতাসে ঝিরঝিরে বৃষ্টির ফোটা ছুটে এসে লাগছে আমাদের মুখে। এদিকে সৈনিকদের সাথে তাল
মিলিয়ে হাটতে পারছি না আমি। জো আমাকে কাধে তুলে নিল। অবশেষে দেখা পাওয়া গেল দুই
কয়েদির। সার্জেন্ট দৌড়ে গেল ওদের দিকে। সৈনিকদের কয়েকজন মশাল জ্বালতে লাগল। এই ফাকে
আমার পরিচিত কয়েদী তাকালো চারদিকে এবং প্রথমবারের মত লক্ষ করল আমাকে ।
বছরখানেক
পরের কথা। আমি আর জো বসে আছি রান্নাঘরে আগুনের সামনে। ভীষণ শীত পড়েছে। মিসেস জো
ফিরে এসেছেন, সঙ্গে আঙ্কেল প্যুমবলচুক। একটা প্রস্তাব এসেছে আমার
ব্যাপারে। মিস হ্যাভিশ্যামের ওখানে খেলতে যেতে হবে। তিনি চান আমি যেন ওর বাড়িতে
গিয়ে কথামত খেলাধুলা করি। পরদিন সকালে
আক্কেল
প্যুমবলচুক আমাকে নিয়ে রওনা হলেন মিস হ্যাভিশ্যামের বাড়ির উদ্দেশে।
পৌছে
গেলাম আমরা। মিস হ্যাভিশ্যামের সঙ্গে দেখা হলো। সেখানে পরিচয় হলো এস্টেলা নামের
রূপসী এক মেয়ের সঙ্গে। প্রায়ই ওখানে যেতে হয় আমাকে। একদিন এস্টেলা নামের
মেয়েটি চরম অপমান করল আমাকে। কিন্তু বদলা নিলাম অন্যভাবে। অন্য একটি ছেলে ওকে
অপমানের চেষ্টা করলে মারমুখী হয়ে উঠলাম আমি। উচিত শিক্ষা দিলাম ছেলেটাকে। আবার
সুসম্পর্ক গড়ে উঠল এস্টেলার সঙ্গে।
বেশ
কয়েক বছর পরের কথা। আমার ব্যাপারে এক অজানা লোকের কাছ থেকে অদ্ভুত এক প্রস্তাব এল
জ্যাগার্স নামের এক উকিলের মাধ্যমে। আমাকে ভদ্রলোক হয়ে মানুষের মত বাচতে হবে। আর সেজন্য
লেখাপড়া শিখতে হবে। লন্ডনে যেতে হবে আমাকে। ওখানে এসব শিখবার জন্য আমাকে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। অবশ্য এসব নিয়ে
বিশেষ চিন্তার কিছুই নেই, কারণ মি. জ্যাগার্সই হবেন আমার অভিভাবক।
কয়েকদিন
পরই রওনা হলাম লন্ডনের উদ্দেশে। কোচ স্টেশনের সাথেই মি. জ্যাগার্সের অফিস। আমি যখন
ওর অফিসে গিয়ে পৌছলাম, তিনি কোন কাজে বাইরে ছিলেন। পরে ফিরে এলেন
অফিসে। আমাকে নিয়ে বসলেন তিনি কিছু কাজের কথা বলার জন্য। আমাকে আপাতত থাকতে হবে বার্নাড’স ইন-এর তরুণ
মি. পকেট-এর কাছে। সেই আমাকে নিয়ে যাবে তার বাবা অর্থাৎ আমার শিক্ষক মিস্টার
পকেটের কাছে। শুরু হলো আমার লন্ডনের জীবন যাত্রা।
বেশি
বেশি করে খরচ করা শিখে ফেললাম, শিখে ফেললাম কেমন করে লন্ডনের অভিজাত
সমাজে মেলামেশা করতে হয়। তবে সেই পড়ালেখাটাও চলতে লাগল সমান তালে। এভাবে বেশ ক’বছর কেটে
গেছে।
এখন আমার বয়স তেইশ। আজ অবধি জানতে পারিনি, আমার নেপথ্য অভিভাবকের
পরিচয়!
যে
দিনটার কথা বলছি সেদিন ছিল ভীষণ দুর্যোগ-পূর্ণ। আমি একা ঘরে বসে পড়াশোনা করছি।
ঝড়-বাদলের শব্দ ছাপিয়ে শোনা গেল পায়ের শব্দ। দরজা খুলে দিতেই কোট এবং টুপি পরা
একটা লোক ঢুকল ঘরে। ওগুলো খুলে চেয়ারে বসল লোকটা। হঠাৎ করেই চিনে ফেললাম তাকে। বহ
বছর আগের জলাভূমির
সেই
কয়েদী! নেপথ্যে থেকে সে-ই এতদিন আমার যাবতীয় খরচ জুগিয়েছে। কেন জানিনা একথা
জানার পর অনুভূতিটা খুব একটা সুখের হলো না আমার। এরপর আরও অনেক ঘটনাই ঘটেছে।
সেসবে
না গিয়ে এস্টেলার কথায় আসি এবার। শুনেছি তার প্রথম বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি।
ওকে আমার ভাল লেগেছিল। যা হোক দ্বিতীয়বার বিয়ে হয়েছে ওর-বোধহয় সুখেই আছে। ১১ বছর
কায়রোতে থাকার পর দেশে এলে একদিন দেখা হলো হঠাৎ। শুনলাম ড্রামলের সাথে তাঁর বিচ্ছেদ
ঘটেছে। একসাথে আমরা বেরিয়ে এলাম বিধ্বস্ত জায়গাটা থেকে। পন করলাম একসাথেই থাকব আমরা
আজীবন।
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
৮) আর তারা (ইমানদার লোকেরা) তাঁর (আল্লাহর) মহব্বতে
ইয়াতিম, মিসকিন ও বন্দীদের খাদ্য খাওয়ায়। ৯) এবং
(তাদেরকে বলে) আমরা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই তোমাদের খেতে দিচ্ছি। আমরা
তোমাদের কাছে এর কোন প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা পেতে চাই না। ১০) আমরা তো আমাদের রবের পক্ষ থেকে সেদিনের (আযাবের) ভয়ে ভীত, যা হবে কঠিন বিপদ ভরা অতিশয় দীর্ঘ দিন। ১১) আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সেদিনের অকল্যাণ থেকে রক্ষা করবেন
এবং তাদেরকে সজীবতা ও আনন্দ দান করবেন। ১২) আর তাদের সবরের বিনিময়ে তাদেরকে জান্নাত ও রেশমী পোশাক দান করবেন। (সুরা দাহর ৮-১২)
No comments:
Post a Comment