![]() |
অভিশপ্ত হীরা - উইকি কলিন্স - কাহিনী সংক্ষেপ - The Moonstone - Wilkie Collins - Bangla Summary |
পনেরো বছর বয়সে কাজের ছেলে হিসেবে হার্নক্যাসলদের বাড়িতে ঢুকেছিলাম আমি গ্যাব্রিয়েল বেটারেজ। বাড়ির তিন মেয়ের মধ্যে, আমার মতে মিস জুলিয়া ভেরিন্ডারই সেরা। মিস জুলিয়া স্যার জন ভেরিন্ডারকে বিয়ে করেএ বাড়ি ছাড়ার সময় আমিও তাঁর সঙ্গে চলে গেলাম স্বামীর জমিদারীতে। ক’বছর বাদে আমাকে করে দেয়া হলো সাধ্যপাল। বাড়ির হাউজকীপার সেলিনাকে বিয়ে করে সংসার পাতলাম।
পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবন সমাপ্ত হলো স্ত্রীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। এ ঘটনার কিছুদিন পর মারা গেলেন স্যার জন, র্যাচেল নামের মেয়েটিকে রেখে। এদিকে আমার মেয়ে পেনিলোপের সমস্ত দায়-দায়িত্ব নিলেন বিবি সাহেব। অকে স্কুলে পাঠানোর
ব্যবস্থা করলেন। পরে বড় হয়ে ও হয়ে গেল মিস্ র্যাচেলের খাস পরিচারিকা। একদিন বিবি সাহেব সাধ্যপালের দায়িত্ব বাদ দিয়ে আমাকে বাড়ির তত্বাবধায়কের দায়িত্ব নিতে বললেন।
আমার বিবি সাহেবের মেঝোভাই জনাব হার্নক্যাসল (Colonel John Herncastle) সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। ভারতে গিয়ে সেনাবাহিনীর উচ্চপদে আসীনও হয়েছিলেন। কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ায় ফিরে আসতে বাধ্য হন দেশে। তার সম্পর্কে অনেক রটনা আছে। তবে আমি
কেবল হীরের গল্পটাই এখানে বলছি। কথিত আছে, হীরেটা তিনি যেভাবে হাসিল করেছিলেন তা কোনদিন খোলাসা করে বলতে পারেননি কাউকে। পরিবারের লোকজন বা বন্ধু-বান্ধব কাউকেই কোনদিন দেখাননি পাথরটা। কেউ কেউ বলে,
দেখালে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে ঝামেলায়
জড়িয়ে পড়তে হত তাকে। আবার অনেকে বলে হীরেটাকে ভয় পেতেন উনি। ওটার কাছ থেকে তার নাকি জীবন খোয়ানোর ভয় ছিল। জন হার্নক্যাসল একদিন আমাদের বিবিসাহেবের বাড়িতে এসেছিলেন। সে দিনটি ছিল একুশে জুন,
মিস র্যাচেলের জন্মদিন। পার্টি চলছিল পুরোদমে। হলরূমে উনি ডেকে পাঠালেন আমাকে। গিয়ে দেখি, ক্লান্ত অবসন্ন দেহে কর্ণেল
একাকী বসা, তবে ওর শয়তানি ভরা চোখজোড়া ধকধক করে জ্বলছে।
“আমার বোনকে গিয়ে বলো আমি র্যাচেলকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি?”
ওঁকে হলরূমে রেখে চলে গেলাম বলতে। বিবি সাহেব কিন্তু ওর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন না। নিচে গিয়ে কথাটা জানালাম ওঁকে। ভেবেছিলাম খেপে উঠবৈন, কিন্তু মনে মনে চটলেও মুখে কোন প্রকাশ ঘটালেন না,
বদলে আমারদিকে একটুক্ষণ চেয়ে থেকে ক্রুর হাসলেন। বললেন,
“বেশ, ভাগ্নীর জন্মদিন মনে থাকবে আমার।”
বছর গড়িয়ে পরবর্তী জন্মদিন চলে এল, শুনলাম ভদ্রলোক নাকি অসুস্থ। ছ’মাস পরে জনৈক সরকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে একটা চিঠি পেলেন বিবিসাহেব, জানা গেল, কর্নেল মারা গেছেন।
“বেটারেজ,” মিস্টার ফ্রাঙ্কলিন বললেন, “জানা দরকার বোনের কাছ থেকে অত দুর্ব্যবহার পাওয়ার পরেও ভাগ্নীকে হীরেটা দান করে গেলেন কর্নেল কোন মতলবে?- এটা পড়ে দেখুন।” আমাকে তিনি একটুকরো কাগজ দিলেন, ওতে কর্নেলের উইলের অংশ বিশেষ লেখা। আমি তা তুলে দিচ্ছি, “মুনন্টোন নামে পরিচিত হলুদ হীরেটা আমি আমার ভাগ্মী র্যাচেল ভেরিন্ডারকে দান করে যাচ্ছি। তবে এই শর্তে যে, তার মা হীরে হস্তান্তরের সময় জীবিত থাকবে। আমার মৃত্যু ঘটলে, ভাগ্নীর পরবর্তী জন্মদিনটিতে, সম্ভব হলে আমার বোন জুলিয়া ভেরিন্ডারের উপস্থিতিতে, তার মেয়ের হাতে হীরে দিতে হবে এবং আমি চাই, আমার বোনকে জানানো হোক, র্যাচেলের জন্মদিনে তার দুর্ব্যবহার সত্ত্বেও ক্ষমার নিদর্শন হিসেবে বহুমূল্য হীরেটা তার মেয়ে অর্থাৎ আমার ভাগ্মীকে উইল করে দিয়ে গেছি।”
আস্তাবলের সবচেয়ে দ্রুতগামী বাছলাম আমরা। মিস্টার ফ্র্যাঙ্কলিন আবারও হীরেটা ব্যাঙ্কে রাখতে রওনা হলেন।
একুশে জুন, জন্মদিনের দিন, মিস্টার ফ্র্যাঙ্কলিন আর আমি ‘মুনস্টোন’ এর বিষয়ে খানিকক্ষণ আলাপ করলাম। আজ উনি ওটা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে মিস র্যাচেলকে দেবেন। মিস র্যাচেল টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে,
তালুতে কর্ণেলের সেই অভিশপ্ত হীরে। তার দু’পাশে হাটু গেড়ে বসা গডফ্রে সাহেবের দু’বোন, হীরেটা ঝিলিক দিতেই বারবার চেঁচিয়ে উঠছেন। টেবিলের উল্টো পাশে দাড়িয়ে, মিস্টার গডফ্রে সাহেব হাততালি দিয়ে চেঁচিয়ে বলছেন-দারুণ! দারুণ!
জন্মদিনের ডিনারের পাট চুকতেই আঙ্গিনা থেকে ড্রামের শব্দ কানে এল। ভারতীয় গুরুরা হীরের গন্ধে হাজির হয়ে, গেছে। কিছুক্ষণ পর চলে গেল ওরা। অতিথিরা সব চলে গেল একে একে। স্যামুয়েলকে ওপরে দিলাম। মাঝরাতে যখন বিছানায় গেলাম তখন সবকিছু স্বাভাবিক। সকাল সাড়ে সাতটায় বিছানা ছাড়লাম। কুকুরগুলোকে শিকলে বাধতে সবে নিচে নামছি, পেছনে সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ পেলাম। পেনিলোপ। “বাবা!” গলা চিরে প্রায় আর্তনাদ বেরিয়ে এল ওর। “হীরে গায়েব!”
আমরা ওখানে থাকতে থাকতেই এলেন বিবি সাহেব। চুরির কথা শুনে মেয়ের বেডরূমের দরজা ধাক্কাতে লাগলেন। দরজা খুলে দিলেন মিস র্যাচেল। গোটা বাড়িতে আগুনের মত ছড়িয়ে পড়ল খবর। পুলিশ ডাকা হলো, কিন্তু কোন হদিশ করা গেল না হীরের...।
এই হীরের সর্বশেষ পরিণতি কি হলো তা বলার আগে হীরেটার সংক্ষিপ্ত ইতিহাসটা জানিয়ে দিই। একাদশ শতাব্দীতে মুসলিম বিজেতা মাহমুদ, সোমনাথের শহর থেকে সমস্ত ধন-রত্ব নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তিনজন সাধু এই হীরে বসানো চন্দ্রদেবতার মূর্তিটিকে কিভাবে যেন নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে ফেলে। এরপর মোগল সম্রাট আলমগীরের আমলে এক সৈনিক চুরি করল মুনস্টোন নামের এই হীরেটা। কিন্তু কিছুদিন পর নির্মমভাবে মারা পড়ল ওই সৈনিকটি। এবার তিন সাধু পাথরটা উদ্ধার করতে পারল না। ওটা আরেকজন মুসলমানের কাছে চলে এল-অবশ্য তিনজন সাধু ঠিকই: চোখে চোখে রেখেছে পাথরটাকে। কয়েক শতাব্দী পরের কথা-হীরে তখন মহীশূরের সুলতান টিপুর ছোরার বাটে শোভা পাচ্ছে।
১৭৯৯ সালে চূড়া যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হয় টিপু। জন হার্নক্যাসল নামের একজন ইংরেজ সেনা অফিসার শেষ পর্যন্ত হস্তগত করেন ওই হীরে। প্রায় পঞ্চাশ বছর পর তিনি ওটা দান করে দিয়েছিলেন ভাগ্নী মিস্
র্যাচেলকে। আর তার পর পরই আবার হারিয়ে গেল হীরেটা—
সোমনাথের রাস্তা দিয়ে চলছে মিস্টার মার্থওয়েইট। দশ হাজার লোক হবে কমপক্ষে মিছিল করে এগুচ্ছে! বাজনা শুরু হলো। এতক্ষণ পর্দা দিয়ে ঢাকা ছিল মন্দিরটি, এবারে সরিয়ে দেয়া হলো পর্দা। ওখানে, একটা উচু সিংহাসনে-কৃষ্ণসারমৃগে পৃথিবীর চার প্রান্তে চার হাত প্রসারিত করে তাদের কথিত
চন্দ্রদেবতার মূর্তিটি আসীন। তার কপালে ঝকমক করছে হলদে হীরেটা, যেটিকে ইংল্যান্ডে তিনি মিস্
র্যাচেলের পোশাকে শেষবারের মত দেখেছিলেন--- হ্যা, দীর্ঘ আট শতাব্দী পর সোমনাথে আবারও ফিরে এসেছে চন্দ্রকান্তমণি।
No comments:
Post a Comment