![]() |
অনুপ্রেরণামূলক ঘটনা - খলিফা হজরত আলী (রাঃ) এর বর্ম ও একজন ইহুদি |
অনুপ্রেরণামূলক
ঘটনা - খলিফা হজরত আলী (রাঃ) এর বর্ম ও একজন ইহুদি
শেরে খোদা হযরত আলী (রা) ছিলেন বহুমুখী গুণের অধিকারী। তাঁর বীরত্ব, মহত্ত্ব
ও ন্যায়বিচারের মাহাত্ম মানবজাতির কাছে আজ জীবন্ত দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। একবার
খলিফা হযরত আলী (রা) তাঁর একটা বর্ম হারিয়ে ফেলেন। বর্মটি খলিফার খুবই প্রিয়
ছিল। তাই হারানো বর্মটি খুঁজে বের করার জন্য তিনি তৎপর হলেন। কয়েকদিন পর এক
ইহুদির কাছে বর্মটি খুঁজে পাওয়া গেল। তাই আলী (রা) ইহুদিকে ডেকে বললেন, তোমাকে একটা কথা বলি, তোমার হাতে যে বর্মটা রয়েছে
ওটা আমার। তাই বর্মটি আমাকে ফিরিয়ে দাও।
ইহুদি
লোকটি খলিফার কথা উড়িয়ে দিয়ে বলল, না এটা ঠিক নয়, এটি আমার নিজের বর্ম। এই বর্ম আপনি দাবি করতে পারেন না। ইহুদির এই আচরণে
খলিফা অবাক হলেন। তিনি ধৈর্যধারণ করলেন। আলী (রা) বর্মের জন্য আদালতে গিয়ে
বিচারপ্রার্থী হলেন। তিনি কাজি শরিহর আদালতে অভিযোগ পেশ করলেন।
কাজি
শরিহ ছিলেন ন্যায়বিচারক। তিনি অভিযুক্ত ইহুদিকে আদালতে তলব করলেন। সমন অনুযায়ী
ইহুদি যথাসময়ে কাঠগড়ায় এসে দাঁড়াল।
কাজি
সাহেব বললেন, তোমার বিরুদ্ধে মহামান্য খলিফার অভিযোগ কি সত্য?
চতুর
ইহুদি সাথে সাথেই প্রতিবাদ করে বলল, জি না, মহামান্য বিচারক। এই অভিযোগ সত্য নয়। আমি খলিফার বর্ম চুরি করিনি। এটা
আমারই বর্ম।
কাজি
সাহেব বললেন, তা হলে যে বর্মটি খলিফা তাঁর নিজের বলে দাবি করছেন,
সে বর্মটি তোমার?
ইহুদি
জবাব দিল, নিশ্চয়ই আমার। বর্মটি এখনো আমার কাছেই আছে-
কাজি
সাহেব প্রশ্ন করলেন, মহামান্য খলিফা! অভিযুক্ত ইহুদির কাছে যে বর্মটি রয়েছে সেটিই
যে আপনার তার কি কোনো প্রমাণ আছে?
খলিফা
বললেন,
অবশ্যই তার প্রমাণ আছে। ঐ বর্মটিই যে আমার তার সাক্ষী আছে। এ জন্য
আমি হাসান এবং আমার চাকরের সাক্ষ্য গ্রহণ করার জন্য আপনার প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।
কাজি
শরিহ বললেন, তা বেশ। কিন্তু এদের পরিচয়?
হযরত
আলী (রা) বললেন, হাসান আমার পুত্র। আর কুম্বার আমার ভৃত্য। ওরা সাক্ষ্য
দেবে এবং সত্যকে প্রকাশ করবে। কাজি সাহেব বললেন, মহামান্য
খলিফা! আমি দুঃখিত এ জন্য যে, এদের দু’জনের কারও
সাক্ষ্যই আদালতে গ্রহণযোগ্য নয়। আপনাকে সত্য প্রমাণ করার জন্য অন্য সাক্ষীর
ব্যবস্থা করতে হবে।
কাজির
কথা শুনে মহান খলিফা আলী (রা) বিব্রত হলেন। তবে তিনি মোটেও রাগ করলেন না। শুধু
বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, আপনি কি মনে করেন এরা আমার হয়ে মিথ্যে কথা
বলবে?
কাজি
শরিহ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, আমাকে ভুল বুঝবেন না মহামান্য খলিফা। আমি
জানি আপনি সত্যবাদী। আপনার পুত্র হাসান শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর
দৌহিত্র। মিথ্যে আপনারা বলতে পারেন না। কিন্তু পিতার পক্ষে পুত্রের সাক্ষ্য এবং
মনিবের পক্ষে ভৃত্যের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। মহানবী (সা) তো আমাদের এই শিক্ষাই
দিয়েছেন। কাজেই আপনি যদি হাসান ও কুম্বারের বিপরীতে নতুন কোনো সাক্ষীকে আদালতে
উপস্থিত করতে না পারেন, তা হলে বর্মটির অধিকার নিশ্চিত করা
যাবে না-এটাই ন্যায়বিচার।
এবার
খলিফা আলী (রা) অত্যন্ত বিনীতভাবে বললেন, সম্মানীয় কাজি সাহেব!
বর্মটি যে আমার সে ব্যাপারে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত। কিন্তু এ সত্যকে প্রমাণ করার
জন্য হাসান এবং কুম্বার ব্যতীত তৃতীয় কোনো সাক্ষী আমার কাছে নেই। তাই
ন্যায়বিচারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমি আপনার রায়ই মেনে নিচ্ছি। উপযুক্ত সাক্ষীর
অভাবে বর্মটির ওপর থেকে আমার দাবি তুলে নিচ্ছি।
কাজি
শরিহ এবার ইহুদির অনুকূলে মামলার রায় ঘোষণা করলেন। ন্যায়বিচারের এই তুলনাহীন
দৃষ্টান্ত দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল অপরাধী ইহুদি। সে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ল।
পরক্ষণেই সম্বিত ফিরে পেয়ে সে ছুটে গেল কাজির সামনে। আবেগে উচ্ছ্বাসে দিশেহারা
ইহুদি। সে বলল, অপূর্ব! অতুলনীয় এই দৃষ্টান্ত! যে ধর্মে এমন নিরপেক্ষ
বিচারের বিধান রয়েছে, সে ধর্ম সত্যিই মহান। যে ধর্মের
বিচারে সাক্ষীর অভাবে খলিফার দাবিও অগ্রাহ্য করা হয়, সে
ধর্ম অবশ্যই সর্বশ্রেষ্ঠ। আবেগ আপ্লুত ইহুদি এবার কাজিকে লক্ষ্য করে বলল, হে ন্যায়বিচারক! আমি সৃষ্টিকর্তার নামে শপথ করে বলছি, মহামান্য খলিফা আলী (রা)-এর দাবি ছিল ন্যায়সঙ্গত। এই বর্মটি আমিই চুরি
করেছিলাম। সুতরাং আমি তা প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দিচ্ছি। সেই সঙ্গে ইসলামের প্রতি
আমার আনুগত্য পেশ করছি। আজ থেকে আমি আর ইহুদি নই, আমি
মুসলিম। এভাবেই ধাপে ধাপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সত্য দীন ইসলাম। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে
ন্যায়বিচারের আদর্শ।
No comments:
Post a Comment