শিক্ষামূলক ঘটনা - আল্লাহর নবী (আঃ) ও পিঁপড়া- আব্দুল মান্নান তালিব |
শিক্ষামূলক
ঘটনা - আল্লাহর নবী (আঃ) ও পিঁপড়া - আব্দুল মান্নান তালিব
মহান
আল্লাহ পৃথিবীতে জীব ও জড়
যাকিছু সৃষ্টি করেছেন তাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা অনুভূতি আছে। মানুষ ছাড়া তাদের প্রত্যেকে নিজের ইচ্ছায় এবং সচেতনভাবে আল্লাহর তাসবীহ পড়ছে, তাঁর
গুনগান ও প্রশংসা
করছে। মানুষ চাইলে আল্লাহর গুনগান করতে পারে আবার চাইলে নাও করতে পারে। এ স্বাধীনতা
মানুষকে দেয়া হয়েছে। তবে আল্লাহর গুনগান করলে মানুষের লাভ। আর আল্লাহর গুনগান না করলে মানুষের ক্ষতি। পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ, গাছ-পালা
সবাই আল্লাহর তাসবীহ পড়ে, তাঁর
গুনগান করে। কুরআন মজীদে বলা হয়েছে, কিন্তু
তাদের তাসবীহ পড়া এবং তাদের আল্লাহর গুনগান করা তোমরা বুঝতে পারো না। ছোট্ট একটা পিপড়েও আল্লাহর তাসবীহ পড়ে। এ সম্পর্কে
হাদীসের একটা ঘটনা আজ তোমাদের শুনাবো।
দুটি প্রসিদ্ধ হাদীসগ্রন্থ বুখারী ও মুসলিমে
এ ঘটনাটির কথা বলা হয়েছে। কয়েক হাজার বছর আগের একটা ঘটনা। আল্লাহর এক নবী মনে হয় অনেক দূরের সফর থেকে আসছিলেন। সংগে ছিল তার লোকজন। অনেক মালসামান সফর সামগ্রী। ছিলেন শ্রান্ত ক্লান্ত পরিশ্রান্ত। চাইলেন একটু বিশ্রাম ও আরাম
করতে। একটা বড় গাছ দেখলেন। তার ছায়ায় নেমে পড়লেন। মাল সামান গাছের নিচে রেখে বিছানা পেতে শুয়ে পড়লেন তার ছায়ায়। সবেমাত্র চোখ বুজেছেন এমন সময় কুট করে কামড় দিল একটা উঁশা পিঁপড়ে। তাঁর কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
তিনি বিরক্ত হলেন, রেগে
গেলেন খুব। খুব মানে অনেক বেশি। আল্লাহর নবী হলেও সবার মতো তিনিও মানুষ। অত্যন্ত পরিশ্রান্ত অবস্থায় ঘুমের ব্যাঘাত হওয়ায় তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে লোকদের হুকুম দিলেন, গাছের
নিচে আমাদের যা মাল সামান জিনিসপত্র আছে সব বের করে নিয়ে এসো।
জিনিসপত্র সব বের করে নিয়ে এসে বাইরে এক জায়গায় জড়ো করা হলো, তারপর
হুকুম দিলেন, পিঁপড়ের
সারিগুলোতে, ওদের ঢিবিগুলোতে এবং ওদের আবাসগুলোতে আগুন লাগিয়ে দাও। কাজেই শত শত হাজার হাজার পিপড়ে পুড়ে মারা গেলো।
আল্লাহ তাঁর নবীর একাজটি অত্যন্ত অপছন্দ করলেন। সংগে সংগেই অহীর মাধ্যমে নবীকে তার অসন্তুষ্টি ও ক্রোধের
কথা জানিয়ে দিয়ে বললেন, প্রতিশোধ
নিতে হলে একটি পিপড়ে মারতে, যে
তোমাকে কামড়েছিল। কিন্তু একজনের দোষে পিপড়ের একটা দল এবং একটা উম্মতকে খতম করে দেয়া কোন ধরনের ইনসাফ? অথচ
এরা আমার তাসবীহ ও গুনগান
করে। তাই বিনা কারণে কোনো পিঁপড়েকে মারা যাবে না। কেবল পিঁপড়ে কেন, কোনো
নিরীহ প্রাণীকে বিনা কারণে হত্যা করা যাবে না। বিভিন্ন হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্ট করে চারটি প্রাণীর নাম নিয়ে তাদের মারতে নিষেধ করেছেন। সেই চারটি প্রাণীর একটি হচ্ছে পিপড়ে। দ্বিতীয়টি মৌমাছি, তৃতীয়টি
হুদ হুদ পাখি। আর চতুর্থটি হচ্ছে, সুরদ
নামক একটি বিশেষ পাখি। তবে সাপ, বিছা
ইত্যাদি যেসব প্রাণী মানুষের ক্ষতি করে তাদেরকে হত্যা করা বৈধ ঘোষণা করেছেন। পিঁপড়ে সম্পর্কে আল্লাহর আর এক নবীর কথা তোমাদের বলবো।
খৃষ্টপূর্ব ৯৬৫ থেকে নিয়ে ৯২৬ অব্দ পর্যন্ত ৪০ বছর আল্লাহর এই নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম ফিলিস্তীন, জর্দান
ও সিরিয়া এলাকা শাসন করেন। আল্লাহ তাকে বিভিন্ন প্রাণীর ভাষা শিখিয়েছিলেন। তাঁকে পিঁপড়ের ভাষাও শিখিয়েছিলেন। একদিন তিনি তাঁর বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে এমন একটি উপত্যকায় পৌছুলেন যেখানে ছিল পিঁপড়েদের আবাস। পিঁপড়েদের সরদার বুঝতে পারলো সুলাইমান আলাইহিস সালাম ও তার
সেনাবাহিনী তাদের এই এলাকার ওপর দিয়ে যাবেন। সরদার ছিল অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী।
সে তার দলবলকে হুকুম দিল, তোমরা
বাইরে ঘোরাফেরা করোনা। তাড়াতাড়ি যার যার ঘরে নিরাপদ জায়গায় পৌছে যাও। সুলাইমান তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে এখনই এখান দিয়ে যাবেন। তাদের পায়ের তলায় তোমরা পিষ্ট হয়ে যাবে। অথচ তারা এর কিছুই জানতে পারবেনা। হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম দূর থেকে পিঁপড়ের সরদারের কথা শুনতে পেলেন। আল্লাহ তাঁকে এ ক্ষমতা
দান করেছিলেন। এ জন্যে
তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন। ফলে তার ও তার
সেনাদলের চলাচলে পিঁপড়েদের কোনো ক্ষতি হলোনা। তোমরা পিঁপড়েদের চলাচল করতে দেখেছে। তারা কেমন সুশৃংখল ও সারিবদ্ধভাবে
চলে। কোনো খাবার সংগ্রহ করলে খাবার নিয়ে তারা চলে একটা সুশিক্ষিত সেনাবাহিনীর মতো।
তাদের একদল খাবারটাকে ঘিরে তাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। আর একটা বিশাল বাহিনী সুশৃংখলভাবে পথ তৈরি করে নিয়ে তাদের আবাস ও আস্তানার
দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। পিঁপড়েরা একটা শৃংখলাবদ্ধ নিয়মের অধীনে জীবন যাপন করে। আল্লাহ তাদের এ জীবন
যাপনের ধারা শিখিয়ে দিয়েছেন।
কীট
পতংগের মধ্যে পিঁপড়েরা সবচেয়ে সুশৃংখল জীবন যাপন করে। মানুষের মতো তাদের মধ্যেও বংশধারা আছে। তারাও বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত। তাদের শাসক আছে। শাসকদের অধীনে তারা নিয়ম শৃংখলার সাথে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। যখন কোনো দুশমন কোনো এলাকায় পিপড়েদের আবাসস্থল আক্রমণ করতে আসে তখন সেই এলাকার সমস্ত পিপড়ে তাদের কাজকাম বন্ধ করে দেয়। তারা দুশমনের সাথে মোকাবিলা করার জন্যে বের হয়ে পড়ে। প্রথমে তাদের মধ্য থেকে একজন দ্রুত এগিয়ে যায়। দুশমনদের সম্পর্কে সমস্ত খবরাখবর সগ্রহ করে। সে ফিরে এসে সবকিছু জানিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর তিন চারটি পিপড়ে বের হয়। তাদের পেছনে এগিয়ে আসতে থাকে পিঁপড়েদের একটা বিরাট সেনাবাহিনী। তারপর শুরু হয় দুপক্ষের যুদ্ধ। যে এগিয়ে আসে তাকে কামড়ানো ও দংশন
করা হয়। আসলে পিঁপড়ে ক্ষুদ্র একটা কীট হলেও বেশ বুদ্ধিমান প্রাণী। তারা বুঝে শুনে পরিকল্পনা করে কাজ করে। তারা আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহর
বান্দা এবং একটি পৃথক উম্মত। কেবল পিঁপড়েই বা কেন, প্রাণী
জগতের সকল সৃষ্টিই এক একটি পৃথক উম্মত রূপে বিরাজ করছে। তাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে বলেছেনঃ জমিনে চলে বেড়ায় এমন কোনো প্রাণী এবং আকাশে দুই ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় এমন কোনো পাখি নেই যারা নয় তোমাদের মতো একটা উম্মত।
তাই
সমস্ত জীবের প্রতি আমাদের সদয় ও দায়িত্বশীল
ব্যবহার করা উচিত।
No comments:
Post a Comment