এক সম্ভ্রান্ত
মহিলা চোর
মক্কা
বিজয়ের পরের এক ঘটনা । মক্কায় কুরাইশদের এক শাখা গোত্রের নাম ছিল বনু মাখদুম।
এটা সম্ভ্রান্ত গোত্র বলে পরিচিত। সেই গোত্রের এক মহিলা চুরির ঘটনায় ধরা মাখদুম
গোত্র অন্যদের বিচার সালিসী করে থাকে। অথচ তাদেরই একজন আজ চুরির দায়ে অভিযুক্ত।
এখন এই মহিলার হাতকাটা যাবার জোগাড় ।
ইসলামী আইনে
এ শাস্তির ব্যতিক্রম কিছু নেই। সম্ভ্রান্ত গোত্র। মানী-সম্মানী মহিলা। অথচ তার
হাতকাটা গেলে লজ্জার শেষ থাকবে না। গোত্রের লোকেরা তাই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল।
তারা নবীজীকে বুঝিয়ে শাস্তি কমাবার একটা কৌশল নিয়ে ভাবতে লাগল।
তাই তারা
এমন একজনকে বাছাই করল, যার কথা মহানবী (সা) ফেলতে পারবেন না। নাম তার ওসামা ।
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর পালিত পুত্র ক্রীতদাস যায়েদের(রাঃ) সন্তান তিনি। নবী মুহাম্মদ (সা)
ওসামাকে(রাঃ) অত্যধিক ভালোবাসেন । মক্কা বিজয়ের দিন তাকে নিজ উটের পিঠে চড়িয়ে নবীজী শহরে
প্রবেশ করেছিলেন। তাই গোত্রের লোকেরা ভাবল, ওসামার সুপারিশ নবীজী কোনভাবেই ফেলতে পারবেন
না।
মহিলার
লোকেরা ঠিকই ওসামাকে বুঝিয়ে সুপারিশের জন্য রাজি করাল। অবশেষে ওসামা মহিলাকে
নিয়ে নবী (সা)-এর দরবারে গিয়ে হাজির হলেন । আল্লাহর নবী ওসামার আর্জি আগ্রহভরে
শুনলেন । তিনি মহিলাকে মাফ করার জন্য মহানবী (সা)-কে অনুরোধ জানালেন। ওসামার কথা শুনে নবী (সা) কিছুক্ষণ
গম্ভীর হয়ে থাকলেন। ক্ষণিক পরে ওসামাকে উদ্দেশ করে বললেন, ওসামা! তুমি কি আমাকে আল্লাহর বিধান
পরিবর্তন করতে বলছ ?
মহানবী (সা)
ছিলেন ন্যায়বিচারের উত্তম আদর্শ। ন্যায়পরায়ণ মানুষ হিসেবে তাঁর তুলনা হয় না।
এ কথা শুনে
ওসামার ভুল ভাঙ্গল। লজ্জায় ওসামার মুখ লাল হয়ে গেল। তিনি নবী (সা)-এর কাছে মাফ চাইলেন। নবীজী এবার বললেন, খোদার কসম, আমার
মেয়ে ফাতেমাও যদি এই অন্যায় কাজে লিপ্ত হতো, তা হলে আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি থেকে সেও রেহাই পেত না। কতই না ন্যায়বান ছিলেন আমাদের
প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা)! তার ন্যায়বিচারের দায়িত্ববোধ ছিল অনন্য।
﴿وَالسَّارِقُ
وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ
اللَّهِ ۗ
وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ﴾
চোর-পুরুষ
বা নারী যেই হোক না কেন, উভয়ের হাত কেটে দাও। এটা তাদের কর্মফল এবং
আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ৷ আল্লাহর শক্তি সবার ওপর বিজয়ী
এবং তিনি জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ।
(সুরা আল মায়িদাহ - ৩৮)
No comments:
Post a Comment