Mysterious Island - Jules Vernes
কাহিনী সংক্ষেপ, বই রিভিউ ও ডাইনলোড - রহস্যের দ্বীপ - জুল ভার্ন
গৃহযুদ্ধের তাণ্ডবলীলা চলছে তখন
সমস্ত আমেরিকা জুড়ে। রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধ বন্ধ করার সংকল্প নিয়ে ১৮৬৫ সালের মার্চের মাঝামাঝি
রিচমন্ড শহর অবরোধ করে বসলেন জেনারেল গ্র্যান্ট। জোর
লড়াই করেও কিন্তু তিমি রিচমন্ড দখল করতে
পারলেন না!
শহরের মধ্যেই বন্দী হয়ে আছেন জেনারেলের
কয়েকজন ঝানু
অফিসার। ক্যাপ্টেন সাইরাস হার্ডিং এদের অন্যতম। হার্ডিং-এর সাথেই
গ্রেফতার হয়েছেন নিউ ইয়র্ক হেরাল্ডের চীফ রিপোর্টার গিডিয়ন স্পিলেট। এরই
মাঝে একদিন চালাকি করে শহরে ঢুকে পড়ল ক্যাপ্টেন হার্ডিং-এর
পুরনো ভৃত্য নেব। অত্যপ্ত প্রভুভক্ত এই নেবকে বহু আগেই
দাসত্ থেকে মুক্তি দিয়েছেন হার্ডিং। কিন্তু ভূতপূর্ব মনিব শত্রুদের হাতে আটক
হয়েছেন গুনে জান বাজী রেখে ছুটে এসেছে নেব। সাথে করে নিয়ে
এসেছে হার্ডিং-এর প্রিয় কুকুর টপকেও।
ওদিকে মহা ফাঁপরে পড়লেন রিচমন্ডের
শাসনকর্তা জেনারেল লী। জেনারেল গ্র্যান্ট শহর অবরোধ করে বসে থাকায় তিনি বাইরে
থেকে খবর আনা নেয়া করতে পারছেন না। হুকুম পাঠাতে পারছেন না অন্যান্য সেনাপতিদের কাছে।
কাজেই, অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে একটা বেলুন বানালেন জেনারেল লী। ওতে করে জনাকতক লোরুকে
পাঠিয়ে দেবেন অন্যান্য সামরিক অফিসারদের কাছে।
যারা গ্রেফতার হয়েছিল তাদের মধ্যে একজন - পেনক্র্যাফট; ওর মাথায় বুদ্ধি এল বেলুনে চড়ে পালিয়ে যাবার।
কারণ সেসময় প্রচণ্ড ঝড়ের কারণে বেলুনে চেপে শহরের বাইরে যাবার পরিকল্পনা স্থগিত করা
হয়েছিল। আর সে সুযোগটাই কাজে লাগাল কয়েকজন আটকে পড়া লোক। এদের মঁধ্যে ছিল পেনক্র্যাফট, সাইরাস হার্ডিং, গিডিয়ন স্পিলেট, হার্বাট, নেব আর
ছিল হার্ডিং-এর প্রিয় কুকুর টপ।
নির্দিষ্ট সময়ে বেলুনের কাছে উপস্থিত হলো সবাই।
চারদিকটা আর একবার ভাল করে দেখে নিল। ঝড়ের তাণ্ডবে বেলুনের পাহারাদারেরা কেউই আর ধারে
কাছে নেই। একে একে বেলুনের দোলনায় উঠে বসল অভিযাত্রীরা। একটা একটা করে খুঁটির দড়িগুলো
কেটে দেয়া হলো। এদিক ওদিক দুলতে দুলতে তীর বেগে শূন্যে উঠে গেল বিশাল বেলুন...। তিন
দিন পর। ঝড়ের. তাণ্ডবে অভিযাত্রীদের দফারফা হবার জোগাড়। ইতিমধ্যে বেলুন ফুটো হয়ে
গ্যাস বেরোতে শুরু করেছে। অভিযাত্রীদের আনা খাবার-দাবার থেকে শুরু করে বন্দুক-পিস্তল
সবই ফেলে দেয়া হয়েছে কিন্তু তবু বেলুনের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। সব শেষে দোলনাটা কেটে
ফেলে দেয়া হলো; আর এতে করে অনেকটা হালকা হয়ে গেল বেলুনটা। কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ!
বিকেল চারটে নাগাদ আবার পানির শ’পাচেক ফুট উপরে নেমে
এল বেলুন। এমন সময় ঘেউ ঘেউ করে চেঁচাতে শুরু করল কুকুরটা। কুকুরটার চিৎকারের কারণ
বোঝা গেল একটু পরেই। কেউ একজন চেঁচিয়ে উঠল হঠাৎ - ডাঙা! ডাঙা! ওই যে ডাঙা দেখা যাচ্ছে!
পরের আধঘণ্টা প্রচণ্ড উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটল বেলুন যাত্রীদের। একসময় ডাঙার স্পর্শ-পেল
বেলুন যাত্রীরা। কিন্তু সবাই অবাক হয়ে লক্ষ করল, তাদের দলে ক্যাপ্টেন সাইরাস হার্ডিং
ও তার প্রিয় কুকুর টপ নেই...
কয়েকদিন পরের কথা। হঠাৎ কুকুরের ডাক শুনতে পেল
অভিযাত্রীরা। ওরা দেখতে পেল কৃকুর টপকে। কি যেন বলতে চায় কুকুরটা। কে জানে, ঘেউ ঘেড
ডাক দিয়ে ও হয়তো ওর মনিবের কোন সংবাদ বলতে চাইছে। ওর পেছন পেছন হেঁটে চলল অভিযাত্রীরা।
শেষ পর্যন্ত একটা। গুহার কাছে এসে দাড়াল টপ। ঘুরে একবার চাইল ওদের দিকে, তারপর ঢুকে
গেল গুহার ভেতর, পেছন পেছন ওরাও। ঢুকে ওরা দেখতে পেল, একটা ঘাসের বিছানার পাশে চুপচাপ
বসে আছে নেব, বিছানায় মড়ার মত পড়ে রয়েছেন ক্যাপ্টেন সাইরাস হার্ডিং...।
ক্যাপ্টেনের সুস্থ হয়ে ওঠার পরে একদিনের কথা।
অভিযাত্রীরা যে স্থলভূমিতে বেলুন থেকে নেমেছে সেটা দ্বীপ নাকি মহাদেশ সে-ব্যাপারে,
নিশ্চিত হওয়ার জন্য পাহাড়ের লাভার সিঁড়ি.বেয়ে উঠতে শুরু করল অভিযাত্রীরা। পাহাড়ের
চুড়ায় উঠে ওরা বুঝতে পারল, এটা আসলে দ্বীপই। চারদিক যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর
পানি...।
জুনের শুরুতেই শীত নামল। প্রথমেই মোমবাতির প্রয়োজনবোধ
করল অভিযাত্রীরা। ক্যাপ্টেনের নির্দেশে গোটা ছয়েক সীল মেরে আনল পেনক্রাফট! সীলের চর্বি
থেকে তৈরি হলো মোমবাতি। কিভাবে যেন একটা গমের দানা এসে গিয়েছিল অভিযাত্রীদের সঙ্গে।
ওই একটি দানা দেখে তো ক্যাপ্টেনের খুশি আর ধরে না। তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করলেন, এই একটি
দানা থেকেই ভবিষ্যতে হবে গমের খেত। কাজে কর্মে কেটে গেল আরও অনেকগুলো মাস।
একদিন ক্যাপ্টেন সবাইকে বললেন, এ দ্বীপে আসার
পর থেকে এ যাবৎ এমন কিছু আশ্চর্য ঘটনা ঘটে গেছে যা থেকে মনে করা যেতে পারে, আমাদের
অলক্ষে আমাদেরকে সাহায্য করে যাচ্ছে কেউ। কিন্তু. এ ব্যাপারে ক্যাপ্টেন কয়েকটি অকাট্য
প্রমাণ দিলেও, কোন স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারল না অভিযাত্রীরা। কিন্তু রহস্য যেন নিজেই
আড়াল থেকে বেরিয়ে এল।
লিঙ্কন দ্বীপের সবচেয়ে আশ্চর্য ঘটনাটা ঘটল –পনেরোই অক্টোবর রাতে।
খাওয়ার পর গল্প করছে সবাই। এমন সময় বেজে উঠল টেলিগ্রাফের বেল। স্তব্ধ হয়ে গেল সবাই।
বেল বাজাল কে? আবার বেল বাজতেই উঠে গিয়ে টেলিগ্রাফের চাবি টিপলেন ক্যাপ্টেন। এর উত্তরে
তাদেরকে বলা হলো খোঁয়াড়ে চলে আসার জন্য। দলবলসহ খোঁয়াড়ে এসে ক্যাপ্টেন দেখতে পেলেন,
ওখানে তাঁদের জন্য আছে আরেকটা বার্তা-‘নতুন তার ধরে চলে এসো’।
খোঁয়াড়ের বাইরে, এসে ওঁরা দেখতে.পেল, টেলিগ্রাফের
খুঁটিতে পুরনো তারের সঙ্গে নতুন একটা তার। তারটাকে অনুসরণ করে চলল অভিযাত্রীরা। শেষ
পর্যন্ত রহস্যময় লোকটির দেখা পেল অভিযাত্রীরা-লোকটি আর কেউ নন, পৃথিবীর প্রত্যেকটি
দেশেই যার উপর ঝুলছে আইনের খাঁড়া, সেই ক্যাপ্টেন নিমো। ধীরে ধীরে ওদের দিকে তাকালেন
ক্যাপ্টেন নিমো।
অভিযাত্রীরা বুঝতে পারল, নানা রকম বিপদ-আপদ থেকে
এতদিন যিনি সুকৌশলে তাদেরকে সাহায্য করেছেন, তিনিই এই ব্যক্তি-প্রচণ্ড-অসুস্থ এখন।
বাচার আর কোন সম্ভাবনাই নেই। রাত একটার দিকে অভিযাত্রীদের উপস্থিতিতে শেষ নিঃশ্বাস
ত্যাগ করলেন তিনি।
নটিলাসের সামনের ফুটো দুটো খুঁজে বের করলেন হার্ডিং!
স্টপ কক দুটো খুলে দিতেই হু হু করে পানি ঢুকতে লাগল নটিলাসের ট্যাঙ্কে। চোখের সামনে
ধীরে ধীরে পানিতে তলিয়ে গেল ক্ল্যাপ্টেন নিমোর
প্রিয় সাবমেরিনটা……।
এ ঘটনার প্রায় মাস তিনেক পরের কথা, ফ্রাঙ্কলিন
পর্বতের চূড়া থেকে ধোয়া বেরোতে দেখা গেল – আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত।
কাঁপছে দ্বীপের মাঁটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হলো; আকাশ বাতাস থর থর করে কেঁপে উঠল কানে তালা
লাগানো শব্দে। পরিষ্কার টের পেল অভিযাত্রীরা, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে লিঙ্কন আইল্যান্ড।
বিশাল সাগরের মাঝখানে এখনও মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে গ্র্যানিটের দ্বীপটা-লিঙ্কন দ্বীপের
একমাত্র ধ্বংসাবশেষ। ওতেই ঠাই নিলঅভিযাত্রীরা। এভাবে কেটে গেল নয় দিন।
হঠাৎ একদিন আকাশ আর সাগরের সঙ্গমস্থলে দেখা গেল
একটা কালো বিন্দু আস্তে আস্তে বিন্দুটা বড় হতে হতে একটা জাহাজে রূপ নিল...।
ডানকান নামের জাহাজের সুসজ্জিত কেবিনে জ্ঞান
ফিরল অভিযাত্রীদের। তাদের মুখে এ ক’বছরের ঘটনার ফিরিস্তি
শুনে জাহাজের সবাই তো অবাক। এ যেন রূপকথার কাহিনীকেও হার মানায়।
এক সময় হার্ডিং জাহাজের ক্যাপ্টেন রবার্ট গ্র্যান্টের
উদ্দেশ্যে বললেন, দেখুন ক্যাপ্টেন, এক মহা পাপীকে রেখে গিয়েছিলেন ট্যাবর আইল্যান্ডে।
সেই এক যুগ আগে রেখে যাওয়া আয়ারটনের সাথে আজকের আয়ারটনের তুলনা হয় কি? কোন উত্তর
দিতে পারলেন না ক্যাপ্টেন রবার্ট গ্র্যান্ট। প্রশান্ত মহাসাগরের গভীর নীল জলরাশি ভেদ
করে তখন আমেরিকার দিকে এগিয়ে চলেছে ডানকান।
ভালো লাগলে শেয়ার করবেন প্লিজ।
ধন্যবাদ, ভালো লাগলো। এরকম আরো কাহিনী সং ক্ষেপ দিলে ভাল হয়।
ReplyDeleteআমি যখন খুব ছোট ছিলাম তখন বিটিভিতে এই গল্পের ধারাবাহিক প্রচারিত হতো। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই স্কুলের পড়া শেষ করে বসে থাকতাম টিভি সেট এর সামনে। আমাদের দেশে তখনও চালু হয়নি মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট সেবা ও স্যাটেলাইট। মুষ্টিমেয় কিছু কিছু বাড়িতে টেলিভিশন দেখা যেতো। তাও সাদাকালো। রঙিন টেলিভিশন এসেছে তারও অনেক পরে। জুল ভার্ণ এর এই গল্পটা আমার মনে এতটাই দাগ কেটে গিয়েছিলো যে তাঁর অনুবাদ গল্পের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। এখনো সাদাকালো টিভিতে দেখা সেই দৃশ্যগুলো চোখে ভাসে।
ReplyDelete