মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Tuesday, September 23, 2025

হীরারহস্য – রকিব হাসান – কিশোর থ্রিলার – Hira Rahasya – Rokib Hasan – Kishor Thriller

হীরারহস্য  রকিব হাসান  কিশোর থ্রিলার  Hira Rahasya – Rokib Hasan – Kishor Thriller

হীরারহস্য রকিব হাসান কিশোর থ্রিলার Hira Rahasya – Rokib Hasan – Kishor Thriller

নিঃশব্দে ঘরে ঢুকল ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর ওমর ইউসুফ।

-আমায় ডেকেছেন, স্যার?

অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে ডেস্কে রাখা তিনটে হীরা নাড়াচাড়া করছিলেন পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের প্রধান ডি আই জি সাব্বির আহমেদ চৌধুরী। মুখ তুলে তাকালেন।

-ও, ওমর। এসো। বসো।

তারপর নাটকীয় ভঙ্গিতে দার্শনিক উক্তি করলেন তিনি, অপরাধীরা তাদের অসামান্য বুদ্ধিমত্তা যদি ভাল কাজে ব্যয় করত, তাহলে জগতের অনেক উন্নতি সাধিত হতো।

ইশারায় হীরাগুলো দেখাল ওমর, কোথায় পেলেন, স্যার?

মুচকি হেসে জবাব দিলেন সাব্বির আহমেদ, বলতে পারবে না জানি, তা-ও জিজ্ঞেস করছি, বলো তো কোথায় পাওয়া গেছে?

-কারও গহনা থেকে খুলে নেয়া হয়েছে।

ভুরু কুঁচকে গেল সাব্বির আহমেদের, কি করে বুঝলে?

সাইজ আর কাটার ধরন দেখে, হাসল ওমর, অনুমানটা করেই ফেললাম।

-উঁহু, অত সহজ না, হাসিমুখে মাথা নাড়লেন সাব্বির আহমেদ। হীরাগুলো কোনখান থেকে এসেছে, সেটা শুধু অনুমান করেছ। কোথায় পাওয়া গেছে, তা বলতে পারবে না ৷

হীরাগুলোর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ওমর বলল, কোনও হীরা চোরের কাছে ছিল?

-এবারেও মোটামুটি কাছাকাছিই গেছ। তবে যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এগুলো, সেটা বলতে পারবে না কোনমতেই। কারণ এ ধরনের ঘটনার কথা এতদিনের পুলিশি জীবনে এই প্রথম শুনেছি আমি। কল্পনাই করতে পারবে না কোথায় পাওয়া গেছে।

-আপনি যখন এ ভাবে বলছেন স্যার, তারমানে আসলেই পারব না। কোথায় পাওয়া গেছে?

-একটা রাজহাঁসের বুকে, সবচেয়ে বড় হীরাটা দেখালেন সাব্বির আহমেদ ।

ওমর অবাক। রাজহাঁসের গলায় নেকলেস? কত রকমের বাতিকগ্রস্ত মানুষ যে আছে দুনিয়ায়। চোখের সামনে লাখ লাখ মানুষকে ভুখা থাকতে দেখে একটা পয়সা দান করে না, অথচ পোষা পশুপাখির পেছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করে ফেলে। এদের শাস্তি হওয়া উচিত।

-ওসব আমাদের ব্যাপার না, সাফ জবাব দিয়ে দিলেন ডি আই জি। সমাজের যারা মাথা, এ সব ভাবনা তাঁদের ওপরই ছেড়ে দেয়া যাক। না, রাজহাঁসের গলার হার থেকে আসেনি এটা। বুকের মাংসে গেঁথে ছিল । আর এই যে ছোট ছোট দুটো দেখছ, এর একটা ছিল ডানায়, আরেকটা পায়ে ।

-বেরোল কি করে?

-খেতে গিয়ে। হাঁসের রোস্ট।

-না স্যার, হার স্বীকার করে নিলাম। সত্যিই বলতে পারব না। হাঁসের মাংসে তেল থাকে, হাড্ডি থাকে, এ সব জানি। হীরা থাকে, জন্মেও শুনিনি।

-আমিও শুনিনি, হাসিটা চওড়া হলো সাব্বির আহমেদের। চুরুটের বাক্সটা টেনে নিলেন। বিকেলের দিকে অফিসে এখন সাদা পোশাকে আছেন। ধূমপানে বাধা নেই। বিরক্তমুখে বললেন, ছাড়ার কত চেষ্টা যে করেছি যৌবনে, পারিনি। তোমারও কিন্তু সিগারেট ছাড়ার এটাই উপযুক্ত সময়।

নাহ্, লুকিয়ে খেয়েও শান্তি নেই, ভাবল ওমর। বুড়োটার চোখে ঠিকই পড়ে গেছে। নজর বড় কড়া। অবশ্য হওয়াটাই স্বাভাবিক। এতবড় একটা পোস্ট তো আর শুধু শুধু পাননি। লজ্জিত, আড়ষ্ট ভঙ্গিতে জবাব দিল সে, ছেড়ে দিয়েছি, স্যার। ডাক্তার বলল, ফুসফুসের জোর অক্ষুণ্ণ রাখতে হলে তার মধ্যে ধোঁয়া ঢোকানো চলবে না ।

-ভেরি গুড। মনের জোর আছে। তোমার বয়েসে আপ্রাণ চেষ্টা করেও যে কাজটা আমি করতে পারিনি, তুমি ডাক্তারের এক কথাতেই সেটা করে ফেলেছ, লাইটার জ্বেলে চুরুটে আগুন ধরালেন সাব্বির আহমেদ। এক সেকেন্ড। এমন এক গল্প শোনাব আজ তোমাকে, শার্লক হোমস শুনলেও চমকে যেত।

অপেক্ষা করতে লাগল ওমর ।

চুরুটে গোটা দুই টান দিয়ে শুরু করলেন সাব্বির আহমেদ, খুলনার লোক সৈয়দ আসগর আলী। আর্মিতে কর্নেল ছিল। এখন রিটায়ার্ড। আমার বন্ধু। জমিদারের একমাত্র ছেলে। তার বাবার আমলের সেই পুরানো দিনের মত শিকারের মৌসুমে সৌখিন পক্ষীশিকারীরা আজও গিয়ে তাদের বাড়িতে ওঠে। তবে ইদানীং বন্দুকের চেয়ে ক্যামেরার দিকেই বেশি ঝুঁকেছে শিকারীরা। অতিথি পাখিদের জন্যে এটা নিঃসন্দেহে একটা ভাল খবর ।

দিনকাল বদলে গেছে। টাকাপয়সা আর আগের মত নেই আসগরদের। একমাত্র বাড়ি আর দোকানটা ছাড়া সম্পত্তি বলতে কিছু নেই। জমিদারি আগেই গেছে। জমিও গেছে। রিটায়ার করার সময় এককালীন যা টাকা পেয়েছিল সে, ব্যবসায় খাটিয়েছে। ভুল ব্যবসা। খুলনায় বন্দুকের দোকান। ইদানীং শিকারের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। তাই বন্দুকের ব্যবসা ভাল যাচ্ছে না। সে নিজে বিদেশ থেকে বন্দুক আমদানী করত। এখন প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। ভাল জিনিস কম দামে পেলে সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে বছরে দুচারটা নেয়। বন্দুক যারা সাপ্লাই দেয় তাকে, তাদের মধ্যে একজন ছিল হায়দার খান নামে এক ভারতীয় । কোলকাতায় বাড়ি। আসগর জানিয়েছিল, সে বিরাট বড়লোক, চা বাগানের মালিক। এ বছরের অক্টোবরের শুরুতে আসার কথা ছিল তার। বুনো রাজহাঁস শিকারের ইচ্ছে ছিল। দুটো বন্দুক আর দুই বাক্স বিভিন্ন নম্বরের কার্তুজ আসগরের দোকানের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয় সে। শিকার শেষে বন্দুক দুটো আসগরের কাছেই বিক্রি করে দিয়ে যেত।

-নিশ্চয় ভারতের তৈরি জিনিস? জানতে চাইল ওমর।

-না। ইংল্যান্ডের। গুলি, বন্দুক, দুটোই।

-হুঁ। তারপর?

-বন্দুক, গুলির বাক্স, সব বাড়িতে নিয়ে গেল আসগর। গেস্টদের জিনিস বাড়িতেই রাখে সে। কিন্তু হায়দার আর আসে না। নির্দিষ্ট তারিখেও এল না সে, তার পরেও না। ঢাকায় এলে সচরাচর যে হোটেলটায় ওঠে হায়দার, জানা আছে আসগরের। ভাবল আর দুচার দিন দেখে না এলে হোটেলে খোঁজ নেবে। তারপর এমন একটা ঘটনা ঘটল, খোঁজ নেয়ার আর প্রয়োজনই পড়ল না আসগরের। সোজা আমার কাছে ফোন করল।

আগ্রহে সামনে ঝুঁকে পড়ল ওমর।

-কি ঘটনা?

-বলছি।

চুরুটটা অ্যাশেট্রেতে টিপে মারলেন সাব্বির আহমেদ। সেদিন হাঁস শিকারে বেরোনোর ইচ্ছে হলো আসগরের। নিজের গুলির বাক্স ঘেঁটে দেখে গুলি ফুরিয়ে গেছে। ভাবল, হায়দার খানের বাক্স থেকে কয়েকটা কার্তুজ ধার নেবে। পরে দোকান থেকে নিয়ে এসে আবার জায়গামত রেখে দেবে। হায়দারের গুলি দিয়ে হাঁস শিকার করে আনল আসগর। আস্ত হাঁসের রোস্ট দেয়া হলো খাবার টেবিলে। শিকারের পাখির মাংস খেতে গিয়ে দাঁতের নিচে ছররা পড়াটা স্বাভাবিক। আসগরেরও পড়ল। মুখ থেকে বের করে এনে জিনিসটার দিকে তাকিয়ে তাজ্জব হয়ে গেল সে। হীরা। পুরো হাঁসটাকে ছুরি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করল তখন সে। আরও দুটো হীরা বেরোল পাখির গা থেকে। কিন্তু সীসার কোন গুলি পাওয়া গেল না। অবাক লাগল তার। বুঝতে পারল, কার্তুজের মধ্যে সীসার ছররার বদলে হীরা ভর্তি ছিল।

ভুরু কুঁচকাল ওমর। আশ্চর্য!

-হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকালেন সাব্বির আহমেদ। তারপর আর দশজন যা করত আসগরও সেটাই করল। হায়দার খানের বাক্স থেকে আরেকটা কার্তুজ বের করে খুলল। দেখা গেল, ওটা ভর্তি রুবি পাথরে। আরও একটা কার্তুজ খুলল তখন। মুক্তোয় ভর্তি। আরেকটা জিনিস আবিষ্কার করল, সাত নম্বর কার্তুজগুলোতে সীসার ছররাই আছে, মূল্যবান পাথর ভরে রেখেছে কেবল চার নম্বর কার্তুজগুলোতে। চার নম্বর কার্তুজের কিছু খালি খোসাও পাওয়া গেল । ব্যবহার করা নয়। বারুদ ঠিকই আছে। ছররাগুলো বের করে ফেলে দেয়া হয়েছে।

নিশ্চয় আরও পাথর ভরার জন্যে রেখে দিয়েছিল। কিংবা ভরার মত পাথর আর তার কাছে ছিল না। যাই হোক, আমাকে ফোন করল আসগর। বন্দুক, কার্তুজ সব আমার কাছে পাঠিয়ে দিতে বললাম। দেখেশুনে প্রথমে আমার যা মনে হয়েছে, বলি তোমাকে। এই হায়দার খান লোকটা ভুয়া, চা বাগানটাগান কিচ্ছু নেই তার। ভীষণ চালাক। পাথরগুলো চোরাই মাল। চুরি করা গহনা থেকে খুলে নিয়ে এই পদ্ধতিতে পাচারের ব্যবস্থা করেছে। নিজে আড়ালে থেকে কাস্টমসকে ফাঁকি দিয়ে এ দেশে চালান করে দিতে চেয়েছে ওগুলো। বন্দুকের দোকানদারের নামে পাঠিয়েছে, যাতে কাস্টমস সন্দেহ না করে, ঝামেলা না করে।

-আসগর সাহেবের সঙ্গে তার সম্পর্কটা কি? জানতে চাইল ওমর।

-পুরোপুরি ব্যবসায়িক। আসগর জানিয়েছে, বছরে দুচারবার অন্তত বাংলাদেশে আসত হায়দার খান। কখনও শিকারের উদ্দেশ্যে, কখনও ব্যবসা। প্রতিবারেই সাথে করে বন্দুক, কার্তুজ এ সব নিয়ে আসত। বিক্রির উদ্দেশ্যে। আসগরকে বলত, সিঙ্গাপুর থেকে আনে। ভাল জিনিস, মোটামুটি কম দামে পায়। আসগরও আগ্রহ করেই নিত। তবে প্লেনে করে এ ভাবে তার নামে বন্দুক পাঠানো এবারেই প্রথম। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বন্দুকের পিছে পিছেই এসেছিল হায়দার খান। দম নেয়ার জন্যে চুপ করলেন সাব্বির আহমেদ।

তর সইছে না ওমরের। তাহলে আসগর সাহেবের বাড়িতে গেল না কেন?

-যাওয়ার অবস্থা ছিল না তার।

-কেন, কি হয়েছিল?

-হোটেলের রূমে মরে পড়েছিল। হৃৎপিণ্ড বরাবর একখান ছুরি ঢোকানো ।

-বলেন কি? আসগর সাহেব তারমানে জানতেন না?

-না। পত্রিকায় নিউজটা চোখ এড়িয়ে গেছে তার। আমাকে হীরার কথা জানানোর পর সব বুঝতে পারলাম, খুন হওয়া হায়দার খানই আসগরের গেস্ট। খুনের কোন মোটিভ খুঁজে পাইনি আমরা। খুনীকে ধরতে পারিনি।

মাথা ঝাঁকাল ওমর, হুঁ, এখন মনে পড়ছে, রহস্যময় এই কেসটার কথা পত্রিকায় পড়েছি আমি।

-তবে পত্রিকাওলারা কিছু কিছু খবর জানে না, যেটা আমরা জানি; ওদেরকে বলা হয়নি। মৃত লোকটার নাম আসলে হায়দার খানই। চা বাগানটাগান কিছু নেই তার, আগেই যেটা অনুমান করেছিলাম আমি। আন্তর্জাতিক এক রত্নচোর। খুনীর হাতের প্রচুর ছাপ পাওয়া গেছে হোটেলের ঘরের জিনিসপত্রে। পুলিশের ফাইলে ওসব ছাপের রেকর্ড নেই ৷ সেজন্যে খুনী কে, কিছুই অনুমান করতে পারিনি আমরা। ছাপগুলো ছোট। মেয়েমানুষের আঙুলের ছাপের মত। একটা জিনিস পরিষ্কার, খুনী পেশাদার নয়। তাহলে এ ভাবে ছাপ ফেলে যেত না। সাবধান হতো। এই ছাপ রহস্যটাকে অনেক বেশি জটিল করে তুলেছে। প্রথম দৃষ্টিতে মনে হয় সহকর্মীদের কারও সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল হায়দার, সেই লোকই হোটেলে ঢুকে খুন করে রেখে গেছে তাকে। কিন্তু তাহলে মেয়েমানুষের হাতের ছাপ কেন?

-পাথরগুলো কোথা থেকে এসেছে সেটা জানা গেছে?

-তা গেছে। দক্ষিণ কোলকাতার এক ধনী বিধবা মহিলার বাড়ি থেকে। মহিলার নাম মিসেস অরুন্ধতী সোম। স্বামী বিরাট ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট ছিলেন। মিসেস সোমই এখন কারখানা দেখাশোনা করেন। গহনাগুলো সম্ভবত হায়দার খান নিজের হাতেই চুরি করেছে। তারপর সেগুলো থেকে পাথর খুলে নিয়ে কার্তুজে ভরেছে। কৌশলে ওদেশ থেকে বের করে দিয়েছে। পিছে পিছে এসেছে ওগুলোর। খুন না হলে এতদিনে ঢাকার কোনও জুয়েলারি শপে বিক্রি হয়ে যেত ওসব পাথর। কোনদিনই আর ধরা পড়ত না সে। বছরে দুচার বার ঢাকায় আসত হায়দার খান। বোঝা গেছে চোরাই মাল বিক্রি করতেই আসত। পার পেয়ে গেছে এতদিন। কিন্তু এবারে বাদ সাধল খুনী। তার পিছু নিল। খুন করল। মালপত্র সব ঘাঁটাঘাঁটি করল। তবে রত্নগুলো না নিয়েই ফিরে যেতে হয়েছে খুনীকে।

-ডাকাতির ব্যাপারে কাউকে সন্দেহ করেছে ইনডিয়ান পুলিশ?

-মিসেস অরুন্ধতী সোমের পরিচারিকা মাধবীলতা নামে বিগতযৌবনা এক বয়স্কা মহিলাকে সন্দেহ করছে পুলিশ। তবে খুনটা মাধবীলতা করেনি। কারণ ঢাকায় যখন হায়দার খান খুন হয়, সে-সময় কোলকাতাতে মিসেস সোমের বাড়িতেই ছিল সে, খুনের জায়গা থেকে বহুদূরে। আঙুলের ছাপগুলোও তার নয়। সন্দেহ করলেও খুনের সঙ্গে কোন ভাবেই মাধবীলতাকে জড়াতে পারেনি ওখানকার পুলিশ।

-অন্য একটা প্রসঙ্গ, ওমর বলল। হায়দার খান কি সত্যি সত্যি শিকারী ছিল?

-তা তো ছিলই। নইলে কার্তুজ নিয়ে এত ঘাঁটাঘাঁটি করতে পারত না। বন্দুকের বাক্সে কার্তুজের বাক্স, তার মধ্যে রত্ন পাচার, এ সব কথা মাথায়ই আসত না তার। এ ভাবে আগেও নিশ্চয় মূল্যবান জিনিস পাচার করেছে সে।

-হ্যাঁ, এ জন্যেই প্রশ্নটা করলাম। আমার বিশ্বাস, খুনী নিশ্চয় এ সব কথা জানে। তার বন্দুক দুটোর কথাও জানে। ঢাকায় হোটেলে খুঁজে পায়নি। খুলনায় আসগর সাহেবের বাড়িতে হানা দিতে যায়নি। তারমানে ওখানে পাঠানোর কথা নিশ্চয় জানে না। একটা কথা ঠিকই বুঝেছে, হোটেলে মালপত্রের মধ্যে যেহেতু ছিল না, রত্নগুলো বন্দুকের বাক্সেই আছে।

ওমরের দিকে সরাসরি তাকালেন সাব্বির আহমেদ। তাতে কি?

-বন্দুক দুটো দিয়ে ফাঁদ পেতে খুনীকে ধরার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।

-কি ভাবে?

-পত্রিকার মাধ্যমে। ঢাকার কয়েকটা বড় বড় দৈনিকে ঘোষণা দেয়া যেতে পারে। বলা যায় না, খুনীর নজরে পড়েও যেতে পারে। আর পড়লে আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবেই।

-আসলে কি করতে চাও তুমি? জানতে চাইলেন সাব্বির আহমেদ । পত্রিকার মাধ্যমে খুনীকে জানাতে চাই বন্দুক দুটো খুলনায় কার কাছে আছে।

-খুনী যদি এখন ঢাকায় না থাকে?

-সেটাও প্রশ্ন। তাহলে আরেক কাজ করা যায়। কোলকাতারও দু-তিনটে বড় পত্রিকায় ঘোষণাটা ছাপানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে বলা হবে, হায়দার খান মারা গেছে। তার উত্তরসুরী কেউ যদি থেকে থাকে তাকে উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে বন্দুক দুটো খুলনার আসগর আলীর বাড়ি থেকে সংগ্রহ নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে। আমার বিশ্বাস, হয় চিঠিতে যোগাযোগ করবে খুনী, নয়তো নিজেই চলে আসবে বন্দুক দুটো নিয়ে যাওয়ার জন্যে। তারমানে তুমি বন্দুক দুটো আবার খুলনায় আসগর আলীর বাড়িতে পাঠাতে চাও?

-পাঠাতে নয়, নিজেই হাতে করে নিয়ে যেতে চাই। আপনি আসগর আলী সাহেবকে ফোন করে সব জানিয়ে দিন।

-হুঁ, বুদ্ধিটা খারাপ না তোমার। চুরুটের বাক্সের দিকে হাত বাড়িয়েও কি ভেবে হাতটা ফিরিয়ে আনলেন সাব্বির আহমেদ। খুনীকে ধরার এখন এটাই একমাত্র উপায়। আমাদের চালাকিটা ধরে ফেললে অবশ্য কোনমতেই আসবে না। তবে চেষ্টা অন্তত একবার করে দেখা দরকার। লোভ বড় খারাপ জিনিস। বলা যায় না, লোভ সামলাতে না পেরে চলে আসতেও পারে। অনেক টাকার রত্ন।

বন্দুক নিয়ে খুলনায় আসগর আলীর বাড়িতে চলে এল ওমর।

তার ধারণা, ঘোষণা দেখে প্রথমে আসগর আলীর কাছে চিঠি লিখে খোঁজ-খবর নেবে খুনী। নিশ্চিত হতে চাইবে ওগুলো হায়দার খানের সেই বন্দুক দুটোই কিনা। তারপর যদি প্রমাণ দিতে পারে উত্তরাধিকার সূত্রে ওগুলোর মালিক সে, তাহলেই শুধু দেখা করবে। না পারলে ভিন্নপথে হাতানোর চেষ্টা করবে। আর সেই ভিন্ন পথটা হলো চুরি ।

ঝুঁকি নিল না ওমর। বন্দুকের বাক্সে কার্তুজের বাক্স দুটোও রাখল, তবে রত্নভরা কার্তুজগুলো বের করে নিয়ে তাতে সাধারণ কার্তুজ ভরে দিল ।

ফাঁদের কথাটা জানা থাকল শুধু তিনজনের, সাব্বির আহমেদ, কর্নেল আসগর আলী, আর ওমর।

বন্দুকের বাক্সে হায়দার খানের নামের ট্যাগ লাগিয়ে গান-রূমের কাজের টেবিলে ফেলে রাখা হলো। সঙ্গে কার্তুজের বাক্স আর শিকারের সময় কাজে লাগে এমন কিছু ব্যবহৃত জিনিসপত্র, যাতে খুনীর মনে কোন রকম সন্দেহ না জাগে যে এটা সাজানো ।

গান-রূমটা মূল বাড়ির মধ্যে নয়। পেছনের উঠানের পাশে বাড়ির লাগোয়া অন্য একটা বিল্ডিঙে। বাড়ির বাসিন্দাদের যাতে বিরক্ত করা না লাগে সেজন্যে গান-রূমের পাশের একটা খালি ঘরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওমর। দুই ঘরের মাঝখানে কোন দরজা নেই। ঢুকতে হলে বাইরে দিয়ে ঘুরে আসতে হয়। দুই ঘরেই বিজলী বাতি আছে, তবে ওমর যেটাকে বেছে নিল, সেটাতে শুধু অল্প পাওয়ারের একটা বাল্‌ব লাগানো। ঘরের চেহারাটা এমন করে রাখল, যাতে চোর এলে ভাবে ওটাতে কেউ থাকে না ।

অপেক্ষা করতে লাগল ওমর। দশ দিন পেরিয়ে গেল। চিঠিও এল না। কেউ দেখা করতেও এল না। তার যখন মনে হতে লাগল, অকারণেই সময় নষ্ট করছে, ঠিক এই সময় তার পেতে রাখা ফাঁদে ধরা পড়ল এমন এক শিকার, অবাক হয়ে গেল সে।

প্রতিদিনকার মতই সেদিনও আসগর আলীর সঙ্গে মাঝরাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে ঘুমাতে গেল সে। শোয়ার পর পরই ঘুমিয়ে পড়ল ।

খানিক পরেই ঘুম ভেঙে গেল তার। চমকে জেগে গেল। অবচেতন মনে একটা বিচিত্র শব্দ প্রবেশ করেছে। মুহূর্তে পুরো সজাগ হয়ে গেল সে। কিসের শব্দ বুঝতে পারল না। তবে অস্বাভাবিক একটা কিছু যে ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছে তার, তাতে কোন সন্দেহ নেই। নড়ল না সে। চুপচাপ পড়ে থাকল বিছানায়। অন্ধকারে কান পেতে আছে। শব্দটা একবারই মাত্র হয়েছে। তারপর নীরবতা। চাঁদের অতি অস্পষ্ট আলো চারকোণা জানালাটার অবস্থান নির্দেশ করছে।

অবশেষে আবার শোনা গেল সেই শব্দ, এতক্ষণ যার প্রতীক্ষায় ছিল সে। খুব মৃদু। ধাতব জিনিসে ঘষা লাগার শব্দ। পাশের ঘর থেকে এসেছে। গান-রূম থেকে। পাহারাদার হতে পারে। পাহারা দিতে এসে ঘুরে দেখে যাচ্ছে হয়তো। কিন্তু নিশ্চিত হবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল ওমর।

উঠে বসে বালিশের নিচ থেকে পিস্তলটা টেনে বের করে নিল সে। তুলে নিল বালিশের এক পাশে রাখা টর্চ। তারপর নিঃশব্দে পা টিপে টিপে দরজার দিকে এগোল। সাবধানে গলা বাড়িয়ে বাইরে উঁকি দিল।

কাউকে চোখে পড়ল না। গান-রূমের জানালায় আলোর চিহ্নও নেই। সন্দেহ বেড়ে গেল তার। পাহারাদার কিংবা বাড়ির লোক হলে ঘরে ঢুকে আলো জ্বালত।

পা টিপে টিপে গান-রূমের জানালার কাছে এসে দাঁড়াল সে। ভেতরে উঁকি দিল। টেবিলটার কাছে টর্চের আবছা আলো নড়ছে। টর্চ জ্বেলে আলোর দিকটা হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখা হয়েছে, যাতে কেবল আভাটা বেরোয়। একটা ছায়ামূর্তিকে দেখা গেল সেই আলোয়। সন্দেহজনক দৃশ্য।

হাতটা সামান্য সরাল মূর্তিটা। খানিকটা আলো পড়ল বন্দুকের বাক্সের ওপর। বাক্সটা খোলা।

খুব সাবধানে, বিন্দুমাত্র শব্দ না করে গান-রূমের দরজার দিকে রওনা হলো ওমর। লোকটার কাছে পিস্তল থাকতে পারে। দরজার কাছে এসে দেখল হাঁ হয়ে খুলে আছে। আস্তে করে ঢুকে পড়ল ভেতরে। ডান হাতে পিস্তল উদ্যত রেখে মূর্তিটার দিকে করে টিপে দিল টর্চের সুইচ। উজ্জ্বল আলো গিয়ে পড়ল ছায়ামূর্তির গায়ে।

চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরে দাঁড়াল মূর্তিটা। ওমরকে দেখে মুখ হাঁ হয়ে গেল। ওমরও অবাক। মাত্র ষোলো-সতেরো বছরের একটা ছেলে। দু চোখে আতঙ্ক।

ওমর আশা করেছিল, ভয়ঙ্কর চেহারার কোন ডাকাতকে দেখতে পাবে। এ রকম একটা কিশোরকে দেখবে কল্পনাই করেনি।

-কে তুমি? এখানে কি? চাবুকের মত আছড়ে পড়ল যেন ওমরের কর্কশ কণ্ঠ ।

-আ-আ-আমি...স্যার, তোতলাতে লাগল ছেলেটা।

ঘরের আলো জ্বেলে দিল ওমর। চারপাশে চোখ বোলাল ।

-তুমি একা?

-হ্যাঁ, স্যার!

বন্দুকের বাক্সটা দেখাল ওমর।

-ওটা খুলেছ কেন?

কথা জোগাচ্ছে না ছেলেটার মুখে ।

-এটার জন্যেই এসেছ? কোলকাতা থেকে?

-হ্যাঁ, স্যার! এত নিচু স্বরে বলল ছেলেটা, কথাগুলো বড়ই অস্পষ্ট।

এ ধরনের পরিস্থিতি আশা করেনি ওমর। কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না। কঠোর দৃষ্টি কিছুটা নরম হলো তার।

-তোমাকে দেখে তো চোর মনে হচ্ছে না।

-আমি চোর নই, স্যার!

-তাহলে কি খুঁজতে এসেছ? চোরাই মাল?

দ্বিধা করতে লাগল ছেলেটা।

-কথা বলছ না কেন?

-হ্যাঁ, স্যার।

-বন্দুকের বাক্সে?

মাথা ঝাঁকাল ছেলেটা ।

চেয়ার দেখাল ওমর। বসো। সব খুলে বলো আমাকে। সত্যি কথা বলবে।

বসল ছেলেটা । এক বিচিত্র কাহিনী শোনাল ওমরকে ।

ছেলেটার নাম অসিত ঘোষ। বিশ বছর ধরে তার বিধবা মা মিসেস সোমের বাড়িতে চাকরি করছে। অসিত ওই বাড়িতে মার সঙ্গেই থাকে। স্কুলে পড়ে। সুখেই ছিল ওরা, হায়দার খান গিয়ে ঝড় তুলল ওদের সুখের সংসারে। ওর মাকে পটিয়ে ফেলল লোকটা। নিয়মিত বাইরে কোথায় নিয়ে যেত। শেষে মহিলাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল। রাজি হয়ে গেল মাধবীলতা। লোকটাকে শুরু থেকেই ভাল লাগেনি অসিতের। তার মন খচখচ করত। তার মায়ের যথেষ্ট বয়েস, এ রকম একজন মহিলাকে বিয়ে করতে চায় কেন জোয়ান-মর্দ একটা মানুষ? তার মার মনে কেন যে খটকা লাগেনি সেটাও অবাক লাগে তার।

সারাক্ষণ হায়দার খানের ওপর নজর রাখতে শুরু করে অসিত একদিন পিছু নিয়ে দেখে দুটো বন্দুকের বাক্স হাতে এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছে লোকটা। পিছু নেয় সে। বন্দুক দুটো কোথাও পাঠাতে দেখে। তারপর এক ট্র্যাভেল অ্যাজেন্সিতে ঢোকে হায়দার খান। সে বেরোনোর পর অ্যাজেন্সির অফিসে ঢুকে লোকটা কোথায় যাচ্ছে কায়দা করে জেনে নেয় অসিত। জানতে পারে, ঢাকায় যাচ্ছে হায়দার। বাড়ি ফিরে যায় অসিত। এ সব কথা মাকে কিছুই জানায়নি সে। হায়দার খান পালিয়ে যাচ্ছে শুনে মা দুঃখ পেয়ে মুষড়ে পড়তে পারে এই ভয়ে ।

প্রতিদিনই সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান মিসেস সোম। অনেক রাত করে ফেরেন। এর কোন অন্যথা হয় না। আর অসিত চলে যায় টীচারের কাছে পড়তে। এ সব তথ্য জানে হায়দার খান। সে যেদিন ঢাকায় যাবার সিদ্ধান্ত নিল, সেদিন সন্ধ্যায় মাধবীলতাকে তার সঙ্গে বাইরে এক রেস্টুরেন্টে দেখা করতে বলে। মিসেস সোম বেরিয়ে গেলে মাধবীলতাও বেরোয়। রেস্টুরেন্টে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তার মনে কোন সন্দেহ জাগেনি। ভেবেছে জরুরী কোন কাজে আটকে পড়েছে হায়দার। কল্পনাই করেনি, চালাকি করে ওকে সরিয়ে দিয়ে মিসেস সোমের ফাঁকা বেডরূমে ঢুকে গহনা চুরি করছে তখন সে ।

টীচারের কাছ থেকে বাড়ি ফিরে গহনা চুরির কথা শুনে অসিত বুঝে গেল কার কাজ। মায়ের জমানো টাকা বাক্স থেকে চুরি করে গহনাগুলো উদ্ধার করে আনার জন্যে সোজা ঢাকা রওনা হলো সে। কোলকাতা থেকেই ঢাকায় হোটেলের রুম বুক করেছিল হায়দার। ট্র্যাভেল অ্যাজেন্সি থেকে হোটেলের নামটাও জেনে নিয়েছিল অসিত ।

পুলিশের কাছে গেলে না কেন? প্রশ্ন করল ওমর।

গাধামিটা তো সেখানেই করেছিলাম । নইলে কি আর আজ এ অবস্থায় পড়ি! ভেবেছিলাম, পুলিশের কাছে গেলে মায়ের প্রেমের কথা ফাঁস হয়ে যাবে। বুড়ো বয়েসের কেলেঙ্কারি হয়তো সইতে পারবে না মা। এখন বুঝতে পারছি, ভুল করেছি। যার যার ভুলের মাশুল তাকে দিতেই হয়।

-বৈধপথে বাংলাদেশে ঢুকেছ, না অবৈধ পথে?

-অবৈধ পথে। পাসপোর্টই নেই আমার। হুঁ। তারপর কি করলে বলো।

ঢাকায় হোটেলটা খুঁজে বের করলাম। ঘরেই পেলাম হায়দারকে। চিঠি খোলার একটা ছুরি দিয়ে খাম কাটছে। গহনাগুলোর কথা বললাম তাকে। হুমকি দিলাম, ফেরত না দিলে পুলিশকে বলে দেব। আমাকে মারতে শুরু করল সে। গায়ের জোরে পারলাম না। নাকমুখ ফাটিয়ে রক্তাক্ত করে দিল। ভয় পেয়ে গেলাম, মারতে মারতে মেরেই ফেলবে আমাকে। নিজেকে বাঁচানোর জন্যে টেবিল থেকে ছুরিটা তুলে নিয়ে বসিয়ে দিলাম ওর বুকে। মাটিতে পড়ে গেল সে। দ্রুত ওর জিনিসপত্রগুলো ঘেঁটে দেখলাম। গহনাগুলো পেলাম না। বন্দুক দুটোও নেই। বুঝলাম, বন্দুকের সঙ্গে ওগুলো কোথাও পাচার করে দিয়েছে সে। কোথায়, জানি না। বড়ই নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলাম। মাকে কিছু বললাম না। ধোঁকা খেয়ে এমনিতেই প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছে বেচারি। টাকা নেয়ার ব্যাপারে মা আমাকে সন্দেহ করেনি। ভেবেছে তার জমানো টাকাও ধোঁকাবাজ হায়দার খানই চুরি করেছে। ততদিনে বুঝে গেছে, কেন তার সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করেছিল লোকটা-মিসেস সোমের গহনার খবর জানার জন্যে ।

-তোমার ছুরি খেয়ে হায়দার খান যে মরে গেছে, সে-খবর জানো তুমি? জিজ্ঞেস করল ওমর।

চমকে গেল অসিত। ঠিকরে বেরিয়ে আসবে যেন চোখ দুটো। না, স্যার, জানি না! বিশ্বাস করুন, খুন করার জন্যে আঘাত করিনি আমি। আত্মরক্ষার জন্যে... ফুঁপিয়ে উঠল সে।

-তোমার মা এখন কোথায়?

-মিসেস সোমের ওখানেই কাজ করছে। পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে আমিও এখন মিসেস সোমের চাকরি করি। মাইনের টাকা জমিয়ে মায়ের টাকা শোধ করার জন্যে, যে টাকা চুরি করেছিলাম আমি। ঢাকা থেকে সেবার ফিরে গিয়ে নিয়মিত খবরের কাগজে চোখ রেখেছি। গহনাগুলোর কোন খবর আছে কিনা দেখেছি। গহনার খবর পেলাম না, তবে বন্দুকের ঘোষণাটা চোখে পড়ল। খুলনার ঠিকানা আর হায়দার খানের নাম দেখেই বুঝে ফেললাম ওগুলোই আমি খুঁজছি। আবার ঢুকলাম বাংলাদেশে। চলে এলাম এখানে। মাথা নিচু করল অসিত। ঠোঁট কামড়াল। আবার ওমরের দিকে তাকিয়ে বলল, স্যার, সবই বললাম আপনাকে। কোন কিছুই লুকাইনি। আপনিই বলুন, যা করেছি, এ ছাড়া আর কি কিছু করার ছিল আমার?

-হুঁ, চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল ওমর। থাকো আজকের রাতটা এখানেই। কাল তোমাকে নিয়ে ঢাকায় যাব আমি। দেখি, তোমার জন্যে কিছু করতে পারি কিনা। দুই দুইবার বেআইনী পথে বাংলাদেশে ঢুকে দুটো অপরাধ করেছ। তার ওপর করেছ খুন। আদালতের কাঠগড়ায় তোমাকে দাঁড়াতেই হবে। তবে তোমার বয়েস আর পরিস্থিতি বিবেচনা করে তোমার শাস্তির মেয়াদ কমিয়েও দিতে পারেন বিজ্ঞ বিচারক। আর পুলিশের তরফ থেকে, বিশেষ করে আমার তরফ থেকে যতটা সহযোগিতা সম্ভব, তুমি পাবে। 

No comments:

Post a Comment

Popular Posts