মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Friday, June 18, 2021

বাঙ্গালীর হাসির গল্প – ভাগাভাগি - মোহাম্মাদ জসীম উদ্দীন মোল্লা – Vagavagi– Jasimuddin - Bangalir hasir golpo

 

বাঙ্গালীর হাসির গল্প ভাগাভাগি -  মোহাম্মাদ জসীম উদ্দীন মোল্লা VagavagiJasimuddin - Bangalir hasir golpo

বাপ মরে গিয়েছে দুই ভাই আলাদা হবে বড়ভাই ছোটভাইকে বলল, দেখ, আমাদের একটিমাত্র গাই (গাভী) আছে, কেটে তো আর দুই ভাগ করা যাবে না তুই ছোটভাই তোকেই গাই বড় ভাগটা দেই তুই তাহলে গাই মুখের দিকটা নে আর আমি গাই লেজের দিকটা নেই

ছোটভাই ভারি খুশি! বড়ভাই যে তাঁকে ভাল ভাগটা দিয়েছে, সেজন্য সে বড় ভাইয়ের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ সে সারাদিন এখান হতে ওখান হতে ঘাস কেটে এনে গাইটাকে খাওয়ায় আর ওদিকে বড়ভাই রোজ সকালে হাঁড়ি ভরে দুধ দোয়ায়

সেই দুধ দিয়ে ছানা বানায়, ছানা দিয়ে রসগোল্লা বানায়, সন্দেশ বানায় আরও কত কি বানায়!

বড়ভাই ভারি খুশি, বেশ আমার ছোটভাই এমনিই তো চাই এবার বুঝতে পারলাম, বাপের সম্পত্তি তুমি ঠিকই রক্ষা করতে পারবে তোমার ভাগে যখন গাইর মুখের দিকটা পড়েছে, তখন নিশ্চয়ই তোমাকে ভালমতো তাকে খাওয়াতে হবে

বড়ভাইর তারিফ শুনে ছোটভাই আরও বেশি করে গরুকে ঘাস দেয় বড়ভাই আরও বেশি করে গরুর দুধ দোয়ায়; আর ছোটভাইকে আরও বেশি করে তারিফ করে

একজন চালাক লোক একদিন ছোটভাইকে বলল, আরে বোকা! তুই গরুর মুখের দিকটা নিয়ে, দিন রাত গরুকে ঘাস খাইয়ে মরছিস, আর ওদিকে তোর বড়ভাই মজা করে দুধ দুইয়ে নিচ্ছে

ছোটভাইর তখন টনক নড়ল, তাই তো! কিন্তু এখন তো কিছুই করার উপায় নাই আমি যে আগেই গরুর মাথার দিকটা নিয়ে ফেলেছি ঘাস আমাকে খাওয়াতেই হবে

চালাক লোকটি তখন ছোটভাইকে কানে কানে একটি বুদ্ধি দিয়ে গেল

পরদিন সকাল যেই বড়ভাই গাইর দুধ দোয়াতে এসেছে, অমনি ছোট ভাই গাইটির সামনের অংশে একটি লাঠি নিয়ে বাড়ি খোঁচা মারতে শুরু করল এতে গাই গরুটি এদিক ওদিক নড়ে উঠছিল গাই দোয়ানো অসম্ভব বড়ভাই তখন বলে, আরে করিস কি? করিস কি?

ছোটভাই উত্তর দেয়, রোজ আমি গরুকে ঘাস খাওয়াই দুধ দুইয়া নিয়ে যাও তুমি আমাকে একফোঁটা দুধও দাও না গরুর মাথার দিকটা যখন আমার, তার উপরে আমি মুগুরই মারি, আর কুড়ালই মারি, খোঁচা মারি তুমি কোনো কথা বলতে পারবে না

বড়ভাই বুঝল, কোনো চালাক লোক ছোট ভাইকে বুদ্ধি দিয়েছে সে তখন ছোটভাইকে বলল আর তুই গাইর মাখায় মুগুর মারিস না এখন হতে গরুর দুধের অর্ধেক তোকে দিব

ছোটভাই বলল, শুধু অর্ধেক দুধ দিলেই চলিবে না, তোমাকে আজ হতে গরুর জন্য অর্ধেক ঘাসও কাটতে হবে নইলে এই মারলাম আমি গরুর মাথায় মুগুরের ঘা!

আরে রাখ রাখ বড়ভাই মুলাম (নরম) হয়ে বলে, আজ থেকে অর্ধেক ঘাসও আমি কাটব!

বাড়িতে ছিল একটা খেজুর গাছ শীতকাল, খেজুর গাছ কেটে রস বাহির করতে হবে বড়ভাই ছোট ভাইকে বলে, আমাদের একটামাত্র খেজুর গাছ কেটে তো ভাগ করা যায় না সেবার গরুর মাথার দিকটা নিয়ে তুই ঠকেছিলি এবার বল্ খেজুর গাছের কোন দিকটা নিবি? গোড়ার দিকটাই বুঝি তোর পছন্দ হবে

ছোটভাই কিছু না ভেবেই উত্তর করে, আমি খেজুর গাছের গোড়ার দিকটাই নিব

বড়ভাই খুশি হয়ে বলে, আচ্ছা তোর কথাই থাক তুই ছোটভাই, ভাল ভাগটা চাইলি, আমি বড়ভাই হয়ে তো না করতে পারি না!

ছোটভাই নিল খেজুর গাছের গোড়ার দিকটা সে গাছের গোড়ায় রোজ পানি ঢালে তাতে গাছ আরও তাজা হয়

বড়ভাই গাছের আগায় হাঁড়ি বসিয়ে মনের আনন্দে রস পেড়ে আনে শীতকালে খেজুরের রস খেতে কি মজা! রস দিয়ে গুড় তৈরি হয় গুড় দিয়ে মজার মজার পিঠা তৈরি হয়।   

এইভাবে কিছুদিন যায় বড়ভাই খেজুরের রস খেয়ে মোটা হয়ে উঠেছে আর ছোটভাই খেজুর গাছের গোড়ায় পানি ঢালতে ঢালতে মাজায় ব্যথা করে ফেলেছে

এমন সময় সেই চালাক লোকটি আবার এসে দেখল ছোটভাই কেমন ঠকেছে সে তখন ছোট ভাইকে সবকিছু বুঝিয়ে বলল

ছোটভাই বলল, তাই তো, এবারও আমি ঠকেছি কিন্তু খেজুর গাছের গোড়ার দিকের ভাগ তো আমি নিজেই চেয়ে নিয়েছি এর তো আর কোনো প্রতিকার হবে না

দূর বোকা কোথাকার! বুদ্ধি থাকলে প্রতিকার হবে না কেন? এই বলে চালাক লোকটি ছোটভাইর কানে কানে আর একটি বুদ্ধি দিয়ে গেল

পরদিন সন্ধ্যাবেলা, যেই বড়ভাই খেজুর গাছে উঠে সেখানে হাড়ি পাতিতে গাছের আগায় ছাল খানিকটা কাটতেছে, অমনি ছোটভাই একখানা কুড়াল নিয়ে খেজুর গাছের গোড়া কাটতে লাগল, খপ-খপ-খপ

বড়ভাই গাছের উপর হতে শব্দ শুনে বলল, আরে করিস কি? করিস কি?

ছোটভাই গাছের গোড়ায় কুড়াল মারতে মারতে উত্তর করল, তুমি গাছের মাথা নিয়েছ রোজ গাছের মাথা হতে রস পাড়িযা খাও আমাকে একটু দাও না আমার যখন গাছের গোড়াটা, সেখানে আমি কুড়াল মারি আর যাই করি তুমি কিছু বলতে পার না এই বলে ছোটভাই আবার গাছের গোড়ায় কুড়ালের কোপ দিতে আরম্ভ করল, খপ-খপ-খপ

আরে থা-থা-থাম্, বড়ভাই বলে, আজ হতে খেজুরের রসও অর্ধেক তোকে দিব

দুই ভাই বেশ আছে, গরুর দুধ আর খেজুরের রস দুইজনে সমান সমান ভাগ করে লয়

তাদের বাড়িতে ছিল একখানা মাত্র কাঁথা! বড়ভাই ছোটভাইকে বলে, দেখ কাঁথাখানাকে তো ছিঁড়ে দুই টুকরা করা যায় না তুই কাঁথাখানি দিনের ভাগে তোর কাছে রাখ আমাকে রাত হলে দিস

ছোটভাই খুব খুশি বড়ভাই দিনের বেলার জন্য কাঁথাখানা তাঁকে দিয়েছে! কিন্তু দিনের বেলা গরম তখন কাঁথা গায়ে দেওয়া যায় না সে কথাখানাকে সারাদিন ভাঁজ করে ভাঁজ করে দেখে রাত হলে বড়ভাই কাঁথাখানা নিয়ে যায় ছোটভাই সারারাত শীতে ঠির-ঠির করে কাঁপে বড়ভাই দিব্যি আরামে কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমায়

সেই চালাক লোকটি আবার এসে ছোটভাইর অবস্থা দেখল দেখে তার কানে কানে আর একটি বুদ্ধি দিয়ে গেল

পরদিন সন্ধ্যাবেলা ছোটভাই কাথাখানা পানির মধ্যে ভিজিয়ে রাখল বড়ভাই যখন শোয়ার সময় ছোট ভাইয়ের কাছে কাঁথা চাইল, সে তাঁকে ভিজা কাঁথাটি এনে দিল

বড়ভাই খুব রাগ করে বলল, আরে করেছিস কি? কাঁথাখানা ভিজিয়ে রেখেছিস?

ছোটভাই উত্তর করল, কাঁথাখানা যখন দিনের ভাগে আমার, তখন সেটা দিয়ে আমি দিনের ভাগে যাহা ইচ্ছা করতে পারি! তোমার ইহাতে কোনো কথা বলার সুযোগ নাই  

বড়ভাই তখন বলল, কাল হতে রাতে আমরা দুই ভাই- এক সাথে কাঁথা ব্যবহার করব

No comments:

Post a Comment

Popular Posts