মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Wednesday, June 9, 2021

জ্বালাতন - বাংলা ছোট গল্প - আশাপূর্ণা দেবী - Jalaton - Bangla Short Story - Ashapurna Debi

Bangla Short story, Story of life,বাংলা ছোট গল্প,আশাপূর্ণা দেবী,Ashapurna Debi
জ্বালাতন - বাংলা ছোট গল্প - আশাপূর্ণা দেবী - Jalaton - Bangla Short Story - Ashapurna Debi

কালো-কালো মোটাসোটা একটা ঘটা যেনছেলের নামও তেমনই, সামিন
ছেলে তো নয় যেন একটা আস্ত ডাকাত। একেবারে একটা দস্যু, বাপ রে বাপ!
একফোটা একটা ছেলে, তার জ্বালায় বাড়িসুদ্ধ লোকের জ্বালাতন। কখন কি করে রাখে এই ভয়ে সব কম্পমা। এই দেখোনা ঘুম থেকে উঠেই, চট করে চলে গিয়েছে বাবা বসবার ঘরে; সেখানে কালির দোয়াত উল্টে, হাতে মুখে কালি মেখে এলেন যেন সং
মারধোরের তো লজ্জা নেই! আবার তক্ষুনি বা ছোটো কাকার অঙ্কের বইখানা কুচি কুচি করে এঁকেবারে একশো কুচি! কাচের বাসন তো বাড়িতে রাখবার জো-ই নেই! বাবা রাগ করে বলেন, এইবার থেকে লোহার বাটিতে চা খাবো। ছবির কাচ, দেয়ালঘড়ি, তাও সব ফাটা চটা। উচুতে থাকলেই বা কি, ঢিল ছুড়লেই তো ভাঙা যায়! এই তো সেদিন ডাক্তার ডাক্তার খেলা করে বাপের ক্টেথোসকোপটা দিল মাটি করে। লুকিয়ে রাখাও মিছে, ও ছেলে পেটের ভেতর থেকে জিনিস টেনে বের করে নষ্ট করে। শুধু কি এক রকমের দুষ্টুমি করে - হাজার রকমের।
একদিন তো নয়, অমন হাজার দিন! দিন দিন যেন বাড়ছে, এইমাত্র কি করলো জানো? ওস্তাদি করে টুলে উঠে পড়তে গিয়ে ছোটো ফুপুরর কাঁচের তৈরী শখের ফুলদানিটার এক কোনা দিল ভেঙে
আহা! আনকোরা নতুন জিনিসটা একেবারেই কানা করে দিল! আ হাহা! এ দৃশ্য দেখলে কে চুপ করে থাকতে পারে? যে মরা মানুষেরও রাগ আসে।
ছোটোফুপু দাঁতে দাঁত চেপে বলেন, পোড়ামুখোটা মরে না কেনো? দাদিমা বলেন, অলক্ষুণে একটা ছেলে--
কাকা বলেন, ও ছেলেকে খুন করে ফাসি যেতে হয়।
বাবা রাতে বাড়ি এসে পিঠটা খালি ভাঙতেই বাকি রাখেন। মা সকলের সামনে বলেন, আপদ চুকলেই বাচি। আর আড়ালে চোখ মোছেন। তবু এমনি করেই সে বেড়ে ওঠে। রোগ নেই-বালাই নেইপড়লে লাগে নাকাটলে কাঁদে না। কিন্তু একদিন পালে বাঘ পড়ে।
ভোরবেলা ঘুম ভেঙে এসে মা বললেন, সামিনের গা যেন আগুন, ছেলেটা কি রকম করছে।
ছোটোফুপু মুখ ঘুরিয়ে বলেন, ভয় নেই, ভয় নেইও ছেলে আর মরছে না। 
মরছেনা না
- তবু মরে! 
তিনদিনের মামলা। 
তারপরেই সব ফর্সা। 
তারপর? 
তারপর আর কিছুই না। বাড়ি ঠাণ্ডা। গোলমাল নেই, বকাবকি নেই, কেঁচামেচি কান্নাকাটি কিছুই নেই। কিন্তু শান্তিই বা কই? তাও যে পাওয়া যায় না। কাকার ঘরে বন্ধুদের আড্ডা উঠে গেছে। ক্যারমের ঠকাঠক আওয়াজ আর পাওয়া যায় না, গলার শব্দও ক্কচি কানে আসে। ছোটোফুপুর ভাঙা ফুলদানী তাকে তোলাই থাকে, সারানোর কথা মনে পড়ে না। নামাজের ঘরে দাদিমার চোখের পানি আর জায়নামাজ মিশে একাকার হয়ে যায়।
মা, কাচভাঙা ওয়াল পেপারগুলো দেয়াল থেকে নামিয়ে রাখেন, আর চুপি চুপি বলেন, ফিরিয়ে দাও আল্লাহ! ফিরিয়ে দাও প্রভু, ছেলের সকল জ্বালাতন হাসিমুখে সইবো।
ঈশ্বর তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। তার বুকভাঙা মিনতি তিনি শুনে যান
বেচারি বাবার অবশ্য এতো কথা ভাবতেও অবসর নেই। সারাদিন তিনি বাইরে বাইরেই থাকেন রাত্রে খালি বিছানাটায় চোখ পড়বার ভয়েই অন্ধকারে চুপি চুপি এসে শোন, তবু যখন তখন যেন সেই মার খাওয়া, কালশিরে পড়া ছোটো পিঠখানি চোখের ওপর ভাসে, চোখের কোনায় দুএক ফোটা পানি এসে যায়!

এখন যেখানের জিনিস সেখানে থাকে। নামাজে ঘরে ভেজা জায়নামাজ, দেয়ালে ভাঙা চিত্রকর্মের ফ্রেম, নারকেল তেলের বোতলে সয়াবিন তেল ঐ সব আর দেখতে পাওয়া যায় না; দোয়াতের কালি আর লিখে ফুরোয় না, বোতলের তেল মেখে মেখে ফুরোতে হয়। কোনো জ্বালা যন্ত্রনাই নেই। কিন্তু, জ্বালা না থাকা যে কতো জ্বালা, ঐ কথা আগে আর কে ভেবেছিলো?

No comments:

Post a Comment

Popular Posts