মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Tuesday, September 21, 2021

ছুরি (দ্যা অ্যালুমিনিয়াম ড্যাগার – রিচার্ড্ অস্টিন ফ্রিম্যান) – অনুবাদ গল্প – গোয়েন্দ গল্প – রহস্য গল্প – রোমাঞ্চ গল্প - The Aluminum Dagger - Richard Austin Freeman – Bangla Translation

রোমাঞ্চ উপন্যাস,রহস্য গল্প,গোয়েন্দা কাহিনী,অনুবাদ গল্প,থ্রিলার গল্প,The Aluminum Dagger Richard A. Freeman Bangla,দ্যা অ্যালুমিনিয়াম ড্যাগার 

ছুরি (দ্যা অ্যালুমিনিয়াম ড্যাগার রিচার্ড্ অস্টিন ফ্রিম্যান) অনুবাদ গল্প গোয়েন্দ গল্প রহস্য গল্প রোমাঞ্চ গল্প - The Aluminum Dagger - Richard Austin Freeman Bangla Translation (part 1 of 3)

----------------------

পলটনের দ্রুত পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম সিঁড়িতে, পরক্ষণে আমার সহকর্মীর দরজায় শোনা গেল তার কণ্ঠস্বর, নীচে এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন, স্যার। আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান। বললেন, খুব জরুরি দরকার। স্যর, ভদ্রলোক মনে হলো অদ্ভুত ভাবে কাপছেন।

আমাদের সহকারি পলটন বিশদ ভাবে ব্যাপারটা বলতে যাচ্ছিল, এমন সময় আরও একটা দ্রুততর পদশব্দ কানে এল। একটা অদ্ভুত কণ্ঠস্বর থর্নডাইককে উদ্দেশ্য করে বলল, একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেছে, স্যার। আমি এসেছি আপনার সাহায্য চাইতে। আপনি কি এখনই আমার সঙ্গে যেতে পারবেন?

তা পারব, থর্নডাইক বলল। লোকটা কি মারা গেছে?

একেবারে মৃত। ঠাণ্ডা, শক্ত হয়ে গেছে পুলিশের ধারণা---

আপনি যে আমার কাছে এসেছেন, সেটা কি পুলিশ জানে?

হ্যা। আপনি না যাওয়া পর্যন্ত কিছুই করা হবে না।

ঠিক আছে। আমি কয়েক মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়ে নিচ্ছি।

আপনি সিঁড়ির নীচে অপেক্ষা করুন, স্যার; আমি ডাক্তারকে একটু সাহায্য করব তৈরি হতে, কথাটা বলে পলটন লোকটিকে বাইরের বসার ঘরে নিয়ে গেল, একটু পরে তাকে লুকিয়ে প্রাতরাশের ট্রেটা নিয়ে উঠে এল ওপরে।

থর্নডাইক (Thorndyke) আর আমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলাম। নামার সময় কয়েকটা দরকারি জিনিস নিতে ভুল হলো না থর্নডাইকের।

আমরা বসার ঘরে ঢুকতেই আগন্তুক অস্থির পায়চারি থামিয়ে টুপিটা তুলে নিয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। বলল, আপনারা তৈরি তো? আমার গাড়ি দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।

বেশ বড়সড় ব্রুহাম (brougham) গাড়িটায় তিনজনের জায়গা হয়ে গেল। ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করা মাত্র কোচোয়ান ঘোড়ার পিঠে চাবুক কষাল। দুলকি চালে ছুটে চলল গাড়ি।

লোকটা উত্তেজিত স্বরে বলল, যেতে যেতে ঘটনাটা আপনাদের জানিয়ে রাখি। আমার নাম কারটিস, হেনরি কারটিস। এই আমার কার্ড, একটা চারকোনা কাগজ থর্নডাইকের দিকে বাড়িয়ে দিল সে। আমি যখন লাশটা আবিষ্কার করি, তখন আমার সলিসিটর মিস্টার মার্চ্মণ্ট (Mr. Marchmont) আমার সঙ্গে ছিলেন। আপনি না যাওয়া পর্যন্ত যাতে কোনও কিছুতে হাত না দেয়া হয় সেটা খেয়াল রাখতে তিনি সেখানে রয়ে গেছেন।

থর্নডাইক বলল, তিনি বুদ্ধিমানের মত কাজ ফরেছেন। এবার বলুন, ঠিক কী ঘটেছিল।

বলছি, নিহত লোকটা আমার শ্যালক আলফ্রেড হার্টরিজ (Alfred Hartridge)। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, মানুষ সে ভাল ছিল না। একজন মৃত মানুষ সম্পর্কে এভাবে বলতে আমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু যা সত্য, তা তো বলতেই হবে। 

নি:সন্দেহে।

তাকে অনেক অপ্রীতিকর চিঠি পত্র লিখতে হয়েছে আমাকে- মার্চ্মন্ট আপনাকে সব কথাই বলবেন। গতকালই চিঠি লিখে হার্টরিজকে জানিয়েছিলাম যে, কয়েকটা ব্যাপারে কথাবার্তা পাকা করতে তার সঙ্গে দেখা করব। দুপুরের আগেই যেহেতু আমাকে শহর ছাড়তে হবে, তাই তাকে সময় দিয়েছিলাম-সকাল আটটা। সে-ও চিঠি লিখে জানিয়েছিল, ওই সময় সে দেখা করতে পারবে! মিস্টার মার্চমন্ট আমার সঙ্গে যেতে রাজি হলেন। সেইমত আজ সকাল ঠিক আটটায় আমরা দুজন তার চেম্বারে গিয়ে হাজির হলাম। কয়েকবার ঘণ্টা বাজালাম, সজোরে ধাক্কা দিলাম দরজায়, কিন্তু কোনও সাড়া পেলাম না। অগত্যা নীচে গিয়ে হল-পোর্টারের সঙ্গে কথা বললাম। লোকটি উঠন থেকে লক্ষ করল, হার্টরিজের বসার ঘরের বাতিগুলো জ্বলছে। নাইটগার্ড তাকে বলল যে, সেগুলো নাকি সারা রাতই জ্বলেছে। একটা খারাপ কিছু সন্দেহ করে সে-ও আমাদের সঙ্গে ওপরে উঠে এল, ঘণ্টা বাজাল, দরজা ধাক্কাল। ভেতরে জীবনের কোনও সাড়া না পেয়ে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো সে। কারণ, দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। পোর্টার গিয়ে একজন কনস্টেবলকে নিয়ে এল। তার সঙ্গে পরামর্শ করে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকা স্থির হলো। একটা শাবল নিয়ে এল পোর্টার। সমবেত চেষ্টায় ভেঙে ফেলা হলো দরজাটা। আমরা ভেতরে ঢুকে পড়লাম, আর-ঈশ্বর! সে কী ভয়ঙ্কর দৃশ্য! আমার শ্যালকটি বসার ঘরের মেঝেতে মরে পড়ে আছে! ছুরি মেরে হত্যা করা হয়েছে তাকে। পিঠের ওপর দিয়ে বেরিয়ে আছে ছুরি।

রুমাল দিয়ে মুখ মুছে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল সে, এমন সময় গাড়িটা ওয়েস্টমিনস্টার ও ভিকটোরিয়ার মাঝামাঝি একটা নির্জন গলির মধ্যে ঢুকে এক সারি নতুন উঁচু লাল বাড়ির সামনে দাঁড়াল।

পোর্টার গোছের এক লোক ছুটে এসে খুলে দিল ফটক। সে-ও উত্তেজিত। মূল ফটকের বিপরীত দিকে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম আমরা।

কারটিস বলল, আমার শ্যালকের চেম্বার তিনতলায়।

পোর্টারকে সঙ্গে নিয়ে আমরা লিফটে ঢুকলাম এবং কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যে উঠে এলাম তেতলায়। বারান্দা দিয়ে এগিয়ে একটা আধখোলা ভাঙাচোরা দরজা পেলাম। দরজার ওপরে সাদা হরফে লেখা: মি. হার্টরিজ।

দরজার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে এল ইন্সপেক্টর ব্যাজারের (Badger) ধূর্ত মুখ। থর্নর্ডাইককে চিনতে পেরে সে বলে উঠল, আপনি এসে পড়ায় খুশি হলাম, স্যার। মিস্টার মার্চমন্ট শিকারি কুকুরের মত বসে আছেন ভেতরে; আমরা কেউ ঘরে ঢুকলেই ঘেউ-ঘেউ করে দাঁত বের করছেন।

কথাগুলো নালিশের মত শোনালেও তার হাবভাব দেখে বুঝলাম, ইন্সপেক্টর এর মধ্যেই নিরাপদ সমুদ্রে নৌকো ভাসিয়ে দিয়েছে।

ছোট হলঘরটা পেরিয়ে বসার ঘরে ঢুকলাম আমরা। সেখানে একজন কনস্টেবল ও একজন ইন্সপেক্টরকে নিয়ে পাহারায় বসে ছিলেন মার্চমন্ট। আমরা ঢুকতেই আস্তে করে উঠে দাড়াল তারা, ফিসফিস করে স্বাগত জানাল আমাদের, তারপর ঘরের অন্য প্রান্তে তাকাল।

কয়েক মিনিট আমাদের মুখে কোনও কথা সরল না। শেষ পর্যন্ত নিস্তব্ধতা ভাঙল ইন্সপেক্টর, ব্যাপারটা খুবই রহস্যময়, যদিও কিছুদূর পর্যন্ত বেশ পরিষ্কার। মৃতদেহটাই সব কথা বলে দিচ্ছে।

কয়েক পা এগিয়ে আমরা লাশটা ভাল করে দেখলাম। একজন বয়স্ক লোক ফায়ারপ্লেসের সামনে মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। দুই হাত সামনের দিকে বাড়ানো। ছুরির সরু বাঁটটা বাঁ কাঁধের নীচে বেশ কিছুটা বেরিয়ে আছে; ঠোটে সামান্য রক্তের দাগ ছাড়া মৃত্যুর একমাত্র লক্ষণ এটাই। মৃতদেহের খানিকটা দূরে কার্পেটের ওপর একটা ঘড়ির চাবি পড়ে আছে। ম্যানটলপিসের ওপর রাখা ঘড়িটার দিকে তাকালাম-সামনের কাচটা খোলা।

আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে ইন্সপেক্টর বলল, জানেন, ভদ্রলোক অগ্নিকুণ্ডের সামনে দাঁড়িয়ে ঘড়িতে দম দিচ্ছিলেন। খুনি চুপিচুপি তার পেছনে এসে দাঁড়ায়, এবং ছুরিটা বসিয়ে দেয়। চাবি ঘোরানোর শব্দে আততায়ীর পায়ের শব্দ চাপা পড়ে গিয়েছিল। খুনি যে বাঁহাতি, ছুরিটা পিঠের বাঁ দিকে গাঁথা দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। তবে এটা পরিষ্কার নয় যে, সে ভেতরে ঢুকল কেমন করে, আর বেরোলই বা কেমন করে!

থর্নডাইক বলল, লাশটা আশা করি নাড়াচাড়া করা হয়নি।

না। পুলিশ সার্য্ন ডক্টর এগারটনকে ডাকা হয়েছিল; তিনিই লোকটিকে মৃত ঘোষণা করেছেন। এখনই আবার আসবেন ভদ্রলোক। আপনার সঙ্গে দেখা করে শব ব্যবচ্ছেদের ব্যবস্থা করবেন।

তা হলে তিনি না আসা পর্যন্ত আমরা লাশটা সরাব না, শুধু মৃতদেহের তাপমাত্রা দেখব, আর ছুরির বাটে লেগে থাকা ধুলো পরীক্ষা করব।

থর্নডাইক থলের ভেতর থেকে একটা লম্বা কেমিক্যাল থারমোমিটার আর একটা ধুলো ঝাড়ার ব্রাশ বের করল। থারমোমিটারটা মৃত লোকটির পোশাকের তলায় পেটের ওপর রাখল, আর ব্রাশের সাহায্যে ছুরির কালো চামড়ার হাতলে লেগে থাকা সূক্ষ্ম হলুদ গুঁড়ো সংগ্রহ করতে লাগল। ইন্সপেক্টর সাগ্রহে ঝুঁকে পড়ে পরীক্ষা করতে লাগল হাতলটা।। থর্নডাইক হতাশ হয়ে বলে উঠল, আঙুলের একটা ছাপও নেই। লোকটা নির্ঘাত দস্তানা পরে ছিল।

কথা বলতে বলতে সে ছুরির ধাতুর তৈরি খাপটা দেখাল। তাতে বিচ্ছিরি হরফে একটি মাত্র শব্দ লেখা-ত্রাদিতোর (TRADITORE)।

ইন্সপেক্টর বলল, ইটালিয়ান শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে-বিশ্বাসঘাতক। পোর্টারের কাছ থেকে আমি এমন কিছু তথ্য পেয়েছি, যা শব্দটার সঙ্গে খাপ খেয়ে যাচ্ছে। লোকটা এল বলে, তার কাছ থেকেই কথাগুলো শুনুন আপনি।

থর্নডাইক বলল, ততক্ষণে আমি দু-একটা ছবি তুলে নিই, আর একটা নকশা তৈরি করে ফেলি। আপনি তো বললেন, কোনও কিছুই সরানো হয়নি; জানালাগুলো কে খুলেছে?

মার্চন্ট বললেন, জানালাগুলো আমরা খোলাই পেয়েছিলাম। আপনার নিশ্চয়ই খেয়াল আছে, কাল রাতে খুব গরম পড়েছিল।

থর্নডাইক থলের ভেতর থেকে একটা ছোট ফোল্ডিং ক্যামেরা, একটা টেলিসকোপিক ট্রাইপড, জরিপের ফিতে, কাঠের দাঁড়িপাল্লা ও স্কেচবক্স বের করল। ক্যামেরাটা এক কোণে বসিয়ে মৃতদেহসমেত ঘরের একটা ছবি নিল। আর একটা ছবি নিল দরজার কাছে গিয়ে। আমাকে বলল, জারভিস (Jervis), তুমি ঘড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে দম দেবার ভঙ্গিতে হাত তুলে দাঁড়াও।

দাঁড়ালাম সেভাবে। থর্নডাইক একটা ছবি নিল, তারপর চক দিয়ে আমার পায়ের জায়গা দুটোতে দাগ টেনে দিল। এরপর ট্রাইপডটা চকের দাগের ওপর বসিয়ে ছবি তুলল দুটো। সবশেষে মৃতদেহের ছবি তুলল আবার।

ছবি তোলার পর্ব শেষ করে খুব দ্রুত স্কেচ বইটায় ঘরের মেঝের একটা নকশা এঁকে ফেলল সে। তাতে ১/৪ ইঞ্চি = ১ ফুট মাপে (on a scale of a quarter of an inch to the foot) ঘরের সমস্ত জিনিসের অবস্থানই দেখানো হলো। ইন্সপেক্টর কিছুটা অধৈর্য হয়ে দাঁড়িয়ে দেখল সবকিছু। নিজের ঘড়ির দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, আপনি দেখছি পরিশ্রম বা সময়-কোনওটাই বাঁচিয়ে কাজ করেন না। স্কেচটা ফাইল থেকে আলাদা করে নিয়ে থর্নর্ডাইক জবাব দিল, না, তা করি না। যতরকম ভাবে সম্ভব, তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করি আমি। শেষ পর্যন্ত সেগুলো কোনও কাজে না-ও লাগতে পারে, আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে খুবই। আগে থেকে তো কিছু বলা যায় না, তাই আমি সবরকম উপাত্ত সংগ্রহ করে রাখি। ...এই তো, ডাক্তার এগারটন এসে গেছেন।

কুশল বিনিময়ের পর আমরা মৃতদেহ পরীক্ষার কাজে লেগে গেলাম। থারমোমিটারটা তুলে নিয়ে তাপমাত্রা দেখল থর্নডাইক, তারপর জিনিসটা এগারটনের দিকে এগিয়ে দিল। সেদিকে একনজর তাকিয়ে ডাক্তার বলল, মৃত্যুটা ঘটেছে প্রায় দশ ঘণ্টা আগে। খুনটা পূর্বপরিকল্পিত ও রহস্যময়।

থর্নডাইক বলল, ছুরিটা একবার ছুঁয়ে দেখো, জারভিস।

আমি হাতলে হাত দিলাম; হাড়ের মত শক্ত মনে হলো। সবিস্ময়ে বললাম, এটা তো পাঁজরের ভেতর ঢুকে গেছে!

হ্যা, অসাধারণ জোরের সঙ্গে ছুরিটা বসিয়ে দেয়া হয়েছে। দেখে মনে হয়, ভেতরে ঢোকাবার সময় ছুরির ফলাটা ঘোরানো হয়েছিল। ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত মনে হচ্ছে।

এগারটন বলল, অদ্ভুত তো বটেই! অবশ্য এই তথ্য আমাদের কতটা সাহায্য করবে, জানি না। লাশটা সরানোর আগে ছুরিটা কি বের করে নেব?

অবশ্যই, নইলে মৃতদেহ সরানোর সময় নতুন করে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। একটু অপেক্ষা করুন, পকেট থেকে এক টুকরো দড়ি বের করল থর্নডাইক। ছুরিটা ইঞ্চি দুই টেনে তুলে ফলার সমান্তরালে ধরে রাখল দড়িটা, তারপর দড়ির এক প্রান্ত আমার হাতে দিয়ে ছুরিটা সম্পূর্ণ টেনে বের করে নিল। ফলাটা বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পোশাকের ভাজটা চলে গেল। ক্ষতটা কতখানি গভীর, তার মোটামুটি একটা মাপ নিলাম দড়ি দিয়ে। খেয়াল করুন, পোশাকের কাটাটা এখন আর ক্ষতটার সাথে মিলছে না।

হ্যাঁ, ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত, বলল এগারটন। যদিও এ থেকে আমরা কোনওরকম সাহায্য পাব কি না, সন্দেহ।

দেখা যাক। আপাতত আমার কাজ হচ্ছে সূত্র জোগাড় করা।

ঈষৎ লাল হয়ে গেল ডাক্তারের মুখ। আমরা যদি লাশটা শোবার ঘরে নিয়ে পরীক্ষা করি, তা হলে বোধহয় ভাল হয়।

তা-ই করা হলো। নতুন কিছু পাওয়া গেল না। একটা চাদর দিয়ে লাশটা ঢেকে আবার বসার ঘরে নিয়ে আসা হলো।

ইন্সপেক্টর বলল, আপনারা লাশটা পরীক্ষা করেছেন, নানান মাপজোক করেছেন, ছবি তুলেছেন, নকশা এঁকেছেন, কিন্তু বেশিদূর এগোতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। এখানে একটা মানুষ তার নিজের ঘরে খুন হয়েছেন। ফ্ল্যাটে ঢোকার দরজা মাত্র একটি, আর খুনের সময় সেটি ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। জানালাগুলো মাটি থেকে প্রায় চল্লিশ ফুট উঁচুতে। পানি নিষ্কাশনের একটা পাইপও জানালার কাছাকাছি নয়। সেগুলো দেয়ালের সঙ্গে এমনভাবে আটকানো যে, একটা মাছিরও পা রাখার মত জায়গা নেই। ঝাঁঝরিগুলো সবই আধুনিক, কাজেই একটা বড় মাপের বেড়ালের পক্ষেও চিমনি বেয়ে ওপরে ওঠা সম্ভব নয়। অতএব প্রশ্ন হলো, খুনি কেমন করে ভেতরে ঢুকল, এবং বেরিয়ে গেল।

অথচ, কথার খেই ধরলেন মার্চমন্ট। ঘটনা এটাই, সে এখানে ঢুকেছিল, কিন্তু এখন নেই; বেরিয়ে গেছে। বেরিয়ে যাওয়াটা যেহেতু তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে? কেমন করে বেরিয়ে গেল, সেটা আবিষ্কার করাও নিশ্চয়ই সম্ভব হবে।

ইন্সপেক্টর একটু হাসল, কিছু বলল না।

থর্নডাইক বলল, ঘটনা মোটামুটি এরকম মনে হচ্ছে: মৃত ব্যক্তি একা ছিলেন; ঘরে দ্বিতীয় কোনও প্রাণী থাকার কোনও চিহ্ন নেই। চেয়ারে বসে পড়তে পড়তে লোকটার নজরে পড়েছিল যে, ঘড়িটা বারোটা বাজার দশ মিনিট আগে বন্ধ হয়ে গেছে। বই রেখে ঘড়িতে চাবি দিতে দিতে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। সেই অবস্থাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।

একজন ন্যাটা মানুষ পেছন থেকে পা টিপে টিপে এসে তাঁকে ছুরি মারে, যোগ করল ইন্সপেক্টর। থর্নডাইক মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, সেরকমই তো মনে হচ্ছে। এবার পোর্টারকে ডাকা হোক। তার বক্তব্যটা একবার শোনা যাক।

খানিকটা ভয় নিয়ে ঘরে ঢুকল পোর্টার। থর্নডাইক তাকে জিজ্ঞেস করল, কাল রাতে ফ্ল্যাটগুলোয় কে-কে এসেছিল, তুমি জানো?

অনেকেই তো যাওয়া-আসা করেছেন, তবে তাঁদের মধ্যে কেউ এই ফ্ল্যাটে এসেছিলেন কি না, বলতে পারব না। নটা নাগাদ আমি মিস কারটিসকে ঢুকতে দেখেছিলাম।

কারটিস চমকে উঠল। আমার মেয়ে। আমি তো জানতাম না!

তিনি সাড়ে নটায় বেরিয়ে যান, যোগ করল পোর্টার।

ইন্সপেক্টর কারটিসকে প্রশ্ন করল, আপনার মেয়ে কেন এখানে এসেছিলেন, অনুমান করতে পারেন?

পারি।

তা হলে বলবেন না, বাধা দিলেন মার্চমন্ট। কোনও প্রশ্নেরই জবাব দেবেন না।

ইন্সপেক্টর বলল, আপনি যা ভাবছে তা নয়, মিস্টার মার্চমন্ট। ওঁর মেয়েকে আমি সন্দেহ করছি না। তিনি ন্যাটা কি না, সে ব্যাপারে আমার আগ্রহ নেই। কথাটা বলার সময় অর্থপূর্ণ্ দৃষ্টিতে কারটিসের দিকে তাকাল সে। দেখলাম, আমাদের মক্কেলের মুখ হঠাৎ মরা মানুষের মত সাদা হয়ে গেল। দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে নিল ইন্সপেক্টর, যেন পরিবর্তনটা তার চোখেই পড়েনি। পোর্টারের দিকে ফিরে সে বলল, ওই ইটালিয়ানদের কথা আরেকবার বলো। তাদের মধ্যে কে প্রথম এখানে এসেছিল?

সেটা প্রায় এক হপ্তা আগের কথা, জবাব দিল পোর্টার। সাধারণ চেহারার এক লোক আমার কাছে এসেছিল একটা চিঠি নিয়ে। নোংরা খামের ওপর লেখা ছিল: মিস্টার হার্টরিজ, এসকয়্যার, ব্র্যাকেনহার্স্ট ম্যানশনস (Mr. Hartridge, Esq., Brackenhurst Mansions)। হাতের লেখাটা জঘন্য। চিঠিটা আমার হাতে দিয়ে সেটা মিস্টার হার্টরিজকে দিতে বলল সে, তারপর চলে গেল। আমি ওটা মিস্টার হার্টরিজের চিঠির বাক্সে ফেলে দিয়েছিলাম।

তারপর?

ঠিক তার পরের দিন এক কুৎসিত ইটালিয়ান বুড়ি-ওই যে...খাঁচাভর্তি পাখি নিয়ে রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরে ভবিষ্যদ্বাণী করে বেড়ায়, তাদেরই মত এক বুড়ি মূল ফটকের বাইরে এসে আস্তানা গাড়ল। আমি তাকে পত্রপাঠ সেখান থেকে ভাগিয়ে দিলাম, কিন্তু দশ মিনিটের মধ্যে আবার ফিরে এল সে খাচা আর পাখি নিয়ে। আবার তাড়িয়ে দিলাম তাকে। যতবার তাকে তাড়াই, ততবারই সে ফিরে আসে। বুঝুন অবস্থা!

পরদিন এল এক আইসক্রিমওয়ালা। যেসব ছেলে চিঠিপত্তর নিয়ে আসে, তারা তার খদ্দের বনে যায়। সে-ও ঘাঁটি গেড়ে বসল। তাকে উঠে যেতে বলাতে সে জানিয়ে দিল, তার ব্যবসায় বাধা দেয়া চলবে না। শুনে রাগে গা জ্বলে গেল আমার!

তার পরদিন এসে হাজির হলো এক সঙ্গে একটা বাঁদর। হাসি, গান আর বাজনা মিলিয়ে সে এক হই হুল্লোড় কাণ্ড! যেই তাকে তাড়াতে গেলাম, অমনি বাঁদরটা ছুটে এল আমার দিকে; তা দেখে লোকটা তার হেঁড়ে গলার গান এক ধাপ চড়িয়ে দিল।

ইন্সপেক্টর হাসল। সে-ই তোঁ শেষ, তাই না? আচ্ছা, ইটালিয়ান লোকটা তোমাকে যে-চিঠিটা দিয়েছিল, সেটা দেখলে চিনতে পারবে?

পারার তো কথা।

ইন্সপেক্টর দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। এক মিনিট পরেই একটা চিঠির খাপ হাতে ঘরে ঢুকল সে। মোটা খাপটা টেবিলের ওপর রেখে একটা চেয়ার টেনে বসে বলল, এটা ভিকটিমের বুকপকেটে ছিল। এর মধ্যে তিনটে চিঠি একসঙ্গে বাঁধা আছে, খাপের বাঁধন খুলে একটা ময়লা খাম বের করল সে, তার ওপর আঁকাবাঁকা হরফে লেখা: মি. হার্টরিজ, এসকয়্যার। 

এই চিঠিটাই কি লোকটা তোমাকে দিয়েছিল?

ভাল করে দেখে পোর্টার বলল, হ্যা, এটাই।’ 

পরের পর্ব্ 

No comments:

Post a Comment

Popular Posts