মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Sunday, September 19, 2021

খুনে কাকাতুয়া (বার্ড্স অফ প্রে)- জন কোলিয়ার - অনুবাদ গল্প – রোমাঞ্চ গল্প – রহস্য গল্প - Bird of Prey by John Collier – Bangla translation

অনুবাদ গল্প,ছোট গল্প,রহস্য গল্প,রোমাঞ্চ গল্প,খুনে কাকাতুয়া,বার্ড্স অফ প্রে- জন কোলিয়ার,Bird of Prey,Bangla translation,John Collier 
খুনে কাকাতুয়া (বার্ড্স অফ প্রে)- জন কোলিয়ার - অনুবাদ গল্প রোমাঞ্চ গল্প রহস্য গল্প - Bird of Prey by John Collier – Bangla translation

বিয়ের উপহারের ক্ষেত্রে সাধারণত সবাই ঘর সাজানোর উপকরণ কিংবা সাংসারিক ব্যবহারোপযোগী জিনিসপত্র বাছাই করে থাকেন। কিন্তু পশুপাখি উপহার দেয়ার মধ্যে একটা অভিনবত্ব আছে, নিঃসন্দেহে। আর এরকম একটা অভিনব উপহার জ্যাক আর এডনাকে দিয়েছিলেন স্প্যাল্ডিং দম্পতি, তা হলো একটি কাকাতুয়া পাখি। তবে অন্যসব দামি-কমদামি উপহারের মাঝে জ্যাক-এডনা দম্পতিকে বাড়তি খুশি করেছিল ওই কাকাতুয়াটি।

কাকাতুয়াটার অনেক বয়স হয়েছিল। তবে মেজাজ ভাল থাকলে সে মনের আনন্দে শিস্ দিত, আর শোনো বুলি আউড়াত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যেত, পাখিটার কথাগুলো পরিস্থিতির সঙ্গে চমৎকার ভাবে খাপ খেয়ে যেত। পাখিটাকে এডনা আর জ্যাক খুবই ভালবাসত। তারা পাখিটার নাম রেখেছিল, ডিক। ডিক, জ্যাকের বাড়ি জ্যাকের সহকর্মীরা আর ওদের দাম্পত্য জীবনের সবকিছুই এডনার কাছে স্বপ্নের মত সুন্দর মনে হত।

একরাতে বারান্দায় হঠাৎ ঝটপট আওয়াজে এডনার ঘুম ভেঙে গেল। এডনা তখন জ্যাককে ঘুম থেকে ডেকে বলল, জ্যাক, তাড়াতাড়ি ওঠো, মনে হচ্ছে কোনও বেড়াল আমাদের ডিককে ধরেছে।

এডনা তাড়াহুড়ো করলেও কাঁচা ঘুম ভেঙে উঠতে জ্যাকের একটু দেরি হলো। ওদিকে ডিক সমানে ডানা ঝাপটাচ্ছে আর চিৎকার করছে। কিন্তু জ্যাক উঠে দরজা খুলে রান্নাঘরের বারান্দায় যেতেই সব কেমন চুপচাপ হয়ে গেল। জ্যাকের মনে হলো, বড় আকৃতির একটি পাখির অবয়ব মুহূর্তের জন্য দেখতে পেল অস্পষ্ট চাঁদের আলোয়। ওদিকে মেঝের উপর বসে বুড়ো পাখিটা হাঁপাচ্ছে, দম নিতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। তার ডানা থেকে আলগা হয়ে যাওয়া কয়েকটা পালক আশপাশে পড়ে আছে, এ ছাড়া তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি।

স্বামী-স্ত্রী দুজনে আলোচনায় বসল, কে আক্রমণ করতে পারে ওদের প্রিয় কাকাতুয়াকে। জ্যাক বলল, ঈগল বা চিল হতে পারে না, কারণ এ অঞ্চলে তাদের দেখতে পাওয়া যায় না, তা ছাড়া এরা নিশাচর নয়। পেঁচা হতে পারে, তবে আমার মনে হলো পাখিটা পেঁচার চেয়ে আকারে অনেক বড় হবে।

এডনা কিন্তু জ্যাকের কথা উড়িয়ে দিল, ওসব তোমার কল্পনা, কোনও পাখিই ডিককে আক্রমণ করেনি। আমার ধারণাই ঠিক, আসলে বেড়ালেই আক্রমণ করেছিল।

এর বেশ কয়েকদিন পর দেখা গেল কাকাতুয়াটা পালক, টুকরো কাপড় আর শুকনো ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধছে।

তার মানে ও ডিম পাড়বে, জ্যাক বলল, আর এতে বোঝা গেল পাখিটা পুরুষ নয়, মেয়ে কাকাতুয়া, কাজেই আজ থেকে ওর নাম ডিক নয়, ডিকি। সেরাতে আমি ঠিক দেখেছিলাম। ওটা ছিল একটা বুনো কাকাতুয়া, তাই আমার কাছে অস্বাভাবিক বড় মনে হয়েছিল।

এরপর একদিন দেখা গেল, জ্যাকের ধারণাই সঠিক, পাখিটা ডিম পেড়েছে। ডিমটা আকারে অস্বাভাবিক বড়। ডিকি ঝিমুতে ঝিমুতে ডিমে তা দেয়, তার ঘাড় এলিয়ে পড়ে। কাকাতুয়াটা দুর্বল হয়ে পড়ছে। তারপর একদিন ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলো আর ওদিকে কাকাতুয়াটা মরে গেল। কাকাতুয়ার বাচ্চাটা লালন পালনের ভার পড়ল এডনার উপর। এডনা তুমুল উৎসাহে বাচ্চাটাকে লালনপালন করে বড় করে তুলতে লাগল। এ ব্যাপারে জ্যাক সাধ্যমত সময় ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করল। তবে এডনা সবচেয়ে বেশি সাহায্য-সহযোগিতা পেল চার্লির কাছ থেকে। চার্লি, জ্যাকের সহকর্মী, বয়সে জ্যাকের থেকে অনেক ছোট হবে। চটপটে, সুদর্শন এবং মিশুক স্বভাবের ছেলে।

ধীরে-ধীরে কাকাতুয়ার বাচ্চাটা বড় হতে লাগল। পাখিটার পালক গজাতে শুরু করল। কিন্তু দেখতে সেটা মোটেই তার মায়ের মত হয়নি। রঙ তার কুচকুচে কালো। দেখতে কদাকার। এডনা মন্তব্য করল, কাকাতুয়ার বাচ্চাটা মোটেই ডিকির মত সুন্দর নয়, বরং কুৎসিত। তবে মনে হয় ও খুব চালাক হবে, এখন থেকেই শিস দেয়া শিখে গেছে। আর হাসতেও পারে। তবে হাসির শব্দটা ভয়ঙ্কর রকমের।

তাই নাকি, জ্যাক কৌতূহল প্রকাশ করে, তা হলে তো মনে হয় পাখির বাচ্চাটা খুব তাড়াতাড়ি কথাও বলতে পারবে।

আমারও তাই মনে হয়। এডনা বলে, জানো, জ্যাক, বাচ্চাটার ভয়ঙ্কর হাসি শুনে চার্লি নাকি খুব মজা পায়।

শুনে ম্লান হয় জ্যাকের মুখ। চার্লি এসেছিল, তুমি আমাকে বলোনি তো!

কেন, ও যে প্রায় এখানে আসে তুমি তো জানো। বাচ্চাটার পরিচর্যায় চার্লি আমাকে খুব সহযোগিতা করে। এডনা বলে।

জ্যাক অন্যমনস্কভাবে বলল, হতে পারে। তবে ওর বদলি হওয়ার কথা ছিল।

এই সময় পাখিটা বিকট স্বরে হেসে উঠল। চমকে উঠল জ্যাক। মন্তব্য করল, কী ভয়ঙ্কর হাসি, মনে হয় যেন প্রেতাত্মার উল্লাস ধ্বনি। অথচ এই ভয়ঙ্কর হাসিটা চার্লির নাকি ভাল লাগে। আমার মনে হয় ও তোমাকে খুশি রাখার জন্যই এমন উদ্ভট কথা বলে।

ওহ, জ্যাক, তুমি চার্লি সম্পর্কে অযথাই ঈর্ষা পোষণ করছ, এডনা বলল।

এর কিছুদিন পর সত্যি সত্যি চার্লি বদলি হয়ে গেল। জ্যাকও মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল।

এক রাতে এডনা বিরক্ত হয়ে বলল, জানো, জ্যাক, পাখিটাকে এখন আমার কাছে ভীষণ অসহ্য লাগে। ওই কুৎসিত পাখিটাকে এখন আমি আর পছন্দ করতে পারছি না। আর তা ছাড়া, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, যে আসছে, তার মানসিক শান্তির জন্য পাখিটার ভয়ঙ্কর হাসিটা ক্ষতিকর হতে পারে। কাজেই পাখিটাকে বিদায় করে দেয়া ভাল।

জ্যাক খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠল, বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রসঙ্গে। বলল, তোমার মত আমিও কাকাতুয়াটাকে অপছন্দ করতে শুরু করেছিলাম, কিন্তু পাছে তুমি কষ্ট পাও, তাই বলতে পারিনি। এখন আর পাখিটাকে বিদায় করতে কোনও বাধা নেই।

পরদিন জ্যাক পাখির খাচা খুলে দিতে গিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে উঠল, তুমি কি আমাদের সুখবর শুনেছ? আমি বাবা হতে চলেছি। তোমাকে আর আমাদের দরকার হবে না, তোমাকে চলে যেতে হবে।

জ্যাকের কথা শুনে পাখিটা শিস্ দিয়ে উঠল। তারপর হুবহু চার্লির গলা নকল করে আশঙ্কা মেশানো স্বরে বলে উঠল, তাই নাকি! কিন্তু, এডনা, তুমি মা হতে যাচ্ছ, খবরটা শুনে জ্যাক কী বলবে? পরক্ষণে পাখিটা এডনার গলা নকল করে বলল, কেন, জ্যাক ভাববে ওরই সন্তান। আমি তো ওকে চিনি, ও এত বোকা যে, সত্যি-মিথ্যে সবকিছুই খুব সহজে বিশ্বাস করে নেবে। তুমি ওসব নিয়ে ভেবো না, ডার্লিং, কিস্ মি প্লিজ।

কিছুক্ষণের জন্য পাথর হয়ে গেল জ্যাক। তারপর সংবিৎ ফিরে পেয়ে থমথমে মুখে স্টাডিরুমে ঢুকল। ডেস্কের ড্রয়ার খুলে পিস্তলটা বের করে হাতে নিয়ে শয়নকক্ষের দিকে পা বাড়াল, যেখানে এডনা বিশ্রাম নিচ্ছে। ও এত বোকা যে, সত্যি-মিথ্যে সবকিছুই খুব সহজে বিশ্বাস করে নেবে... কাকাতুয়ার বলা কথাটি মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগল জ্যাকের। সত্যিই কি আমি বোকা? জ্যাক নিজেকে প্রশ্ন করল এবং শেষমুহূর্তে একটা অদ্ভুত কাজ করে বসল। নিজের মুখে পিস্তলের নল ঢুকিয়ে আচমকাই টিপে দিল ট্রিগার। জমাট বাঁধা গাঢ় অন্ধকার গ্রাস করার ঠিক পূর্বমুহূর্তে যে চিন্তার ঝিলিক জ্যাককে তৃপ্ত করল, তা হলো, এবার নিশ্চয় আমি বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছি।

মূল: জন কোলিয়ার

অনুবাদ: শাহনেওয়াজ খান

সম্পাদনা: মারুফ মাহমুদ

No comments:

Post a Comment

Popular Posts