![]() |
ট্যাগ: অনুবাদ গল্প, গোয়েন্দা গল্প, রোমাঞ্চ গল্প, The Most Dangerous Man, Edward D. Hoch, The Sherlock Holmes Stories, এডওয়ার্ড্ ডি. হোক,শার্লক হোমস সমগ্র pdf |
সবচেয়ে
বিপজ্জনক
মানুষ
– এডওয়ার্ড্
ডেনটিনজার
হোক
- অনুবাদ
গল্প
- রোমাঞ্চ গল্প
– গোয়েন্দা
গল্প
- The Most Dangerous Man - Edward Dentinger Hoch – Bangla Translation (From the
The Sherlock Holmes Stories by Edward Dentinger Hoch )
ডেস্কের
পাশে বসে হঠাৎ কান খাড়া করলেন অধ্যাপক, তার সামনে পড়ে আছে দ্বিরাশিক উপপাদ্যের ওপর
একটা নতুন প্রবন্ধগ্রন্থ। একটা শব্দ ধরা পড়েছে তার কানে। শব্দটা খুব ক্ষীণ, তবে চমকে
ওঠার পক্ষে যথেষ্ট। আবার যখন ভেসে এল শব্দটা, চেয়ার ছেড়ে উঠে এগিয়ে গেলেন তিনি বন্ধ
দরজার দিকে।
‘কে?’ জানতে চাইলেন অধ্যাপক।
‘ডুইগিনস। দরজা খুলুন!’
দরজার বোল্ট
নামিয়ে, গ্যাসের শিখাটা আরও একটু বাড়িয়ে দিলেন অধ্যাপক। ‘একটু আগে এসে ভালই করেছ।
সব ঠিক আছে তো?’
ডুইগিনসের
শরীরটা ছিপছিপে, একমাথা কালো ঝাঁকড়া চুল, ঝোলানো জুলফি। প্রতিভাবান ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে
নিজেকে সে নিখুঁতভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। অধ্যাপক এ ছদ্মবেশে তাকে ব্যবহার করেছেন
বহু বার, কখনও কোনও সমস্যা হয়নি।
‘হ্যা,’ জবাব দিল ডুইগিনস।
‘আর্চিবল্ড অ্যাজের সঙ্গে
দেখা করে আমার প্রয়োজনের কথা বলেছি। প্রথমটায় খানিক গাঁইগুই করল, তবে পারিশ্রমিকের
কথা শুনে একেবারে হামলে পড়ল।’
‘চমৎকার!’ পকেট থেকে নোটবই বের
করে তাতে একটা টিকচিহ্ন দিলেন অধ্যাপক, তারপর নামের একটা তালিকার ওপর পেন্সিলের ডগা
বুলিয়ে আবার বললেন, ‘আগামীকাল সন্ধ্যায় আমরা শেষ একটা আলোচনা করব।
দেখো, সবাই যেন হাজির থাকে।’
‘নিশ্চয়!’
ডুইগিনস
চলে যেতে লম্বা, ফ্যাকাসে চেহারার অধ্যাপক ছুটে গেলেন জানালার পাশে। ডুইগিনস ততক্ষণে
পৌঁছে গেছে রাস্তার বাকে। তীক্ষ্ণ চোখে বাঁকের মুখের গলিটার দিকে চেয়ে রইলেন অধ্যাপক।
না, কোনও পুলিশ ডুইগিনসের পিছু নেয়নি। মুচকে হাসলেন তিনি। তা হলে তাঁর মহা পরিকল্পনা
সত্যিই বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।
-----------------------
গ্যাসের
কাঁপা-কাঁপা শিখায় দেখা যাচ্ছে অস্পষ্ট পাঁচটা মুখ। বিভিন্ন পেশার বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন
কয়েকজন লোক পরদিন সন্ধ্যায় উপস্থিত হয়েছে অধ্যাপকের কোয়ার্টারে। ডুইগিনসের পাশেই
বসে আছে কুখ্যাত ব্যাঙ্ক ডাকাত কক্স, তার পাশে ছুরি চালানোয় সিদ্ধহস্ত কুইন-যার সবচেয়ে
বড় গর্ব, বছর দুই আগে পুলিশ তাকে কিছু দিন খুঁজেছে জ্যাক দ্য রিপাঁর মনে করে। সেনাবাহিনীর
অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মোরানও রয়েছে এই আলোচনা সভায়, তার পাশে জেঙ্কিনস-ঘোড়া চালনায়
বিশেষজ্ঞ এক গুণ্ডা।
‘এবার,’ লোকগুলোর দিকে চোখ
মিটমিট করে তাকিয়ে বললেন অধ্যাপক, ‘আলোচনা শুরু করা যাক।’
‘ঘটনাটা আগামীকাল ঘটবে?’ জানতে চাইল কক্স।।
মাথা দোলালেন
অধ্যাপক। ‘আগামীকাল, ২৩ জানুয়ারি, সিটি আর সাবার্বান ব্যাঙ্ক যথারীতি
তাদের শুক্রবারের টাকা পাঠাবে শাখাগুলোয়। আগামীকাল সকাল নয়টার পরপরই দু’ঘোড়ার একটা ভ্যান ফ্যারিংডন
স্ট্রিটের পাশের গলিতে ঢুকে এগোতে থাকবে ব্যাঙ্কের পেছন দিকের প্রবেশপথ অভিমুখে। জনৈক
আর্চিবল্ড অ্যাণ্ড্রুজের ফ্ল্যাট গলিটার ঠিক ওপরে। আমাদের ডুইগিনস শুক্রবার সারা সকালের
জন্যে অ্যাণ্ড্রুজকে অন্য কোথাও চলে যেতে রাজি করিয়েছে। ডুইগিনস, গল্পটা তুমিই আমাদের
শোনাও।’
ঝকড়া-চুলো
লোকটা শুরু করল তার গল্প। ‘অ্যাণ্ড্রুজের সঙ্গে দেখা করলাম গতকাল বিকেলে।
বললাম, অক্সফোর্ড স্ট্রিটে আমার একটা মশলার দোকান আছে। সে যদি শুক্রবার সকালে বিভিন্ন
দোকান ঘুরে কয়েকটা মশলার দাম শুনে আসে, তা হলে পারিশ্রমিক হিসেবে পাবে দশ পাউণ্ড।
প্রথমটায় আপত্তি করেছিল অ্যাণ্ড্রুজ, কিন্তু আমি জানতাম রাজি হবেই। হাত-পা ছেড়ে বসে
থাকা বেকারদের কাছে দশ পাউণ্ড কম নয়।’
‘আহা!’ বললেন অধ্যাপক বিষন্ন
ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে। ‘আমার মনে হয়, বেচারি অ্যাণ্ড্রুজ মশলার দাম
ছাড়াও পুলিশের প্যাদানি কাকে বলে টের পাবে। কক্স, কুইনের সঙ্গে তুমি ফ্ল্যাটে যাবে
ঠিক সাড়ে আটটায়। তোমরা দু’জন জানালার পাশে এমনভাবে বসবে, যেন গলিটা
পরিষ্কার দেখা যায়। দু’ঘোড়ার ভ্যানটা টাকা নিতে এলেই জানালা খুলে তোমরা
প্রস্তুত হয়ে থাকবে লাফ দেয়ার জন্যে। ডাকাতিটা সারতে হবে ভ্যান গলিতে থাকতেই। একবার
জনবহুল রাস্তায় ভ্যান এগিয়ে পড়লে ডাকাতি করা অসম্ভব। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা নিয়ে ভ্যানটা
যখন ফিরতি পথ ধরবে, তখন ওটার সামনে থাকবে সশস্ত্র গার্ডদের একটা ক্যারিজ। অ্যাণ্ড্রুজের
জানালা থেকে তোমরা দু’জন অনায়াসেই লাফিয়ে পড়তে পারবে ভ্যানের ওপর।’
‘একটা প্রশ্ন,’ বলল কক্স। ‘আপনার সব কথাই বুঝতে
পারলাম, কিন্তু আমরা ভ্যানের ওপর লাফিয়ে পড়েছি জানার পর কি গার্ড দু’জন চুপ করে থাকবে?’
চোখ মিটমিট
করলেন অধ্যাপক, মুখে হাসির রেখা দেখা যায় কি কি যায় না। ‘তোমার কী ধারণা, এই
অতি সাধারণ ভাবনাটা আমার মাথায় আসেনি? সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। কাছেপিঠেই জেঙ্কিনস
থাকবে একজন ক্যাব চালকের ছদ্মবেশে। যথাসময়ে ঘোড়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে সে,
এবং ক্যাব নিয়ে এসে পড়বে গার্ডদের ক্যারিজ আর ভ্যানের মাঝখানে। তখন কুইন খতম করে
দেবে ভ্যানের চালককে, আর তুমি ভ্যান ঘুরিয়ে রওনা দেবে ফ্যারিংডন স্ট্রিটের উল্টো দিকে।
তারপরেও ক্যাব পেরিয়ে যদি তোমাদের পিছু নেয় গার্ডেরা, বন্দুক নিয়ে তৈরি থাকবে মোরান।’
‘আর আপনি কোথায় থাকবেন?’ জানতে চাইল কুইন। ‘ডুইগিনসকে নিয়ে কাছেই
অপেক্ষা করব. আমি, তোমরা ভ্যান নিয়ে রওনা দিলেই অনুসরণ করব তোমাদের।’
ঘুরে সাইডবোর্ড
থেকে কাট-গ্লাসের একটা ডিক্যান্টার তুলে নিলেন অধ্যাপক। ‘এবার এসো সবাই, আমাদের
আগামীকালের নিশ্চিত সাফল্যের জন্যে অগ্রিম আনন্দ প্রকাশ করি।’
পরদিন সকালে
আটটার আগে আগে যখন ফ্ল্যাট ছেড়ে বেরিয়ে এল আর্চিবল্ড অ্যাণ্ড্রুজ, রাস্তার উল্টো
পাশে দাড়িয়ে তা লক্ষ করলেন অধ্যাপক আর ডুইগিনস। কনকনে বাতাস বইছে জানুয়ারির সকালে।
শীতের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্যে ওভারকোটের কলারটা তুলে দিলেন অধ্যাপক।
‘একেবারে ঘড়ির কাঁটা
ধরে কাজ হচ্ছে,’ অ্যাণ্ড্রুজকে রাস্তা ধরে এগোতে দেখে মন্তব্য করল ডুইগিনস।
‘বেশ, বেশ!’ ভেতরের পকেট থেকে একটা
ঘড়ি বের করে ঢাকনি খুলে ফেললেন অধ্যাপক। ‘কক্স আর কুইনের তো এতক্ষণে
রওনা দেয়ার কথা।’
কুইন আর
কক্স অ্যাণ্ড্রুজের ফ্ল্যাটে ঢুকল ঠিক সাড়ে আটটায়। ডুইগিনস একটু এগিয়ে গিয়েছিল,
ফিরে এসে বলল, ‘কক্স আর কুইন পৌছে গেছে। ওদের দেখতে পেলাম জানালা দিয়ে।’
‘আর মোরান?’
‘এইমাত্র এল। রাস্তায়
দাঁড়িয়ে আছে,’ গলির ঠিক মুখে। বন্দুক লুকিয়ে রেখেছে ছড়ির মধ্যে।
‘জেঙ্কিনস?’
‘পাশেই অপেক্ষা করছে
ক্যাব নিয়ে।’
মাথা ঝাঁকালেন
অধ্যাপক। সব ঠিক আছে।
ন’টা ছয় মিনিটে দু’ঘোড়ার ভ্যানটা এসে
ঢুকল গলিতে অদ্ভুতভাবে, অবিকল সরীসৃপের মত, অধ্যাপকের মাথা ঘুরতে লাগল একপাশ থেকে আরেক
পাশে।
খুব ধীর
গতিতে কাটতে লাগল সময়। তীক্ষ্ণ চোখে অধ্যাপক লক্ষ করতে লাগলেন, কোথাও কোনও ঝামেলা
বাধে কি না। সব ঠিকঠাকই এগোচ্ছিল, হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলেন অধ্যাপক
‘ডুইগিনস!’
‘কী ব্যাপার!’
‘ওই দেখো, একজন লোক ছুটে
আসছে জনতার মাঝখান দিয়ে-আর্চিবল্ড অ্যাণ্ড্রুজ এত তাড়াতাড়ি ফিরছে কেন?’
‘আরে, তা-ই তো মনে হচ্ছে!’
‘চলো, ওকে থামাতেই হবে।’
দ্রুত রাস্তা
পেরিয়ে এল দু’জনে। চেঁচিয়ে ডুইগিনস বলল, ‘এত তাড়াতাড়ি ফিরে
এলে কেন? তোকে না আমি একটা কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলাম! থেমে গেল আর্চিবল্ড অ্যাণ্ড্রুজ,
ডুইগিনস আর অধ্যাপকের দিকে পালা করে তাকিয়ে তোতলাতে লাগল, ‘আমি-আমি—’
‘হ্যা, কী হয়েছে বলো!’ ধমকে উঠল ডুইগিনস।
‘ইনি আমার মশলা ব্যবসার
পার্টনার। তুমি কভেন্ট গার্ডেন মার্কেট থেকে আমাদের জন্যে মশলার দাম শুনে এসেছ?’
‘না, স্যার,’ বিড়বিড় করে বলল অ্যাণ্ড্রুজ।
‘মানে, ঘটনা ঘটে গেছে
অন্যরকম। গত রাতে আমার এক বন্ধুকে বলেছিলাম আপনাদের ব্যবসার কথা, বলেছিলাম আপনি আমাকে
একটা কাজ দিয়েছেন। আমার সেই বন্ধুটি, মানে ডাক্তার আবার সেই গল্প বলেছে তার এক বন্ধুকে।
সে নাকি একজন বিখ্যাত ডিটেকটিভ।’
‘এখনই কেটে পড়তে হবে,’ চেঁচিয়ে উঠলেন অধ্যাপক,
‘সে এখানে এলে আর---’
কিন্তু
তাঁরা পা বাড়াবার আগেই ঘটনা শুরু হয়ে গেল গলিতে। টাকা নিয়ে ফিরতি পথ ধরল ভ্যান,
আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জানালা থেকে কক্স আর কুইন লাফিয়ে পড়ল ভ্যানের ছাদে।
হঠাৎ তীক্ষ
শব্দে বেজে উঠল বাঁশি, চোখের পলকে কোথেকে যেন পুলিশ এসে ঘিরে ধরল ভ্যানটা। জনা বারো
পুলিশ টেনে হিঁচড়ে নামাল কক্স আর কুইনকে।
‘জলদি!’ আবার চেঁচিয়ে উঠলেন
অধ্যাপক। ‘আমাদের পালাতেই হবে!’
‘আর অন্যদের কী হবে?’ জানতে চাইল ডুইগিনস।
অন্যদের
ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। ক্যাব থেকে লাফিয়ে নেমে পালাবার চেষ্টা করল জেঙ্কিনস, কিন্তু
দৌড় শুরু করার আগেই তার সামনে এসে উপস্থিত হলো লম্বা, কড়া চেহারার এক লোক, তার ধপধপে
লম্বা আঙুলগুলো ইস্পাতের মত চেপে বসল জেঙ্কিনসের দুই বাহুতে।
‘এখন আর তাদের পালাবার
উপায় নেই,’ বললেন অধ্যাপক। ‘আশা করি মোরান পালাতে
পারবে।’
‘এত তাড়াতাড়ি পুলিশ
আমাদের পরিকল্পনা টের পেল কীভাবে?’
‘ওই যে লম্বা লোকটা জেঙ্কিনসকে
ধরে আছে, শয়তানও ওর চেয়ে অনেক ভাল! যে মুহূর্তে ও লক্ষ করেছে, অ্যাণ্ড্রুজের ফ্ল্যাট
থেকে ব্যাঙ্কের গলিটা দেখা যায়, সব বোঝা শেষ হয়ে গেছে। তার।’
‘কিন্তু বুঝল কীভাবে?’ অধ্যাপকের পেছনে পেছনে
ছোট একটা রাস্তায় ঢুকে জিজ্ঞেস করল ডুইগিনস। ‘আমি অ্যাণ্ড্রুজকে দশ
পাউণ্ড দিতে চেয়েছিলাম বলে? আর লম্বা ওই লোকটাই বা কে, যার বুদ্ধির কাছে আমরা মার
খেয়ে গেলাম?’
‘ওটাই সারা লণ্ডনের মধ্যে
সবচেয়ে বিপজ্জনক মানুষ,’ জবাব দিয়ে হাঁটার গতি আরও বাড়িয়ে দিলেন অধ্যাপক
মরিয়ারটি।
নাম-শার্লক
হোমস।
মূল: এডওয়ার্ড
ডেনটিনজার হোক
রূপান্তর:
শাহীনা পারভীন চৌধুরী
এডিট: মারুফ
মাহমুদ
ট্যাগ: অনুবাদ গল্প, গোয়েন্দা গল্প, রোমাঞ্চ গল্প, The Most Dangerous Man, Edward D. Hoch, The Sherlock Holmes Stories, এডওয়ার্ড্ ডি. হোক,শার্লক হোমস সমগ্র pdf
No comments:
Post a Comment