মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Tuesday, September 21, 2021

ছুরি (দ্যা অ্যালুমিনিয়াম ড্যাগার – রিচার্ড্ অস্টিন ফ্রিম্যান) – অনুবাদ গল্প – গোয়েন্দ গল্প – রহস্য গল্প – রোমাঞ্চ গল্প - The Aluminum Dagger - Richard Austin Freeman – Bangla Translation (part 3 of 3)

 

রোমাঞ্চ উপন্যাস,রহস্য গল্প,গোয়েন্দা কাহিনী,অনুবাদ গল্প,থ্রিলার গল্প,The Aluminum Dagger Richard A. Freeman Bangla,দ্যা অ্যালুমিনিয়াম ড্যাগার 

Link: Part 2 (Previous Part) (২য় পর্ব্)

ছুরি (দ্যা অ্যালুমিনিয়াম ড্যাগার রিচার্ড্ অস্টিন ফ্রিম্যান) অনুবাদ গল্প গোয়েন্দ গল্প রহস্য গল্প রোমাঞ্চ গল্প - The Aluminum Dagger - Richard Austin Freeman Bangla Translation (part 3 of 3)

------------------------------

সঙ্গে সঙ্গে জবাব এল, বাড়ির সুরক্ষা। তুমি নিশ্চয়ই স্বীকার করবে যে, এক দফা গুলি চালিয়ে সঙ্গিন নিয়ে তাড়া করলে অতি বড় সাহসী চোরও পালাবার পথ পাবে না।

চোর বিতাড়ণ-পর্বের অবাস্তব ছবিটি কল্পনা করে আমি হেসে উঠলাম। বুঝতে পারলাম যে, এই পাগলাটে কাজকর্মের একটা নিহিতার্থ অবশ্যই আছে।

বিলম্বিত মধ্যাহ্নভোজনের পর কয়েকটা জরুরি কাজ সারবার জন্যে আমি বেরিয়ে পড়লাম। থর্নডাইক বাড়িতেই থেকে গেল। ড্রইং বোর্ড, স্কয়্যার, স্কেল ও কম্পাস নিয়ে মশগুল রইল স্কেচ তৈরির কাজে।

সন্ধ্যায় যখন মিটার কোর্টের পথ ধরে বাড়ি ফিরছিলাম, পথে পেয়ে গেলাম মার্চমন্টকে। তিনিও আমাদের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। দুজন একসঙ্গে হাঁটতে লাগলাম। 

মার্চমন্ট বললেন, থর্নডাইকের একটা চিঠি পেয়েছি। তিনি একটা হস্তলিপির নমুনা চেয়ে পাঠিয়েছেন, তাই ভাবলাম, সেটা নিজেই দিয়ে আসি; সাথে কোনও খবর থাকলে সেটাও জেনে আসা হবে।

(মার্চমন্টকে সাথে নিয়ে) চেম্বারে ঢুকে দেখি, থর্নডাইক পলটনের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত। যে ছোরা দিয়ে খুনটা করা হয়েছে, সেটা তাদের সামনেই টেবিলের ওপর পড়ে আছে দেখে চোখ কপালে উঠল। মার্চমন্ট বললেন, হাতের লেখার যে নমুনাটা আপনি চেয়েছিলেন, সেটা নিয়ে এসেছি। আনতে পারব কি না, নিশ্চিত ছিলাম না, কিন্তু ভাগ্য ভাল, একটা চিঠি কারটিস রেখে দিয়েছিল। ঝুলির ভেতর থেকে চিঠিটা বের করে থনড়াইকের হাতে দিলেন তিনি। ছোরাটা হাতে নিয়ে বললেন, আরে, আমি তো ভেবেছিলাম, ইন্সপেক্টর এটা নিয়ে গেছেন।

তিনি আসলটা নিয়ে গেছেন, থর্নডাইক জবাব দিল। এটা নকল, পলটনের তৈরি। আমার আঁকা স্কেচ দেখে বানিয়েছে।

সত্যি! মার্চমন্ট প্রশংসার দৃষ্টিতে পলটনের দিকে তাকিয়ে বললেন, নকল হলেও একদম আসলের মতই হয়েছে দেখতে।

ঠিক তখনই বাইরে এসে দাঁড়াল একটা দুই চাকার ভাড়াটে গাড়ি। মুহূর্ত পরে সিঁড়িতে একটা দ্রুত পদশব্দ শোনা গেল। প্রচণ্ড ধাক্কা পড়ল দরজায়। পলটন দরজাটা খুলে দিতেই হুড়মুড় করে

ঘরে ঢুকে পড়ল কারটিস। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ভয়ঙ্কর কাণ্ড, মার্চমন্ট! এডিথ-আমার মেয়ে-খুনের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছে! ইন্সপেক্টর তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেছে! হায়, ঈশ্বর! আমি যে পাগল হয়ে যাব! 

উত্তেজিত লোকটির কাঁধে হাত রেখে থর্নডাইক বলল, এতটা ভেঙে পড়বেন না, মিস্টার কারটিস। আমি বলছি, সেরকম কিছু ঘটেনি। আচ্ছা, আপনার মেয়েটি কি ন্যাটা?

হ্যা। কাকতালীয় ব্যাপার আর কাকে বলে! এখন আমি কী করি? ইন্সপেক্টর মেয়েটাকে হাজতে ঢুকিয়ে দিয়েছে-ভাবতে পারেন, ডক্টর থর্নডাইক, একেবারে হাজতে? বেচারি এডিথ! 

তাকে আমরা অচিরেই খালাস করে আনব, কান খাড়া করল থর্নডাইক। কে যেন এসেছে!

আমি দরজাটা খুলে দিতে ইন্সপেক্টর ব্যাজারের মুখোমুখি হলাম। ইন্সপেক্টর ও কারটিস পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইল। বিতিকিচ্ছিরি পরিস্থিতি! বুঝতে পারছি, এক ঘরে থাকতে চাইছে না দুজনে। কারটিসকে দেখে ফিরে যাওয়ার উপক্রম করছে ইন্সপেক্টর, ওদিকে ইন্সপেক্টর এসেছে বলে বেরিয়ে যেতে চাইছে কারটিস।

থর্নডাইক বলে উঠল, আপনি চলে যাবেন না, ইন্সপেক্টর, আপনার সঙ্গে কথা আছে।

কারটিস ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফিরে আসবে বলে সবেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সে চলে যাবার পর থর্নডাইক ইন্সপেক্টরের দিকে ফিরে বলল, মনে হচ্ছে, আপনি খুব ব্যস্ত ছিলেন!

হ্যা, ব্যাজার জবাব দিল। অকারণে সময় নষ্ট করা পছন্দ করি না আমি। ইতোমধ্যেই মিস কারটিসের বিরুদ্ধে জোরাল তথ্য-প্রমাণ পেয়ে গেছি। মৃত ব্যক্তির সঙ্গে তাকেই সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল। ভদ্রলোকের ওপর মেয়েটির যথেষ্ট ক্ষোভ ছিল। তা ছাড়া সে ন্যাটা। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, খুনি বাঁ-হাতি।

আর কোনও প্রমাণ?

হ্যা, আরও আছে। ইটালিয়ানদের গোটা ব্যাপারটাই সাজানো-বানোয়াট। বিধবার পোশাক পরা এক মহিলা তাদের পাঠিয়েছিল বাড়িটার সামনে গিয়ে নাটক করতে, পোর্টারের হাতে দেয়ার জন্য একটা চিঠিও তাদের দিয়েছিল। ঘোমটায় মুখ ঢাকা ছিল বলে তার চেহারা ভাল করে ঠাহর করতে পারেনি কেউ, তারপরও যেটুকু বর্ণনা দিয়েছে, তাতে তাকে মিস কারটিস বলেই মনে হয়েছে।

দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ রেখে খুনি বেরিয়ে গেল কেমন করে?                    

এটাই একমাত্র রহস্য! এর কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না।

আশ্চর্যের ব্যাপার মনে হতে পারে, কিন্তু সমস্ত ধ্যাপারটাই আমার কাছে পরিষ্কার। লাশের দিকে তাকানো মাত্রই আমি বুঝতে পেরেছিলাম। অকুস্থল থেকে বেরোনোর কোনও পথ আপাতদৃষ্টিতে ছিল না, আর আমরা যখন সেখানে ঢুকলাম, তখন ঘরে কাউকে দেখিনি। অতএব, একটা ব্যাপার পরিষ্কার, খুনি কখনওই সেখানে ছিল না।

আপনার কথা কিছুই বুঝলাম না।

বুঝিয়ে দিচ্ছি। একটা বিষয়ে আমরা নিশ্চয়ই একমত যে, আঘাতটা যখন করা হয়েছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে হতভাগ্য ব্যক্তিটি অগ্নিকুণ্ডের সামনে দাঁড়িয়ে ঘড়িতে দম দিচ্ছিল। ছোরাটা ঢুকেছে বাঁ দিক থেকে তেরছা ভাবে, হাতলটা ছিল সোজা খোলা জানালা বরাবর।

আর জানালাটা মাটি থেকে চল্লিশ ফুট ওপরে।

ঠিক। এবার আমরা দেখব, যে অস্ত্র দিয়ে খুনটা করা হয়েছে, সেটার অদ্ভুত কিছু বৈশিষ্ট্য।

এমন সময় দরজায় ধাক্কা পড়ল আবার। লাফিয়ে উঠে খুলে দিলাম। ঘরে ঢুকল ব্র্যাকেনহাস্ট চেম্বারের পোর্টার। পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে থর্নডাইকের দিকে এগিয়ে গেল। বলল, আপনি যে-জিনিসটা খুঁজছিলেন, স্যার, সেটা পেয়েছি। সেজন্য খুব খাটতেও হয়েছে। জিনিসটা ঝোপের মধ্যে আটকে ছিল।

থর্নডাইক প্যাকেট খুলে ভেতরটা দেখে নিয়ে টেবিলের ওপর রেখে দিল । পোর্টারের দিকে একটা স্বর্ণমুদ্রা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, অনেক ধন্যবাদ। ইন্সপেক্টর তোমার নাম জানেন, আশা করি।

তা জানেন, স্যর, বলে পারিশ্রমিকটা পকেটে পুরে সহাস্য বদনে চলে গেল লোকটি।

থর্নডাইক আবার বলতে লাগল, যা বলছিলাম...আগেই বলেছি, ছোরাটা অদ্ভুত। এটা দেখলেই বুঝতে পারবেন, আসলটার হুবহু নকল, বিস্মিত পুলিশ অফিসারকে পলটনের হাতের কাজ দেখাল, সে। দেখতেই পাচ্ছেন, অস্ত্রটা খুবই সরু, কোথাও কোনওরকম খাজ নেই । যে মালমশলা দিয়ে এটা তৈরি করা হয়েছে, তা বিরলপ্রাপ্য। সাধারণ ছোরা-কারিগরের তৈরি নয় এটা। অস্ত্রের গায়ে ইতালীয় হরফ খোছাই করা থাকলেও আগাগোড়া ব্রিটিশ কারিগরের ছাপ সুস্পষ্ট। ফলাটা তৈরি করা হয়েছে ইস্পাত দিয়ে, অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে বানানো হয়েছে হাতল। অস্ত্রটার গায়ে একটা আঁচড় পর্যন্ত পড়েনি কোথাও। এর মানে হলো, লেদ মেশিনের সাহায্যে তৈরি হয়নি এটা। হাতলের মাপটা অদ্ভুতভাবে মিলে যাচ্ছে সেকেলে চেযপট রাইফেলের নলের সঙ্গে, যেগুলোর হুবহু নকল এখন লণ্ডনের অনেক দোকানে বিক্রি হচ্ছে। যেমন এটা, ঘরের কোণে দাঁড় করানো সম্প্রতি কেনা রাইফেলটা তুলে নিয়ে নলের মুখে ছোরার হাতলটা বসিয়ে দিল থর্নডাইক। ছোরাটা অনায়াসে বসে গেল নলের মধ্যে।

হা, ঈশ্বর! সবিস্ময়ে বলে উঠলেন মার্চমন্ট। আপনি নিশ্চয়ই বলতে চাইছেন না যে, বন্দুকের সাহায্যে ছোরাটা গুলির মত ছোড়া হয়েছে?

ঠিক এই কথাটাই বলতে চাইছি আমি। অ্যালুমিনিয়ামের হাতল কেন ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা তো আপনিই বললেন! ছোরাটা এমনিতে বেশ ভারী, সেটাকে কিছুটা হালকা করার জন্য।

ইন্সপেক্টর বলল, আপনি যা বলছেন, তা একান্তই অসম্ভব।

তা হলে তো ব্যাপারটা হাতে-কলমে করে দেখাতে হবে। মৃত ব্যক্তির পরনের জামা আর ক্ষতস্থান দেখলেই বোঝা যায়, শরীরের মধ্যে প্রবেশ করার সময় ছোরাটা পাক খেয়েছিল। আর অস্ত্রটা পাক খাওয়াতে হলে সেটা একটা রাইফেল থেকে ছুঁড়তে হবে। ছোরাটা নলের মুখে ঠিকমত বসানোর জন্য দরকার ষড়ভুজ আকৃতির ধাতুর চাকতি। এই দেখুন, চাকতিটা। আসল নয়, এটাও পলটনের বানানো। টেবিলের ওপর চাকতিটা রাখল থর্নডাইক।

ইন্সপেক্টর বলল, তারপরও আমি বলব, এটা অসম্ভব, এবং অবাস্তব।

মার্চমন্টও একমত হয়ে বললেন, ব্যপারটা অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।

থর্নডাইক বলল, দেখাই যাক এটা পলটনের নিজের তৈরি একটা কার্তুজ। এর মধ্যে আছে ২০-বোর বন্দুকে ব্যবহারযোগ্য আটবার গুলি ছোঁড়ার মত ধোঁয়াবিহীন পাউডার, ছোরার হাতলের মাথায় চাকতিটা বসাল সে, তারপর হাতলটা রাইফেলের নলের মুখে বসিয়ে ঠেলে দিল ভেতরে, রাইফেলে কার্তুজ ভরল। অফিসের দরজাটা খুলে দেয়ালে লাগানো একটা খড়ের বোর্ডকে চাঁদমারি (target of padded strawboard) হিসেবে নির্বাচন করল থর্নডাইক। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, জারভিস, জানালা গুলো বন্ধ করে দেবে?

ওর অনুরোধমত কাজ করলাম। রাইফেলটা চাঁদমারির দিকে তাক করল সে। ক্ষীণ একটা শব্দ হলো-যতটা আশা করেছিলাম, তার চাইতেও ক্ষীণতর। চাঁদমারির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ছোরাটা হাতল পর্যন্ত বিদ্ধ হয়ে আছে বুলস আই-এর এক প্রান্তে।

রাইফেলটা নামিয়ে রেখে থর্নডাইক বলল, দেখলেন তো, কাজটা বাস্তবে করা সম্ভব। এবার ঘটনার আলামতগুলো বলছি। এক, আসল ছোরার গায়ে এমন কতগুলো দাগ আছে, যা রাইফেলের খাজের সঙ্গে মিলে যায়। দ্বিতীয় হচ্ছে, ছোরাটা বাম দিক থেকে ডান দিকে পাক খেয়ে লক্ষ্যস্থলের ভেতর ঢুকেছিল। আর এই জিনিসটা দেখুন, এটা মাঠের মধ্যে খুঁজে পেয়েছে পোর্টার, সে প্যাকেটটা খুলল। ভেতর থেকে বেরোল একটা ষড়ভুজ আকৃতির ধাতুর চাকতি। অন্য চাকতিটার পাশে সেটা রাখার পর দেখা গেল, দুটো চাকতিই হুবহু এক।

ইন্সপেক্টর অনেকক্ষণ নীরবে চাকতি দুটোর দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর চোখ তুলে বলল, এবার আমি হার মানছি। আপনার কথাই নিঃসন্দেহে সত্য, কিন্তু কেমন করে এই চিন্তাটা আপনার মাথায় এল, কিছুতেই বুঝতে পারছিনা। এখন একটাই মাত্র প্রশ্ন: গুলিটা কে ছুঁড়েছিল, আর কেনইবা গুলির শব্দ শুনতে পেল না কেউ? দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর: লোকষ্টা হয়তো রাইফেলের সঙ্গে কমপ্রেসড এয়ার যন্ত্র জুড়ে নিয়েছিল। তাতে যে কেবল ক্ষীণ শব্দ হয়েছে, তা নয়, ছোরার গায়ে বিস্ফোরণের কোনও দাগই লাগেনি। খুনির নামটাও আমি বলে দিতে পারি। আপনার হয়তো মনে আছে, জারভিস যখন ঘড়িতে দম দেবার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়েছিল, তখন ওর দাঁড়াবার জায়গায় চক দিয়ে চিহ্ন দিয়েছিলাম আমি। সেখানটায় দাঁড়িয়ে খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে বিপরীত দিকের একটা বাড়িতে দুটো জানালা দেখতে পেলাম-ছয় নম্বর কটম্যান স্ট্রিটের তিনতলা ও চারতলার জানালা। তেতলায় স্থপতিদের একটা প্রতিষ্ঠানের অফিস, চারতলায় থাকেন টমাস বারলো নামে একজন কমিশন-এজেন্ট। আমি মিস্টার বারলোর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আচ্ছা, ভয় দেখিয়ে লেখা চিঠি তিনটে কি আপনার সঙ্গে আছে?

হ্যা, ইন্সপেক্টর বুকপকেট থেকে একটা থলি বের করল। প্রথম চিঠির কথাই ধরা যাক। চিঠির কাগজ আর খাম-দুই ই অতি সাধারণ। হাতের লেখা দেখে মনে হয়, চিঠিটা যে লিখেছে, সে তেমন পড়ালেখা জানে না। কিন্তু কালিটা এই ধারণার সঙ্গে মিলছে না। অল্প শিক্ষিত লোকেরা সাধারণত এক পেনি দামের কালিই কিনে থাকে, কিন্তু খামের ওপরের ঠিকানাটা যে কালি দিয়ে লেখা হয়েছে, সেরকম উজ্জ্বল কালি কাপড় ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করে। আর চিঠিটা লেখা হয়েছে লাল স্টাইলোগ্রাফিক কলম দিয়ে। এই কলম ব্যবহার করে দলিল লেখকরা। তবে কাগজের মাথায় আঁকা নকশাটা চিঠির সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয়। শিল্পগত বিচারে লোকটা আঁকতে জানে না। খুলির চেহারাটা হয়েছে একেবারেই হাস্যকর, অথচ আঁকাটা বেশ পরিচ্ছন্ন; যন্ত্রের সাহায্যে আঁকার লক্ষণ সুস্পষ্ট। এমনকী ম্যাগনিফাইং গ্লাসের ভেতর দিয়ে দেখলে পেনসিলের কেন্দ্র, রেখা এবং আড়াআড়ি টানের চিহ্নও চোখে পড়ে। আরও দেখা যাবে নরম, লাল ববারের গুঁড়ো। এ-ও দলিল লেখকদের জিনিস। সব মিলিয়ে এই ধারণাটাই জোরদার হয় যে, যান্ত্রিক আঁকাআঁকিতে অভ্যস্ত কোনও লোক নকশাটি এঁকেছে, থর্নডাইক এক সেকেণ্ড বিরতি নিল। এবার আসা যাক মিস্টার বারলোর কথায়। আমি যখন তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তখন তিনি বাইরে ছিলেন। অফিসের চারদিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম এক ফুট লম্বা একটা কাঠের রুল, যা সাধারণত এঞ্জিনিয়াররা ব্যবহার করে থাকে। আরও পেলাম একটা লাল ইরেজার এবং দামি কালি ভরা পাথরের বোতল। কায়দা করে অফিসের চিঠি লেখার কাগজ ও কালির নমুনা জোগাড় করে ফেললাম। জানতে পারলাম, মিস্টার বারলো নতুন ভাড়াটে, কিছুটা বেঁটে, পরচুলা ও চশমা পরেন, আর সবসময়ই বাঁ হাতে দস্তানা পরে থাকেন। আজ সকাল সাড়ে আটটায় তিনি অফিস থেকে চলে যান। কেউ তাঁকে ফিরে আসতে দেখেনি। তাঁর সঙ্গে ছিল দুটো বাক্স-একটা চৌকো, একটা সরু-প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা। একটা গাড়ি নিয়ে তিনি ভিকটোরিয়া (Victoria) চলে যান, চ্যাথাম (Chatham) যাবার ট্রেন ধরেন।

আচ্ছা! ইন্সপেক্টর চেঁচিয়ে উঠল।

থর্নডাইক বলতে লাগল, এখন এই চিঠি তিনটে ভাল করে দেখুন। দেখতেই পাচ্ছেন, একই ধরনের কাগজে লেখা হয়েছে চিঠিগুলো, তাতে একই জলছাপ, কিন্তু কথা সেটা নয়। আসল ব্যাপার হচ্ছে-দেখুন, প্রত্যেকটা চিঠির তলায় বাঁ দিকের কোণের কাছাকাছি দুটো করে ছোট ফুটো আছে। বোঝা যাচ্ছে, চিঠির কাগজের প্যাকেটটার ওপর কেউ কম্পাস বা ড্রইং পিন ব্যবহার করেছে, ফলে কাগজের ওপর ফুটো হয়েছে। তিনটে চিঠিতেই ফুটো থাকাটা কী প্রমাণ করে? প্রমাণ করে যে, কাগজগুলো একই প্যাকেট থেকে এসেছে, এবং সেগুলো একটার নীচে আরেকটা ছিল। আমরা জানি, ওপরের কাগজে চাপ পড়লে তার নীচের কিছু কাগজেও সেই ফুটো বা চাপের দাগ পড়ে। এখন মিস্টার বারলোর অফিসের কাগজে লেখা আমার এই চিরকুটটা দেখুন। এটাতে ফুটো নেই, কিন্তু ঠিক একই জায়গায় রয়েছে চাপের দাগ-কিছুটা অস্পষ্ট হলেও চোখে পড়ে। এর মানে বুঝতে পারছেন? 

ইন্সপেক্টর চমকে চেয়ার থেকে উঠে থর্নডাইকের মুখোমুখি দাঁড়াল। কে এই বারলো?

সেটা তো বের করবেন আপনি, তবে আপনাকে আমি একটা দরকারি সূত্র দিতে পারি। আলফ্রেড হার্টরিজের মৃত্যুতে উপকৃত হয়েছে একটি মাত্র লোক-লিওনার্ড উলফ। মিস্টার মার্চমন্টের কাছ থেকে জেনেছি, তার চরিত্র ভাল নয়। জুয়াড়ি, উড়নচণ্ডী (a gambler and a spendthrift)। লোকটা দক্ষ যন্ত্রবিদ, একসময় এঞ্জিনিয়ার ছিল। বেঁটে, শুকনো। পরিষ্কার কামানো মুখ। গায়ের রং উজ্জ্বল, আর বাঁ হাতের মধ্যমাটা কাটা। মিস্টার বারলোও বেঁটে, শুকনো, ফরসা। মুখে দাড়ি আছে, তবে সেটা সম্ভবত নকল। চোখে চশমা, মাথায় পরচুলা পরেন-পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, চেহারা বদলানোর জন্য। সবচেয়ে বড় পয়েন্টটা হলো, এই বারলো বাঁ হাতে সবসময় দস্তানা পরে থাকেন। দুজনের হাতের লেখাই আমি দেখেছি, তাই জোর দিয়ে বলছি, লেখার পার্থক্য ধরা খুবই শক্ত।

সেই রাতেই এলথামে (Eltham) নিজের বাড়ির বাগানে একটা কমপ্রেসড এয়ার-রাইফেল মাটিতে পোঁতার সময় লিওনার্ড উলফকে গ্রেপ্তার করা হলো। অবশ্য তার বিচার করা গেল না। কারণ, তার পকেটে একটা ডেরিনার পিস্তল (Derringer pistol) ছিল। সেটার সাহায্যে নিজের দুশ্চরিত্র জীবনের অবসান নিজেই ঘটাল সে।

মূল: রিচার্ড অস্টিন ফ্রিম্যান

রূপান্তর: ডিউক জন

Editing: Maruf Al Mahmood 


No comments:

Post a Comment

Popular Posts