মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Sunday, September 19, 2021

অনুবাদ গল্প – রহস্য গল্প – নাম্বার এইট – জ্যাক রিচি - NUMBER EIGHT by Jack Ritchie – Bangla Translation

অনুবাদ গল্প,রহস্য গল্প,ছোট গল্প,নাম্বার এইট – জ্যাক রিচি,NUMBER EIGHT by Jack Ritchie – Bangla Translation

অনুবাদ গল্প রহস্য গল্প নাম্বার এইট জ্যাক রিচি - NUMBER EIGHT by Jack Ritchie – Bangla Translation

প্রায় আশি মাইল বেগে চলছিলাম, কিন্তু সামনের বিস্তৃত রাস্তার তুলনায় তা হাস্যকর গতি মনে হচ্ছিল।

লাল চুলো ছেলেটার চোখ গাড়ির রেডিও শুনতে শুনতে একটু উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কী যেন ঝিলিক দিয়ে গেল ওর চোখে। খবর শেষ হতেই ভলিয়ুম কমিয়ে দিল। a

হাত দিয়ে মুখের পাশে মুছল সে। এ পর্যন্ত ওরা সাতজনের মৃতদেহ পেয়েছে।

আমি মাথা ঝাঁকালাম।

আমিও শুনছিলাম, বললাম। ড্রাইভিং হুইল থেকে এক হাত সরিয়ে পিঠের পিছনে ঘষলাম। আড়ষ্ট ভঙ্গিটা দূর করার চেষ্টা।

সে আমাকে বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখল। ভয় পাচ্ছ? মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল।

ঝট করে ওর দিকে তাকালাম।

না, ভয় পাব কেন? ছেলেটা হাসতেই থাকল।

পুলিশ এডমন্টনের চারপাশের সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে।

শুনেছি।

ছেলেটা প্রায় খিলখিল করে হাসছে।

ওদের পক্ষে একটু বেশিই স্মার্ট ছেলেটা। কোনও লাভ নেই।

ওর কোলের ওপর রাখা ব্যাগটার দিকে তাকালাম। কী আছে ভেতরে?

দূরে যাচ্ছ?

সে মাথা ঝাকাল। জানি না।

ছেলেটা সাধারণের তুলনায় একটু খাটোই হবে, আর শরীরের গড়নও খুব একটা শক্তিশালী না। দেখতে মনে হয় সতেরোর মত বয়স হবে, তবে বলা যায় না আরও পাঁচ বছর বেশিও হতে পারে। মুখের গড়নটা বাচ্চাদের মত-বয়স সহজে বোঝা যায় না।

প্যান্টের ওপর হাতের তালু ঘষল সে। কখনও ভেবেছ কেন সে এরকম করে? বলল।

রাস্তা থেকে চোখ সরালাম না।

না।

সে ঠোট ভেজাল।

হয়তো অতিরিক্তই করা হয়েছিল তার প্রতি। সাৱা জীবনই অন্যে তার উপর জোর চালিয়েছে। লোকের অবিরাম আদেশ আর নিষেধ তাকে সহ্যের শেষ সীমায় নিয়ে গেছে। সবসময় অন্যরা কথার ছড়ি ঘুরিয়েছে তার উপর।

ছেলেটা সামনের দিকে তাকাল।

অবশেষে তার রাগের বিস্ফোরণ ঘটেছে। মানুষের ধৈর্যের একটা সীমা তো আছে। তার বাইরে গেলে কিছু একটা হওয়ারই ছিল।

এক্সিলারেটর থেকে পা সবালাম। সে আমার দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকাল

গাড়ি থামাচ্ছ কেন?

তেল ফুরিয়ে আসছে, আমি বললাম।

গত চল্লিশ মাইলের মধ্যে একটাও তেলের পাম্প পড়েনি। সামনেরটা থেকে না নিলে আরও চল্লিশ মাইল ওই তেলে চলবে না।

রাস্তা থেকে বাঁক নিয়ে পেট্রোল পাম্পে ঢুকে পড়লাম।

একজন বয়স্ক লোক কাছে এগিয়ে আসল।

ট্যাংক ভর্তি করো, বললাম। আর তেলের কী অবস্থা দেখে নিয়ো আগে।

ছেলেটা খুব মনোযোগ দিয়ে পাম্প দেখছে। ছোট্ট একটা বিল্ডিং, দুপাশের এক সমুদ্র গম ক্ষেতের মাঝে একমাত্র কাঠামো।

গাড়ির জানালার দিকে তাকালাম। ধুলোয় ধূসরিত। পরিষ্কার করা দরকার।

পাম্পের একপাশে একটা দেয়াল ফোন চোখে পড়ল। ছেলেটা অধৈর্যের সাথে একটা পা ঠুকল।।

বুড়োটা বড্ড বেশি দেরি করছে। অপেক্ষা করা আমি পছন্দ করি না। পাম্পের লোকটাকে দেখা যাচ্ছে গাড়ির হুড তুলে তেল চেক করতে।

এত বয়সের একজনের বেঁচে থাকার দরকারটা কী? মরলেই মানাত ওকে।

একটা সিগারেট ধরালাম।

ও তোমার সাথে একমত হবে বলে মনে হয় না।

ছেলেটার চোখ আবার ফিলিং স্টেশনের দিকে গেল।

ওই তো একটা ফোন দেখা যাচ্ছে। সে হাসল। কাউকে ফোন করতে ইচ্ছা করছে? চাইলে করো।

সিগারেটের এক রাশ ধোঁয়া ছাড়লাম।

বুড়ো লোকটা যখন ভাংতি পয়সা ফেরত দিতে এল, ছেলেটা জানালার দিকে ঝুঁকে পড়ল।

রেডিও হবে আপনার কাছে?

লোকটা মাথা নাড়ল। না। আমি কোলাহলমুক্ত থাকতেই পছন্দ করি।

ছেলেটা হাসল।

ঠিক বলেছেন। চুপচাপ থাকলে বেশিদিন বাঁচবেন।

রাস্তায় আবার বের হয়ে স্পিড আশি মাইলে তুললাম। ছেলেটা কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকল। তারপর বলল, সাতজনকে খুন করতে কলিজা লাগে! জীবনে কখনও পিস্তল ধরে দেখেছ?

প্রায় সবাই-ই ধরেছে। ঠোটের ফাঁক দিয়ে দাঁত দেখা যাচ্ছে ছেলেটার।

কারও দিকে তাক করেছ কখনও? আমি ওর দিকে তাকালাম। চোখগুলো উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। লোকে তোমাকে ভয় পেলে মন্দ লাগবে না, বিশ্বাস করো।

পিস্তল থাকলে তুমি আর খাটো থাকো না।

না, বলল।

ছেলেটা খাটো, তা আগেই দেখেছি। উচ্চতা কত হবে অনুমান করার চেষ্টা করলাম।

তুমি আর পুঁচকে ছেলেটি নও! হতচ্ছাড়া বদমাশও না।

ওর চোখে কী যেন ঝিলিক দিয়ে গেল।

পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা লোকটা তখন তুমি!

ঠিক, যতক্ষণ না অন্যেরও একটা পিস্তল থাকে।

ভাল বলেছ তো! হা হা!

তবে খুন করতে কিন্তু বুকের পাটা লাগে, জানো তো? ছেলেটা আবার বলল।

অনেক লোকই তা জানে না। খুন হওয়াদের মধ্যে পাঁচ বছরের একটা বাচ্চাও আছে। বললাম আমি।

তাতে তোমার এত আপত্তি কেন? জিভ দিয়ে ঠোট চাটল সে।

হতে পারে ওটা একটা দুর্ঘটনা ছিল?

আমি মাথা ঝাকালাম। কেউ তা মনে করছে না।

ওর চোখে একটু অনিশ্চয়তার ছায়া পড়ল। ও একটা বাচ্চাকে হত্যা করবে মনে করছ কেন?

কী জানি, বলা কঠিন, বললাম। সে শুরু করেছে একজনকে হত্যা করে। তারপর আরেকটা, তারপর আরও একটা। হয়তো কিছু সময় পরে কে খুন হলো দেখার ধৈর্যই থাকল না ওর? পুরুষ, মহিলা, বা না হয় বাচ্চাই হলো? তার কাছে তো একই ব্যাপার।

ছেলেটা মাথা ঝকাল।।

আসলে একটা আলাদা মজা চলে আসে। ব্যাপারটা অত কঠিন না। প্রথম কয়েকটার পরে, কোনও কিছুতেই আর কিছু আসে যায় না। কাজটা ভাল লাগতে শুরু করে। যতই হোক, লোকগুলো একদিন না একদিন তো মরতই। কয়েক দিন আগেই না হয় মরল। তার বিনিময়ে যদি একজনকে মজা দেয়া যায়, ক্ষতি কী?

গাড়ি ঝড়ের বেগে চালাচ্ছি। আরও মিনিট পাঁচেক চুপচাপ থাকল সে। তারা ওকে কখনও ধরতে পারবে না সে ওদের চেয়ে একটু বেশিই স্মার্ট।

রাস্তা থেকে কিছু সময়ের জন্য চোখ সরালাম।

এত নিশ্চিত হচ্ছ কীভাবে? পুরো দেশটা ওকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। সবাই জানে ও দেখতে কেমন।

ছেলেটা অনীহার ভঙ্গিতে কাঁধ উঁচু করল।

হয়তো ওর কিছু আসে যায় না এতে। ওর করার ছিল, তাই করেছে। আরও করবে, আমি জানি। লোকে বলতে বাধ্য হবে, ও কিছু করে দেখাবার ক্ষমতা রাখে।

পরের এক মাইল একটা শব্দও না বলে পার হলাম। তারপরই গাড়ির সিটে ছেলেটা নড়েচড়ে বসল।

রেডিওতে ওর বর্ণনা শুনেছ?

অবশ্যই, বললাম আমি। গত পুরো সপ্তাহ জুড়েই।

সে আমার দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকাল। তাই? তারপরও আমাকে গাড়িতে তুলতে ভয় করেনি?

না। ছেলেটার মুখে ক্ষীণ হাসির রেখা।

ইস্পাত-দৃঢ় নার্ভ তো তোমার? আমি মাথা নাড়লাম।

না। ভয় পাওয়ার অবস্থা হলে ঠিকই ভয় পাই। ওর চোখ আমার ওপর স্থির।।

রেডিওর বর্ণনার সাথে আমি পুরোপুরি মিলে যাই।

হ্যা।

যতদূর চোখ যায় খালি রাস্তা চলে গেছে সামনে। দুপাশে ধু ধু সমতল মাঠ ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না। একটা বাড়িও না। কোনও গাছ পর্যন্ত না।

ছেলেটা হাসল। ঠিক খুনীটার মতই দেখতে আমি। সবাই ভয় পায়। ভাল লাগে আমার।

আশা করি ব্যাপারটা উপভোগ করেছ, আমি বললাম।

গত দুইদিনে এ রাস্তায় তিনবার পুলিশ আটকেছে আমাকে। খুনীর যোগ্য প্রচারই দেয়া হয় আমাকে। আমি সন্তুষ্ট।

বুঝতে পারছি, বললাম। জানি তুমি প্রচার আরও পাবে, যোগ করলাম। আমার মনে হচ্ছিল এ হাইওয়ের কোথাও তোমার সাথে দেখা হয়ে যাবে। দুর্ভাগ্য পিছু পিছু চলেই আসে।

গাড়ির গতি কমিয়ে আনলাম।

দয়া করে আমার ব্যাপারেও একটু চিন্তা করো। আমিও কি বর্ণনার সাথে মিলে যাই না?

ছেলেটা প্রায় চুকচুক শব্দ করল। আহা! ওই বাদামী চুল নিয়ে? ওর চুল তো লাল। এই যে আমারটা দেখো।

আমি হাসলাম। কিন্তু আমি তো চুলে কৃত্রিম রঙও লাগাতে পারি?

ছেলেটার চোখগুলো বড় বড় হয়ে উঠল, যখন বুঝতে পারল কী ঘটতে চলেছে।

ও হতে যাচ্ছে আট নম্বর।

মূলঃ জ্যাক রিচি

রূপান্তর: মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন


No comments:

Post a Comment

Popular Posts