মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Friday, September 17, 2021

রোমাঞ্চ গল্প (অনুবাদ গল্প) – ধরা – জেমস হোল্ডিং –Romancho golpo - Dhora – James Holding –

অনুবাদ গল্প,গোয়েন্দা গল্প,বড় গল্প,মজার গল্প,রোমাঞ্চ গল্প,রোমাঞ্চ উপন্যাস,

রোমাঞ্চ গল্প (অনুবাদ গল্প) ধরা জেমস হোল্ডিং Dhora – James Holding – Romancho golpo

বাচ্চাদের একেবারেই সহ্য হয় না আমার!

পাঠক, ভ্র কুঁচকালেন? পছন্দ হলো না কথাটা? তা না হোক, জানবাজি রেখে বলতে পারি, আমার অবস্থায় পড়লে আপনিও এমনটা ভাবতে বাধ্য হতেন। এখন হয়তো বুঝছেন না-কারণ আমার মত আপনাকে তো আর গায়ে কয়েদীর ডোরাকাটা পোশাক চড়াতে হয়নি!

অবাক হচ্ছেন? ধাঁধা লাগছে? তা হলে ভাঙি বরং!

এমন না যে জ্ঞান হবার পর থেকেই পিচ্চি-পাচ্চাদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ ছিলাম আমি। কিন্তু সে রাতে লেফটেনেন্ট র‌্যানডেলের সাথে সাক্ষাতের পর থেকেই শিশুদের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেল । ট্যাসোর বারে বসেছিলাম সেঁদিন। সাথে স্যালি অ্যান। মার্টিনির স্বাদ নিচ্ছিলাম দুজনেই-এমন সময়ই লোকটার উপস্থিতি ধরা পড়ল আমার চোখের কোণে।

অবশ্যই আগে থেকে চেনাজানা ছিল না আমাদের। পরনে গাঢ় নীল রঙের সুট, স্ট্রাইপড টাই; ভেতরে সাদা শার্ট। চেহারায় ভাল মানুষের ছাপ সুস্পষ্ট। দয়ালু, বুঝদার; কার বাপের সাধ্যি, দেখে বলবে ব্যাটা পুলিশের লোক!

সোজা আমাদের টেবিলের সামনে হাজির হলো সে। চোখে চোখ পড়া মাত্র একেবারে আমার নাম ধরে জিজ্ঞেস করল, মি. অ্যান্ড্রু কারমাইকেল, ঠিক বলিনি?

নিঃসন্দেহে বিনয়ী কণ্ঠস্বর। এরই মাঝে পকেট থেকে নিজের পুলিশি পরিচয়পত্র বের করে আমার চোখের সামনে মেলে ধরল সে।

কিছু না ভেবেই উত্তর দিলাম, হ্যা।

ভদ্রভাবে নড করল লোকটা। তার হলদে রঙের চোখজোড়ায় রাজ্যের ভালমানুষী।

ভালই হলো, আপনাকে পেয়ে গেলাম এখানে, বলল সে। যদি আপনাকে অনুরোধ করি, আমার সাথে একটু বাইরে যাবার জন্যে-জরুরি কিছু আলাপ ছিল-আপনি মাইণ্ড করবেন?

মাইণ্ড করব না? তা-ও এই পরিস্থিতিতে? যেখানে হাতের মার্টিনির অর্ধেকও শেষ হয়নি এহেন অবস্থায় আহাম্মকটা জিজ্ঞেস করে, মাইণ্ড করব কি না।

এখনই? প্রশ্নটা করতে গিয়ে নিজের কণ্ঠ নিজের কানেই বেসুরো ঠেকল। একটু কেশে গলার ভেতরটা সাইজ করে নিলাম।

এখন গেলেই ভাল হয়। স্যালি অ্যানের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করল, ম্যাডাম, নিশ্চয়ই আপত্তি করবেন না?

মেয়েটা নড়েচড়ে বসল। মনে করাকরির কী আছে? নির্লিপ্ত সুরে বলল সে। যদি কোনও অপকর্ম সে করেই থাকে...তবে আমি কিন্তু কোনও রকম সাতে-পাঁচে নেই। মাত্র পনেরো মিনিটের পরিচয় আমাদের। উনি ড্রিঙ্ক অফার করলেন, আমিও না করলাম না- এই-ই আরকী!

মুখটা চোঙা হয়ে গেল আমার। শালী ঘোড়ামুখী! বারোভাতারি! তোর শরীরের কোন্ চিপায় কয়টা দাগ আছে সব মুখস্থ ঝেড়ে দিতে পারি...এতসব দাগ আবিষ্কার করতেও তো কম ডলার খসেনি আমার পকেট থেকে, আর এখন…………! পনেরো মিনিটের পরিচয়! হাহ...একেই বলে কপাল-পুলিশের ছায়া দেখলে রোমান্সও ড্রাই-আইস হয়ে পড়ে!

র‌্যানডেল বলল, ইচ্ছে করলে হাতের ড্রিঙ্কটা শেষ করতে পারেন আপনি।

আর ড্রিঙ্ক! কোনওমতে উঠে দাঁড়ালাম আমি। বললাম, তার আর দরকার নেই, আমি প্রস্তুত। কিন্তু কী নিয়ে কথা বলবেন সে সম্পর্কে একটু ধারণা দেবেন? হাসল র‌্যানডেল। জান্নাতী ফেরেশতাসুলভ হাসি; যদিও তা হলুদ চোখজোড়া ছুঁলো না। আমার দিকে সামান্য ঝুঁকে এল সে।

কিছুই গোপন করব না, বলেই হাঁটা দিল। অগত্যা পাশাপাশি আমিও। বাইরেই পার্ক করা ছিল পুলিশের ভ্যানটা। র‌্যানডেল স্বয়ং পিছনের দরজা খুলে মেলে ধরল। পাশাপাশি বসলাম দুজনে। দরজা বন্ধ করে নীরব ইশারায় ড্রাইভারকে গাড়ি ছাড়তে নির্দেশ দিল সে। গাড়ি এগোতেই হঠাৎ সে বলে বসল, আপনার সাথে জাল টাকার ব্যাপার নিয়ে দুটো কথা বলতে চাই, মি. কারমাইকেল।

জাল টাকা! মানে কী এর? আর এ নিয়ে আমার সাথে আলাপের কী আছে? আমি এর কী-বা বুঝি?

তা সে যাই হোক, স্বস্তির ভাবটুকু কিন্তু ঠিকই আমার শরীরময় বয়ে গেল। ব্যাপার যাই হোক না কেন, আমার জন্য ভয়াবহ কিছুই নয়-এখন আমি নিশ্চিত। র‌্যানডেলকে গোপন করে স্বস্তির নিঃশ্বাসটা ফেললাম আমি। আর যাই হোক, টাকা জাল করার অপরাধে সে আমাকে ফাঁসাতে পারবে না। ব্যাপার স্যাপার কিছু থাকলেও তা অন্য কোথাও। জীবনে একটা জাল টাকাও তৈরি করিনি-আর করবই বা কী, জাল লিখতে অন্তস্থ য

না, বগীয় জ লাগে তাই তো ছাই জানি না! এমনই টনটনে আমার সাধারণ জ্ঞান।

তা হলে কেন কেঁপে উঠেছিল আমার চোরের মন? নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে আপনাদের? অধৈর্য হবেন না, এক্ষুণি ব্যাখ্যা দিচ্ছি।

যদি লেফটেনেন্ট বলত, সশস্ত্র ডাকাতি-তা হলে খবর হয়ে গিয়েছিল আমার। আঁতকে উঠলেন? এখনও তো শেষ করিনি। ডাকাতি-তা-ও বাসাবাড়িতে নয়, একেবারে ব্যাংক-ডাকাতি! হ্যা, সশস্ত্র ব্যাংক-ডাকাতি। তা-ও একটা দুটো নয়-এ পর্যন্ত কম করেও আঠারোবার এই কীর্তি করেছি আমি। এবং এখনও অক্ষতই রয়ে গেছি। ধরা তো পড়িইনি, এমনকী সন্দেহের নিঃশ্বাসটুকুও ঘাড়ের ওপর ফেলতে দিইনি। এমনই কারিশমেটিক আমি!

আমার শতভাগ সাফল্য নিয়ে আমি গর্বিত। ব্যাংক-ডাকাতি তো আর ছেলের হাতের মোয়া না যে গেলাম আর মাল হাতে নিয়ে বের হয়ে এলাম। এজন্য প্রয়োজন যত্নশীল পরিকল্পনা, সাহস, নিপুণ বুদ্ধিমত্তা, সময়জ্ঞান-সব মিলিয়েই নিখুঁত এক সিস্টেম আমাকে তৈরি করে নিতে হয়েছে। শুনতে সহজ মনে হলেও বাস্তবে মোটেও তা অত সহজ নয়-বিশেষ করে বিষয়টা যখন সশস্ত্র ব্যাংক-ডাকাতি। আপনাকে তখন নিরাপত্তা, লুকাননা অ্যালার্ম, ক্যামেরা-এসবই কঠিনভাবে বিবেচনায় আনতে হবে। আরও আছে। ঠিক কখন, কোন সময়ে হানা দিতে হবে, অসংখ্য কর্মচারীর মাঝ থেকে কাকে টার্গেট করব, আর সবচেয়ে বড় যে বিষয়-কী পরিমাণ টাকা আমি সরাব?

হ্যা, এটা খুবই জরুরি, অন্তত আমার সিস্টেমে। অতি লোভে তাঁতী নষ্ট বলে কথা আছে না! তাই কোনও অ্যাসাইনমেন্টেই বড়সড় দাও মারতে যাই না আমি। একজন নিঃসঙ্গ ব্যাংক-কর্মচারীর দেরাজে যতটুকু থাকে-ব্যস, এটুকুই। নট এ সিঙ্গেল পেনি মোর! কাজও সারি দ্রুত এবং ঝটপট। ব্যাংক-কর্তৃপক্ষ কিংবা ইনসুরেন্স কোম্পানিগুলোও ব্যাপারটা চেপে যায়। কত টাকা হারিয়েছে? কয়েকশো ডলার? হাজার? দুই হাজার? চেপে যাও, চার্লি! কেবল সন্ধ্যায় বাসায় যাবার আগে ভালভাবে খেয়াল রেখ-মোটা টাকা ভরা ভল্টের দরজাটা টাইটমত আটকেছ কি না...

কী বুঝলেন? কিছুই না! আরে ভাই, শান্ত পুকুরে ছোট ছোট ঢিল ছুঁড়ুন, হালকা একটা কম্পন তৈরি হবে মাত্র। কিন্তু একটা দুই টনী বোল্ডার ছুঁড়েই দেখুন না, মাথার ওপর নরক ভেঙে পড়বে একেবারে।।

তো এভাবেই আড়ে আড়ে কাজ সারি আমি দারুণ, তাই না? অন্তত আমি তো তাই-ই ভাবি। এ জন্যেইতে দুবছর ধরে পত্রিকার লোকেরা আমাকে ছায়াশত্রু নামে ডেকে আসছে। আমাকে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে সমানে পুলিশের চোদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে আসছে তারা। কিন্তু বিধি বাম আমি যে তিমিরে, সেই তিমিরেই রয়ে গেছি। ওই যে, গুণীজনেরা বলেন-অতি লোভ কোরো না। তাই এখনও অক্ষত এই আমি। সামান্য যা আয় হয়, তা দিয়েই মার্টিনি আর স্যালি অ্যানদের নিয়ে দিব্যিই আছি বলব।

এখন তো বুঝলেন, র‌্যানডেল জাল টাকা বলাতে কেন এত ফুরফুরে লাগছে নিজেকে? তাই নিশ্চিন্ত মনেই পুলিশ হেডকোয়ার্টারে এসে র‌্যানডেল এর পিছু নিয়ে তার অফিসে প্রবেশ করলাম। আমার বিবেক তো অল ক্লিয়ার, তবে ভাবনা কীসের? একটা চেয়ার টেনে আয়েশে হেলান দিয়ে বসলাম তাতে। অপেক্ষা করছি-কখন জনাব সেন্টার কিক করেন।

আমাকে সিগারেট সাধল সে, আমি সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করায় নিজেই ধরাল। ফু দিয়ে কাঠিটা নিভিয়ে পাশের ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ফেলে দিল র‌্যানডেল। এরপর নিজেও চেয়ারে গা ছেড়ে দিয়ে হেলান দিয়ে বসল।

সহযোগিতা করার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ, বলল সে। বিশ্বাস করুন, আমি কৃতজ্ঞ বোধ করছি।

আমি কাঁধ ঝাঁকালাম। আমি আপনাকে সহযোগিতা করছি নাকি আপনি আমাকে গ্রেফতার করে এনেছেন? ঠিক করে বলুন তো, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটা কী, লেফটেনেন্ট?

লোকটা নির্ভেজাল শক খেল যেন। গ্রেফতার? অভিযোগ? তা হলে সত্যি সত্যিই দেখছি আপনি আমাকে ভুল বুঝেছেন...

আপনি বলেছিলেন, জাল টাকা না কী নিয়ে আমার সাথে আলাপ করবেন?

নিশ্চয়ই। নাকে-মুখে গাগল করে ধোঁয়া ছাড়ল সে। তাই করব আমি। একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে নিল সে। আজ সন্ধ্যায় ট্যাসোর বার থেকে কল আসে একট। ওরা অভিযোগ করে যে, ওদের ক্যাশের ভেতরে একটা জাল টাকার নোট পাওয়া গেছে। সম্ভবত কোনও খদ্দের বিল মেটানোর ফাঁকে ওটা গছিয়ে দিয়েছে। তদন্তের খাতিরে আমিও ছুটে যাই সেখানে। তো এই হলো কাহিনি।

এর সাথে আমার কী সম্পর্ক? শিয়ালের বাচ্চাটার কথা শুনতে শুনতে মেজাজ খিচড়ে উঠেছে এতক্ষণে।

আপনি ছিলেন ওখানে, তাই না? যেন খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে এমনি তার ভাবসাব। বান্ধবীকে নিয়ে বারটেণ্ডারের খুব কাছাকাছি বসেছিলেন।

হ্যা, তো? আমার সময় নষ্ট করার এটাই কি একমাত্র কারণ?

আমি আপনার সময় নষ্ট করছি না! হঠাৎ ভারী হয়ে উঠল লেফটেনেন্টের কণ্ঠ, পরক্ষণেই শান্ত সুরে আরম্ভ করল, আমি আপনাকে অনুরোধ করেছি...ভদ্রভাবে...যদি কিছু মনে না করেন তো চলুন আমার সঙ্গে-আর আপনিও সহযোগিতা করার মন মানসিকতা নিয়ে চলে এলেন...কী বলবেন এটাকে? আমি বল প্রয়োগ করেছি? নাকি এটা আপনার স্বেচ্ছা সহযোগিতা?

সাক্ষাৎ শয়তান! এর বেশি আর কী ভাবব? এর কাছে কি আর মনের কথা ভাগাভাগি করা যায়? হাল ছেড়ে বললাম, ঠিক আছে, না হয় সহযোগিতাই করছি...তবে সময়ক্ষেপণও বটে!

আপনি আমার মত ভাবছেন এতেই আমি খুশি, না হয় হলোই একটু সময়ক্ষেপণ, র‌্যানডেল বলল। যাক গে, যেটা বলছিলাম...ট্যাসোর বারটেণ্ডার খুব জোর দিয়েই আপনার দিকে আঙুল তুলেছে। বলেছে, আপনিই সেই ব্যক্তি যে কি না ওই জাল নোটটা দিয়ে বিল পরিশোধ করেছেন।

এবার আমার হতভম্ব হবার পালা একই সাথে উদ্বেগও অনুভব করছি। স্যালি অ্যানের সাথে সন্ধ্যায় বারে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে করার চেষ্টা করলাম এবার। পানীয়ের দাম বাবদ পঞ্চাশ ডলারের একটা নোট ঠিকই দিয়েছিলাম বারটেণ্ডারকে। বহুল ব্যবহৃত নোংরা একটা নোট। কিন্তু তাই বলে জাল!...

আমার কথা বলেছে সে?

র‌্যানডেল মাথা ঝাকাল। তার বক্তব্য অনুসারে পঞ্চাশ ডলারের একটা নোটই আজ সন্ধ্যায় ক্যাশে জমা পড়েছে-জাল নোট।

দ্রুত ভাবছি। বারটেণ্ডারের বক্তব্য সঠিক হলে নিঃসন্দেহে ওটা আমারই দেয়া। কী বলব এখন? স্বীকার যাব? বলব যে জানি না ওটা কীভাবে আমার হাতে এসেছিল...হয়তো জুয়ায় জিতেছিলাম কিংবা অন্য কোনওভাবে...

এসবের কোনওটাই বললাম না, উল্টো ওভারস্মার্ট সাজতে গিয়ে ওভার মিসটেক করে বসলাম একটা। বারটেণ্ডারের ভুল হয়েছে, লেফটেনেন্ট। আপনি আমার ব্যাকগ্রাউণ্ড চেক করে দেখুন। ম্যাগডোনাল্ড রেস্টুরেন্টের মাঝারি আয়ের বাবুর্চি আমি। আর আমি খরচ করব পঞ্চাশ ডলার? আমার পেশার একজন লোক এতগুলো টাকা ফালতু খরচ করে বেড়াতে পারে? এরকম কজনকে চেনেন আপনি?

তা সত্যিই চিনি না, ব্যাটা বিড়বিড় করল। কিন্তু লোকটা খুব নিশ্চিত হয়েই আপনার কথা বলেছে।

ব্যাটার মরা দাদা কবর থেকে উঠে এসে টাকাটা দিলেও তা সে মনে রাখতে পারত না-অন্তত আজ সন্ধ্যায়। কী রকম ভিড় ছিল সেখানে সে তো আপনি নিজ চোখেই দেখে এসেছেন। অর্ডার সামলানোর ফুরসৎ মেলে না, সে কীভাবে মনে করে বলবে কে কোন্ নোটটা দিয়ে দাম চুকিয়েছিল বিষয়টা উদ্ভট নয় কি?

র‌্যানডেল শ্রাগ করল। এমনি মুখের ভাব, যেন আমার দেয়া কুইনাইন বহু কষ্টে হজম করতে হচ্ছে তাকে। হতে পারে, বলল সে। এ জন্যেই তো আপনাকে এখানে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলাম।

এবার আমার বিনয়ী সাজবার পালা।

নিশ্চয়ই, লেফটেনেন্ট। একেবারে ঠিক কাজটাই করেছেন আপনি। আমার মন খারাপ করার কিছু নেই। মাপনি তদন্ত করে দেখতে পারেন। দুদফা ড্রিঙ্কের অর্ডার দিয়েছিলাম আমি। বিল হয়েছিল দশ ডলারের কাছাকাছি। ভাঙতিটা আর ফেরত নেইনি, বখশিশ দিয়েছিলাম! মনের সুখে চাপা মেরে গেলাম। পারলে ব্যাটা তদন্ত করে দেখুক! স্যালি অ্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনও ফায়দা হবে না। আমি কত টাকা পরিশোধ করেছি না করেছি এসবে লক্ষ রাখার সময় কোথায় তার? আর এমনিতেও পেটে মাল পড়লে দুনিয়াদারির খবর থাকে না ওর-কেবল বারের দেয়ালে সাঁটা আয়নায় নিজের বিকট প্রতিবিম্বের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছাড়া!

বারকয়েক চোখ পিটপিট করে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল র‌্যানডেল। বলল, বুঝলাম নোটটা তা হলে আপনি দেননি...এরপরেও কি একটা অনুরোধ রাখবেন, মি. কারমাইকেল?

অবশ্যই চেষ্টা করব।

আজ সন্ধ্যায় যারা ট্যাসোতে উপস্থিত ছিল, এদের ভেতরে আপনার যদি কেউ পরিচিত থেকে থাকে তার বা তাদের নাম ঠিকানা আমাকে দেবেন, প্লিজ। সেক্ষেত্রে নতুন করে তদন্ত আরম্ভ করতে সুবিধা হবে আমার।

আশাভরা দৃষ্টি মেলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল সে। আমি মাথা নাড়লাম। কেবল স্যালি অ্যানের কথাই বলতে পারি আমি, যদিও তার নামের শেষাংশটুকুও সে আমাকে জানায়নি। বোঝেনই তো কীভাবে এগোয় এসব। এক কোনাতে একা বসে থাকে, কেউ এগিয়ে এসে ড্রিঙ্ক অফার করলে না করে না। প্রস্তাবটা মাটিতে পড়ার আগেই ঘ্যাট করে একেবারে কোলে চড়ে বসবে। আকণ্ঠ মদ গিলবে, সঙ্গ দেবে...আপনি বরং বারটেণ্ডারের সাথে নতুন করে কথা বলে দেখতে পারেন।

ব্যাটা কি দীর্ঘশ্বাস ফেলার রোগে আক্রান্ত হলো নাকি? ফোস শব্দে বাতাস ছেড়ে বলল, আমিও সেরকমই ভাবছিলাম।

আমি উঠে দাঁড়ালাম। এবার তা হলে আমি যেতে পারি?

সে হাত নেড়ে বলল, আমিই আপনাকে পৌছে দিয়ে আসব। অন্তত এটুকু আমাকে আপনার জন্য করতে দিন। ঘড়ি দেখল সে। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ফ্রি হব আমি, এ সময়টুকু একটু অপেক্ষা করুন।

আর একটা মুহূর্তও আমি অপেক্ষা করতে চাই না এই নরকে, চাইছি এক্ষুণি ডেস্কের ওপারে বসা লোকটার সামনে থেকে লেজ তুলে ভোঁ দৌড় দিই। পালাতে চাই তার কপট ভদ্রতার অত্যাচার থেকে। এবং অবশ্যই ওই অপয়া বারেও আর ফিরতে চাই না আমি। বললাম, ধন্যবাদ, তার আর দরকার হবে না, আমি বরং একটা ট্যাক্সি ধরি...।

প্লিজ, বসুন, বাধা দিল সে। একটু যেন বদলে গেছে কণ্ঠস্বর। কী জানেন, মি. কারমাইকেল, আমি বোধহয় একটু বেশিই মাথা ঘামাচ্ছি ওই পঞ্চাশ ডলারের নোটটা নিয়ে...কেন যেন মনে হচ্ছে এটা এমন একটা ভাইটাল সূত্র, যার ওপর নির্ভর করতে পারি...

নির্ভর করতে পারেন, বাধা দেয়ার ব্যাপারে আমিও কম গেলাম না। কী ব্যাপারে?

র‌্যানডেল নাটকীয় ঢঙে জবাব দিল, ছায়াশত্রুকে ধরার ব্যাপারে!

বুঝছেনই তো, এবার আমার ভিরমি খাবার পালা। খেলামও। নিমেষে জমে গেলাম গোটা শরীরময়। আর সে-ও এমন জমাই জমলাম, যে ভয় হলো একটু নড়লেই বুঝি চিড় ধরবে কোনও হাড়ে। কোনওমতে বলতে পারলাম, ছায়াশত্রু! ওই ব্যাংক-ডাকাতটার কথা বলছেন? প্রায়ই পত্রিকায় খবর হয়?

ঠিক ধরেছেন। আবার স্বাভাবিক কণ্ঠ। ধুরন্ধর এক লোক, যে কি না কম করেও আঠারোবার সাফল্যের সাথে নিজের ধান্দায় সক্ষম হয়েছে।

সামলাচ্ছি নিজেকে। মুখের ভাব যথাসম্ভব সহজ করে হেলান দিয়ে বসলাম। কণ্ঠে কৌতূহল টেনে জিজ্ঞেস করলাম, বুঝলাম না, লেফটেনেন্ট...একটা জাল নোট কীভাবে আপনাকে ওই লোক পর্যন্ত পৌঁছে দেবে? অতি কল্পনা হয়ে যাচ্ছে না?

সাথে সাথে কোনও জবাব এল না। এসব ক্ষেত্রে নাটকীয় বিরতি বিশাল ভূমিকা পালন করে আর র‌্যানডেলও ঠিক তাই করছে এখন। আধবোজা চোখে তাকিয়ে আছে সিলিঙের দিকে-জিভ বের করে ঠোট জোড়া চাটল একবার। আমিও ধৈর্যের প্রতিমূর্তি, সতর্কও বটে! কিছুতেই মনের অস্থিরতা যেন চোখে-মুখে উপচে না পড়ে!

অবশেষে মুখ খুলল সে, শিশুতোষ এক স্কিম- হ্যাঁ, যথার্থই শিশুতোষ! ভয় হচ্ছিল কাজ হবে কি না...কেন ভয় হবে না, বলুন? এ তো কোনও পুলিশের মাথা থেকে বের হয়নি, এক অ্যামেচারের আইডিয়া। সেই তো ব্যাংক-প্রেসিডেন্টকে চিঠি লিখে উপায়টা বাতলে দিয়েছে।

আপাত ঠাণ্ডা আমি এখনও, যদিও মন্থর হয়ে আসছে শ্বাস প্রশ্বাসের গতি।।

উদ্ভট আইডিয়াই বলব, র‌্যানডেল বলে চলছে। প্রথম দিকে তো পাত্তা দিতেই মন চাইছিল না কিন্তু কী করার ছিল, বলুন? পত্রিকাগুলো যেভাবে পুলিশের পেছনে লেগে রয়েছে...ভাবলাম দেখাই যাক না, কী হয়? আপনার আগ্রহ থাকলে ভেঙে বলতে পারি।

আমি আগ্রহী। আর কীই বা বলি? তবে বলছিই যখন আরেকটু না হয় যোগ করা যাক। কেবল আমি কেন, শহরের কে তার ব্যাপারে আগ্রহী নয়, বলুন?

তা কি আর জানি না...সত্যি বলতে কী, ট্যাসোর বারে যে জাল টাকাটা আজ পাওয়া গেছে, আসলে ওটা ছিল ফাদ। ছায়াশত্রু ওই পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে মাত্র।

আমার মেরুদণ্ড বেয়ে হিমবাহ বয়ে গেল। ফাঁদ!

র‌্যানডেল মাথা কঁকাল। আগে আপনাকে লোকটার কাজের ধরন বুঝতে হবে, পুলিশেরও সেটা বুঝতে অনেক সময় লেগেছিল।

কী রকম? উচিত ভেবেই রাখলাম প্রশ্নটা।

তার একান্ত নিজস্ব কর্মপদ্ধতি, আরকী! উদাহরণ দিচ্ছি। প্রতিটি হোল্ড-আপের সময় গলার স্বর একেবারে খাদে নামিয়ে আনে সে। প্রায় ফাসফেঁসে কণ্ঠে কথা বলে। একাকী কাজ সারে, কোনও সাথী রাখে না। প্রতিবারই ভিন্ন ভিন্ন ছদ্মবেশের আশ্রয় নেয়। বেশি দাও মারে না। প্রতিটি ডাকাতির সময় কেবল একটা মাত্র ড্রয়ারে থাবা দেয় সে। সচরাচর শহরের অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি এলাকার কোনও ব্যাংককে টার্গেট করে সে। হানা দেয় সন্তর্পণে-তা-ও ঠিক দুপুর বেলায়। ভেঙে ভেঙে পাওয়া এসব সূত্র জোড়া লাগিয়ে পুলিশ তার কাজের প্যাটার্ন সম্পর্কে ধারণা তৈরি করে নেয়। লোকটার এ নাগাদ হানা দেয়া ব্যাংকগুলোর লোকেশন পর্যবেক্ষণ করে তার সম্ভাব্য প্ররবতী হামলার লক্ষ্যগুলোও চিহ্নিত করে পুলিশ।

আচ্ছা! কখন যে আক্ষরিক অর্থেই কৌতূহলী হয়ে পড়েছিলাম, জানি না। মন্ত্রমুগ্ধের মত গিলছিলাম তার কথাগুলো। কিন্তু জাল নোটের ব্যাপারটা?

আসছি সে প্রসঙ্গে, একটু ধৈর্য ধরুন। যা বলছিলাম, তার কাজের রেগুলার ধরনটা যখন একবার আমরা আন্দাজ করতে পারলাম, আমাদের পরবর্তী করণীয় বেশ সহজ হয়ে এল-বলতে পারেন তার থেকে এক ধাপ এগিয়ে গেলাম আমরা। আন্দাজ করে নিলাম এরপরে কোন কোন ব্যাংকে হিট করতে পারে সে। সবগুলোতে ঢুঁ মারলাম। চিহ্নিত করার চেষ্টা করলাম কোন্ মহিলা স্টাফকে টার্গেট করতে পারে সে-যাকে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে ড্রয়ার খুলে টাকা হাতিয়ে নেবে।

ছেলেমানুষি শোনাচ্ছে, আমি মন্তব্য করলাম।

হয়তো, তবে এসবই তার কাজের ধারা। সবসময়ই মহিলা স্টাফদেরকে সে টার্গেট করে-পুরুষদের নয়। তবে পছন্দ আছে বটে তার! সবচেয়ে সুন্দরী কর্মচারীকে বেছে নিতে ভুল করে না সে। স্বভাবতই এরা একটু বেশিমাত্রায় দুর্বলচিত্তের হয় কি না...

একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে আছি আমি। ফরফর করে আমার গোপন কথাগুলো বলে যাচ্ছে সে, যেন ওগুলো আমার নয়, ওই বানচোতটার মাথা থেকেই গজিয়েছিল।

একটু মুচকি হেসে র‌্যানডেল আরম্ভ করল আবার, ছায়াশত্রু বা যা-ই হোক না কেন তার নাম, লোকটা সম্ভবত একটা সাইকো। ভীত সন্ত্রস্ত সুন্দরী কর্মচারী-যে কি না তার কলিগদের থেকে একটু তফাতেই বসে- পিস্তল দেখিয়ে তার ড্রয়ার খালি করে দেয় সে। তাকে ধরার জন্য তার এই বিশেষ গুণটাকেই আমরা ভিত্তি হিসাবে নিই। ফাদ পাতি জাল টাকা দিয়ে।

কী রকম?

ওই যে বললাম, তার পরবর্তী সম্ভাব্য হামলার ব্যাংকগুলোর একটা তালিকা তৈরি করি আমরা। এগুলোর সবচেয়ে আকর্ষণীয়া স্টাফকে টোপ হিসেবে কাজে লাগাই। ওই নির্দিষ্ট তরুণীদের প্রত্যেকের ডেস্কের দেরাজে আসল টাকার সাথে জাল টাকা ভরে দিই। সবই পঞ্চাশ ডলারের নোট। মেয়েগুলোকে সতর্ক করে দেয়া হয়, যেন কোনওভাবেই ওই জাল নোটগুলো ক্লায়েন্টদের হাতে না পড়ে কেবল ছায়া শত্রু ছাড়া। যদি কোন নির্জন দুপুরে পেছনের জানালায় দেখা দেয় সে, অস্ত্র বাগিয়ে নির্দেশ দেয় ড্রয়ার খালি করার জন্য-আসল-নকল সব নোটই যেন তার হাতে গছিয়ে দেয় ওরা, কোনওরকম দ্বিধা না করে...কিছু বুঝলেন, মি. কারমাইকেল?

বুঝেছি, গলা শুকিয়ে বললাম আমি। এরপর প্রতিটি বারে, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর কিংবা শপিং মলে জাল নোটগুলোর নম্বর পাঠিয়ে দিলেন। একই সাথে নির্দেশ দিয়ে রাখলেন ওইসব নম্বরের কোনও নোট হাতে এলে ওরা যেন সরবরাহকারীকে শনাক্ত করে রাখে এবং তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশে খবর দেয়। ঠিক বলিনি?

একদম ঠিক।

আমি কোনওরকম হাসি হাসি মুখে বললাম, আর তাই ট্যাসোর বারটেণ্ডার ওরকম একটা জাল নোট পাওয়া মাত্র আপনাদের খবর দিল।

জী। খবরটা পেয়েই বুঝলাম ছায়াশত্রুকে হাতের মুঠোতে ভরা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। বারটেণ্ডারের দেয়া নোটের নম্বরটা মিলিয়ে দেখেছি আমরা। ন্যাশনাল ব্যাংকের সাউথ ইস্ট শাখাতে প্ল্যান্ট করা হয়েছিল ওটা...ইনফ্যাক্ট, জাল নোট ছিল মোট দুটো। তার একটা বারটেণ্ডারের মাধ্যমে আমাদের হাতে ফেরত এসেছে।

আমার গা গুলোচ্ছে, বমি পাচ্ছে...পঞ্চাশ ডলারের দুটো জাল নোট! একটা যদি বারটেণ্ডারকে দিয়ে থাকি তা হলে অন্যটা এ মুহূর্তে কোথায়? আমার পার্সের ভেতরে নাকি আমার রুমের আলমারিতে? ভাগা দরকার! এক্ষুণি কেটে পড়া উচিত এখান থেকে। পার্সটা চেক করতে হবে, না পেলে রুমে গিয়ে আলমারি ঘাঁটব। মোটকথা, যত জলদি সম্ভব খুঁজে বের করতে হবে আপদটাকে। পুড়িয়ে ফ্যাল! ধূলিসাৎ কর ওটাকে! মস্তিষ্ক ক্রমাগত নির্দেশ পাঠাচ্ছে আমাকে। এরপর লেজ তুলে পালাও এই পোড়ার শহর থেকে....

র‌্যানডেলের টেলিফোন বেজে উঠল। রিসিভার তুলে কিছুক্ষণ অন্যপ্রান্তের কথা শুনে গেল সে, নিজের মুখ আর ফুটাল না-কেবল বারকয়েক মাথা দোলাল। কথা শেষে রিসিভারটা যথাস্থানে রেখে দিয়েই বলে উঠল সে, আপনি কট, মি. কারমাইকেল! ধরা খেয়েছেন শেষ পর্যন্ত।

কী খেয়েছি? আকস্মিক আক্রমণে অবশিষ্ট আক্কেলটুকুও গুড়িয়ে গেল আমার, প্রশ্নটা নিজের অজান্তেই করে বসলাম।

লোকটার কপটতার কি শেষ নেই? সুন্দর ক্ষমাপ্রার্থনার সুরে বলল, আমার লোকেরা ইতোমধ্যেই আপনার রুমে তল্লাশি চালিয়েছে। ট্যাসোর বারটেণ্ডার যে সঠিক লোকটার দিকেই আঙুল তুলেছে, এ ব্যাপারে এখন আমরা নিশ্চিত।

ঈশ্বর, মা মেরি, যিশু...কে কোথায় আছ, এসে আমায় বাঁচাও! আমি আর বাইতে পারি না...

আমার রুমে সার্চ করেছে ওরা! রীতিমত আর্তনাদ করে উঠলাম এবার।

সবই নিয়ম ধরে, র‌্যানডেল বলল। সাথে সার্চ ওয়ারেন্ট ছিল। আসলে এক মাস আগেই ওটা তৈরি করে রাখি আমরা- বাকি ছিল কেবল ফাঁকা জায়গায় আপার নামটা বসানো! কেশে গলাটা আবার পরিষ্কার করে নিল সে। বারটেণ্ডার আপনাকে নামে চেনে-কারণ প্রায়ই যাতায়াত ছিল আপনার ওখানে। তার মুখ থেকে নামটা শোনামাত্র দেরি না করে সার্চ ওয়ারেন্টের ফাঁকা জায়গাটাতে সুন্দর করে বসিয়ে দিলাম আমি স্বয়ং। আপনার ডেরা ঠিকানা পেতে সাকুল্যে পাঁচ মিনিটও লাগেনি, তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠিয়ে দিলাম সেখানে। আর নিজে রওনা হলাম ট্যাসোর উদ্দেশে।

আমি প্রলাপ বকা আরম্ভ করলাম, আপনি বলেছেন আমাকে অ্যারেস্ট করা হয়নি। কোনওরকম অভিযোগও নেই আমার বিরুদ্ধে...

তখন ছিল না, এখন আছে। এ মুহূর্তে আপনাকে গ্রেফতার করা হলো, মি. কারমাইকেল।

প্রায় মরিয়া হয়ে বললাম, আপনি মিথ্যে বলে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন, লেফটেনেন্ট। আমার উকিলের সাথেও পরামর্শ করার সুযোগ দেননি। তার অনুপস্থিতিতেই আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, ক্ষুন্ন করেছেন আমার আইনগত অধিকার...

র‌্যানডেল আবারও চোখ বুজল।

আমার মনে পড়ছে না এরকম কিছু আমি করেছি কি না। চোখ মেলে তাকাল সে।

হ্যা, করেছেন। আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন আপনি। অভিযুক্ত করেছেন। সুচতুরভাবে চেষ্টা চালিয়েছেন-আমার মুখ থেকে যাতে স্বীকারোক্তি বের হয়।

ছি ছি, কী বলছেন এসব! একটানে ডেস্কের ড্রয়ার খুলে ভেতর থেকে একটা মিনি টেপরেকর্ডার বের করল সে। বলল, এটা অন্তত নিশ্চিত করবে যে অধিকাংশ প্রশ্নই আপনার মুখ থেকে বেরিয়েছে-আমি কেবল উত্তর দিয়ে গেছি। অর্থাৎ স্বীকারোক্তি যদি কেউ দিয়ে থাকে, সেটা আমিই দিয়েছি। আপনি নন। বিশেষত ছায়াশত্রুকে ফাঁদে ফেলাঃ পর্বটুকু যে কেউ শুনলে এই ধারণাই করবে।

এবার অন্য পথ ধরলাম আমি। আপনি কৌশলে আমাকে এখানে এনেছেন, আর সেই ফাকে আপনার লোকেরা আমার রুম সার্চ করেছে...

এটা স্বীকার করছি, বলল বিনয়ের অবতার। আর আপনার কি জানতে ইচ্ছে করে না, আপনার ঘরে ওরা কীসব মূল্যবান সামগ্রী আবিষ্কার করেছে? জবাবে চুপ করে রইলাম, কাজেই সে বলে চলল, বলছি, শুনুন, আইটেম এক: জাল পঞ্চাশ ডলারের একটা নোট যার নম্বর আমরা আগেই টুকে রেখেছিলাম। আইটেম দুই: তিনজোড়া কন্ট্যাক্ট লেন্স, প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন রঙের। আইটেম তিন: তিনটি পরচুলা, তিন সেট ভ্রু আর গোঁফ-দাড়ি; ম্যাচিং কালার। আইটেম চার: একটা পেটমোটা ফাইল-পত্রিকার কাটিং-এ ভরা। সব কটাতেই ছায়াশত্রুর দ্বারা সংঘটিত ব্যাংক ডাকাতির বর্ণনা ছাপা হয়েছে।

দুঃখী দুঃখী চেহারা বানিয়ে আমাকে দেখছে সে এখন। আর কিছু বলার দরকার পড়ে, মি. কারমাইকেল?

বিমর্ষ বদনে মাথা নাড়লাম আমি।

এখন আপনি আপনার উকিলকে ডাকতে পারেন, র‌্যানডেল বলল। এখন আমি আপনার বিরুদ্ধে একাধিক সশস্ত্র ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগ আনছি। আগামী দিনগুলো আপনার যাতে চোদ্দশিকের ভেতরে কাটে, সেজন্য যা কিছু করার সবই করব আমি। এতটুকু কার্পণ্য করব না।

করবে যে না এতে আমারও বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ নেই। বললাম, সত্যিই আপনি স্মার্ট, লেফটেনেন্ট। স্বীকার করছি, দারুণ একটা ফাঁদ পেতেছিলেন।

আগেই বলেছি ফন্দিটা আমাদের কারও মাথা থেকে বের হয়নি। ড্রয়ারের ভেতরে হাত চালিয়ে ছোট্ট একটুকরো কাগজ বের করে আনল সে। ওটা বাড়িয়ে দিল আমার দিকে। এর ভেতরেই সব রহস্যের সমাধান পাবেন..পড়েই দেখুন না।

অচেতন ভাবে নিভাঁজ কাগজের টুকরো হাতে নিলাম আমি। কাঁচা হাতের পেনসিলে লেখা। স্বল্প কটা লাইন। আমাকে ল্যাং মারার জন্যে যথেষ্ট।

মাননীয় ব্যাংক প্রেসিডেন্ট সাহেব,

ছায়া শত্রুকে ধরতে চান? তাকে বুদ্ধ বানাতে হলে আসল টাকার সাথে কিছু জাল টাকাও রাখার ব্যবস্থা করুন। পরের বার ডাকাতি করতে এলে সবগুলো নোটই তার হাতে ধরিয়ে দিন। ধরা সে পড়বেই!

শ্যাফিন রেমান, বয়স ১০।

পড়া শেষ করে ডেস্কের ওপর ছুঁড়ে ফেললাম ওটা। র‌্যানডেল দেখছে আমাকে। এখনও নির্বিকার মুখ, ভাব বোঝা যায় না। সহজ সুরে বলল, ছেলেটার নামে ব্যাংকে একটা অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে প্রতি মাসে পাঁচ ডলার করে জমা হতে থাকবে সেখানে। দারুণ, তাই না?

সত্যি দারুণ! স্বীকার না করে পারলাম না। মুখে হাসি টেনে আনার চেষ্টা করছি। দাঁত কেলানো বোকা বোকা হাসি!

এরপরেও যদি বাচ্চাদের সহ্য না করতে পারি, দোষ দিতে পারবেন আমাকে?

মূল: জেমস হোল্ডিং

রূপান্তর: মাহবুবুর রহমান শিশির 

সম্পাদনা: মারুফ মাহমুদ

No comments:

Post a Comment

Popular Posts