মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Saturday, September 18, 2021

অনুবাদ গল্প - সন্ধ্যা (ডাস্ক) – সাকি (এইচ. এইচ. মুনরো) – Dusk – Saki (H. H. Munro) – Bangla translation

অনুবাদ গল্প,ছোট গল্প,মজার গল্প, সাকি (এইচ. এইচ. মুনরো),Dusk – Saki H. H. Munro – Bangla translation,choto golpo,
অনুবাদ গল্প - সন্ধ্যা (ডাস্ক)  সাকি (এইচ. এইচ. মুনরো) DuskSaki (H. H. Munro) – Bangla translation

হাইড পার্কের কোনার দিকের একটা বেঞ্চে হেলান দিয়ে বসলেন নরমান গোর্টসবাই। সামনের রাস্তায় গাড়ি ঘোড়ার স্রোত চলছে। মার্চ মাস, সাড়ে ছয়টা বাজে, সন্ধ্যা নেমে আসছে। তবে পুরোপুরি আঁধার নামেনি, পার্কের বাতি আর চাঁদের আলোয় কিছুটা আলোকিত এদিকটা। পার্কের মধ্যে কয়েকজন লোক হাঁটাহাঁটি করছে, আর কয়েকজন লোক দূরের কোনও বেঞ্চে বসে আছে।

দৃশ্যটা খুশি করল নরমান গোর্টসবাইকে (Norman Gortsby)। তাঁর মতে, সন্ধ্যা হচ্ছে পরাজিত সময়। সারাদিনের জীবনযুদ্ধ শেষে নারীপুরুষ এসময় তাদের আসল চেহারা বের করে। তারা চায় না অপরিচিত মানুষ তাদের দিকে চেয়ে থাকুক। একটু ব্যক্তিগত ব্যর্থতা খোচাচ্ছে গোর্টসবাইকে।

গোর্টসবাইর পাশে বিষণ্ণ মুখে এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক বসেছিলেন। একটু পর তিনি উঠে দাড়ালেন, মনে হলো বাড়ির পথ ধরলেন তিনি। প্রায় সাথে সাথেই বেঞ্চিতে এসে বসল এক তরুণ। পোশাক-আশাক খারাপ নয়, কিন্তু আগের লোকটার মতই মনমরা মুখ তার। সময়টা যে তার ভাল যাচ্ছে না, যেন এটা বোঝাতেই একটা অস্ফুট গালি দিয়ে, ধপাস করে বসল সে বেঞ্চে।

মনে হচ্ছে, তোমার মন-মেজাজ ভাল নেই, মন্তব্য করলেন নরমান। এত পরিচিত মানুষের মত ছেলেটা তার দিকে ফিরল যে সাথে সাথে সচকিত হয়ে উঠলেন তিনি।

আমার জায়গায় হলে আপনার মেজাজও ভাল থাকত না, বলল তরুণ। ভীষণ বোকার মত কাজ করে ফেলেছি আমি।

তাই? নিরাসক্ত গলায় প্রশ্ন করলেন নরমান।

আজ বিকেলেই শহরে এসেছি। বার্কশায়ার স্কোয়ারের পাটাগোনিয়ান হোটেলে উঠব বলে পরিকল্পনা আমার, বলে চলল তরুণ। ওখানে গিয়ে দেখি, কয়েক সপ্তাহ আগেই হোটেলটা ভেঙে ফেলে একটা সিনেমা হল বানানো হয়েছে। ট্যাক্সি ড্রাইভারের পরামর্শে আরেকটু দূরের একটা হোটেলে উঠলাম আমি। হোটেল থেকে বাড়িতে চিঠি লিখলাম, নাম ধাম-ঠিকানা দিয়ে। তারপর বের হলাম সাবান কিনতে। জিনিসটা সাথে আনতে ভুলে গিয়েছিলাম, আর হোটেলের সাবান ব্যবহার করতে পারি না আমি। সাবান কিনে একটু পথ হাঁটলাম। একটা বারেও ঢুকলাম। ফিরতে গিয়ে দেখি রাস্তা ভুলে গেছি। এমনকী হোটেলের কী নাম, সেটা কোন্ রাস্তায়, তা-ও মনে নেই। লণ্ডন শহরে যার কোনও বন্ধু-বান্ধব নেই তার জন্য এটা সাংঘাতিক ব্যাপার অবশ্যই আমি বাড়িতে টেলিগ্রাফ করতে পারি, কিন্তু ওরা আমার চিঠি পাবে আগামীকাল। আর এই সময় আমার হাতে কোনও টাকা নেই। একটা শিলিংও নেই পকেটে। সাবান আর ড্রিঙ্ক কিনতে চলে গেছে সব। পকেটে আমার দুপেন্স আছে, মনে হচ্ছে রাস্তায় কাটাতে হবে রাতটা!

দীর্ঘ বিরতি নিল তরুণ। একটা প্রায় অবিশ্বাস্য গল্প বললাম আমি, তাই না?

না, ঠিক অবিশ্বাস্য নয়, মেপে মেপে বললেন নরমান। আসলে একবার বিদেশে গিয়ে, ঠিক এরকম একটা ঘটনা আমার জীবনেও ঘটেছিল। দুজন ছিলাম আমরা সেবার, ব্যাপারটা আরও চমকপ্রদ সেজন্যে। সে যাই হোক, আমাদের মনে ছিল যে হোটেলটা একটা খালের পাড়ে। সোজা খাল ধরে যেতে যেতে, ভাগ্যক্রমে পেয়ে গেলাম হোটেলটা।

নড়েচড়ে উঠল তরুণ। বিদেশ হলে আমি এত বিপদে পড়তাম না, বলল সে। সোজা দূতাবাসে গিয়ে রিপোর্ট করলেই প্রয়োজনীয় সাহায্য মিলত। কিন্তু নিজের দেশে, এরকম পরিস্থিতিতে সাহায্য করার কেউ নেই। কেউ যদি বিশ্বাস করে আমাকে কিছু টাকা ধার না দেয়, তবে আমাকে আজ নদীর ধারে বাঁধের ওপর শুয়ে কাটাতে হবে। তবে আমি কৃতজ্ঞ যে আপনি আমার কথা একেবারে আজগুবি বলে উড়িয়ে দিলেন না।

শেষের কথাগুলো খুব জোরের সাথে বলল অচেনা তরুণ। যেন নরমান গোর্টসবাই তাকে সাহায্য করতে পারেন এমন আশা-ভরসা সে এখনও ছাড়তে পারেনি।

অবশ্যই, ধীরে ধীরে বললেন নরমান কিন্তু, তোমার গল্পের সবচেয়ে দুর্বল পয়েন্ট হচ্ছে তুমি কোনও সাবান আমাকে দেখাতে পারোনি।

চমকে সোজা হয়ে বসল ছেলেটা। ওভারকোটের পকেটগুলো থাবড়াল সে দ্রুত হাঁতে। তারপর লাফ দিয়ে দাঁড়াল। মনে হয় ওটা হারিয়ে ফেলেছি আমি, বিড়বিড় করল।

এক বিকেলের মধ্যেই হোটেল আর সাবান হারিয়ে ফেলাটা ভীষণ অসাবধানতার লক্ষণ, মন্তব্য করলেন নরমান। কিন্তু তার আগেই হাঁটা দিয়েছে ছেলেটা পথ ধরে। মাথাটা উঁচু করে রেখেছে সে, যেন অপমানিত হয়েছে সে এ কথায়, তবে গায়ে মাখছে না অপমান।।

দুঃখজনক, আপন মনে বললেন নরমান। ওর গল্পের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য অংশ ছিল সাবানটা। সেখানেই গড়বড় করল ও। ও যদি বুদ্ধি করে একটা সাবান ভালমত মোড়কে জড়িয়ে সাথে রাখত তা হলে অনেক ভাল করত। এ লাইনের মানুষকে সবসময়ই হুঁশিয়ার হয়ে পথ চলতে হবে।

বেঞ্চ থেকে উঠে পড়লেন নরমান, এমন সময় বিস্ময়সূচক একটা শব্দ বেরিয়ে এল তাঁর মুখ থেকে। বেঞ্চের ধারে একটা ডিম্বাকৃতির প্যাকেট পড়ে আছে। কোনও কেমিস্টের দোকান থেকে প্যাক করা একটা সাবান। ওভারকোটটা যখন জোরের সাথে আছড়ে ফেলেছিল বেঞ্চিতে তখনই পড়ে গেছে ওটা, কোনও সন্দেহ নেই।

ওটা হাতে নিয়ে, ছায়াঢাকা পথ ধরে নরমান ছুটলেন একটু আগের স্বল্প পরিচিত তরুণের উদ্দেশে।

আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন, এমন সময় দেখলেন রাস্তার মোড়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে দাঁড়িয়ে আছে সে। পার্ক পেরিয়ে যাবে, নাকি নাইট্সব্রিজের পথ ধরবে, তাই ভাবছে সে নিশ্চয়ই। চমকে ফিরল সে ডাক শুনে। নরমানকে দেখে চেহারায় স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ ফুটল।

তোমার গল্পের সত্যতা পাওয়া গেছে, বলে সাবানের প্যাকেটটা তুলে দেখালেন নরমান গোর্টসবাই। নিশ্চয়ই তোমার ওভারকোটের পকেট থেকে পড়ে গিয়েছিল জিনিসটা। বেঞ্চের পাশেই পড়ে থাকতে দেখি সাবানটাকে। মনে হয় এক গিনিতে আপাতত চলে যাবে তোমার। কী বলো? আর সাথে নাও আমার কার্ড।

কয়েনটা দ্রুত পকেটস্থ করে কয়েকটা ধন্যবাদসূচক কথা বলে নাইটসব্রিজের দিকে অদৃশ্য হয়ে গেল সে। সেদিকে তাকিয়ে আপন মনে বললেন নরমান, বেচারা, একেবারেই দেউলিয়া। ভবিষ্যতে মানুষের কথায় আরেকটু আস্থা রাখব আমি।

ফিরতি পথে পার্কের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চললেন নরমান। যে বেঞ্চে বসেছিলেন সেটার আশপাশে, ওপর-নীচে এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক একটা কিছু খুঁজে দেখছেন। চিনতে পারলেন লোকটাকে নরমান, বিকেলের সেই ভদ্রলোক। কিছু হারিয়েছেন বুঝি আপনি? জিজ্ঞেস করলেন তিনি।

হ্যা, স্যর। একটা সাবানের চাকা হারিয়েছি আমি এখানে।

মূল: সাকি

রূপান্তর: আবদুল্লাহ মুহিউদ্দিন তানিম

সম্পাদনা: মারুফ মাহমুদ

No comments:

Post a Comment

Popular Posts