মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Tuesday, September 21, 2021

ছুরি (দ্যা অ্যালুমিনিয়াম ড্যাগার – রিচার্ড্ অস্টিন ফ্রিম্যান) – অনুবাদ গল্প – গোয়েন্দ গল্প – রহস্য গল্প – রোমাঞ্চ গল্প - The Aluminum Dagger - Richard Austin Freeman – Bangla Translation (part 2 of 3)

 

রোমাঞ্চ উপন্যাস,রহস্য গল্প,গোয়েন্দা কাহিনী,অনুবাদ গল্প,থ্রিলার গল্প,The Aluminum Dagger Richard A. Freeman Bangla,দ্যা অ্যালুমিনিয়াম ড্যাগার pdf 

লিনকঃ প্রথম পর্র্

২য় পর্ব্ শুরু: 

ছুরি (দ্যা অ্যালুমিনিয়াম ড্যাগার রিচার্ড্ অস্টিন ফ্রিম্যান) অনুবাদ গল্প গোয়েন্দ গল্প রহস্য গল্প রোমাঞ্চ গল্প - The Aluminum Dagger - Richard Austin Freeman Bangla Translation (part 2 of 3)

--------------------------

খামের ভেতর থেকে চিঠিটা বের করতেই ইন্সপেক্টরের দুই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। চিঠিটা থর্নডাইকের হাতে দিয়ে বলল, দেখুন তো, ডাক্তার, পড়তে পারেন কি না?

থর্নডাইক গভীর মনোযোগে বেশ কিছুক্ষণ চিঠিটার দিকে তাকিয়ে রইল নিঃশব্দে, তারপর জানালার কাছে চলে গেল। পকেট থেকে লেন্স বের করে কাগজটা চোখের কাছে নিয়ে ভাল করে পরীক্ষা করে দেখল-প্রথমে একটা কম পাওয়ারের লেন্স দিয়ে, তারপর একটা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কডিংটন (Coddington) লেন্সের সাহায্যে।

ইন্সপেক্টর বলল, আমি ভেবেছিলাম, আপনি ওটা খালি চোখে দেখতে পাবেন-নকশাটা।

থর্নডাইক সলিসিটরের হাতে চিঠিটা তুলে দিল।

মার্চমন্ট চিঠিটা ভাল করে দেখলেন। আমিও অতি সাধারণ কাগজে ঠিকানাটার মতই বাজে হস্তাক্ষরে লাল কালিতে লেখা: কাজটা করার জন্য আপনাকে ছয় দিন সময় দেয়া হলো। ওপরের চিহ্নটা দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কথামত কাজ না করলে কপালে কী আছে আপনার।

আনাড়ি হাতে একটা মাথার খুলি ও দুটো হাড় আঁকা কাগজের মাথায়। হাড় দুটো গুণচিহ্নের মত পরস্পরকে ছেদ করেছে।

কারটিসের হাতে চিঠিটা দিয়ে মার্চমন্ট বললেন, গতকাল লেখা হার্টরিজের চিঠিটার ব্যাখ্যা এতে পাওয়া যাচ্ছে।

হ্যা, বলল কারটিস। পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে পড়তে লাগল সে: খুবই অসময় হলেও ইচ্ছে হলে তুমি এসো। তোমার ভয় দেখানো চিঠিগুলো আমার অনেক হাসির খোরাক জুগিয়েছে।

মিস্টার হার্টরিজ কি কোনওকালে ইটালিতে ছিলেন? ইন্সপেক্টর শুধাল।  

হ্যা, কারটিস জবাব দিল। গত বছরের প্রায় পুরোটা সময় তিনি ক্যাপরিতে (Capri) কাটিয়েছেন।

তা হলে তো সূত্রটা পেয়েই গেলাম। এই দেখুন...এখানে আরও দুটো চিঠি আছে, দুটোতেই ই.সি, পোস্ট অফিসের ছাপ মারা। ই.সি. মানে হচ্ছে স্যাফ্রন হিল (Saffron Hill)। আর এখানে দেখুন, আরেকটা চিঠি মেলে ধরল ইন্সপেক্টর। দুটো মাত্র বাক্য: সাবধান! ক্যাপরির কথা মনে থাকে যেন!

ইন্সপেক্টর ব্যস্ত হয়ে উঠল। ডাক্তার, আমি তা হলে এখন বিদায় নিচ্ছি। ওই চার ইটালিয়ানকে খুঁজে বের করা বিশেষ শক্ত হবে বলে মনে হয় না। তাদের শনাক্ত করার জন্য পোর্টার তো রয়েছেই।

থর্নডাইক বলল, আপনি যাবার আগে দুটো ব্যাপার ফয়সালা করে নিতে চাই। এক হলো ছোরা। সেটা বোধ হয় আপনার পকেটে আছে। একবার দেখতে পারি কি?

অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছোরাটা বের করে থর্নডাইকের হাতে দিল ইন্সপেক্টর।

বেশ চিন্তিত মুখে ছোরাটা ঘুকিয়ে ফিরিয়ে দেখে থর্নডাইক বলল, অস্ত্রটা খুবই অদ্ভুত-আকার এবং উপাদান-দুই বিচারেই। অ্যালুমিনিয়ামের হাতল আমি এর আগে কখনও দেখিনি। হাতলের মরক্কো চামড়াটাও ঠিক সাধারণ নয়।

ইন্সপেক্টর ব্যাখ্যা করল, অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয়েছে হালকা করার জন্য, আর ছোরাটা সরু করে বানানো হয়েছে আস্তিনের ভেতর লুকিয়ে রাখার জন্য।

হয়তো তা-ই। ছোরাটা পরীক্ষা করতে করতে সে তার পকেট-লেন্সটা বের করল। তা দেখে রসিক ইন্সপেক্টর বলে উঠল, এরপর উনি ওটা মাপতে শুরু করবেন।

ইন্সপেক্টর ঠিকই ধরেছেন। অস্ত্রটার একটা খসড়া স্কেচ এঁকে থর্নড্রাইক তার থলে থেকে বের করল একটা ভঁজ করা স্কেল এবং স্লাইড ক্যালিপার্স। যন্ত্র দুটোর সাহায্যে ছোরাটার নানা অংশের মাপ নিল সে, স্কেচের ওপর যথাস্থানে তথ্যগুলো লিখে সংক্ষিপ্ত বিবরণও লিপিবদ্ধ করল। শেষে অস্ত্রটা ইন্সপেক্টরের হাতে তুলে দিয়ে বলল, দুই নম্বর হচ্ছে বিপরীত দিকের ওই বাড়িগুলো।

সে জানালার দিকে এগিয়ে গেল। যে-বাড়িটায় আমরা রয়েছি, সেরকম এক সারি উঁচু বাড়ির পেছন দিকটা দেখতে লাগল। বাড়িগুলো প্রায় তিরিশ গজ দূরে। মাঝখানে শুধু একটা মাঠ, তাতে প্রচুর ঝোপঝাড়, আর সমস্ত মাঠজুড়ে কতগুলো কাকর বিছানো পথ।

থর্নডাইক বলতে লাগল, কাল রাতে ওসব ফ্ল্যাটের কোনও একটাতে যদি কোনও লোক থাকত, তা হলে আমরা হয়তো এই অপরাধের একজন প্রত্যক্ষদর্শী পেতাম। এই ঘরে তখন আলো জ্বলছিল, সবগুলো খড়খড়ি তোলা ছিল। কাজেই দূরের জানালাগুলোর যে-কোনও একটাতে দাঁড়ালে যে কেউ ঘরের ভেতরটা সরাসরি এবং বেশ স্পষ্টভাবে দেখতে পেত।

ইন্সপেক্টর বলল, কথাটা ঠিকই, তবে আমি আশাবাদী, সাক্ষী যদি কেউ থেকে থাকে, তা হলে খবরের কাগজে মৃত্যুসংবাদটা পড়ামাত্র সে আমাদের সব কথা জানাবে। কিন্তু এবার আমাকে যেতে হবে। ঘরে তালা লাগিয়ে দেব।

সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে মার্চমন্ট বললেন, সন্ধ্যায় সে আমাদের সঙ্গে দেখা করবে। অবশ্য এখনই যদি আপনারা আমার কাছে কোনও তথ্য জানতে না চান।

আমি জানতে চাই, থর্নডাইক বলল। এই মৃত্যুর সঙ্গে কার স্বার্থ জড়িত, সেটা আমার জানা দরকার।

ঠিক আছে। চলুন, মাঠে গিয়ে বসা যাক। জায়গাটা বেশ। নিরিবিলি, কারটিসকেও ইশারায় ডাকলেন তিনি।

সার্জ্নকে (surgeon) নিয়ে ইন্সপেক্টর চলে যাওয়ার পর পোর্টারকে বলে আমরা মাঠে প্রবেশ করলাম। এই মাঠটাই আমরা জানালা দিয়ে দেখেছিলাম। 

কৌতূহলী দৃষ্টিতে বিপরীত দিকের উঁচু বাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে মার্চমন্ট বলতে শুরু করলেন, এই মুহূর্তে আলফ্রেড হার্টরিজের মৃত্যুর সঙ্গে যে-মানুষটির স্বার্থ জড়িত, সে হচ্ছে মৃত ব্যক্তির অছি লিওনার্ড উলফ। মৃত ব্যক্তির কোনও আত্মীয় নয় সে, তার একজন বন্ধু মাত্র, কিন্তু প্রায় বিশ হাজার পাউণ্ড সম্পত্তির সে-ই একমাত্র উত্তরাধিকারী। দুই ভাইয়ের মধ্যে আলফ্রেড ছিলেন বড়। ছোট ভাই চার্লস স্ত্রী ও তিনটি সন্তান রেখে তাদের পিতা বেঁচে থাকতেই মারা যান। পনেরো বছর আগে মৃত্যুর সময় বুড়ো তাঁর সমস্ত সম্পত্তি আলফ্রেডকে দিয়ে যান এই শর্তে যে, তিনি তার ভাইয়ের পরিবারের প্রতিপালন করবেন, সম্পূর্ণ্ সম্পত্তির উত্তরাধিকার দান করবেন ভাইপোদের।

কোনও উইল ছিল কি? থর্নডাইক জিজ্ঞেস করল।

বৃদ্ধ ভদ্রলোক তাঁর বিধবা পুত্রবধূর বন্ধুদের চাপে মৃত্যুর কিছুদিন আগে একটা উইল করেছিলেন, কিন্তু আলফ্রেড সেই উইলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মামলা খারিজ হয়ে যায়। সেই থেকে ভাইয়ের পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য একটা পেনিও তিনি কোনও দিন খরচ করেননি। আমার মক্কেল মিস্টার কারটিস না থাকলে পরিবারটিকে হয়তো অনাহারেই থাকতে হত। হতভাগ্য মহিলা ও তার সন্তানদের দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে তুলে নেন।

সাম্প্রতিক কালে দুটো কারণে ব্যাপারটা খুবই গুরুতর রূপ ধারণ করে। প্রথম কারণ, চার্লসের বড় ছেলে এডমাণ্ডের বয়স হয়েছে। মিস্টার কারটিস তাকে একজন সলিসিটরের কাছে পাঠিয়েছিলেন কাজ শিখতে। সেই কাজে এখন সে যথেষ্ট পারদর্শী হয়ে উঠেছে। অংশীদার হবার একটা লাভজনক প্রস্তাবও এসেছে তার কাছে। আমরা আলফ্রেডকে চাপ দিয়েছিলাম, এডমাণ্ডের দাদার ইচ্ছেনুযায়ী তিনিই যেন প্রয়োজনীয় মূলধন ছেলেটিকে দিয়ে দেন। রাজি হননি ভদ্রলোক। সেই ব্যাপার নিয়ে কথা বলতেই আজ সকালে আমরা তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। 

দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে লিওনার্ড উলফ (Leonard Wolfe)। মৃত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ বন্ধু। লোকটি দুশ্চরিত্র। হেসটার গ্রিন (Hester Greene) নামে এক মহিলারও কিছু দাবিদাওয়া ছিল আলফ্রেডের ওপর। লিওনার্ড ও আলফ্রেডের মধ্যে একটা চুক্তি হয়েছিল। চুক্তিটা এরকম: লিওনার্ড মিস গ্রিনকে বিয়ে করবে, সেই সুবাদে আলফ্রেড তাঁর সমস্ত সম্পত্তি নিঃশর্ত ভাবে লিখে দেবেন বন্ধুকে। চুক্তির দ্বিতীয় শর্ত ছিল: সম্পত্তিটা হস্তান্তর হবে আলফ্রেডের মৃত্যুর পর।

চুক্তিটা কি কার্যকর করা হয়েছে? থর্নড্রাইক প্রশ্ন করল।

হ্যা, দুর্ভাগ্যের কথা, সেটা হয়ে গেছে। আলফ্রেড বেঁচে থাকতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম, বিধবা ও তার সন্তানদের জন্য কিছু করা যায় কি না। এবং আমি মিশ্চিত, ওই একই উদ্দেশ্যে আমার মক্কেলের কন্যা মিস কারটিস গত রাতে আলফ্রেডের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েজ্জ্বিল। খুবই অবিবেচকের মত কাজ করেছে সে। কারণ, তার আগেই গোটা ব্যাপারটা প্রায় গুছিয়ে এনেছিলাম আমরা। আমি নিশ্চিত, দুজনের সাক্ষাৎকারটা সুখপ্রদ হয়নি। জানেন তো, মেয়েটি এডমাণ্ডের বাগদত্তা!

থর্নডাইক কিছুক্ষণ নিঃশব্দে কাঁকর বিছানো পথের দিকে চোখ রেখে পায়চারি করল। তাকে দেখে মনে হলো, সে যেন কিছু খুঁজছে! তারপর সে জানতে চাইল, এই লিওনার্ড উলফ লোকটা কী ধরনের?

কারটিস বলল, আগে সে ছিল এঞ্জিনিয়ার। এখন কী করছে, জানি না। জীবনের অনেকটা সময় আর অর্থ সে উড়িয়ে দিয়েছে। জুয়া আর ব্যভিচারের পেছনে। আমার ধারণা, ইদানীং সে অর্থকষ্টে পড়েছে।

সে দেখতে কেমন?

মাত্র একবারই আমি তাকে দেখেছি। যদূর মনে পড়ে...লোকটা বেঁটে, ফরসা, শুকনো। পরিষ্কার কামানো গাল। তার বাঁ হাতের মাঝের আঙুলটা নেই।

থাকে কোথায়?

জবাব দিলেন মার্চমন্ট, এলথামে। মরটন গ্রাঞ্জ, এলথাম (Eltham, in Kent. Morton Grange, Eltham)। জায়গাটা কেন্টের মধ্যে, একটু থেমে আবার বললেন, তা হলে আপনি তো প্রয়োজনীয় সব তথ্যই পেয়ে গেলেন। এবার যে আমাদের যেতে হয়!

আমাদের সঙ্গে করমর্দন সেরে দুজনে দ্রুত পায়ে চলে গেল।

থর্নডাইক চিন্তিত মুখে অযত্নে লালিত ফুলের কেয়ারিগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল। ঝুঁকে পড়ে একটা লরেল ঝোপের নীচের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, জারভিস, কেসটা যেমন অদ্ভুত, তেমনি আকর্ষণীয়। ...পোর্টার আসছে-বোধ হয় আমাদের চলে যেতে বলবে, অথচ--- স্মিত হেসে পোর্টারকে বলল, ওই বাড়িগুলোর মুখ কোন দিকে, বলো তো?

কটম্যান স্ট্রিটের (Cotman Street) দিকে, স্যার, পোর্টার জবাব দিল। ওগুলোর বেশির ভাগই অফিস।

টা দালান আছে ওখানে? তিনতলার যে-ঘরটার জানালা খোলা, ওই ফ্ল্যাটে কটা ঘর আছে, বলতে পারবে?

দালান আছে ছয়টা। আর মিস্টার হার্টরিজের ফ্ল্যাটটায় আটটা ঘর।

ধন্যবাদ, পা বাড়িয়েও থর্নডাইক হঠাৎ পোর্টারের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, ভাল কথা, কিছুক্ষণ আগে ওই জানালা দিয়ে একটা জিনিস পড়ে গেছে আমার হাত থেকে-একটা ছোট ধাতুর চাকতি, নিজের ভিজিটিং কার্ডের ওপর ষড়ভুজাকার একটা চাকতি এঁকে সেটা পোর্টারের হাতে দিল। কোথায় পড়েছে, ঠিক বলতে পারব না। তুমি যদি মালিকে একটু বলে দাও, ভাল হয়। সে যদি চাকতিটা আমার চেম্বারে পৌছে দেয়, তা হলে তাকে এক সভারিন বকশিশ দেব।

পোর্টার টুপিতে হাত রাখল। ফটক দিয়ে বের হওয়ার সময় পেছন ফিরে দেখি, সে ঝোপগুলো চষে বেড়াচ্ছে। থর্নডাইককে কিছু ফেলে দিতে দেখিনি আমি। তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে যাব, এই সময় মোড় ঘুরে কটম্যান স্ট্রিটে পড়লাম আমরা। থর্নড্রাইক ছয় নম্বর দরজার কাছে গিয়ে ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের নামগুলো পড়তে শুরু করল। জোরে জোরে বলল, চারতলা, মিস্টার টমাস বারলো, কমিশন-এজেন্ট। হুম! মিস্টার বারলোর সঙ্গে একবার দেখা করা যাক।

সে খুব দ্রুত পাথরের সিঁড়িতে পা ফেলতে লাগল। আমি তাকে অনুসরণ করলাম, হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে এলাম চারতলায়।

কমিশন এজেন্টের ঘরের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমরা। থর্নডাইক আস্তে করে দরজাটা খুলে ভেতরে তাকাল। মিনিটখানেক সেই অবস্থায় থেকে হাসিমুখে ফিরল আমার দিকে, তারপর নিঃশব্দে দরজাটা খুলে দিল হাট করে।।

ভেতরে চোদ্দ বছরের এক ঢ্যাঙা কিশোর কী একটা যন্ত্র নিয়ে কী যেন করছিল। নিজের কাজে সে এতই মগ্ন ছিল, আমাদের উপস্থিতি টের পায়নি। হঠাৎ সে মুখ ফিরিয়ে আমাদের দেখে কেমন থতমত খেয়ে গেল।

থর্নডাইক বলল, মিস্টার বারলো আছেন? বিব্রত হওয়ার দরুন ঘামে ভিজে উঠেছে ছেলেটার মুখ। বলল, না, তিনি তো নেই। আমি আসার আগেই তিনি চলে গেছেন। আজ আর ফিরবেন না।

আচ্ছা। তা, তুমি কী করে জানলে যে, তিনি আজ ফিরবেন না?

তিনি একটা চিঠি রেখে গেছেন। এই যে... সে চিরকুটটা দেখাল।। লাল কালিতে পরিষ্কার করে লেখা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সেটা দেখে থর্নডাইক প্রশ্ন করল, গতকাল কি তুমি কালির দোয়াতটা ভেঙেছিলে?

ছেলেটা বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল। আপনি কী করে জানলেন?

জানতাম না। চিঠিটা তিনি স্টাইলো দিয়ে লিখেছেন দেখে অনুমান করেছি।

ছেলেটা সন্দেহের চোখে থর্নডাইকের দিকে তাকাল।

থর্নডাইক বলতে লাগল, আসলে আমি দেখতে এসেছি, তোমাদের মিস্টার বারলো সেই লোক কি না, যাকে আমি চিনি। আশা করি, তুমি সেটা বলতে পারবে। আমার বন্ধুটি লম্বা, শুকনো, রং ময়লা, পরিষ্কার কামানো মুখ।

তা হলে তিনি সে-মানুষ নন। তিনিও শুকনো, তবে লম্বা নন, গায়ের রংও ময়লা নয়। মুখে স্কটদের মত দাড়ি, চোখে চশমা, মাথায় পরচুলা।

আমার বন্ধুর বা হাতটা পঙ্গু, থর্নডাইক যোগ করল।

সেসব জানি না। তবে মিস্টার বারলো প্রায় সবসময়ই বা হাতে দস্তানা পরে থাকেন।

তা হলে তো ঠিকই আছে। এক টুকরো কাগজ দেবে? একটা চিরকুট লিখে রেখে যাব। কালি আছে তো?

বোতলে এখনও কিছুটা আছে। কাজ চলে যাবে।

ছেলেটা কাবার্ডে রাখা একটা খোলা প্যাকেট থেকে সস্তা দামের চিঠির কাগজ আর খাম বের করল। কলমটা বোতলের একেবারে তলা পর্যন্ত ডুবিয়ে থর্নডাইকের হাতে দিল। থর্নডাইক চেয়ারে বসে দ্রুত হাতে চিরকুট লিখল একটা। কাগজটা ভঁজ করে খামের ওপর ঠিকানা লিখতে গিয়ে কী মনে করে আর লিখল না। চিঠিটা নিজের পকেটে ফেলে বলল, এটা রেখে যাওয়া ঠিক  হবে না। তাকে বোলো, মিস্টার হোরেস বাজ (Mr. Horace Budge) এসেছিল। দুএক দিনের মধ্যেই আবার আসব আমি।

ছেলেটা হতভম্ব। পিছু-পিছু সিড়ির চাতাল পর্যন্ত এসে সেখান থেকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রইল আমাদের দিকে। থর্নডাইক আচমকা ফিরে তাকাতেই মাথাটা সরে গেল।

সত্যি বলতে কী, থর্নডাইকের কাজকর্ম দেখে আমিও ছোকরাটার মত হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম। এইসব ছেলেমানুষির কোনও অর্থই আমার মাথায় আসছিল না। 

থর্নডাইক সিঁড়ি-সংলগ্ন একটা জানালার কাছে থেমে.চিরকুটটা বের করল, ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে সেটা ভাল করে দেখল, তারপর আলোর সামনে কাগজটা মেলে ধরে হেসে উঠল সজোরে। মন্তব্য করল, বন্ধু, আমরা এক অসাধারণ সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছি।

হলঘরে পৌছে সে পোর্টারের খুপরির কাছে থামল, ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে বলল, আমরা মিস্টার বারলোর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তিনি নাকি খুব সকালেই বেরিয়ে গেছেন!

হ্যা, স্যার, পোর্টার জবাব দিল, সাড়ে আটটা নাগাদ বেরিয়ে গেছেন তিনি।

এত সকালে! তা হলে তো আরও আগে এখানে এসেছিলেন তিনি!

ঠোট বেঁকিয়ে মাথা নাড়ল পোর্টার। তা-ই তো মনে হয়। আমি যখন এলাম, তখনই তিনি বেরিয়ে গেলেন।

তার সঙ্গে কি কোনও মালপত্র ছিল?

হ্যা, স্যার। দুটো বাক্স ছিল। একটা চৌকো, আর একটা সরু-প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা। বাক্স দুটো গাড়ি পর্যন্ত বয়ে নিতে আমি তাকে সাহায্য করেছিলাম।

গাড়িটা নিশ্চয়ই চার চাকার ছিল?

জী, স্যার।

মিস্টার বারলো কি এখানে অনেক দিন ধরে আছেন?

না। তিনি এখানে এসেছেন প্রায় ছয় হপ্তা আগে।

আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি আরেক দিন আসব। সুপ্রভাত।

থর্নডাইক বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাশের রাস্তায় গাড়ির জটলার কাছে চলে গেল। মিনিট দুয়েক দরদাম করে চার চাকার এক গাড়ি ভাড়া করল সে। নিউ অক্সফোর্ড স্ট্রিটের এক দোকানের সামনে আমাদের নিয়ে এল চালক।

আধ স্বর্ণমুদ্রায় ভাড়া চুকিয়ে থর্নডাইক দোকানে ঢুকে পড়ল। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে ডিসপ্লেতে সাজিয়ে রাখা লেদ, ড্রিল ও লোহালক্কড় দেখতে লাগলাম। 

একটু পরেই থর্নডাইক বেরিয়ে এল ছোট একটা পুঁটলি হাতে। আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টির উত্তরে বলল, পলটনের জন্য। কয়েকটা ধাতুর টুকরো।’ 

তারপর সে যে-জিনিস কিনল, সেটা পাগলামির (eccentric) চূড়ান্ত। হলবোর্ন্ (Holborn) স্ট্রিট ধরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তার চোখ পড়ল আসবাবপত্রের এক দোকানের জানালায় সেখানে সাজানো ছিল ছোটখাটো অপ্রচলিত ফরাসি অস্ত্রের একটা সংগ্রহ। ১৮৭০ সালের শোচনীয় ঘটনার এই স্মারকগুলো এখন বিক্রি হয় ঘর সাজাবার উপকরণ হিসেবে। কিছুক্ষণ সেগুলো দেখে সে দোকানে ঢুকল। খানিক পরে একটা লম্বা সঙ্গিন বসানো বন্দুক এবং পুরানো এক চেযপট রাইফেল (Chassepot rifle) হাতে বেরিয়ে এল বন্ধুটি। ফেটার লেন (Fetter Lane) দিয়ে চলতে চলতে জিজ্ঞেস করলাম, এই সমর আয়োজনের মানে কী?

লিনকপরের পর্ব্ 

No comments:

Post a Comment

Popular Posts