মিনি
গল্প – পরাজয় – মাইনুল হোসেন
সিরাজী
চার
নম্বর বাস থেকে খুলশি লেভেল-ক্রসিঙে নামতেই এক ভিক্ষুক সামনে এসে দাড়াল। রীতিমত পথ আগলে ধরে বলল, “বাবা, কিছ ট্যাকা দেন,
বিরানি খামু।”
ভিক্ষা
চাওয়ার ধরন দেখে আমি ভিরমি খেলাম।
জিজ্ঞাসা
করলাম, “বিরানি খামু মানে?”
ভিক্ষুক
বলে, “বাবাঁ আইজ শুক্কুরবার। বাসা-বাডিতে পোলাউ-বিরানির সুবাস পাই।
আমারও খাইতে ইচ্ছা করে। দেন না কিছু ট্যাকা। বিকাল
অইয়া গেছে। মেলা ভোক লাইগছে।”
আকাশ
জুড়ে মেঘ করেছে; সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে-কখনও হালকা চালে,
কখনও রিমঝিমিয়ে। এই
বৃষ্টিতে যে-কারও খিচুড়ি - বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করতেই পারে। তাই বলে ভিক্ষুকেরও!
এখন
বৃষ্টি নেই। দশ মিনিট হাটলে আমার বাসা। যে-কোনও
সময় আকাশ ভাঙতে পরে টাপুর টুপুর শব্দে। আমার তাই তাড়া।
তাকে
দশ টাকার একটা নোট দিয়ে হাটতে উদ্যত হই আমি। পেছন থেকে আমার শার্ট ধরে টানে ব্যাটা। “বাবা, আর
দশটা ট্যাকা দেন। জিইসি মোড়ের রাস্তায় বিরানি পাকায়। ২০ টাকা পেলেট।”
মেজাজ
চড়ে যায় আমার। “শার্ট ধরলা
ক্যান?
আর আমি তোমারে ক্যান বিরানি খাওয়ামু? যাও, মিয়া, আমি কবে বিরানি খাইছি, তাই তো মনে নাই।”
আমি
রওনা দিই টেকনিক্যাল মোড়ের দিকে। ভিক্ষুকটা
আবারও আমার পিছু নেয়। বলে, “তাইলে আর
জিইসি গিয়া কাম নাই। যাই সামনের দোকান
তুন বন-কলা খাইয়া লই। মেলা ভোক লাইগছে।”
আমি
দ্রুত পা চালাই। বৃষ্টি নামল বলে। ভিক্ষুকটা অনেকটা পেছনে পড়ে রইল আমার। অবশেষে বৃষ্টি শুরু হলো। গুঁড়িগুঁড়ি।
আমার হাতে ছাতা নেই।
ভিক্ষুক
আমাকে ডাকল। “বাবা, খাড়ান।”
থমকে
দাঁড়ালাম। ভিক্ষুক তার ভাঙ্গা-বিবর্ণ
ছাতাটার নীচে আমাকে নিয়ে নিল।
পাক-পবিত্র
আমি নোংরা লোকটার পাশ থেকে এবং তার আরও বেশি নোংরা ছাতার নীচ থেকে সরে যেতে
চাইলাম! কিন্তু ততক্ষণে শুরু হয়েগেছে তুমুল বৃষ্টি! এরপর...
পুরো
ছাতাটা আমার মাথার ওপর ধরে লোকটা ভিজতে লাগল।
-
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে আদম সন্তান তুমি দান করতে থাকো, তাহলে তোমাকেও
দান করা হবে (বুখারী ও মুসলিম)
No comments:
Post a Comment