মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Sunday, April 19, 2020

মহানবী (সা) ও এক ইহুদি - Muhammad (S) and the Jew

মহানবী (সা) ও এক ইহুদি

মহানবী (সা) ও এক ইহুদি
রাসূল (সা) একদিন সাহাবীদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। মসজিদে নববিতে বসে এসব কথাবার্তা হচ্ছিল। এমন সময় এক ইহুদি সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলোসে আল্লাহর নবীকে (সাঃ) আবুল কাসেম সম্বোধন করে ডাকতে শুরু করল।
মহানবী (সা) ইহুদির ডাকে সাড়া দিলেন। তিনি লোকটিকে কাছে ডেকে আনলেন। নবী (সা) তার দিকে লক্ষ্য করে দেখলেন যে, ইহুদির মুখ লাল হয়ে আছে। কেউ যে তাকে খুব করে মেরেছে তার নমুনা তিনি স্পষ্ট দেখতে পেলেন।
ইহুদি লোকটি বলল, হে আবুল কাসেম! আমি আজ বিচার চেয়ে আপনার কাছে ধর্না দিয়েছি। আপনার নিকট ইনসাফ চাই।
রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, কী হয়েছে বল? কী তোমার অভিযোগ? কী সুবিচার চাও তুমি?
ইহুদির চোখেমুখে তীব্রতা লক্ষ করা গেল। আক্ষেপের রূঢ়তা যেন ঠিকরে পড়ছে তার চোখ থেকে। সে জানাল, আপনার এক সাহাবী আমাকে ঘুষি মেরে জখম করেছে। তার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ। আমি এর বিচার চাই, প্রতিকার চাই।
মহানবী (সা) জিজ্ঞেস করলেন, কে সে?
ইহুদি জবাব দিল, সে এক আনসার, হুজুর
নবী (সা) বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। আমি দেখছি। তুমি সেই আনসারকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো
মহানবী (সা)-এর আশ্বাস পেয়ে ইহুদি লোকটি তৎক্ষণাৎ চলে গেল। কিছুক্ষণ পর সে অভিযুক্ত আনসারকে সাথে নিয়ে নবী (সা)-এর কাছে ফিরে এলোকিন্তু দুজনের মধ্যে তখনও বাকযুদ্ধ চলছিল। এভাবেই তারা নবীজীর দরবারে এসে হাজির হলো
নবী (সা) আনসারকে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে বলতো? তুমি তাকে মেরেছ কেন? আনসার বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা)! হ্যা, তাকে আমি মেরেছি। সে যে অন্যায় করেছে, সেই জন্য আমি তাকে না মেরে পারিনি। অমন ব্যবহার যদি সে আবারও করে তবে আমি তাকে ছাড়ব না
রাসূল (সা) বললেন, বল কী অপরাধ করেছে সে? তার কী দোষ?
আনসার বলল, আমি বলেছিলাম, মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর মনোনীত রাসূল। তিনি খুব মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ। কিন্তু ইহুদি লোকটি বলল, আমার কথা সঠিক নয়। সে বলল, মূসা (আ) নাকি আরও বেশি মর্যাদাসম্পন্ন। ওর এই দম্ভোক্তি আমি সহ্য করতে পারিনি। তার দুঃসাহস আমাকে ক্ষুব্ধ করেছে। আল্লাহর নবীর প্রতি অসম্মান দেখিয়ে কথা বলায় আমি তাকে মেরেছি। ইহুদির দুঃসাহরের কথা শুনে অন্যান্য সাহাবীও উত্তেজিত হলেন। তারাও মনে মনে কষ্ট পেলেন। তারা ইহুদিদের বাড়াবাড়ি নিয়ে বলাবলি করতে লাগলেন। তারা বললেন, মদীনায় ওরা বেশ বেড়ে গেছে। ওদের এখনই উচিত শিক্ষা দেয়া প্রয়োজনসাহাবীদের এসব কথাবার্তা মহানবী (সা) মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন। এতক্ষণ তিনি কোন কথাই বললেন না। হঠাৎ তিনি নীরবতা ভেঙে আনসারের দিকে চোখ তুলে তাকালেন।
কিছুক্ষণ পর মহানবী (সা) বললেন, তোমরা এসব কথাবার্তা বলো না। আনসার বিনয়ের সাথে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা)! ওরা আমাদের ছোট করবে, আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা)-কে উপহাস করবে, মন্দ বলবে, অথচ আমরা চুপ থাকব? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, হ্যা, তোমরা চুপই থাকবে। সাহাবীরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কথা শুনে অবাক বনে গেলেন। বিস্মিত হলেন আনসারও। তাদের কারও মুখে আর কোনো কথা সরল না। সবাই মহানবী (সা)-এর মুখের দিকে পলকহীন নেত্রে তাকিয়ে রইলেন। খানিকক্ষণ পর , তারা নবীজীর আরেকটি কথা শুনে আরও অবাক বনে গেলেন।
মহানবী (সা) সাহাবাদের বললেন, আমাকে তোমরা কোনো নবীর ওপর প্রাধান্য দিও না। আমি বড় নই, ছোটও নই। আমি যা আছি বরং তাই আছি। তোমরা অন্য নবীকে ছোট মনে করে আমাকে বড় বলে ভেবো না। তা হলে আমাদের মনে অহমিকা আসবে। অহঙ্কার আমাদের তাড়া করবে। তোমরা জেনে রেখো, অহঙ্কার করা নিষেধ। আল্লাহতায়ালা কোনো অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না।
মহানবী (সা) যে কত বড় ন্যায়পরায়ণ ও বিনয়ী ছিলেন তা তার এই কথা থেকেই অনুধাবন করা যায়।

No comments:

Post a Comment

Popular Posts