তিনটি প্রশ্ন - তুরস্কের রুপকথা |
রাজা
বুড়ো হয়ে গেছেন। অনেক বয়স হয়েছে তার। চোখে আজকাল আর ভালমত দেখতে পান না। কথা
কম শোনেন কানে। শরীরেও কোন বল নেই। এই অবস্থায় রাজ্য পরিচালনা করা তার পক্ষে
সম্ভব নয়। রাজা মনে মনে ঠিক করলেন, তার কোন পুত্রের উপর
রাজ্যের ভার দেবেন। তারপর বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন নিরিবিলি শাস্তিতে।
রাজার
ছিল তিন ছেলে। কাকে দেবেন তিনি এই রাজ্যের শাসনভার? সবচেয়ে বুদ্ধিমান,
সবচেয়ে যোগ্য যে, তাকেই তো রাজ্যের ভার দেয়া
উচিত। কিন্তু কে সবচেয়ে বুদ্ধিমান? রাজা ভাবলেন, এর একটা পরীক্ষা নেয়া দরকার।
একদিন
সকালবেলা। রাজা তার বড়
ছেলেকে ডেকে পাঠালেন নিজের ঘরে। বললেন, "বাবা, আমার তো বয়স হয়েছে। তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে। এবার আমার বিদায়ের
পালা। আমি চাই তোমাদেরই মধ্যে কেউ একজন রাজা হও। বড় ছেলে বিগলিতভাবে দাড়িয়ে
রইল।
রাজা
বললেন,
“তবে একটা ব্যাপার! আমি তিনটি প্রশ্ন করব। যার উত্তর ঠিক হবে
সে হবে সিংহাসনে বসার যোগ্য।”
বড়
ছেলে জিজ্ঞেস করল, “প্রশ্ন তিনটে শুনতে
পারি কি বাবা?”
“নিশ্চই।
নিশ্চই।”
রাজা
বললেন,
“পৃথিবীর
মধ্যে সবচেয়ে পরিপূর্ণ জিনিস কী? সবচেয়ে দ্রুতগামী আর সবচেয়ে সুন্দর
জিনিস কোনটা কোনটা?”
“সবচেয়ে
পরিপূর্ণ হচ্ছেন আপনি। সবচেয়ে দ্রুতগামী হচ্ছে আপনার বাহন লাল ঘোড়া। আর সবচেয়ে
সুন্দর হচ্ছে আপনার স্ত্রী অর্থাৎ আমাদের জননী।”
জবাব
শুনে রাজা কোন মন্তব্য করলেন না। মনে মনে বললেন, অন্য ছেলেদের একই
প্রশ্ন করে দেখব ওরা কি জবাব দেয়। রাজা ডেকে পাঠালেন মেঝ ছেলেকে।
“আমি তোমাকে
তিনটি প্রশ্ন করতে চাই।”
“করুন।”
“যদি তোমার
উত্তর ঠিক হয় তবে তুমিই হবে আমার পরে এই দেশের রাজা।”
“আপনি
প্রশ্ন করুন রাজা।”
“পৃথিবীতে
সবচেয়ে পরিপূর্ণ কী?”
“আমিই
সবচেয়ে পরিপূর্ণ। আমার সব আছো।”
“সবচেয়ে
দ্রুতগামী কী?”
“আমার
শিকারী কুকুর।”
“আর সবচেয়ে
সুন্দর কী?”
“সবচেয়ে
সুন্দর হচ্ছে আমার বউ”
“ঠিক আছে
বাবা,
তোমার সঙ্গে আমার সওয়াল-জবাব শেষ।
তারপর
ডেকে পাঠানো হল ছোট ছেলেকে।
রাজা
বললেন,
“তোমাকে পরীক্ষা করে দেখতে চাই। তোমার বুদ্ধি যাচাই করতে চাই।
দেখতে চাই তুমি রাজা হওয়ার জন্য কতখানি যোগ্য”
“আমি
পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত রাজা।”
“বেশ। আমি
তোমাকে তিনটি প্রশ্ন করব। তৃমি যদি ভাল মত উত্তর দিতে পার তবে তুমিই হবে রাজা।”
“আমি তৈরী।
প্রশ্ন করুন।”
“পৃথিবীতে
সবচেয়ে পরিপূর্ণ কী?”
ছোট
ছেলে একটু ভেবে নিল। তারপর বলল, “কেন রাজা? পৃথিবীতে
পরিপূর্ণ হচ্ছে ফসলের মাঠ। মাঠে ফসল ফললে পৃথিবী পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।”
“বেশ! বেশ!
! এবার বল, সবচেয়ে দ্রুতগামী কী?”
“সবচেয়ে
দ্রুতগামী হচ্ছে আমাদের আমাদের চিন্তা।”
রাজা
শুধালেন, “কেন?”
“কারণ আমরা চিন্তা
দিয়েই,
এক পলকে অনেক কিছু দেখে ফেলি। দূরের জিনিস, কাছের
জিনিস- কী নয়?”
“এবারে আমার
তৃতীয় প্রশ্ন।”
“বলুন।” প্রশ্নটা
জানতে চাইল ছোট ছেলে।
“পৃথিবীতে
সবচেয়ে সুন্দর কি?”
“সুন্দর তো সেটাই
যা নিখুত। আর দেখো কতো নিখুতভাবে মহান আল্লাহ তায়ালা এই প্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন। তাই
প্রকৃতিই সবচেয়ে সুন্দর। গাছপালা, পাহাড়,
নদী, সাগর- মহান আল্লাহর সৃষ্টি। তুমি এসব জিনিসের
মাঝে কোন খুত দেখতে পাও? এগুলোই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর” বুড়ো
রাজা খুশি হলেন।
“আহা, দারুণ
তোমার বুদ্ধি। খুব ভাল জবাব দিয়েছ। তোমাকেই আমি রাজা বানাতে চাই।”
ছোট
ছেলে রাজার আসনে বসল। মহান আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাজ্য শাসন করতে লাগল এবং কিছুদিনের
মধ্যেই তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ল দিক থেকে দিগন্তে।
-
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
(৩) তিনিই স্তরে স্তরে সাজিয়ে সাতটি আসমান তৈরী
করেছেন। তুমি রহমানের সৃষ্টিকর্মে কোন প্রকার ত্রুটি দেখতে পাবে না। আবার চোখ ফিরিয়ে দেখ, কোন ক্রটি দেখতে পাচ্ছ কি? (৪)তুমি বারবার দৃষ্টি
ফিরিয়ে দেখ, তোমার দৃষ্টি ক্লান্ত ও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসবে। (সুরা আল মুলকঃ ৩,৪)
No comments:
Post a Comment