মজার গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, ছোট গল্প, শিক্ষামূলক ঘটনা, মজার মজার কৌতুক, অনুবাদ গল্প, বই রিভিউ, বই ডাউনলোড, দুঃসাহসিক অভিযান, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, রুপকথা, মিনি গল্প, রহস্য গল্প, লোমহর্ষক গল্প, লোককাহিনী, উপকথা, স্মৃতিকথা, রম্য গল্প, জীবনের গল্প, শিকারের গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাহিনী সংক্ষেপ।

Total Pageviews

Monday, April 6, 2020

রম্য গল্প - উল্টো শার্লক হোমস - সাজেদুল করিম - Funny Story - Reverse Sherlock holmes - Sajedul Karim



রম্য গল্প - উল্টো শার্লক হোমস - সাজেদুল করিম

আফজাল। এম-বি-বি-এস; এফ-আর-সি-এস।
নামের শেষে আরও গুটিকয়েক ইংরেজি শব্দের আদ্যক্ষর। জোর-ঘোষণা করছে ভদ্রলোক বিলেত-ফেরত। অবশ্য, শুধু বিলেত-ফেরত হলে কথা ছিল না; ডা. আফজালকে নিয়ে রোগীসমাজে নানারকমের কথাবার্তা: অদ্ভুত হাতযশ, বেজায় রসিক, অত্যাধুনিক চিকিৎসা-পদ্ধতি। শুধু তাই নয়, তিনি নাকি দুর্জ্ঞেয় মনস্তত্ত্বেরও অধিকারী। রোগী দেখতে-দেখতে ক্ষণে-ক্ষণে রোগীর মনের কথাও বলে দিতে পারেন। রোগীরা চমকে ওঠে। প্রচলিত কথাটা আমাকেও ভীষণ ভাবিয়ে তুলল। ডা. আফজাল আমার খুব নিকট-সম্পর্কের আত্মীয়, অনেককালের চেনা। কী করে-যে এত পরিচিত মানুষটি এতখানি নাম কিনলেন, প্রথমত আমারও তেমন বিশ্বেস হয়নি। পরে অবশ্য অন্য কথা। আচ্ছা, লোকের কথা বাদ, আপাতত নিজস্ব অভিজ্ঞতার কাহিনীটাই বলি-না কেন, শুনুন।
আমি গিয়েছিলেম জরুরি কোনো কাজে নয়, শুধু একখানা মেডিকেল সার্টিফিকেট যোগাড় করতে। গিয়ে দেখি ভীষণ ভিড়। তিল ধারণের ঠাই নেই। ডা. আফজাল কিন্তু দূর থেকে দেখেই : এই-যে রফিক, এসো এসো—” বলে আমাকে ভেতরে ডেকে নিয়ে গেলেন। সামনে একখানা চেয়ার খালি। ওতেই বসে পড়লাম। একটু মুচকি হেসে ডাক্তার বললেন, তারপর? কী মনে করে? বললাম, না, ভাইজান, তেমন কিছু নয়। শুধু একটুখানি বি-সি-এস....।
ওহ্ বুঝতে পেরেছি।বসো। এখুনি লিখে দিচ্ছি। হাতের কাজটা আগে সেরে নেই। প্রথিতযশা চিকিৎসক!দেখুন-না, আমি শুধু বললুম, বি-সি-এস...। আর সঙ্গে সঙ্গে আঁচ করে ফেললেন; বলে বসলেন, ছাড়পত্র লিখে দিচ্ছেন। অথচ, কী-যে লিখবেন, কী-যে রোগ, বলতে গেলে আমাকে অনেক কথাই খুলে বলতে হয়।
হয়েছে কীচাকরি তো করি ব্যাঙ্কে, কেরানিগিরি। ওতে সংসার চলে না। তাই সাধ জেগেছে, সামনের ডিসেম্বরে বি-সি-এস পরীক্ষাটা দেব, যাতে ভালো ফল করতে পারলে মোটা মাইনেয় অফিসার হওয়া যায়। কিন্তু ভীষণ কঠিন পরীক্ষা, বিরাট প্রস্তুতির প্রয়োজন। অত সময় পাব কোথায়? ব্যাঙ্কের অফিসারেরা-যে ছুটির কথা শুনতেই পারেন নাএকমাত্র অসুখবিসুখের ভান করা ছাড়া। তাই ডা. আফজালের শরণাপন্ন হওয়া। ডাক্তার হেসে বললেন, এই! এ আর শক্ত কী! আমি লিখে দিচ্ছি তোমার differential Calculus হয়েছে।
Differential Calculus?”—আমি আঁতকে উঠি, বলেন কী, ভাইজান? সে তো শুনেছি অঙ্কশাস্ত্রের একটা শাখার নাম।
হয়েছে। রাখো। তোমার অফিসারদের যা মাথা : ডিফারেনশিয়াল ক্যালকুলাস যা, সেরেব্রাল হেমোরেজ-ও তা। আসল কথা, সার্টিফিকেটে দাঁত ফুটাতে না-পারলেই হল। বুঝেছ? তা অসুখবিসুখের নাম ছাড়া বুঝি এ তল্লাটে আসতে নেই?
লজ্জিত হয়ে বললুম, না ভাইজান। সে-কথা নয়। ব্যাঙ্কের কাজ, সময় পাইনে। ডাক্তার আমার কথায় কান না দিয়ে খসখস করে সুপারিশপত্র লিখে চললেন। ইতিমধ্যে একজন রোগীর প্রবেশ। বেঁটেখাটো ক্লিন শেভড মানুষটা। মুখমণ্ডলে ঘা। ডাক্তার ছোটখাটো প্রেসক্রিপশানে আবার তেমন গা করেন না। লেখাটা থেকে মুখ না-তুলেই কয়েকটা ট্যাবলেট আমার হাতে দিয়ে বললেন, রফিক, এগুলো পেশেন্টকে দিয়ে দাও। তারপর জেনে নাও, ও দিনে কবার করে শেভ করে? লোকটার সঙ্গে সঙ্গে জবাব :
প্রায় ত্রিশ-চল্লিশবার। ত্রিশ-চল্লিশবার? আমার তো আক্কেল গুড়ুম! চল্লিশবার শেভ করলে মানুষের কিছু থাকে কি? ডাক্তার হেসে বললেন, তাই তো বলি হে, রফিক, তোমাদের ব্যাঙ্কারদের মাথায় ঘিলুর অভাব। আরে, বুঝতে পারছ না? পেশেন্ট পেশায় ক্ষৌরকারব্যাঙ্কার নয়। দিনে লোকের দাড়ি শেভ করে বেড়ায় আর কী ত্রিশ-চল্লিশবার। জিজ্ঞেস করো জানবে। ডাক্তারের কথায় এবার লোকটা-সহ আমি হোঃ হোঃ করে হেসে উঠি। লোকটাও অম্লানবদনে স্বীকার গেল : হ্যা, সত্যিই সে একজন সেলুনম্যান। মুখে ক্ষুর-ঘটিত ঘা হয়েছে। ততক্ষণে মেডিকেল সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে গেছে। ডাক্তার কাগজখানা আমার হাতে ছুড়ে দিয়ে বললেন, এই নাও তোমার পরীক্ষা-রোগের নোসখা। আচ্ছা যা যা দেখলে, তাতে তোমার কী মনে হয়? আমার চিকিৎসা সম্পর্কে তোমার কী ধারণা?
খানিক ভেবে বললুম, তবে কী ভাইজান, বলতে চান, ডাক্তারির সাথে ডিটেকটিভি মিশিয়ে আপনার চিকিৎসা এবং এই আপনার পদ্ধতি?
ছাই বুঝেছ! বলে ডাক্তার কী যেন ফের ব্যাখ্যা করতে যাচ্ছিলেন। বাধা দিয়ে বললুম, না, ভাইজান, উঠি। বড় বেলা হয়ে গেল। অফিসার আবার রাগ করবেন।
মাথা নেড়ে ডাক্তার বললেন, যাবে কোথায়, শ্রীমান? বাইরে যে বৃষ্টি! খানিকটে অবাক হলাম আর কী! ডাক্তার তো চেয়ারেই ঠায় বসা। টেবিল থেকেও একটুও মুখ তোলেননি, অনবরত লিখেই যাচ্ছিলেন। তবে কেমন করে জানলেন, বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি? এতক্ষণ পরে মনে-মনে লোকটার প্রতি আমারো শ্রদ্ধার ভাব জাগ্রত হলঃ হ্যা। লোকে-যে এঁকে অদ্ভুত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন দুয়ে শক্তির অধিকারী বিরাট মহাপুরুষ মনে করে, কথাটা দেখছি নেহাত ফেলে দেবার নয়। তারপর পাশ ফিরতেই দেখি, নতুন এক পেশেন্টের আবির্ভাব : হাতে ছাতা, পায়ে পাম্প-সু, পরনে চেক-লুঙ্গি। ডাক্তার আগন্তুককে সামনের আসন দেখিয়ে বললেন, বসুন, ঐ চেয়ারটায়। আচ্ছা, রোগের কথা পরে। আপাতত বলুন তো, কদিন হল আপনার বার্মা থেকে ফেরা হয়েছে? লোকটা তো অবাক! আপনি জানলেন কী করে! সত্যিই মাসখানেক হল সে রেঙ্গুন থেকে ফিরেছে। কিন্তু সে-কথায় কর্ণপাত না করে ডাক্তারের ফের আর-একখানা প্রশ্ন : নিশ্চয়ই আপনি বিদ্যুৎ
খানায় কাজ করেন? লোকটা অবাকের ওপর অবাক! আচ্ছা, আপনার নাম মুন্সী করমউল্লাহ। আপনার বাড়ি নোয়াখালী। সাং মাইজদি। নয় কি? লোকটার অবাকের পরিসীমা নেই। আমিও হতভম্ব : এ যে দেখছি, ভাইজান, আপনি সাক্ষাৎ শার্লক হোমস।
আরে, থামো, বৎস, ডাক্তার বললেন চারিয়ে, সবে তো শুরুসবুর করো। মজা আরো দেখার বাকি রয়েছে যে! এমন সময় ভেতর থেকে ডাক এল : ভাবী নাস্তা তৈরি করে বসে আছেন। আমাকে ভেতরে যেতে হবে। অগত্যা কী আর করি। লোকটিকে সেখানে সে-অবস্থায় বসিয়ে রেখে ডাক্তার-সহ আমি ভেতরে চলে এলাম। [এখানে একটি কথা বলিনি বুঝি? ডাক্তার সপরিবারে থাকার বন্দোবস্ত-সহ বঙ্গবন্ধু এভেন্যুতে চেম্বার নিয়েছেন।]
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এবার ভাইজানের ব্যাখ্যা : আচ্ছা, ভালো কথা, রফিক, নিশ্চয়ই তুমি মনে মনে বসে ভাবছ, অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন তোমাদের এ মহাপুরুষ ভাইটি। সেদিনকার ডা. আফজাল আজকে হয়ে বসেছেন বিরাট মনস্তত্ত্ব-বিশারদ, নয় কি? আমিও প্রায় সায় দিতেই যাচ্ছিলাম।
ডাক্তার হো হো করে হেসে উঠলেন।
ও কী হাসছেন কেন?
হাসব না? তুমি একটা আস্ত গবেট। আরে বাপু, ডাক্তারেরা আবার মহাপুরুষ হলেন কবে থেকে? সবাই তো ওই রুপোর টাকাঝন ঝন ঝনাৎ রূপচাঁদের-শিকারি। বকের যেমন তপস্যা পুঁটি মাছের। হেঁয়ালিটা আমি তবু বুঝে উঠতে পারিনে।
আমার অসুবিধে দেখে ডাক্তার এবার ফের নিজেকে নিজেই ব্যাখ্যা করা শুরু করে দিলেন : আচ্ছা, গোটাদুই উদাহরণ দিয়েই বলি। প্রথমত ঐ-যে লোকটাকে চেম্বারে বসিয়ে রেখে এলাম, ওর কথাই ভাবো না কেন? লোকটার কোমরে জড়ানো লুঙ্গির ওপর চওড়া করে পরা বেল্ট নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছ?
হ্যা, তা তো দেখেছি। কিন্তু ওরকম করে লুঙ্গি পরে কারা জানো?
কারা জানো?
না তো।
একমাত্র বার্মা মুলুকের লোকেরাই। অথচ, লোকটা চেহারায় বার্মিজ নয়, বাঙালি। এ থেকে অনুমান করা কি খুব কঠিন, লোকটা হালে বার্মা থেকে ফিরেছে?
তারপর সে-যে বিদ্যুৎ-ঘটিত কারখানায় কাজ করে,
সে তো আরো সহজ।
কেমন করে?
ওর জুতোজোড়াই সাক্ষী। ওর পায়ে রয়েছে রাবারের পাম্পসু। আর সবাই জানে, ইলেকট্রিক মিস্ত্রিরাই বিদ্যুৎ-এর শক এড়াতে গিয়ে রাবার-সু পরে কাজ করে থাকে। ফের তৃতীয় বুদ্ধিটাযেটা একসাথে তোমাদের উভয়কেই চমকে দিয়েছিল, সে তো আসলে সবচেয়ে সহজ। ওর ছাতাটাই প্রমাণ। তুমি খেয়াল করোনি, কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছি, ওর ছাতার গায়ে বড় বড় শাদা হরফে লেখা : মুন্সী করম উল্লাহ মিস্ত্রী। সাং মাইজদি। জিং নোয়াখালী। ফের, ও যখন ছাতা বন্ধ করে চেম্বারের প্রবেশপথে এসে দাড়াল, দেখলাম ছাতাটা থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে। এ থেকে আন্দাজ করা কি খুবই শক্ত যে, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে? সুতরাং দেখলে তো, ডিটেকটিভি বুদ্ধি-টুদ্ধি কিছু নয়, স্রেফ কমনসেন্স। পার্থক্য শুধু, একদল লোক চোখ মেলে দেখেন আর একদল দেখেন না। আর যারা দেখেন তাদের পকেটে রূপচাদার ঝাঁক আপনিই এসে ধরা দেবে, এ আর বিচিত্র কী! আর দেখো, খেলাটা জমে ভালো যদি এর সাথে টেলিফোন এসে যোগ দেয়ঘরে একখানা টেলিফোন থাকে।
টেলিফোন? কথাটা ফের আমাকে বিভ্রান্ত করে তুলল।
জি হ্যা, টেলিফোন। টেলিফোন-ই লাখ টাকা : বিংশ শতাব্দীর সোনার কাঠি রুপোর কাঠি! সৌভাগ্যের রাজকন্যের ঘুম-ভাঙাতে টেলিফোনই যথেষ্ট। উহ্, বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি। এসো তাহলে আমার সাথে, আমি এক্ষুনি স-প্রমাণ করে ছাড়ছি। বলেই ডাক্তার আমাকে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে চললেন। ভাইজানের চোটপাট দেখে ভাবী আর স্থির থাকতে পারেন না : ইশ, হয়েছে। খুব তো জাক দেখাচ্ছ? কিন্তু বলিফোনখানা-যে সকাল থেকে ডিস্কানেক্ট হয়ে পড়ে আছে, সে খবর রাখো কি? মেয়েমানুষের কথায় ডাক্তার আবার বড়-একটা কান দেন না : স্টাইল! বুঝেছ হে রফিক-স্টাইল! স্টাইল-ই হচ্ছে হাল দুনিয়ার জীয়নকাঠি, মরণকাঠি। স্টাইল জানা থাকলে মরা-ফোনও যে মরা-হাতির দামে বিকোয়।আর না-জানা থাকলে এক পয়সারও দাম নেই, বলেই ডাক্তার ফের আমাকে টেনে নিয়ে চললেন। চেম্বারে ফিরে এসে দেখি লোকটা যেই-কে-সেই ঠায় বসে আছে। ডাক্তার সেদিকে কিন্তু ভ্রুক্ষেপ
-করে সোজা রিসিভারটা হাতে তুলে নিলেন, তারপর ডায়ালিং করে চললেন। ডাক্তারের ডায়ালিং দেখে আমার হাসি পায়। আমি তো জানি ফোনটা ডিসকানেক্ট। কিন্তু ততক্ষণে ভাইয়ার মনস্তত্ত্ব আমার পুরোদমে রপ্ত হয়ে গেছেহোক-না যন্ত্রটা খারাপ, মূর্খ রোগীকে ঘাবড়ে দিতে ও-ই যথেষ্ট। হতভম্ব পেশেন্ট অবাক চোখে দেখুক : কী সব হোমরা-চোমরা তাঁর কনেশন্স? আর কত বিশাল তার পসার প্রতিপত্তি? সুতরাং ডাক্তার ফোন করে চললেন :
থ্রি-ওয়ান-ফাইভ-সিক্স-টু-ফোর।হ্যালো! কে বলছেন? ও ড. ব্যানার্জি? গুডমর্নিং, কেমন আছেন? তারপর কী খবর?..এ্যা? কী বললেন? অক্কা পেয়েছে? তা পাবেই তো, নরেশ ডাক্তারের পাল্লায় যখন পড়েছে। কত বললাম, আমার এখানে রেখে যান। তা রাখবেন কেন? অথচ, সঙ্গেরটি দেখুন আমারি ক্লিনিকে দিব্যি হেসেখেলে বেড়াচ্ছে। ... ও, হেঁ, হেঁ, ঠিক ধরেছেন। ওঁরা তো বলছেনসাবকন্টিনেন্টে এ-ই প্রথম। তবে বান্দা যখন আপনাদের খেদমতে বেঁচে আছি, অপারেশন কাকে বলে আরো দেখবেন। নো, থ্যাঙ্কস্।.... আমার মাথা খান। আমার কী ভাই, অত ঝামেলার সময় আছে! সেক্রেটারি, ভাইস প্রেসিডেন্ট, ডিরেক্টর? না, না, অপেক্ষাকৃত ইয়ংম্যান অন্য কাউকে দিয়ে দিন।... আচ্ছা, আচ্ছা, সে দেখা যাবে 'খন।
এতক্ষণে ডাক্তার ফোনটা রাখলেন। তারপর রহস্যমাখা দৃষ্টিতে অপেক্ষমাণ রোগীটির দিকে একবারমাত্র দৃকপাত করলেন। জাদুমন্ত্রের মতো কাজ হয়েছে। গ্র্যান্ড সাকসেস্! সম্মোহিত রোগী ফোন-মাহাত্মে আরো অভিভূত হয়ে পড়ল। উহ্, খুদে একখানি যন্ত্রের ঠিক-যে এতখানি প্রতাপ, এত উত্তাপ, আমি কিন্তু ইতিপূর্বে কখনো প্রত্যক্ষ করিনি।
যাক, উদ্দেশ্য যখন সিদ্ধ হয়েছে, ডাক্তার আফজাল এবার ধীরে ধীরে তার রূপ-চাদের জাল পাতলেন। বিনয় দৃষ্টিতে ভাঙা-গলায় উচ্চারণ করলেন, ওয়েল মিস্টার, হোয়াট্‌ কেন আই ড্যু ফর য়্যু? বলুন, আপনার আমি কী খেদমত করতে পারি? জানেন তো, আমার ভিজিট : চৌষট্টি টাকা।
ফিসের অঙ্ক শুনে লোকটা ঘাবড়ে গেল। না হুজুর আমি একজন গরিব-
গরিব। আচ্ছা, গরিব। আচ্ছা, গরিবের জন্যে কনসেশন রয়েছে—‘ষোলো টাকা। হল তো?
না হুজুর, আমি একটি অফিসের চাকুরে।
ও বুঝেছি। ছুটির দরখাস্ত? বেশ তবে তো আরো সস্তা। মাত্র সাড়ে-চার টাকা। টাকাটা ফেলুন, আমি এখুনি সুপারিশপত্র লিখে দিচ্ছি। বলেই ডাক্তার কাগজ কলম নিয়ে প্রস্তুত হলেন। কিন্তু হঠাৎ ডাক্তারের সমস্ত ক্যালকুলেশন ভেস্তে দিয়ে লোকটির সবিনয় বিবেদন :
হুজুর, রোগ আমার নয়।
ওহ্ খোদা, তাই নাকি? রোগী বুঝি বাড়িতে? তবে তো মস্তবড় ভুল হয়ে গেল।
না স্যার। তাও নয়। রোগ আপনার টেলিফোনের। আপনার স্ত্রী ভিন্ন-বাসা থেকে একটু আগে ফোন করেছেন। তাই আমি এসেছি ছেড়া-তারে জোড়া লাগাতে। আমি রোগী নই, স্যার টেলিফোন কোম্পানির মেকানিক।
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -

(জান্নাতে) আল্লাহ বললেন, ঠিক আছে, তুমি (শয়তান) যাও, এদের (মানুষ) মধ্য থেকে যারাই তোমার অনুসরণ করবে তুমিসহ তাদের সবার জন্য জাহান্নামই হবে পূর্ণ প্রতিদান (সুরা বনী ইসরাঈল - ৬৩) 

No comments:

Post a Comment

Popular Posts